তামিল টাইগার্স : শ্রীলংকায় রক্ত স্রোতের অজানা কাহিনী
শ্রীলংকা, ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। ক্ষুদ্রাকৃতির দেশটি দীর্ঘ ২৬ বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় ১ লক্ষ নিরীহ শ্রীলংকান নাগরিক। বাসস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল তামিল অধ্যুষিত এলাকার অগণিত মানুষ। ইতিহাসের একমাত্র গৃহযুদ্ধ যার প্রভাবে প্রাণ হারায় দুটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ পদ ধারী সরকার প্রধান। রাবণের রাজ্য খ্যাত, শ্রীলংকার সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ নিয়ে আজকের আয়োজন।
পূর্ব ইতিহাস:
শ্রীলংকা, ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্গত একটি রাষ্ট্র ছিল। দেশটির উত্তর ও পূর্বাংশে ছিল তামিল ভাষাভাষীদের বসবাস আর দক্ষিণ ও মধ্য ভাগ জুড়ে ছিল সিংহলিজ ভাষা ভাষীদের বসবাস। মোট জনসংখ্যার ৭০-৭৫% ই সিংহলিজ ভাষা ব্যবহার করত। অপরদিকে তামিল ছিল মাত্র ১৫% লোকের ভাষা। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে তামিলরা শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর ছিল। সরকারী চাকুরীজীবীর ৮০% ই ছিল তামিলদের। শুধু সরকারী চাকুরী নয়, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তার একক আধিপত্য। তামিল ভাষাভাষীরা ছিল মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধরা ছিল সিংহলিজ ভাষাভাষী, বাকী ১০% ছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
কিন্তু ১৯৪৮ সালে শ্রীলংকা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়। ১৯৫৬ সালে, সিংহলিজ ভাষাকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। ফলে তামিলরা সরকারী চাকুরী হারাতে শুরু করে। কারণ তারা সিংহলিজ ভাষা জানত না। এই ঘটনা তামিলদের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। তামিল মিডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
স্কুল ও কলেজে তামিলদের শিক্ষাগ্রহণে কোটা আরোপ করে। তারা আগের মত শিক্ষাগ্রহণ করতে পারত না। সংহলিজদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় সরকার। সরকারের এই সকল সিদ্ধান্ত তামিলদের চূড়ান্তভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। ১৯৫৬, ৫৮, ৭৭, ৮৩ সালে বড় ধরনের দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। Tamil National Alliance (TNA) ছিল তামিলদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল। তারা তামিল রাজ্যকে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানায়। তারা রাজনৈতিকভাবে দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিল। কিন্তু শ্রীলংকা সরকার এসবে কোন কর্ণপাত করত না। শুরুতে তামিলরা শান্তি পূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ, বেশ কয়েকটি উগ্র সংগঠনের উদ্ভব ঘটে যারা সরাসরি তামিল রাজ্য আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি তোলে। প্রায় ১৫ টি উগ্র সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (LTTE), ছিল সবচেয়ে বড় ও সু সংগঠিত সংগঠন।
LTTE গঠন:
উগ্রবাদী সংগঠন LTTE, ১৯৭৫ সালের ৫ মে গঠিত হয়। সংক্ষেপে তারা তামিল টাইগার্স নামেই অধিক পরিচিত। তামিল টাইগার্স ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত সংগঠন। এটির নেতৃত্বে ছিল ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। প্রভাকরণ, ফরাসি বিপ্লবের নায়ক নেপোলিয়নের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তামিল টাইগার্সদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠন করা। পৃথিবীর অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে তামিল টাইগার্স ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাদের ছিল নিজস্ব সরকার, ব্যাংক, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী। শ্রীলংকার আর্মিদের মত করেই তামিল টাইগার্সদের সেনাদের রেঙ্ক নির্ধারিত ছিল। একটি গেরিলা আক্রমণকে সফল করার জন্য প্রায় সবকিছুই ছিল তামিল টাইগার্সদের। রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় শাখার নেতৃত্বে ছিল প্রভাকরণ।
তামিলদের অর্থায়নের বড় উৎস ছিল প্রবাসী তামিলরা। তারা বিভিন্ন ভাবে টাইগার্সদের সার্বিক সহায়তা করত। সবচেয়ে বড় সমর্থন দিত, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকার ও সাধারণ জনগণ। তাছাড়া শ্রীলংকার সাথে বিবদমান দেশগুলো গোপনে তামিল টাইগার্সদের সাহায্য করত। প্রাথমিকভাবে, ভারত সরকার তাদের সামরিক ট্রেনিং ও সহায়তা করত। ধীরে ধীরে তামিল টাইগার্স অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে। তারা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।
ইলম যুদ্ধ :
ইলম শব্দটির তাত্ত্বিক অর্থ হল রাষ্ট্র। তামিল টাইগার্স তাদের লড়াইকে ইলম যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করত। ১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই, তামিল টাইগার্স শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর উপর সরাসরি আক্রমণ করে। অতর্কিত আক্রমণে ৫ সেনা কর্মকর্তা ও ৩৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। সেনা মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীলংকাতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। দাঙ্গাতে প্রায় ৩ হাজার নিরীহ তামিল নাগরিক মারা যায়। এই ঘটনাকে শ্রীলংকাতে ব্ল্যাক জুলাই বলে অভিহিত করা হয়। এটাই ছিল তামিল টাইগার্সদের প্রথম বড় ধরনের আক্রমণ। হাজারো তামিল নাগরিক হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় তামিল অঞ্চলগুলো। তারা মনে করেছিল সরকার ইচ্ছে করে তাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এ সময় প্রচুর তামিল যুবক LTTE তে যোগদান করে। যা পরবর্তীতে তাদের যুদ্ধকে এগিয়ে নিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। শুধু পুরুষ নয় তামিল টাইগার্সে যোগ দিয়েছিল নারী ও শিশু। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার সরাসরি তাদের সাহায্য করত। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW তামিলদের ভারতে ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে। ৪৯৫ জন বিদ্রোহী, ৩২ টি ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহণ করত। শ্রীলংকা সরকার বারবার ভারতের সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও, বরাবরই ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। ১৯৮৪ সালে, LTTE সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে একটি সাধারণ সংগঠন গড়ে তোলে যার নাম দেয় Eelam National Liberation Front গঠন করে।
ভারত-শ্রীলংকা শান্তিচুক্তি:
১৯৮৭ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী জয়াবর্ধনে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেয়। ভারত সরকার তামিলদের পক্ষে বেশ কয়টি দাবি জানিয়ে একটি চুক্তি সই করে। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, তামিল ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান, পুরো তামিল অঞ্চলকে এক সরকারের অধীনে রাখা, রাজ্য সরকারের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা, ভারতীয় বাহিনীকে শ্রীলংকায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া সহ ১৩ টি বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনী শ্রীলংকায় প্রবেশ করে। ভারতের এই চুক্তিকে LTTE সমর্থন করে নি। তারা ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশের বিপক্ষে ছিল।
রাজীব গান্ধীর এই সিদ্ধান্ত তামিলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা রাজীব গান্ধীকে তাদের শত্রু ভাবা শুরু করে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বাকী তামিল গেরিলা বিদ্রোহীগুলো শান্তি চুক্তি মেনে নিলেও তামিল টাইগার্স এই চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী অপারেশন পাওয়ান নামে তামিলদের গুরুত্বপূর্ণ শহর জাফনা থেকে তামিল টাইগার্সদের বিতাড়িত করে। ফলে তামিল টাইগার্স ভারতীয় বাহিনীর উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী অপারেশন পরিচালনা করে। এসময় তামিল টাইগার্সদের সাথে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৩ বছরে প্রায় ১ হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধী সরকারের পতন হলে অপারেশন স্তিমিত হয়ে পড়ে। অপরদিকে শ্রীলংকার জনগণও তাদের ভূমিতে ভারতীয় বাহিনীর আগমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে ফলে শ্রীলংকা সরকারের অনুরোধে ভারত ১৯৯০ সালে শান্তি বাহিনী সরিয়ে নিয়ে যায়। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে তামিলদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৯৯১ সালে আসন্ন ভারতীয় নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তামিল টাইগার্স রাজীব গান্ধীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৯১ সালের ২১ মে, তামিলনাড়ু রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচার সভার ফুলের মালা গ্রহণের সময়, মালার মধ্যে থাকা বোম বিস্ফোরণে নিহত হয় রাজীব গান্ধী। LTTE এর সদস্য, এক নারী এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। এটি ছিল তামিল টাইগার্সদের দ্বারা সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই ঘটনার পর থেকে তৎকালীন ভারতে বড় নেতারা ফুলের মালা গ্রহণ করত না।
শুধু ভারতেরই না, ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রেমাদাসাকে, মে দিবসের এক র্যালীতে আত্মঘাতী হামলা করে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড শান্তি চুক্তিকে লন্ড ভন্ড করে দেয়। সরকার দলীয় বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গকে একের পর এক হত্যা করতে থাকে তামিল টাইগার্স। ২৬ বছরে তারা ৭ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীতে হত্যা করে। এমনকি তামিল অঞ্চলে যারা সরকারের পক্ষ অবলম্বন করত তাদেরকেও হত্যা করে তামিল টাইগার্স। ১৯৯ সালে তারা প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার উপর হামলা করে। যদিও তখন তিনি বেঁচে যান, তবে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
৯০ দশকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিলেও LTTE তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রভাকরণ বেলেছিল, “শান্তি চুক্তি আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে সিঁড়ি স্বরূপ”। তামিলরা গেরিলা পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে হামলা অব্যাহত রাখল। যে সকল নিরীহ নাগরিক তামিল অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে চাইত, তামিল টাইগার্স তাদের রুখে দিত। কারণ তারা বিশ্বাস করত নিরীহ জনগণ থাকলে সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমণের সুযোগ কমে আসবে।
২০০১ সালে আমেরিকা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং যেসব দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অর্থ ও সামরিক সাহায্যের ঘোষণা দেয়। যদিও LTTE মনে করত তারা কোন ধর্মের নামে যুদ্ধ করত না। প্রভাকরণ বলেছিল তারা কোন সন্ত্রাসী সংগঠন না। তারা শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। একই বছর তারা কলম্বোর বিমান বন্দরে আক্রমণ করে। যা বহু লোকের প্রাণ হানি ঘটায়। এই হামলা শ্রীলংকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পর্যটন শিল্প বিপদের মুখে পড়ে যায়।
২০০২ নরওয়ের প্রচেষ্টায় সরকার ও তামিল টাইগার্সদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা চলা কালেও সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই চলতে থাকে। যুদ্ধ বিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ২০০২-২০০৪ পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকে। তামিল বিদ্রোহীরা রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি তোলে। অপরদিকে সরকারও দাবি মেনে নিতে সম্মত ছিল। হঠাৎ, তামিল বিদ্রোহীরা শান্তি আলোচনা বন্ধ করে দেয়। তারা দাবি করে যে, সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে তাদের উপর আক্রমণ করেছে।
২০০৪ সালে, তামিল টাইগার্সদের মধ্যে বিভাজন দেখা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার করোনা, সৈন্য সহ সরকারের পক্ষে চলে যায়। একই সময় সুনামির আক্রমণে বেশ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় LTTE। তামিল টাইগার্স বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে। একই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে হত্যা করে তামিল টাইগার্স। যিনি নিজেও একজন তামিল ছিলেন। এভাবে লড়াই চলতে থাকে। সরকার সিদ্ধান্ত নিল, তারা ব্যাপক ভাবে তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান চলতে থাকে। ২০০৯ সালের মে মাসে সেনাবাহিনী পুরোপুরি ভাবে তামিল টাইগার্সদের ঘিরে ফেলে। সব কিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৮ মে, প্রভাকরণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্ত বন্যার ইতিহাস।
http://mexicoph24.life/# mexico pharmacies prescription drugs
http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico online
prescription drugs canada buy online: Large Selection of Medications from Canada – canadian pharmacies that deliver to the us
https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy ltd
buy lamisil 250mg pills – buy cheap griseofulvin purchase griseofulvin online
http://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
what is zyprexa for
pharmacies in mexico that ship to usa: cheapest mexico drugs – mexican online pharmacies prescription drugs
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy cheap
http://canadaph24.pro/# pet meds without vet prescription canada
https://mexicoph24.life/# mexican rx online
medicine in mexico pharmacies: medication from mexico pharmacy – mexican border pharmacies shipping to usa
https://canadaph24.pro/# www canadianonlinepharmacy
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy ratings
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy tampa
reputable indian online pharmacy: Cheapest online pharmacy – india online pharmacy
http://indiaph24.store/# online pharmacy india
http://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online
http://canadaph24.pro/# safe reliable canadian pharmacy
is zofran safe to take while pregnant
https://canadaph24.pro/# pharmacy rx world canada
https://canadaph24.pro/# ed meds online canada
https://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
http://indiaph24.store/# india online pharmacy
https://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
https://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
mexico drug stores pharmacies Mexican Pharmacy Online mexican border pharmacies shipping to usa