“নিউট্রন বোমা বোঝ মানুষ বোঝ না!” -কবি হেলাল হাফিজ
মানুষ নিউট্রন বোমা ঠিকই বোঝে কিন্তু মানুষ কে বোঝে না। ঠিকই জেগে থাকে হিংস্রতা যখন ঘুমিয়ে থাকে মানবতা। স্বার্থসিদ্ধির হিসাব নিকাশ সত্য মিথ্যার সীমাকে ঝাপসা করে দেয়। ন্যায় নীতির সংজ্ঞা হারিয়ে যায় লোভের সম্মুখে।দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ হয় অসহায় আত্মসমরপণ করে নয়তো শেষ চেষ্টা হিসেবে এগিয়ে যায় সামনে দিকে। বাক-স্বাধীনতাহীন ,গনতন্ত্রহীন, অসহায়, নিপীড়িত মানুষ যখন মুক্তির স্বাদ পেয়ে যায় তখন সে হয়ে ওঠে মানব রক্তের স্বাদ পাওয়া মানুষ খেকো বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
২০১১ সালে আরব বিশ্বে শুরু হয় আরব বসন্ত । জনতার সেই উত্তাল বাঁধভাঙা আক্রোশের মুখে ক্ষমতা হারান প্রথমে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট জিনে আবিদিন বেন আলি। এরপর ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয় মিশরের প্রায় ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারককে। যে দেশ কে নিয়ে আজকের লেখা সিরিয়ায়ও দেখা দেয় আরব বসন্ত নামের গণঅভ্যুত্থান। একে সমর্থন দিয়ে শোকবার্তা লেখার অপরাধে সিরিয়ার ১৫ জন বালককে আটক করে নির্যাতন করে বাশার আল আসাদের সরকার।
তাদের একজন ১৩ বছর বয়সী হামজা আল খতিব। নৃশংসভাবে নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয় তার। ঘটনার শুরু এখান থেকেই। এ হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে মানুষ। শত শত মানুষ রাজপথে নেমে আসে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তাদেরকে দমন করেন কঠোর হাতে।

পূর্বকথা – সিরিয়া যুদ্ধের ইতিহাস
১৯৪৬ সালে সিরিয়া ফ্রান্স এর কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বল্প সময়ের অর্জিত গণতন্ত্র পুষ্ট হওয়ার আগেই ১৯৪৯ এর অভ্যুত্থান সিরিয়া কে ঠেলে দেয় সামরিক শাসনের দিকে। ১৯৫৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসনের পতন ঘটে। এর পর ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত মিশর এর সাথে ‘’সিরিয়ান আরব রিপাবলিক’’ গঠন করে সিরিয়া। ১৯৬৩ সালে ক্ষমতায়ে আসে আসাদ পরিবারের বাথ পার্টি।
ক্ষমতায়ে আসার পরপরই বাথ পার্টিকে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান এর সম্মুখে পরতে হয়। সিরিয়ার এ রকম অস্থিতিশীল অবস্থার সুযোগে ১৯৭১ সালে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন হাফেয আল আসাদ, বরতমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পিতা। হাফেয আল আসাদ এর শাসন শেষ হয় ২০০০ সালে, তার নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এরপর রাষ্ট্রক্ষমতায়ে আসেন তার মেজ পুত্র বাশার আল আসাদ।
সঙ্ঘাতময় একনায়কতন্ত্রের আরব দেশ হিসেবে সাধারণ টালমাটাল ভাবেই চলছিল সব। এক দল শাসনের অধীনে দৃশ্যমান কোন বিরোধিতা ছাড়া সব কিছু ভালই চলছিল বাশার আল আসাদের … সিরিয়ায় স্বাধীনভাবে কথা বলা, মত প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না। অর্থনীতি ছিল নাজুক অবস্থায়। প্রতিবেশী ইসরায়েলের সাথে অসম অস্ত্র এবং সেনা প্রতিযোগিতা আর তার সাথে ছিল মরুভূমির বিরূপ আবহাওয়া।
এসবই সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উস্কে দিতে সহায়তা করেছে সিরিয়ানদের। সঙ্গে ছিল সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের দমননীতি। তিউনিসিয়া, মিশরের সফল গণঅভ্যুত্থানই এসব মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। এ সময় অনেক ইসলামপন্থী আন্দোলনকারীরাও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনের বিরোধিতা করতে শুরু করে। ১৯৮২ সালে বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদের নির্দেশে হামা শহরের বিক্ষোভরত মানুষদের উপর অভিযানে ১০ থেকে ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয় পুরো হামা শহরকে। ফলে প্রেসিডেন্ট আসাদের ওপর ব্রাদারহুডের ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রচণ্ড খরা দেখা দেয় সিরিয়ায়। প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে ছুটে যান। এর ফলে সামাজিক দারিদ্র্য ও অশান্তি বাড়তে থাকে।

তিউনিসিয়ায়ে শুরু হওয়া আরব বসন্তর ঢেউ এসে লাগে সিরিয়াতে।জানুয়ারী মাস থেকে মার্চ মাস যতই এগিয়ে আসতে থাকে ছোট ছোট বিক্ষোভ গুলোও যেন আকারে বাড়তে থাকে। মার্চ মাস থেকে বিক্ষোভ এর আকার যতই বাড়তে থাকে ততই প্রেসিডেন্ট বাশার আলা আসাদ বুঝতে পারেন যে পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণ এর বাইরে চলে যাচ্ছে।
জনসাধারণের বিক্ষোভ দমানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। কিন্তু জুলাই মাস আসতে না আসতেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ধারণ করে সহিংস রূপ। সেনাবাহিনীর একাংশ আসাদ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আর আপাত সঙ্ঘাতবিহীন সিরিয়ার অভ্যন্তরে দেখা দেয় গৃহযুদ্ধ।
২০১১ সালের জুলাই
এ সময় সেনাবাহিনীর একটি অংশ সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে গঠন করে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। বিদ্রোহী এ গ্রূপ এর লক্ষ্য হলো প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহীরা গঠন করে এই ফ্রী সিরিয়ান আর্মি (FSA)। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ফ্রী সিরিয়ান আর্মি এর প্রতি তার নিজের এবং তার দেশের সমর্থন এর কথা ব্যক্ত করেন। ন্যাটো জোটভুক্ত সকল দেশ আসাদকে পদত্যাগ এর আহ্বান জানায়। কিন্তু নারাজ আসাদ সকল বাধা বিপত্তি অগ্রাহ্য করে টিকে থাকেন ক্ষমতার গদিতে।

দামেস্ক ,হোমস, আলেপ্পো ,দেইর এজ জর, ইদলিব সহ প্রতিটি শহরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পরে। পশ্চিমা জোট আসাদ এর বিরোধীদের অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে আসাদ এর পতনে সহায়তা করতে থাকে।
সিরিয়ায় যে সংকট, প্রথমে তা জাতিগত পর্যায়ে শুরু হয় নি। সংখ্যালঘু ধর্মীয় দলগুলো সমর্থন দিতে থাকে প্রেসিডেন্ট আসাদকে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমর্থন দিতে থাকে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের, যারা মূলত সুন্নি মুসলিম। যদিও সিরিয়ার বেশির ভাগই হলেন সুন্নি মুসলিম, তবু রাষ্ট্রীয় সকল স্তরে প্রাধান্য রয়েছে দেশটির Alawite সম্প্রদায়ের। প্রেসিডেন্ট আসাদ এ সম্প্রদায়ের।
অভিন্ন ভূরাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে সিরিয়ার এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান সরকার সমর্থন দেয় আসাদকে। লেবাননের হিজবুল্লাহও তাই করে। অন্যদিকে সুন্নি রাষ্ট্র তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব সমর্থন দেয় বিদ্রোহীদের।
যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর-গ্রাম থেকে দলে দলে সিরিয়ানরা পাড়ি জমাতে থাকে প্রতিবেশী লেবানন,জর্ডান ও তুরস্ক এর পানে। পশ্চিমা জোটের মিত্র দেশ গুলোর সহায়তায় আরব লিগে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।শহর থেকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পরে সিরিয়ার দুরগমতম অঞ্চলেও।
২০১২ সাল
২০১২ সালের শুরুতেই ওবামা বলেন যে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার একটি “রেড লাইন” এবং এটি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মধ্যে তার ‘’হস্তক্ষেপের’’ হিসাবে পরিবর্তন আনবে এবং এর পরিণতি হবে”গুরুতর “। সিরিয়ার বৃহত্তম শহর এবং প্রাক্তন বাণিজ্যিক রাজধানী আলেপ্পোতে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধ। আসাদ সরকার হোমস এবং অন্যান্য শহরগুলির ওপর বিমান হামলা চালানো শুরু করে।
জাতিসংঘ সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত কফি আনান দ্বারা গঠিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়। একটি খসড়া সংশোধন করা হবার পরে চীন ও রাশিয়া পরিকল্পনা সমর্থন করতে সম্মত হয়।
জুন মাসে তুরস্ক সিরিয়ায় সংঘটিত সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সম্পর্কে নীতি এবং সিরিয়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাদের রুলস অফ এনগেজমেনট পরিবর্তন করে বলে যে, যদি সিরিয়ার সৈন্যরা তুরস্কের সীমান্তে থাকে তবে তাদেরকে সামরিক হুমকি হিসেবে দেখা হবে। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি দামাস্কাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রিসহ তিনজন সামরিক প্রধানকে বিমান হামলায় হত্যা করে এবং আলেপ্পোর উত্তর অংশ দখল করে।
আসাদ সরকার এর জন্য বড় ধাক্কা আসে তার নিজের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ হিজাব পালিয়ে বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা আবারো সতর্ক করেন যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক আগ্রাসনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। ওই বছরের নভেম্বরে কাতারে ইসলামি মিলিশিয়াদের বাদ দিয়ে গঠিত হয় ‘‘সিরিয়ান বিপ্লবী ও বিরোধী বাহিনীর ন্যাশনাল কোয়ালিশন’’, ।এবং ডিসেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, তুরস্ক এবং উপসাগরীয় দেশগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার জনগণের একমাত্র “বৈধ প্রতিনিধিত্ব” হিসাবে এই জাতীয় বিরোধী কোয়ালিশনকে স্বীকৃতি দেয়।
২০১৩ সাল
জানুয়ারী মাসে সিরিয়ায় দামেস্কের কাছে এক সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়, যেখানে হিজবুল্লাহ লেবাননের জন্য বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রেখেছিলো। লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সহায়তায়, আসাদের বাহিনী লেবাননের সীমান্তের নিকটবর্তী কৌশলগত কুসাইয়ের শহরকে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। বিদ্রোহী বাহিনী প্রথমবারের মত রাক্কা দখল করে।
সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শকেরা তাদের রিপোর্টে প্রকাশ করেন যে দামাস্কাসের ঘাউটা অঞ্চলে আগস্টে হামলার জন্য রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, যা প্রায় 300 জনকে হত্যা করে, কিন্তু রিপোর্টে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন পক্ষকে দায়ি করা হয়নি।ওবামা সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুমোদন নেয়ার জন্য তিনি কংগ্রেসের শরণাপন্ন হন, কিন্তু রাশিয়ার বিরোধিতা ও মিত্রদের সমর্থন না পাওয়ায় হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন। জাতিসংঘ সিরিয়া সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করতে সময়সীমা বেঁধে দেয় জুন 2014 পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক চাপে সিরিয়া তার রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন সরঞ্জাম ধ্বংস করে। জাতিসংঘের নিবন্ধিত সিরিয়ান শরণার্থীদের সংখ্যা প্রথমবারের মত ২0 লাখ অতিক্রম করে।
২০১৪ সাল
জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের জেনেভা শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়। সিরিয়া সরকার একটি অস্থায়ী সরকার নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়। কূটনীতির অন্তহীন কূটকচালের পরও সিরিয়ার কোনো সমাধান সূত্রের দেখা মিলেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার সমর্থনপুষ্টরা, সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরানের প্রতিনিধিরা জেনেভায় রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বসলেও কোনো একক মত গ্রহণে ব্যর্থ। মার্চ মাসে সিরিয়ান আর্মি ও হিজবুল্লাহ বাহিনী লেবাননের সীমান্তের কাছের ইয়াব্রুদ শহর পুনর্দখল করে।

জুন মাসে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া জঙ্গিরা আলেপ্পো থেকে ইরাকি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের দিয়ালা অঞ্চল পর্যন্ত “খিলাফত” ঘোষণা করে।এরপর সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকা ও তার মিত্র পাঁচটি আরব দেশ আলেপ্পো ও রাক্কায় ইসলামিক স্টেট বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানো শুরু করে। সংঘাতের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আসাদের ওপর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আইএসের উত্থান ও সিরিয়ার বৃহৎ অংশ দখলে নেয়ায় বিদ্রোহী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা ও নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধে। ফলে একদিকে আসাদবিরোধী নিরপেক্ষ শক্তিকে সমর্থন (অর্থ ও অস্ত্র জুগিয়ে)। অন্যদিকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোট তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের এ দ্বিমুখী নীতিতে সিদ্ধান্ত নিতে কঠিন হয়ে পড়ে।

২০১৫ সাল
চার মাস যুদ্ধের পর কুর্দি বাহিনী তুর্কি সীমান্তে কোবানি শহরের বাইরে ইসলামিক স্টেট থেকে মুক্ত করে। ইসলামিক স্টেট মধ্য সিরিয়ার পালমিরা শহর দখল করে এবং এই প্রাক ইসলামী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর অনেক স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস এগিয়ে যায়। জাউশ আল-ফাতাহ ইসলামী বিদ্রোহী জোট ইদলিব প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সিরিয়াতে প্রথম বিমান হামলা চালায়।তাদের ভাষ্যমতে তারা ইসলামিক স্টেট গ্রুপ কে লক্ষ্য করে হামলা চালায় , কিন্তু পশ্চিমা ও সিরিয়ার বিরোধীদলের ভাষ্যমতে এটি অ্যান্টি-আসাদ বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চালানো ।
ডিসেম্বরে সিরিয়ার সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের হোমস এলাকার অবশিষ্ট এলাকা ত্যাগ করতে অনুমতি দেয়, চার বছর পর সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস সরকার নিয়ন্ত্রণে আসে।
২০১৬ সাল
সিরিয়ার সরকার বাহিনী রাশিয়ায় বিমান সাহায্যের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট থেকে পালমিরাকে দখল মুক্ত করে কিন্তু ইসলামিক স্টেট ডিসেম্বর মাসে আবার পালমিরা দখল করে নেয়।
আগস্টে তুর্কি সৈন্যরা সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে তুর্কি সীমান্ত থেকে ইসলামিক স্টেট হটাতে এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করার শর্তে সহায়তা শুরু করে।
ডিসেম্বরে রাশিয়ান বিমান বাহিনী এবং ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের সহায়তায় সরকারি বাহিনী, দেশের সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো দখল করে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সৈন্য স্বল্পতার কারণে আলেপ্পোর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ ছিল। এটাই বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চলার একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার ইন ওয়াশিংটনের সিনিয়র বিশ্লেষক ক্রিস হারমার। তিনি আরও বলেন, আরব সেনাদের অপ্রতুল সৈন্য থাকায় তারা আলেপ্পো পূর্ণ দখল নিতে পারছিল না। ফলে বিদ্রোহীরা পাল্টা আক্রমণ করত। এছাড়া বিদ্রোহীরা নাছোড়বান্দা, আসাদ সমর্থিত রাশিয়ার বিমান হামলা ঠেকাতে না পারলেও জেদের জোরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

২০১৭ সাল
কাজাখস্তানে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর, রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক আসাদ সরকার ও ইসলামি বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সম্মত হয়। ফেব্রুয়ারীতে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতিবাদে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় ভেটো প্রদান করে রাশিয়া এবং চীন।এপ্রিলে বিদ্রোহী ইদলিব প্রদেশে খান শেখুনের শহরে নার্ভ গ্যাস আক্রমণ হয়। সাক্ষীরা বলেন যে আক্রমণটি রাশিয়ান বা সিরিয়ার সুখোই জেটগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। মস্কো ও দামাস্কাস এর দায় অস্বীকার করে।
আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন যে আসাদ সরকারের এই”জঘন্য” কাজ ওবামা প্রশাসনের সরাসরি দুর্বলতার ফল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিরিয়ার এক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়াতে চারটি ডি-এসক্যালেশন জোন প্রতিস্থার ঘোষণা দেন। সর্বশেষ কাযাখাস্তানের রাজধানী আস্তানায় সিরিয়ান পিপলস কংগ্রেস গঠনে একমত হয় রাশিয়া,ইরান , তুরস্ক ও সিরিয়া।
২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যে শেষ পর্যন্ত এ অবস্থায় পৌঁছবে তা সুদূর কল্পনাতেও ছিল না কারো। আরব বসন্ত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন তারা হয়তো এ পরিণতির কথা ভাবেননি।

সিরিয়ার আলেপ্পোতে আহত ৫ বছরের নির্বাক শিশুর ছবি হতবাক করেছে গোটা বিশ্বকে। অ্যাম্বুলেন্সে বসা অসহায় ওমরান দাকনিশের ধূলিধূসরিত রক্তাক্ত ছবি- ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। রক্তমাখা মুখে ছোট্ট হাতের পরশে আঙুলে লেগে যাওয়া রক্ত দেখে অবাক হয়েছে শিশুটি। অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ারে তা মুছে দিয়েছে। এর আগে দেখেছি তুর্কি সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লানের নিথর দেহ। এমন হাজারও শিশু অজান্তে রক্ত ঝরিয়েছে সিরিয়ায়। কিন্তু এর মাধ্যমেও মুছবে না দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের রেশ। সিরিয়া সঙ্কটের কোনো সামরিক সমাধান নেই কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে দেশটির মানুষের জীবন রক্ষা ও জনগণের বৈধ আকাঙ্খা অনুযায়ী রাজনৈতিক উত্তরণ সম্ভব।সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ হলো প্রাকৃতিক সম্পদ, ধর্ম ও অর্থসম্পর্কিত একটি কৌশলগত ভূরাজনৈতিক সংকট এবং রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি এই ভূরাজনৈতিক স্বার্থের তুলনায় খুবই নগণ্য। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের পেছনে মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিপরীতমুখী কারণটি হলো রাষ্ট্রপতি আসাদের ক্ষমতায় থাকা না থাকা।মানুষ বোঝা বড় দায়। তবে সিরিয়ায় পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় প্রেসিডেন্ট আসাদের উপস্থিতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্রঃ
১। http://www.dailynayadiganta.com/?/detail/news/77737?m=0
২। http://www.bhorerkagoj.net/online/2016/09/07/281148.php
৩।https://blog.mukto-mona.com/2017/09/19/51411/
৭। http://www.aljazeera.com/indepth/opinion/2017/07/refugees-return-syria-170730102205222.html
৮। http://www.aljazeera.com/news/2016/05/syria-civil-war-explained-160505084119966.html
৯। https://syriancivilwarmap.com/
levofloxacin 250mg us order levofloxacin pill