শুধুমাত্র প্রতিভা নিয়ে জন্মালেই জীবনে অনেক কিছু অর্জন করা যায় ভেবে থাকলে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন।সেই প্রতিভাকে তখনই মূল্যায়ন করা হবে যখন কিনা সাদা চামড়ার যে কেউ দিবে এর স্বীকৃতি। দীর্ঘদিন ধরে দাসত্বের অভ্যাস সত্যিকার অর্থেই আমাদেরকে দাসে রূপান্তর করেছে। যেখানে মাত্র ২১ দিনে অভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলা যায় সেখানে পুরো ২০০ বছর নিয়ে আলোচনা করাটা আসলে নিন্মশ্রেনীর বিতর্ক ছাড়া আর কিছুই না। মাদ্রাজের নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান রামানুজনের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আশা করাটা রীতিমত বিলাসিতা।
রামানুজনের ক্ষেত্রে সেই সাদা চামড়ার মানুষটি ছিলেন হার্ডি। হুম,ঠিকই ধরেছেন। এই সেই হার্ডি ,যিনি পরবর্তিকালে ছিলেন রামানুজনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন। নিজ দেশে যখন নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য রামানুজনকে লড়াই করতে হচ্ছিল তখন হার্ডির একটি মাত্র চিঠিতে সবকিছু পরিবর্তন হতে লাগলো একদম ঝড়ের বেগে।তখন প্রতিবেশীদের ভাবখানা অনেকটা এমন যেন, তারা তো রামানুজন এর জন্মের বহু আগেই জানতো যে সে অনেক প্রতিভাবান হবে।সম্পূর্ণ নতুন একটি সম্ভাবনাময় জীবনের উদ্দেশে রওনা দিলেন রামানুজন।যদিও পরবর্তিতে প্রকৃতি তার সাথে অন্যায় করেছিল।মাত্র ৩২ বছর বয়সেই পরলোকগমন করেন।প্রকৃতিকে ঠিক চেনার বা বুঝে উঠার আগেই তাঁকে ডেকে নেয়া হয়।

গনিত মহলের বহু আলোচিত গনিতবিদ রামানুজন সাধারন মানুষের মনে আরো একবার শক্ত ঘাঁটি গেঁথে নিয়েছে The Man Who knew infinity সিনেমাটি মুক্তির মাধ্যমে । অনেকের মতে তিনি যতটা না বিখ্যাত তার গনিতের কাজ নিয়ে তার চেয়েও বেশি বিখ্যাত এত অল্প বয়সে এমন বিস্ময়কর মস্তিষ্ক নিয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য।এই কথাটি দ্বারা তাকে বা তাঁর কাজকে কোনোভাবে ছোট করার চেষ্টা করা হয়নি।বরং তার মেধার সঠিক ব্যবহার করতে না পারার জন্য কিছু পাগলাটে মানুষের ভেতরের আক্ষেপ মাত্র।রামানুজনের বিখ্যাত সেই ১৭২৯ এর গল্প আমাদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।
গল্পটা অনেকটা এমন,একদিন হার্ডি অসুস্থ রামানুজনকে দেখতে গিয়েছিল হাসপাতালে।কি বলে কথা শুরু করা যায় ভেবে না পেয়ে হার্ডি বলল আজকে যে গাড়িতে করে আমি এখানে এসেছি তার সংখ্যা ছিল ১৭২৯।একদমই বিশেষত্বহীন একটি সংখ্যা।অসুস্থ রামানুজন হুট করে লাফিয়ে উঠে বলল কে বলেছে এটি বিশেষত্বহীন সংখ্যা?এটি হলো সেই ছোট সংখ্যা,যাকে দুটি সংখ্যার কিউবের যোগফল আকারে লিখা যায় তাও আবার দুটি ভিন্ন উপায়ে।এগুলো হলো 1^3 + 12^3 = 9^3 + 10^3=1729। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর যার ঝুলিতে কিনা ডজন খানিক বিশ্ববিখ্যাত পদক পড়ে আছে সেও তখন মনে করেছিল রামানুজন এর পক্ষে সবই সম্ভব।আসলেই কি তাই?কিভাবে রামানুজন একদম হুট করে ১৭২৯ এর এমন একটি গুনের কথা বলে দিলেন?আমরা জানি তিনি অনেক বেশি মেধাবি।তারপরও,এই বেপারটি কেমন যেন অদ্ভুত।

এবার আমরা অন্য একটি ঘটনায় যাব।ভদ্রলোকের নাম ছিল পিয়েরে ফার্মা (Pierre de Fermat (French: [pjɛːʁ də fɛʁma])।ফার্মাকে বলা হতো শখের গনিতবিদ।পেশায় তিনি ছিলেন একজন বিচারপতি। তাঁর কারণে অনেক বাঘা বাঘা গনিতবিদদের মাথায় অল্প বয়সে পড়েছে টাক।ভদ্রলোকের অদ্ভুত একটা অভ্যাস ছিল।তিনি বইয়ের মার্জিনের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের সমীকরন লিখে রাখতেন।আবার নিচে ছোট করে লিখে রাখতেন আমি এর সমাধান জানি কিন্তু এই বইয়ের মার্জিনে যথেষ্ঠ জায়গা না থাকার কারনে লিখতে পারছি না।সমস্ত বই জুড়ে এমন ছোট ছোট বিরক্তিকর লিখা।আমি এইটার প্রমান পারি,আমি ওইটার প্রমান পারি।আমার কাছে প্রমান করার এমন সব উপায় আছে যা চোখ ধাঁধানো।একটি দিক চিন্তা করলে তিনি আসলে ভাগ্যবান।ভদ্রলোক জীবিত থাকা অবস্থায় মানুষ তার গাণিতিক জীবনের অস্তিত্ব জানতে পারলে তাঁকে একদম শুলে চড়ানো না হলেও কিছুটা কঠিন সময় পার করতে হতো ।তো তার বিভন্ন ধরনের উপপাদ্য এর মধ্যে একটি উপপাদ্য ছিল (a^n + b^n = c^n ) যার জন্য কোন পূর্ণসংখ্যার সমাধান পাওয়া যাবে না যখন n এর মান ২ থেকে বড়। Arithmetica by Diophantus এর বইয়ের মার্জিনে আরো শতখানিক সমীকরনের পাশে এই সমীকরনের জায়গা হয়েছিল।সাধাসিধে চেহারা এই সমস্যাটি এতই ডানপিটে ছিল যে কয়েশবছর ধরে কেউই এর সমাধান করতে পারেনি।ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে সমস্যাটি মানুষকে বিদ্রুপ করে বলছিল,পারলে আমাকে সমাধান কর,আমি তোমাকে দুনিয়ার বিখ্যাত মানুষগুলোর মধ্যে একজন করে দিব।এই একটি মাত্র উপপাদ্য নিয়ে মানুষের আগ্রহেরও কোনো কমতি ছিল না।এর কারন হয়তো আমরা অনেকেই জানি। ফার্মার দেয়া সবগুলো সমীকরণই অবিশ্বস্ময়ভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।শুধুমাত্র এই একটি রয়ে গেছে যা কেউ প্রমান করতে পারেনি।মাত্র ২৪ বছর বয়সে UCLA এর ফুল প্রফেসর হওয়া ‘টেরি টাও’ এর কাছে যখন এমন ধরনের সমস্যার কথা জিজ্ঞাস করা হয় তখন তিনি সামান্য হেসে উত্তর দেন, এগুলো আসলে পর্বতে চড়ার মতো। কিছু পর্বত উঁচু আবার কিছু নিচু। কিন্তু সমস্যা হলো এসব পর্বতে চড়ার আগে তা দেখে আন্দাজ করা কঠিন এর উচ্চতা সম্পর্কে। আমরা সবচেয়ে ভালো যেটি করতে পারি তা হলো বলা যে এটি অনেক উঁচু। এখন আমরা মূল ঘটনায় ফিরে যাই। এই ফার্মার সাথে রামানুজনের সম্পর্ক কী ? দুইজন তো পুরো দুটি শতাব্দীর মানুষ।ইংল্যান্ড এ থাকাকালীন সময় রামানুজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিজ দেশে ফিরে গেলে শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসবে এই আশায় তিনি নিজ দেশে রওনা দিলেন তাঁর সমস্ত সম্পদ নিয়ে (তার হাতের ছোট নোটবুক) । ১৯১৯-১৯২০ সালে রামানুজন যখন ফিরছিলেন তখন তার ছোট নোটবুক অনেক ছড়ানো ছিটানো আঁকিবুঁকি করেন। নিজ দেশেই তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তার সেই ছোট নোটবুকটি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।সেখানে নোটবুকটি রামানুজনের কাজের সংগ্রহের সাথে কোনো এক কোনায় পড়ে ছিল। ১৯৭৬ সালে হঠাৎ কেউ একজন এগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় এই নোটবুকটি খুঁজে পান। পরবর্তীতে এর নাম দেয়া হয় ‘A Lost Notebook’ সেখানে কোনো একটি পাতার মধ্যেই লুকানো আছে রামানুজনের ১৭২৯ সংখ্যাটিকে এত ভালো করে চেনার রহস্য। রামানুজন আসলে মৃত্যুর আগে ফার্মার শেষ উপপাদ্য সমাধান করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ ভালো একটি উপায় খুঁজেও বের করেছিলেন। রামানুজন আসলে এমন উদাহরণ খোঁজার চেষ্টা করছিলেন যা ফার্মার (a^n+ b^n = c^n ) উপপাদ্যকে প্রমান করার জন্য ধারণা দিতে পারে। তিনি খুবই কাছাকাছি উদাহরন সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ফার্মার উপপাদ্যের সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এখন আবার একটু নতুন করে দেখি। রামানুজনের ম্যাজিক (1^3 + 12^3 = 9^3 + 10^3=1729)।

কী,একটু চেনা চেনা লাগছে ? অনেকটা ফার্মার শেষ উপপাদ্যের (a^n + b^n = c^n ) মত লাগছে ? এটিই হলো সেই ১৭২৯ এর লুকানো রহস্য।
এরপর আগস্ট ১৯৯৩ সালে অ্যান্ড্রু উইলস ফার্মার সর্বশেষ উপপাদ্যটি প্রমান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটি জায়গায় একটি ক্ষুদ্র ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুটি ঠিক করার জন্য উইলস এক বছর ধরে চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হন। এরপর ১৯৯৫ সালের মে মাসে উইলস ও তাঁর সাবেক ছাত্র রিচার্ড টেলারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় একটি প্রমান প্রকাশ করা হয় যা প্রমান সহ পূর্ববর্তী সমস্যাটিকে প্রতিহত করে।
avodart pills avodart 0.5mg without prescription order zofran 4mg without prescription
levaquin pills buy levofloxacin 250mg generic
order levaquin 500mg online cheap levaquin 500mg us