অটোমান সাম্রাজ্য পতনের কারণ ও পিছনের ইতিহাস
পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। যেমন চিরস্থায়ী হতে পারেনি উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন, তেমনি চিরস্থায়ী হতে পারে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য । সবকিছুই শেষ হয়ে যায়, আগে আর পরে। সারা পৃথিবী জুড়ে অনেকগুলো সাম্রাজ্য ছিল যেগুলো টিকে থাকতে পারেনি চিরকাল। কোন সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে নিজেদের অন্তর্কোন্দলে, কোনটির কবর রচিত হয়েছে বাইরের শক্তির আক্রমণে কিংবা সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের দুর্বার আন্দোলনের কারণে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রভাব-পতিপত্তি সবদিক দিয়ে এক জলুসপূর্ণ সাম্রাজ্য ছিল উসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্য । মাত্র ৪০০ জন সৈন্য নিয়ে যে সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল সেই ছোট দলটি এমন এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল সময়ের ব্যবধানে তাদের তৈরি সাম্রাজ্যের মাথানত করে কর আর উপঢৌকন দিয়ে যেতো ইউরোপীয় সম্রাটরা । ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যাযাবর আর্তুঘুরুল সেলজুক সুলতান থাকার জন্য ছোট্ট যে এলাকা পেয়েছিলেন সেটি তার বংশধরেরা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে করতে তিন মহাদেশ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে যোগ্য শাসকের অভাবে ক্রমান্বয়ে ভেঙে পড়তে থাকে শক্তিশালী এই অটোমান সাম্রাজ্য। যষ্ঠদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা অটোমান সাম্রাজ্য এর সূর্য অস্তমিত হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। বিশাল এই সাম্রাজ্য একদিনে শেষ না হলেও, সাম্রাজ্যের প্রভাব বলতে কিছু ছিলনা শেষের দিকে। অটোমান সাম্রাজ্য কোন একক কারণে ধ্বংস হয়নি। অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের পিছনে রয়েছে অনেক গুলো কারণ এবং বিস্তর ইতিহাস, সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো আমরা।
অটোমান সাম্রাজ্য এর পতনের বীজ বপন
অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান হিসেবে সুলতান প্রথম সুলেমান যেমন সাম্রাজ্যকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাফল্যের চূড়ায়, তেমনি তার কিছু ভুল সিদ্ধান্তে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের বীজ বপন হয়ে যায়। ব্যক্তি হিসেবে সুলতান সুলেমান যেমন অভূতপূর্ব, নীতিবোধের ক্ষেত্রে ছিলেন তেমনি ত্রুটিহীন। তিনি রাজ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সব সময় মেধা ও যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, সে কারণেই তার সময়ে পারগালি ইব্রাহিম পাশা, রুস্তম পাশা এবং সোকুলু পাশার মতো দক্ষ ও যোগ্য উজিরে আযম পেয়েছিল অটোমানরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সুলতান সুলেমান এমন দুইটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা সাম্রাজ্যের ভাগ্যে দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে।
অটোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দক্ষ ও যোগ্য শাসক সুলেমান নিজের উত্তরসূরি নির্বাচন করতে গিয়ে বড় অদক্ষতার পরিচয় দেন। উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের আবেগ এবং ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়ে তুচ্ছ অপরাধে বা বিনা অপরাধে তার বড় ছেলে শাহজাদা মুস্তাফা এবং ছোট ছেলে শাহজাদা বায়েজিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু তারা দুইজনেরই বাবার মতোই সাম্রাজ্য পরিচালনা ও বিস্তৃতি ঘটানোর মতো সমস্ত গুণাবলি ছিল। নিজের অন্ধদৃষ্টি ও ক্ষমার অযোগ্য কর্মের মাধ্যমে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান শাহজাদা সেলিমকে। যার মাধ্যমে রোপিত হয় অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসের বীজ, কারণ খাটো ও ভারী শরীরের সেলিমের মধ্যে সুলতান সুলেমানের কোন গুণই ছিল না। এমনকি তিনি সুলতান হিসেবে মন্ত্রীপরিষদ ও প্রজাদের কাছে থেকে সম্মান লাভে ব্যর্থ হোন। রাষ্ট্র পরিচালনা, তরবারির চমকানি কোন কিছুর প্রতি তার কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি সেরাগালিও প্রাসাদে বসে সাম্রাজ্যের কোন চিন্তা না করে মদ্যপান ও কবিতা রচনায় মশগুল থাকতেন। তার সময়েই অটোমানরা লেপান্তের যুদ্ধে ভেনেশীয়দের কাছে সবচেয়ে বড় পরাজয় বরণ করে।
দক্ষ সুলতানের অভাব
সুলতান সুলেমানের ৪৬ বছরের সুদীর্ঘ শাসন সম্ভব হয়েছিল তার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনার কারণেই কিন্তু তার পরবর্তী যেসব সুলতান অটোমান সিংহাসনে বসেন তারা ক্রমাগত ভাবে অযোগ্যতার প্রমাণ দেন।
সুলতান সুলেমানের পুত্র সুলতান দ্বিতীয় সেলিম পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘মদ্যপ সুলতান’ হিসেবে এবং তিনি মারা যান মদ্যপ অবস্থায় গোসলখানায় পড়ে মাথা ফেটে। সেলিমের পুত্র সুলতান তৃতীয় মুরাদ ছিলেন অর্থ ও নারীলোভী। তিনি একরাতে একাধিক নারীর সাথে রাত্রিযাপনও করেছেন। তার যেমন ছিল নারীলোভ, তেমনি ছিল স্বর্ণের লোভ। অর্থ-সম্পদের প্রতি তার লোভ এমনই ছিল যে সে ধনসম্পদের উপর শুয়ে ঘুমাতেন। মূল্যবান স্বর্ণের প্রতি লোভের কারণে ঘুষের প্রচলন শুরু হয় মহামারী আকারে। ঘুষের বিনিময়ে সাম্রাজ্যের দাপ্তরিক পদে অযোগ্য লোক দিয়ে ভরে গিয়েছিল।
তৃতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে তৃতীয় মাহমুদ ১৯জন ভাইকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। তিনি অল্প কিছুদিনের রাজত্বে একটি যুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধে জয়ী ইস্তাম্বুলে ফিরে এসে প্রাসাদে নারী সঙ্গীদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেন কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে অল্প কিছুদিন পরেই তিনি মারা যান। তার পরবর্তী শাসক সুলতান দ্বিতীয় আহমেদও ছিলেন মাথাগরম এবং খামখেয়ালি পূর্ণ এক মানুষ। তিনি সুলতান হিসেবে একক কোন সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হতেন যে কারণে অন্যরা সেই সুযোগে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করত।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে সুলতান দ্বিতীয় আহমেদের মৃত্যুর পর অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসন কলঙ্কিত হয়। প্রথমবারের মত পিতার পরে পুত্র সিংহাসনে না বসে সিংহাসনে বসানো হয় সুলতানের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই মোস্তফাকে।
অটোমান সাম্রাজ্যের এত অধঃপতন হয়েছিল যোগ্য শাসকের অভাবে, একজন পাগলকে সিংহাসনে বসিয়ে সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো হারেমের নারীদের মাধ্যমে। সুলতান সুলেমানের পর কোন যোগ্য শাসক না আসার কারণে সাম্রাজ্য বিস্তৃতির নীতি থেকে সরে আসে এবং সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে রাজ্য হারাতে থাকে। অটোমান সাম্রাজ্য পতনের যে কয়েকটি কারণ ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল যোগ্য শাসকের অভাব।
বিশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী
একটি দেশ বা সাম্রাজ্য যাই হোক না কেন যদি সেখানে কোন দক্ষ শাসক না থাকে তাহলে রাষ্ট্রের সবকিছু বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সৈন্যরা। সৈন্যদের উপর যদি সুলতানের কর্তৃত্ব না থাকে তাহলে তারা একটি বিশৃঙ্খল বাহিনীর পাশাপাশি বিশৃঙ্খল রাষ্ট্রের তৈরি করবে। অটোমান সাম্রাজ্যে ক্রমাগত অযোগ্য সুলতানের আগমন হয় এবং তারা অধিকাংশ ছিল যুদ্ধবিমুখ। ফলে বিশাল সৈন্যবাহিনী বেকার হয়ে পড়ে। যখন সৈন্যরা যুদ্ধে গিয়ে জয় অর্জন করে সেখানে তারা লুট করে হোক বা দখল করে হোক, যে সকল সম্পত্তি পেতো সেগুলো নিয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকতো কিন্তু অযোগ্য শাসকেরা যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে দিন দিন সৈন্যরা বেকার হতে থাকে, ফলে তারা অন্যান্য বৈধ এবং অবৈধ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফলে একটি সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী মূহুর্তেই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।
অটোমান সাম্রাজ্য মূলত পুরোটাই বিবর্তিত হতো সুলতানের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর নির্ভর করে কিন্তু অযোগ্য সুলতানেরা যখন নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয় তখন সৈন্যরা নিজেদের পছন্দের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতো কিন্তু যখন সৈন্যদের পছন্দের ব্যক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হতো তখন তারা আবার তাকে হত্যা করতো। এভাবে চলতে চলতে বিশৃঙ্খল সেনারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো উজিরে আযমের মতো পদে পছন্দের ব্যক্তি বসাতো। অটোমান সেনাবাহিনী এতোটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে তারা সুলতান ওসমানকে হত্যা করে। যেটা ছিল অটোমান ইতিহাসে প্রথম কোন সুলতানের নিজ দেশের সৈন্যদের দ্বারা মৃত্যু। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য বিশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনীও দায়ী ছিল, তবে তাদের এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী ছিল মুলত অটোমান সুলতানগণ।
অর্থনীতি
সুলতান সুলেমান তার সময়ে সামরিক ও নৌবাহিনীর পিছনে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ফলে তার মৃত্যুর পর থেকে অটোমান সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পতিত হয়। সাম্রাজ্য বৃদ্ধির নীতি থেকে সরে আসার কারণে একদিকে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং অন্যদিকে কৃষিজমির অভাব দেখা দেয় ফলে রাজস্ব আদায় কমতে থাকে। অটোমান সৈন্যদের জাতসুলভ যুদ্ধ করার ক্ষমতা লোভ পাওয়ার কারণে পূর্বে যে সকল রাষ্ট্র তাদের অধীনে থেকে কর দিয়ে চলতো তারাও কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সাম্রাজ্যের সম্পদের ভাণ্ডার শূন্য হতে থাকে।
যুদ্ধ না করার কারণে বিপুল পরিমাণ সৈন্যদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খরচ নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে থাকে। অটোমানদের পূর্ব থেকে চলে আসা জমি বণ্টনের নিয়ম অকার্যকর হয়ে পড়লে লাখ লাখ কৃষক শ্রেণী ভেসে যায়, সেখানে উদ্ভব হয় জমিদার শ্রেণীর। কৃষকদের মাঝে জমি বণ্টন করে দিয়ে তারা নিজেরা রাজস্ব আদায় করতো কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব না থাকার কারণে সুলতান জমিদারদের নিকট থেকে এ সকল রাজস্ব পেতো না, ফলে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকে। মুদ্রাস্ফীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং জাল মুদ্রা বানানো শুরু হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন যুদ্ধ না করা, সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি না ঘটা, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া এবং দাপ্তরিক পদের কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে ইস্তাম্বুল জুড়ে চুরি ডাকাতি শুরু হয়ে যায়, যেন ইস্তাম্বুলে বিদেশে কোন শক্তি আক্রমণ করেছে। অর্থনীতির দৈন্যদশার কারণে জৌলুসে ভরপুর অটোমান সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে তার শ্রী হারিয়ে চিরতরে হারিয়ে যায়।
আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব
ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব এবং ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লবের ফলে ইউরোপে খ্রিস্টান শক্তি সমূহ দ্রুত অগ্রগতি করতে থাকে। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের অর্থনীতি যেমন ত্বরান্বিত হতে থাকে তেমনি গঠিত হতে থাকে সুদক্ষ সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধাস্ত্র। পশ্চিমে অতি উন্নত ভ্রাম্যমাণ গোলন্দাজ বাহিনী গঠিত হয় যেটি অটোমানদের অনেক পিছিয়ে ফেলে দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো সৈন্যদের যাতায়াত, অস্ত্রের সরবরাহ, ইউনিফর্ম, খাবার ও অন্যান্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন ছোট ও বড় অস্ত্র নির্মাণের কারখানা গড়ে তোলে। কিন্তু অন্যদিকে অটোমানরা তাদের পূর্বের সামরিক রীতি নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে যা দিন দিন পশ্চিমাদের সাথে অসম হয়ে পড়ে।
পশ্চিমারা একের পর এক শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি করে কিন্তু অটোমানরা সেদিকে উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পশ্চিমাদের সাথে অটোমানদের ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় দুই শতাব্দীতে। পশ্চিমা বাহিনীতে পেশাদার ও দক্ষ সেনা বাড়ানো হয় কিন্তু অটোমান সেনাবাহিনী তখন পরিচালিত হতো অদক্ষ ও অপেশাদার সেনা দিয়ে, যার ফলে অটোমানদের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি পশ্চিমাদের যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে ভীত করা। ফলে যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তারা সাম্রাজ্যেরও পতন নিয়ে আসে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অটোমান সাম্রাজ্য ইতিহাসের শেষ পর্যায়ে চলে আসে। ইতিপূর্বে ইউরোপের একমাত্র জার্মানি ব্যতীত সকলে অটোমানদের ছেড়ে চলে যায়। ১৯১৪ সালে ২৮ জুন অষ্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রান্সিস ফার্ডিনান্ড সস্ত্রীক বসনিয়ায় খুন হন। গুপ্তঘাতক ছিল সার্বিয়ার একটি গোপন সংগঠনের শিক্ষার্থী। ফলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ২৮ জুলাই যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এই যুদ্ধে দুইটি পক্ষ অংশ নেয়, একপক্ষে ছিল অটোমান সাম্রাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি এবং বুলগেরিয়া। এই পক্ষকে বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি। অন্যদিকে মিত্রপক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি, রুমানিয়া এবং আমেরিকা। প্রথমে অটোমানরা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে কিন্তু তারা নিরপেক্ষ থাকার বিনিময়ে ত্রি-শক্তি বা রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের কাছে যে শর্ত দিয়েছিল সেটা তারা প্রত্যাখ্যান করে। অটোমানরা সংশোধিত প্রস্তাব তৈরি করে কিন্তু ফ্রান্সে জার্মান বাহিনীর বিশাল বিজয়ে সবকিছু পাল্টে যায়। অবশেষে ২৮ অক্টোবর তুর্কিরা জার্মানির সাথে যোগ দিয়ে বিশ্বযুদ্ধে নেমে পড়ে।
অটোমানরা কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই রাশিয়ার বন্দর ওডেসা, সেবাস্তোপোল, নোভোরোসিকে বোমা বর্ষণ করে এবং বেশ কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। নভেম্বরের ৫ তারিখে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া একযোগে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে অসম্ভব ধ্বংসকারী ফলাফল অপেক্ষা করে। যুদ্ধে অটোমানদের পরাজয় ঘটে।
গণতান্ত্রিক তুরস্কের জন্ম
১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটেন ও তুরস্ক যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। মিত্রবাহিনী ইস্তাম্বুল দখল করে নিয়েছিল এবং প্যারিসে শান্তি সম্মেলনে পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করে। অটোমান সাম্রাজ্যকে খণ্ড খণ্ড করে ফেলা হয়, যার অধিকাংশ চলে যায় ফ্রান্স ও ব্রিটেনের দখলে। আনাতোলিয়া ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিস ভাগ করে নেয়। কিন্তু মুস্তাফা কামাল পাশা এবং তুর্কি সেনাবাহিনীর দুইজন কমান্ডার মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং শর্তের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে।
তিন বছরের মধ্যে সুলতানের বাহিনীর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে গ্রিকদের তাড়িয়ে দিয়ে বিদেশি দখল দারিত্ব থেকে তুর্কি ভূ-খণ্ড মুক্ত করেন মুস্তাফা কামাল পাশা। সর্বশেষ শান্তি সম্মেলনের মাধ্যমে মুস্তাফা কামাল পাশা মিত্রবাহিনীর কাছ থেকে নতুন সীমানা লাভ করে। ফলে আনাতোলিয়া ভূ-খণ্ড অক্ষত রয়ে যায় ও আড্রিয়ানোপলসহ ইউরোপে এক ফালি তুরস্ক সৃষ্টি হয়। ১৯২৩ সালে ২৯ অক্টোবর অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়ে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা করা হয়। শেষ হয় ৬২৪ বছরের অটোমান সাম্রাজ্যের রাজত্বকাল। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
তথ্যসূত্র:
১.The Ottoman Centuries: Rise & Fall of The Turkish Empire by Lord Kinross
terbinafine 250mg without prescription – brand forcan order griseofulvin online
buy rybelsus 14 mg – order DDAVP spray DDAVP price