বিকেলে অফিসে ক্লান্ত মনে বসে আছি, হঠাৎ এক প্রিয় বড় ভাইয়ের ফোন আসে, ফোন রিসিভ করে কথা বলতেই রাফি কাল তোমার কোন ঘুরাঘুরির প্লান আছে? উত্তরে না বলতেই তাহলে চল ঘুরে আসি সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়শ্রেনীর পূর্ব অংশে কানাইঘাট উপজেলার স্বচ্ছ পানির নদী লোভা থেকে।
প্রথমেই বলে রাখি আমি ঘুরাঘুরির পাগল, প্রতি শুক্রবার মানেই যেন আমার ঈদের দিন। আমার বন্ধুমহল, আত্বীয়স্বজন এবং আমার চারিপাশের সবার জানা শুক্রবার আমি ঘুমাই না, ঘুরতে বের হই সিলেটের আনাচেকানাচে। সিলেট বিভাগের চার জেলা আমার খুব পরিচিত। সিলেটের নতুন কোন জায়গার সন্ধান পাওয়া মাত্রই ছুটে যেতে হয় না হলে যেন দম আটকে যায়। যাইহোক ভাইয়ার প্রস্তাবে আমি ঝটপট বলেই দিলাম আচ্ছা আমি যাবো কাল আপনার সাথে।
লোভাছড়া যাওয়ার মূলত দুটি রাস্তা আছেঃ
১) নদী পথে কানাইঘাট বাজার থেকে নৌকা রিজার্ভ করে।
২) মাইক্রো নিয়ে কানাইঘাটের সুরুইঘাট হয়ে লোভাছড়া বাগান এবং বাগান থেকে নৌকা।
তবে বাগান রাস্তা হয়ে গেলে আগে থেকে কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
কোথায় ঘুরতে যাওয়ার আগের রাত আমার ঘুম হয় না, সময়মত উঠতে না পারার ভয়ে। তবে এখনো সবগুলি ট্যুরে এলার্ম বাজার ১৫ – ২০ মিনিট আগেই আমি সজাগ হয়ে যাই । গোসল করে ব্যাগ গুছিয়েই বের হলাম। শহরের শিবগঞ্জে সাফরান রেষ্টুরেন্টে আমাদের নাস্তা করার প্লান ছিল। সবার আগেই আমি হাজির, অপেক্ষা ভাইয়া আর ভাবির। ভাইয়া ভাবি আসলেন নাস্তা শুরু হল, পরটা ভাজি আর মামলেট দিয়ে তারপর এককাপ গরম গরম চা।
ইতিমধ্যে আমাদের ড্রাইভার ভাইয়ের ফোন, উনি চলে এসেছেন। আমরা রেস্টুরেন্ট বিল পরিশোধ করে গাড়িতে চেপে বসলাম এবং যাত্রা শুরু। ড্রাইভার ভাই বাংলা গান থাকলে প্লে করেন, আমার আবদার। সামনের সিটে বসে আজকের সবকিছু ভিডিও করার ইচ্ছে হল। গাড়ি ছুটে যাচ্ছে সিলেট তামাবিল সড়কে, দুইপাশের জমিতে বৃষ্টিজল জমে আছে। আমরা গল্প আর গানে মেতেছি ততক্ষণে।
গাড়ি দরবস্ত থেকে কানাইঘাটের রাস্তায় প্রবেশ করতেই খেয়াল করলাম নতুন রাস্তা, ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক হল এজন্যে। বড়চতুল বাজার পেড়িয়ে সুরইঘাট হয়ে আমরা যাচ্ছি লোভাছড়া বাগানের রাস্তা দিয়ে। বাগানের রাস্তা দিয়ে যেতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে বাগান কতৃপক্ষের। উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তা দুইপাশে চা-বাগান মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে চা-কন্যাদের চাপাতা তুলার দৃশ্য। দূরের পাহাড়গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল রোদ ঝলমলে দিন হওয়াতে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রথমেই যাবো লোভাছড়া বাংলাতে।
লোভাছড়া বাংলোতে যাওয়ার পথে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ আমাদের স্বাগতম জানালো, হ্যা ১৯২৫ সালে নির্মিত এই ঝুলন্ত ব্রীজ সিলেট বিভাগের একমাত্র ঝুলন্ত ব্রীজ যা এখনো সচল এবং প্রতিদিন চাবাগানের জীপগাড়ি এর উপর দিয়েই চলাচল করে। আমাদের গাড়িও পার হল ব্রীজ দিয়ে। লোহার লাল রংয়ের ব্রীজটির চারিপাশ সবুজাভ। এক নজরেই ভালো লাগবে।
ব্রীজে কিছু ছবি তুলার পরে চলে গেলাম লোভাছড়া বাংলোতে। চা নাস্তা সেরে এখন গন্তব্য মূলাগুল। বাংলো থেকে হেটে লোভাছড়া বাজার ঘাটে আসতেই মন কেড়ে নিল একটি মায়াবী গাছ। কানাইঘাট থেকে নৌকা নিয়ে আসলে মূলাগুলে যাওয়ার পথে লোভাছড়ার বাগান ঘাটে একটু নামতে পারেন কারন নদীর কূলে অদ্ভুত মায়াবী একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে যেন পর্যটকের ক্লান্তি মুছে দিতে। গাছটির পিছনের দৃশ্যপট মনমাতানো। চাইলে এইখানে গোসল পর্ব সেরে নিতে পারেন স্বচ্ছজলে।
বাগান বাজার ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে এবার গন্তব্য মূলাগুল। মূলাগুলে যাবার পথে নদীর দুপারের মনকাড়া দৃশ্যপট দেখে নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলাম না। ক্যামেরা বের করেই ছবি তুলতে লাগলাম নদী, নৌকা এবং জনপদের। একটি জায়গায় নৌকা থামাতে বলে নেমে পরলাম কাঁদায়। আহ কিযে আনন্দ খালি পায়ে হাটতে। বিজিবি একটি পোস্ট ঘরে আছে সেখানে থেকে বিজিবির অনুমতি নিতে হবে শেষ সীমান্তে যাবার। আমাদের অনুমতি দেয়া হল এবং কোনভাবেই সীমানার বাইরে না যাওয়ার আদেশ করা হল। আমরা নদীর পার ধরে হেঁটে হেঁটেই কিছুটা জায়গা এগিয়ে গেলাম। চারিদিকে শুধু উঁচু উঁচু পাহাড়, পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা শান্ত নদী, জেলেদের মাছ ধরা কিংবা কিশোরদের সাতারকাটার দৃশ্য খুব ভালো লেগেছে। ততক্ষণে খুব খিদা লেগেছে নদীর পাড়ে আমরা একটি পরিষ্কার জায়গায় সবুজ ঘাসের উপর গামছা বিছিয়ে বসে পড়লাম এবং বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া খাবার খেলাম, চারিদিক শান্ত হিমেল বাতাস বইছে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে একটি পলিথিনে আবর্জনা তুলে এনে নৌকাতে রাখলাম। এবার ফেরার পালা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। নৌকায় উঠে পড়লাম সবাই এবং অপরূপা লোভছড়া কে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কানাইঘাটের দিকে ফিরতে হবে সিলেটে।
কিভাবে যাবেন: সিলেট কদমতলী থেকে বাসে কানাইঘাট জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়া। কানাইঘাট থেকে ছাউনি নৌকা ১০০০-১২০০ টাকা রিজার্ভ। সিলেট থেকে মাইক্রো কানাইঘাট রিজার্ভ যাবে ২৮০০-৩০০০ টাকায়।
levaquin drug purchase levofloxacin pills
আফসোস ! আপনরা জিরো পয়েন্ট মিস করলেন। ওখানে জাফলং এর মতো সেইম একটি ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে।