লুডু খেলার ইতিহাস
লুডু শব্দটি আসলে একটি ল্যাটিন শব্দ। ল্যাটিন লদো শব্দ থেকে লুডু শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। লদো শব্দটির অর্থ হচ্ছে আই প্লে মানে আমি খেলি। লুডু একটি কৌশল বোর্ড খেলা যেখানে ২ থেকে ৪ জন খেলোয়াড় এক সাথে খেলতে পারে।
হিন্দি পাচিসি বা বাংলা পাশা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে লুডু খেলার উৎপত্তি হয়।
লুডু খেলার পদ্ধতি ও বৈচিত্র্য অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত এবং লুডু একটি জনপ্রিয় খেলা। ডাইসের মাধ্যমে দান ফেলে এটি খেলতে হয় । ডাইসের সাহায্যে দান ফেলে ঠিক করা হয়, কে আগে গন্তব্যে পৌঁছবে। ডাইসে ছয় পড়লে ঘুটি ঘর থেকে বের হতে পারে। প্রতিপক্ষের ঘুটিকে পেছন থেকে তাড়া করে কেটে দিতে হয় এবং সবার প্রথমে যে সব গুলো গুটি গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারে সেই খেলায় বিজয়ী হয়। লুডু খেলতে অনেক চালাক হতে হয় না, মোটামুটি বুদ্ধিমান হলেই লুডু খেলা যায়।
ডাইস আবিষ্কারের ইতিহাস বহু পুরনো ইতিহাস এবং এর উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও মতভেদ রয়েছে।তবে ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা যায় ,সম্প্রতি গবেষকরা লুডু খেলায় ব্যবহৃত ডাইস এর সঙ্গে রোমান সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শনের আবিষ্কার করেছেন।
২৪০০ থেকে ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে রাইন নদীর তীরে রোমান সেনাদের একটি ঘাঁটি ছিল এবং সেই এলাকায় অনুসন্ধানে চালিয়ে পুরনো আমলের সেই ডাইসের সন্ধান পাওয়া যায়। জানা যায়, আবিষ্কৃত এ ডাইসটি প্রায় ১৯০০ বছর আগে ব্যবহৃত হত।
লুডু খেলায় ব্যবহৃত ডাইস এবং গবেষণায় আবিষ্কৃত ডাইস দেখে বলা যায় দুই হাজার বছর সময় অতিবাহিত হলেও ডাইসের কোন পরিবর্তন হয় নি।সংস্কৃতির শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্রায় ৩১ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান গার্নসহেইম থেকে ডাইসটি আবিষ্কৃত হয় এবং গবেষকরা জানায় যে এ ডাইসটি মোটামুটি খ্রিস্টীয় ১২০ সালের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে রোমানরা এ এলাকায় বসতি স্থাপন করে বসবাস করা শুরু করে। এরপর ১৮০০ সাল থেকে এ স্থানটি রোমানদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব ফ্রাঙ্কফুর্টের গবেষক ও খনন দলের প্রধান থামাস মউরর বলেন, আমরা এখন জানি,এখানে গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ বসতি বা ভাইকাস প্রথম শতাব্দী থেকে গোড়াপত্তন শুরু করে এবং তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
গত বছর ২০১৬ সালে এ এলাকায় খননের পর ডাইসটি পাওয়া যায় এবং এখানে একটি দুর্গের ভিত্তিও পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মউরর আরও বলেন, ‘আমরা এখানে সত্যিকার প্রাচীন সম্পদ খুঁজে পেয়েছি, যেমন দুর্লভ হুক, কিছু মুক্তা, বোর্ড গেমের উপাদান (ডাইস, খেলার উপকরণ) ও হাড় দিয়ে তৈরি নারীমূর্তি।
দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে লুডু খেলা বেশ জনপ্রিয়। আর তা খেলতে হলে প্রয়োজন হত বোর্ড ও গুটি ।
লুডু স্টার
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে লুডু খেলায়ও এসেছে পরিবর্তন । কারণ গেইমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান খেলাটি নিয়ে এসেছে আপনার হাতের মুঠোয়, মানে স্মার্ট-ফোনে।বিভিন্ন গেইমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ডিজাইনের লুডু গেইম তৈরি করেছেন ।যার মধ্যে রয়েছে লুডু কিং, লুডু গেইম, লুডু ক্লাসিক, লুডু এন্ড স্নেক্স এবং লুডু স্টার ।প্লে স্টোরে এত এত লুডু অ্যাপ আছে কিন্তু একটিও এই ‘লুডু স্টার’-এর মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।মাত্র কয়েক মাস আগে উন্মুক্ত হওয়া এ গেমটি অক্টোবর পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোর থেকে ১ কোটি বারের বেশি ডাউন-লোড হয়েছে এবং একদিনে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ডাউন-লোড হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।ভারতীয় গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘গেম-বেরি ল্যাবস’ এই ‘লুডু স্টার’ গেমটি তৈরি করে এবং এটিতে মূল লুডু বোর্ড গেমের মতোই উত্তেজনা রয়েছে। কেননা এ গেমটিতে রয়েছে আসল বোর্ড গেমের মতোই সিঙ্গেল ডাইস, ছক্কা এবং রঙিন ঘর।আপনি স্মার্ট-ফোনে ও ফেসবুকে বসে বন্ধুদের সাথে খেলতে পারবেন। এই খেলাতে সর্বোচ্চ চারজন খেলোয়াড় খেলতে পারে। চারজন চার রঙ্গের গুটি ও বোর্ড নিয়ে খেলেন।
লুডু স্টার গেইমটির ফিচারসমূহ:
১. ফেইসবুকে কানেক্টেড হয়ে বন্ধুদের সাথে খেলা যায় ।
২. টিম-আপ করে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানুষদের সাথে খেলা যায় ।
৩. অফ লাইনে একা একাও খেলা যায় ।
৪. খেলায় তিনটি ফরমেট আছে। ক্লাসিক ,মাস্টার ও কুইক । এখানে সর্বনিম্ন ৫০০ কয়েন থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিলিয়ন গোল্ড কয়েন দিয়ে খেলা যায় ।
৫. খেলার সময় খেলার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বন্ধুদের সাথে বাকচিতও করা যায় ।
৬. প্রতিপক্ষের গুটি কেটে যে আগে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে ।
৭. এই খেলার একটি অসাধারণ ফিচার হচ্ছে, প্রতিপক্ষের গুটি কাটার পরে আবার চাল দেয়া যায় ।
গেইমটি আইও-এস ও এন্ড্রোয়েড দুই প্লাটফর্মেই পাওয়া যায় ।
গেম-বেরি ল্যাবস কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ আগারওয়াল এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা আফসার আহমেদ বলেন, “পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা”। শুধু এই একটি গেইম দিয়েই গেম-বেরি কোম্পানি প্রতিদিনের রেভিনিউ ১৪,০৫২ ডলার ।