ইতিহাসের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য আর দুর্ধর্ষ ১০ ডাকাতির ঘটনা

0

মুভি বা চলচ্চিত্রে হয়তো সবাই লোমহর্ষক ব্যাংক ডাকাতি বা জুয়েলারি কোম্পানি লুটপাটের ঘটনা দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে কি কখনো এমন কিছু কল্পনা করেছি? কখনো কি ভেবেছি সত্যিকার অর্থেই এরকম ঘটনা ঘটে আসছে বহু বছর আগে থেকেই ! হ্যা, মুভিতে ঘটে যাওয়া ওইসব আঁতকে উঠার মত ঘটনাগুলো বাস্তব দুনিয়া থেকেই নেওয়া। এই লিস্টে তারই কিছু বর্ণনা রয়েছে। তার আগে বলুনতো,এমন কতজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে যারা জীবনে একবার হলেও প্রচুর অর্থবিত্তের স্বপ্ন দেখেনা? খুব কম বা নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে অধিকাংশ মানুষই কোটিপতি হওয়ার এ স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠেনা। স্বপ্নের লাগাম টেনে ধরার সমস্ত চিন্তাশক্তিকে হয়তো তারা কাজে লাগায় কুখ্যাত
কোন অপকর্মে, বেছে নেয় ডাকাতির পথ । চলুন দেখে নেয়া যাক ইতিহাসের এমনই কিছু অবিশ্বাস্য আর দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা।

১.সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইরাক

বাগদাদ, ইরাক- ২০০৩
পরিমান- $১ বিলিয়ন ।

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
সেন্ট্রাল ব্যাংক
অফ ইরাক

বড় ধরনের অপরাধগুলো সাধারনত মানুষ পরিকল্পনামাফিক করে থাকে, কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ ডাকাতিটা ভিন্ন। এ ঘটনা যতটাই সাধারন ছিল, ঠিক ততটাই ছিল সাংঘাতিক। সাদ্দাম হোসেন তখন ইরাকের প্রেসিডেন্ট, মার্কিন হামলায় দেশটি ছিল বিপর্যস্ত। তিনি পুরো দেশটাকে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করতেন, আর তাই ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যক্তিগত একাউন্ট মনে করলেও কারো আশ্চর্য হবার কথা নয়। কোয়ালিশন ফোর্সের ইরাক আক্রমনের ঠিক আগের দিন, ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ তিনি তার ছেলে কুসে হোসেনকে একটি নোট লিখে ব্যাংকে লুট করতে পাঠান। কুসে হোসেন ১০০ টি বিলনোট লিখে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লুট করে ! কিন্তু আফসোস, এই অর্থ সাদ্দাম হোসেন ভোগ করার সময়ই পাননি, তার আগেই মার্কিন সেনাবাহিনী তাকে গুহার ভেতর থেকে গ্রেফতার করে ফেলে। ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তার প্রাসাদের দেয়াল থেকে উদ্ধার করা হয়, আর বাকি ৩৫০ মিলিয়নের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ধরে নেয়া হয় ডাকাতির ওই অর্থও ডাকাতি হয়ে গেছে !

২.সিটি বন্ড ডাকাতি

লন্ডন,যুক্তরাজ্য- ২ মে,১৯৯০
পরিমান – ২৯২ মিলিয়ন ইউরো।

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
সিটি বন্ড ডাকাতি

দ্বিতীয় বড় ডাকাতিটি ৫৮ বছর বয়সী জন গদার্দ নামক ব্রোকার শেপার্ডের একজন বার্তাবাহকের সাথে সম্পর্কিত । ঘটনার দিন লন্ডনের একটি নির্জন রাস্তায় তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তার হাতে ছিল এক ব্রিফকেস ভর্তি ২৯২ মিলিয়ন ইউরো বা ৩ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা মূল্যের ট্রেজারি বন্ড। ট্রেজারি বন্ড যে বহন করে তাকেই এর মালিক মনে করা হয়, ঠিক ক্যাশ টাকার মত। ডাকাতেরা ছুরির মুখে ফেলে তার কাছ থেকে মোট ৩০১ টি ট্রেজারি বিল লুট করে নিয়ে যায় যার প্রত্যেকটির মূল্য ১ মিলিয়ন ইউরো বা ১২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা করে ! এ ঘটনায় কিথ চিজম্যান নামের এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাড়ে ছয় বছরের জেল দেয়া হয়। পুলিশ ধারনা করে থমাস প্যাট্রিক নামের এক ব্যক্তি এ ডাকাতি পরিচালনা করেছে কিন্তু গ্রেফতারের আগেই এক বন্দকযুদ্ধে সে নিহত হয়। পুলিশ এবং এফবিআই গ্যাংদেরকে সার্চ করে মাত্র দুইটা বন্ড ছাড়া আর একটাও উদ্ধার করতে পারেনি। মজার ব্যাপার হল দ্বিতীয় বৃহত্তম চুরির ঘটনাটা ঘটিয়েছিল ছিঁচকে
চোরের দল।

৩. বোস্টন মিউজিয়াম

বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র-১৯৯০
পরিমান- ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
বোস্টন মিউজিয়াম

এই লিস্টের এটা হল এক শিল্প চুরির শৈল্পিক ঘটনা। ১৯৯০ এর ১৮ মার্চ তারিখে বোস্টনের বিখ্যাত গার্ডনার মিউজিয়ামে পুলিশ অফিসার সেজে দুইজন লোক প্রবেশ করে। সেখানকার অনভিজ্ঞ দুই সিক্যিউরিটি গার্ডকে জানায়, মিউজিয়ামে কারো অবৈধ প্রবেশের আঁচ করতে পেরেছে এবং এটা তদন্ত করা প্রয়োজন। গার্ডদেরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট
দেখায় এবং ভেতরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষন পর জানতে পারে লোক দুইজন আসলে কোন পুলিশ অফিসার নয় কিন্তু তখন তারা হ্যান্ডকার্ফ পরিহিত। অদ্ভুত ব্যাপার হল, কোন অস্ত্রের সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র ছদ্মবেশী সেজে এত বড় একটি ডাকাতি সম্পন্ন করে ফেলে। এরপরের ৮১ মিনিটে ধীরেসুস্হে ছদ্মবেশী দুইজন ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের ১২ টি দেয়ালচিত্র নিয়ে যায়। এটাতো আরো ২০ বছর আগের ঘটনা, তাহলে ভেবে দেখুন বর্তমান সময়ে টাকার অংকটা কত হবে..!
চুরি হওয়া চিত্রগুলোর মধ্যে রেমব্রান্দ আর ভার্মির প্রমিন্যান্ট কিছু শিল্প ছিল। ডাকাতদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৯৪ সালে কাউকে কোন শাস্তি প্রদান না করার শর্তে পেইন্টিংগুলো ফেরত দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল ২.৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি, হদিস পাওয়া যায়নি শিল্পগুলোর । ধারনা করা হয় ডাকাতেরা পেশাদার ছিলনা কারন পেইন্টিংগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যপারে তারা সতর্ক ছিলনা এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিত্র ফেলে রেখে গিয়েছিল। পেশাদার হলে হয়তো আরো যত্ন করেই চুরি করত। পরবর্তীতে শিল্পকর্মগুলোর খোঁজ দেয়ার পরিবর্তে ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষনা করা হয় এবং অথরিটি এটাও বলে যে, তারা কাউকে গ্রেফতার করবেনা। কিন্তু যা গেছে গেছেই, একেবারে লাপাত্তা।

৪. বাগদাদ ব্যাংক ডাকাতি

বাগদাদ, ইরাক-১২জুলাই, ২০০৭
পরিমান- $২৮২ মিলিয়ন।

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
বাগদাদ ব্যাংক ডাকাতি, বাগদাদ,ইরাক

বাগদাদে অবস্থিত দার এস সালাম হল ইরাকের বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। এই দার এস সালাম ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনাটা একটু অদ্ভুত ধরনের। কর্মচারীরা এক সকালবেলা ব্যাংকে কাজ করতে এসে দেখে দরজায় তালা নেই, ভল্ট খোলা এবং সব টাকা পয়সা উধাও। ব্যাংকের তিনজন গার্ড মিলে যে এই ২৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ গায়েব হয়ে গিয়েছে তা কারো বুঝার
বাকি রইলনা। হ্যা, পৌনে তিনশত বিলিয়ন ডলারের বেশি, ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ! ছোটখাট একটা দেশের পুরো বছরের বাজেটেও এত টাকা থাকেনা! ব্যাংকটির ক্যাশে এই বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা কেনো ছিল তা জানা যায়নি, কিন্তু
ধারনা করা হয় মিলিশিয়াদের সাথে ঐ গার্ডদের কোন যোগাযোগ ছিল। চেকপয়েন্টগুলোর কঠোর নিরাপত্তা দৃষ্টি এড়িয়ে এই নগদ ২৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা এমনি সন্দেহের উদ্রেক করে। এই নিকৃষ্ট অপরাধেরজন্য কাউকে বিচারাধীন করা হয়নি এমনকি অর্থের ব্যপারেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ঘটনাটা মিডিয়াতেও খুব একটা তোলপাড় ঘটায়নি!

৫. নাইটসব্রিজ সিক্যিউরিটি ডিপোজিট

যুক্তরাজ্য-১২ জুলাই,১৯৮৭
পরিমান- ৬০ মিলিয়ন ইউরো।

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
নাইটসব্রিজ সিক্যিউরিটি ডিপোজিট

১৯৮৬ সালে ভেলেরিও ভিচেই নামের এক ব্যক্তি ইতালি থেকে ইংল্যান্ডে আসে। নতুন ভূমিতে বানিজ্য করার কথা বলে এক সহকর্মীকে নিয়ে সে নাইটসব্রিজ সেফ ডিপোজিট সেন্টারে ঢুকে একটি ডিপোজিট বক্স ভাড়া নিতে চায়। ভল্টের ভেতরে ঢুকে তারা ম্যানেজার আর গার্ডদেরকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর বাইরে থাকা নিজের আরো সহকর্মীদের ভেতরে ঢুকিয়ে সেন্টারের বাইরে একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় যাতে লেখা ছিল, ডিপোজিট সাময়িকভাবে বন্ধ। তারপর ইচ্ছামত সেফ ডিপোজিট বক্স লুটপাট করে এবং ৬০ মিলিয়ন ইউরোর মত অর্থ চুরি করে নিয়ে যায়। যা বর্তমান অর্থের হিসেবে ১৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। ঘটনার এক ঘন্টা পর্যন্ত পুলিশ খোঁজ পায়নি, পালানোর জন্য তারা প্রচুর সময় পায়।ভ্যালেরিও ল্যাটিন আমেরিকায় পালিয়ে যায় কিন্তু তার সাগরেদগুলো ধরা পরে। এরপর বোকার মত একটা কাজ করে সে। কিছুদিন পর তার প্রিয় ফেরারী কার পুরস্কার নিতে ইংল্যান্ডে ফিরে আসে এবং গ্রেফতার করা হয় তাকে। ২২ বছরের জেল হয় তার। কেউ ভাববে ১৭৪ মিলিয়ন ডলারের একটা অংশ দিয়ে নতুন দুই একটা ফেরারী এমনিই কেনা যেতো, কিন্তু কপালে জেল থাকলে এমনই হয়। যাহোক, ২০০০ সালে ছাড়া পাওয়ার পর ইতালিতে এক বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় এই ভিচ্চেই।

৬. ব্রিটিশ ব্যাংক অফ দি মিডল ইস্ট

বৈরুত,লেবানন- ২০ জানুয়ারি,১৯৭৬
পরিমান- £২৫ মিলিয়ন

মুভিতে নয়, বাস্তবেই ঘটে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দশ ডাকাতির ঘটনা
ব্রিটিশ ব্যাংক অফ দি মিডল ইস্ট বৈরুত,লেবানন

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (PLO) জন্ম হয় ১৯৭০ সালে। ইয়াসির আরাফাতের তত্ত্বাবধানে গঠিত এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ইসরাইলের সাথে তখন গৃহযুদ্ধ চলছে, যেখানে লেবানন হল যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু, ধ্বংসযজ্ঞের কারখানা। একটা যুদ্ধ মানেই প্রচুর রক্তপাত,বিধ্বস্ত জীবন আর অর্থকড়ির অপচয়। এই পিএলও এর একটি গ্রুপ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ডজনখানেক
ব্যাংকে আক্রমন চালায়, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় আক্রমন ছিল ব্রিটিশ ব্যাংক অফ দ্যা মিডল ইস্টে। গ্যাংটি ব্যাংক থেকে ২৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের স্বর্ণ, মূল্যবান রত্ন আর টাকা পয়সা নিয়ে যায়। যা বর্তমান টাকার হিসেবে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭৭০ কোটি টাকার চেয়েও বেশি হবে ! ডাকাত দল প্রথমে বারুদের বিস্ফোরন ঘটিয়ে ব্যাংকের দেয়াল ভেংগে ফেলে যা
পাশের ক্যাথলিক চার্চেও ছড়িয়ে পরে। করসিক্যান লকস্মিথের নেতৃত্বে তারা দুইদিন ব্যাপি ভল্ট থেকে সবকিছু লুট করে । কিছু স্টক অবশ্য পরবর্তিতে তাদের মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল!

৭. শিফল বিমানবন্দরে ডাকাতি

আমস্টারডাম -২৫ ফেব্রুয়ারী,২০০৫
পরিমান- $১১৮ মিলিয়ন।

শিফল বিমানবন্দরে ডাকাতি আমস্টারডাম
শিফল বিমানবন্দরে ডাকাতি আমস্টারডাম

এটা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ডায়মন্ড চুরির ঘটনা। মোট ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮৪৭ কোটি টাকার হিসেব করা গেছে কিন্তু অনেক ডায়মন্ড অপ্রক্রিয়াজাত থাকার কারনে ওইগুলার সঠিক হিসেব মেলেনি। এই তালিকার অন্যান্য ডাকাতিগুলো করতে অনেক নিখুঁত পরিকল্পনা আর ব্যাংক বা দোকানে ভাংচুর করতে হয়েছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘটনার দুইদিন আগেই
৪ জন ব্যক্তি একটা কেএলএম কার্গো ট্রাক এবং ইউনিফর্ম চুরি করে যাতে সন্দেহের চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে এয়ারপোর্টে বাধাহীনভাবে ঘুরাফেরা করতে পারে ( কেএলএম হল ডাচ্ এয়ারলাইন)। ২৫ ফেব্রুয়ারি, চোরের দল একটা কেএলএম ট্রাক ভর্তি ডায়মন্ড নিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য এনটুয়ার্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শত শত মানুষের চোখের সামনে তারা ড্রাইভারদেরকে অস্ত্রের মুখে ফেলে ট্রাক চালিয়ে চলে যায়,কেউ বুঝতেও পারেনি । ব্যাপারটা হচ্ছে যে তারা জানত কোন ট্রাকটা তাদের টার্গেট করতে হবে আর এয়ারপোর্টের এমন নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে কিভাবে চোখের পলকে পালিয়ে গেল! এইআশ্চর্যজনক ব্যাপারে পুলিশ ভেতরের লোকদেরকে সন্দেহ করে। ৬ মাসের মধ্যে এয়ারপোর্টে পরপর অপরাধ সংঘটিত হওয়া এটা ছিল দ্বিতীয় ঘটনা। এই ডাকাতির ঘটনায় মাত্র ৪ জনের নাম থাকলেও সাহায্যকারী সন্দেহে পোর্টের অনেকে গ্রেফতার হয়েছিল।

৮. ইউনাইটেড ক্যালিফোর্নিয়া ব্যাংক ডাকাতি

যুক্তরাষ্ট্র – ২৪ মার্চ, ১৯৭২
পরিমান – $৩০মিলিয়ন।

ইউনাইটেড ক্যালিফোর্নিয়া ব্যাংক ডাকাতি
ইউনাইটেড ক্যালিফোর্নিয়া ব্যাংক ডাকাতি

অন্যান্য ডাকাতির তুলনায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের মূল্যটা আপেক্ষিকভাবে কম মনে হতে পারে, কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে ঘটনাটি ১৯৭২ সালের। সময়ের হিসেবে টাকার অংকটা কোন অংশেই কম নয়। বর্তমান টাকার মূল্যে এটা ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭৭০ কোটি টাকার চেয়েও বেশি হতে পারে। ঐ সময়ে এটা ছিল বিশ্বের শীর্ষ ডাকাতি। ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ আমিল দিনসিও এর অধীনে ৭ সদস্যের একটি দল এ ঘটনা ঘটায়। ক্যালিফোর্নিয়ার লাগুনা নিগুয়ালে অবস্থিত ইউনাইটেড ক্যালিফোর্নিয়া নামের এই ব্যাংকটির একটি ব্রাঞ্চের সেফটি ডিপোজিট বক্সে লুটপাট চালায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এফবিআই এর কাছে ধরা পড়ে। ফিল ক্রিস্টোফার নামে ঘটনায় জড়িত এক ব্যক্তি সুপারফিফ নামে একটি বইয়ে এ ডাকাতি সম্পর্কেলিখেছিল। এফ বি আই এর নিখুঁত তদন্তে ডাকাত দলের গ্রেফতারের সাথে সম্পুর্ন অর্থও উদ্ধার করতে পেরেছিল।

৯. অ্যানটুয়ার্প ডায়মন্ড সেন্টার

বেলজিয়াম-১৬ফেব্রুয়ারি,২০০৩;
পরিমান- $১০০ মিলিয়নেরও বেশি।

অ্যানটুয়ার্প ডায়মন্ড সেন্টার
অ্যানটুয়ার্প ডায়মন্ড সেন্টার

বিশ্বের মোট ডায়মন্ড এর শতকরা ৮০ ভাগই প্রক্রিয়াজাত হয় বেলজিয়ামের অ্যানটুয়ার্পে। ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এই শহরে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ডায়মন্ড চুরির ঘটনা। শহরবাসীর কাছে খুব সহজ শুনালেও মূলত ডাকাতির পরিমান আর প্রক্রিয়া দুটোই ছিল অকল্পনীয়। ডায়মন্ড সেন্টারটি এত বেশি নিরাপত্তাবেষ্টিত যে এখানে এমনকিছু ভাবাই
যায়না, অথচ ডাকাতেরা ১৮৯ টি ডিপোজিট বক্সের মধ্যে ১২৩টিই শূন্য করে দিয়েছিল। চারজনের এই ডাকাত দলের প্রধান হল ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লিওনার্দো নোটাবার্টোলো। কাজটি করতে এদেরকে বছরব্যাপী এক নিখুঁত পরিকল্পনা করতে হয়েছে। তিন বছর আগেই তারা ঐ বিল্ডিং এ একটি অফিস ভাড়া নিয়েছিল যেখানে লিওনার্দো ইতালিয়ান ডায়মন্ড
ব্যবসায়ী হিসেবে সবার আস্থা অর্জন করে নেয়। সে প্রায় সময়ই বিভিন্ন মিটিং ডেকে ছোটখাট চুক্তি করত যাতে কেউ কখনো অবিশ্বাস করতে না পারে। ডাকাতির সময়ে তারা সিক্যিউরিটি ক্যামেরায় ফেইক ট্যাপ এঁটে দেয় । এই ভল্টটি ব্যালজিয়ামের ডায়মন্ড সেন্টার বিল্ডিং এর দুই তলা নিচে, এর লক এর কম্বিনেশন ছিল ১০০,০০,০০,০০০ এর বেশি, ভল্টের ভিতরে ও বাইরে ছিল ইনফ্রারেড হিট ডিটেক্টর, ডপলার রাডার, সিস্মিক সেন্সর,ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। শতাব্দীর দুর্দান্ত ডাকাতির তকমা পায় এই লুটপাট এবং এমন সিক্যিউরিটিকে বৃদ্ধাংগুলি দেখানো কিভাবে সম্ভব হল তা পুলিশ আজো ব্যাখ্যা করতে পারেনি! এত নিখুঁত পরিকল্পনার পরও নোটাবার্টোলো ধরা পড়ে তার ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ এর প্রমানে। তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের হদিস আর পাওয়া যায়নি। মজার ব্যপার হল, লিওনার্দোদাবি করে যে এক ইহুদি ডায়মন্ড ব্যবসায়ী তাদেরকে এই ডাকাতির জন্য ভাড়া করেছিল আর তারা মাত্র ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত চুরি করেছে। কিন্তু পুলিশ ও তদন্তকারীরা এ স্বীকারোক্তি বিশ্বাস করেনি।

১০. হ্যারি উইনস্টন

প্যারিস,ফ্রান্স- ২০০৮
ডাকাতির পরিমান- $১০৮ মিলিয়ন

হ্যারি উইনস্টন প্যারিস
হ্যারি উইনস্টন প্যারিস

২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর, প্যারিসে অবস্থিত এই জুয়েলারির কোম্পানিটিতে ঘটে ভয়ানক ডাকাতির ঘটনা । ৪ জনের একটি দল সেদিন দোকান বন্ধ করার ঠিক আগ মুহূর্তে ভেতরে প্রবেশ করে, তারমধ্যে তিনজন ছিল পরচুলা আর মেয়েদের জামা পরিহিত। দোকানের কর্মীদেরকে অস্ত্রের মুখে ফেলে ডাকাত দলটি ডিসপ্লে কেসের সব হিরা,স্বর্ণ আর মূল্যবান রত্নের অলঙ্কারাদি লুট করে নেয় , তা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি । ডিসপ্লে কেসের ঐ মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান গয়না তাদের জন্য যথেষ্ট ছিলনা,স্টোরেজ এরিয়া পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায়। মোট ৮৩১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার অলঙ্কার চুরি করে। অথচ পুরো ঘটনার সময়ে একটা গুলিও চালাতে হয়নি তাদের ! এই ডাকাতি ঘটনার পরেরদিন হ্যারী উইনস্টন শেয়ার ৯ শতাংশ পড়ে যায়। এর আগের বছরেও ডাকাতি হয়েছিল, আর লুটের পরিমান ছিল ১০ মিলিয়ন ইউরো। কেউ হয়ত ভাবতেই পারেন,
এভাবে প্রতি বছর ডাকাতির মূল্যের বিশাল অংক করার চেয়ে অল্প অংকে কিছু আর্ম গার্ড নিয়োগ করাই যায়! যাক, সে ভিন্ন কথা। এ ঘটনায় ২২ থেকে ৬৭ বছর বয়সী ২৫ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এখানে ভালো লাগার বিষয় হল চোর ডাকাতের মধ্যে কোন বয়সের ফ্রেম নেই !

 

 

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More