জুরাসিক যুগ ও ডায়নোসর-বৃত্তান্ত! (পর্ব-২)
ডিপ্লোডকাডসঃ
বিশালদেহী আরেক প্রজাতির ডায়নোসর হচ্ছে ডিপ্লোকাডস। এরা ছিলো জুরাসিক যুগের শেষদিকের ডায়নোসর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এদের আবাসস্থল ছিলো আমেরিকা মহাদেশ। এরা লম্বায় ছিলো প্রায় ৮৭.৫ ফুট। প্লেটিওসোরাসের মতোই এদের গলা ও লেজের আকৃতি বেশ দীর্ঘ ছিলো। দেহের তুলনায় মাথাটি এতোটাই ছোট ছিলো যে, গলার অগ্রভাগে ক্ষুদ্র মাথাটিকে একটি পুঁটুলির মতো দেখাতো। মাথার খুলি ছোট হওয়ায় এদের মস্তিষ্কও ছিলো বেশ ক্ষুদ্র। তবে এদের চার পা ছিলো হাতির পায়ের মতো ভারি আর মোটা। ডিপ্লোকাডস ছিলো মূলতঃ স্থলজ, তবে বেশিরভাগ সময় এরা পানিতেই কাটাতো। পানিতে থাকা অবস্থায় এরা মাথাটাকে পানির উপর ভাসিয়ে রাখতো আর লম্বা লেজটিকে সাঁতার কাটার কাজে ব্যবহার করতো। এরা ছিলো তৃণভোজী। দাঁত কম ধারালো হওয়ায় এরা নরম উদ্ভিদ ও তৃণ-গুল্ম ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করতো।
প্রোটোসেরাটপঃ
ট্রায়াসিক যুগের ডায়নোসরদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রজাতি হচ্ছে প্রোটোসেরাটপ। প্রোটো মানে হচ্ছে “আদি।” অর্থ্যাৎ এরা ছিলো পৃথিবীর একেবারে শুরুর দিকের ডায়নোসর। তবে এরা ডায়নোসরদের বিলুপ্তির প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলো। দেহের আকারের তুলনায় এরা ছিলো বেশ ভারী। লম্বায় মাত্র ৭ ফুট হলেও এদের দেহের ওজন ছিলো প্রায় ১৮০ কেজির মতো। এদের মাথার খুলি ছিলো কিছুটা লম্বাকৃতির। মাথার পেছনের দিকে ছিলো হাড়ের তৈরি একটি ঝালর, যেটি শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করতো। এদের লেজ ছিলো খুবই শক্তিশালী। এটিও আত্মরক্ষায় বেশ কাজে দিতো।
ট্রাইসেরাটপঃ
বিশাল শিংওয়ালা এক ডায়নোসরের প্রজাতি হচ্ছে ট্রাইসেরাটপ। এরা দল বেঁধে চলাফেরা করতো। এদের দেহ ছিলো হাতির মতো বিশাল এবং বেশ ভারী। এদের ওজন ছিলো প্রায় ৮ থেকে ৯ টন। গলার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত হাড় দিয়ে তৈরি গোলাকার ঝালর ছিলো। মাথার দুইপাশে ছিলো লম্বা দুটি রাজকীয় শিং। নাকের উপরে গন্ডারের মতো আরো একটি খাড়া শিং ছিলো। এসব কারণে এরা দেখতে ছিলো বেশ বিচিত্র ধরণের। এদের চারটি পা-ই ছিলো বেশ ভারি। পায়ের অগ্রভাগের দিকে ছিলো বেশ সুন্দর প্যাঁচানো খুর। এরা ছিলো তৃণভোজী। এরা বেশ বড় বড় উদ্ভিদ খেতে পারতো।
এ্যাঙ্কাইলোসোরাসঃ
আরো একটি বিচিত্র প্রজাতির ডায়নোসর হচ্ছে এ্যাঙ্কাইলোসোরাস। এদের বৈচিত্র্যের প্রধান কারণ হচ্ছে পিঠের উপরে হাড়ের তৈরি এক প্রকার বর্ম। হাড় ছাড়াও পুরোটা বর্ম তীক্ষ্ণ ফলা দিয়ে আবৃত ছিলো। বর্মটি ঘাড়ের শেষভাগ থেকে শুরু হয়ে লেজের অগ্রভাগে গিয়ে শেষ হয়েছে। এদের পিঠ পেছনের দিকে ক্রমশঃ সরু হয়ে লেজের সাথে মিশে গেছে। লেজের অগ্রভাগটি দেখতে গদার মতো। এরা চার পা-বিশিষ্ট প্রাণী। পেছনের পা দুইটি সামনের পায়ের চেয়ে কিছুটা বড়। এরা লম্বায় ছিলো প্রায় ১৫ ফুট। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এদের আবাসস্থল ছিলো উত্তর আমেরিকা।
স্টেগোসোরাসঃ
এরা ছিলো মূলতঃ এ্যাঙ্কাইলোসোরাসের প্রজাতিভুক্ত। এ্যাঙ্কাইলোসোরাসের মতোই এদের পুরো দেহ ভয়ানক কাঁটাযুক্ত হাড়ের বর্ম দ্বারা আবৃত ছিলো। আর লেজের অগ্রভাগে ছিলো তীক্ষ্ণ লম্বা কাঁটা, যা তারা শত্রুর আক্রনণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করতো। তবে এতোসব ভয়ানক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত থাকার পরেও এই ডায়নোসর ছিলো খুব নিরীহ প্রকৃতির। এরা উদ্ভিদ, লতাগুল্ম ইত্যাদি ভক্ষণ করতো। দেহ ভারী থাকায় এদের চলাফেরা ছিলো বেশ ধীরগতির। এদের সামনের পা দুটি পেছনের পায়ের চেয়ে সামান্য ছোট ছিলো। আরা লম্বায় ছিলো প্রায় ২০ ফুট।
ডাকবিল্ডঃ
এরা দেখতে অন্যান্য ডায়নোসর থেকে একটু আলাদা। এদের মাথায় ছিলো হাড়ের তৈরি একধরণের ঝুঁটি।এদের মাথা কিছুটা লম্বা। এছাড়া পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে বড়। তবুও এরা চার পায়েই হাঁটতে পারতো। ডাকবিল্ড ছিলো তৃণভোজী। গাছের ডাল, লতাপাতা ইত্যাদি ছিলো এদের প্রধান খাদ্য। এদের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিলো যে, এদের দাঁত যতোবার পড়তো, ততোবারই গজাতো। তবে এরা ছিলো শান্ত প্রকৃতির ডায়নোসর।
তথ্যসূত্রঃ
বই- ডায়নোসরের পৃথিবী,
ম্যাগাজিন- বিজ্ঞানপত্রিকা
rybelsus online buy – order generic glucovance desmopressin us