মমি বলতে কোন প্রাণী বা মানুষের সেই মৃতদেহকে বুঝায়, যে মৃতদেহ থেকে সমস্ত আর্দ্রতা বের করে দিয়ে শুকিয়ে সংরক্ষণের উপযোগী করে তোলা হয়। মমির কথা উঠলেই মানুষের চোখে ভেসে উঠে হলিউড সিনেমার মমির সংস্করণ- ধাপে ধাপে ব্যান্ডেজে পেঁচানো, হাত দুটো প্রসারিত করে ধীর গতিতে সামনে এগোতে থাকা মানুষের অবয়ব। সিনেমার মত করে হয়ত মমিগুলো জীবিত হয়ে উঠবে না, কিন্তু শুকনো এই মৃতদেহগুলো বেশ বাস্তব এবং মমি ও মমিকরণের পেছনের ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়। আর এই নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

মমি কি?
মমিকরণ এবং এর ইতিহাসের ব্যাপারে জানার আগে আমাদের জানতে হবে মমির ব্যাপারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মমি হল অপচনশীল মৃতদেহ। মমি শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে ল্যাটিন “মুমিয়া” (মধ্যযুগীয় এরাবিয়ান শব্দ “mumiya “থেকে নেয়া) এবং পার্সিয়ান শব্দ “মুম“ (মোম) থেকে যার অর্থ দাঁড়ায় যত্ন সহকারে সংরক্ষিত শবদেহ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে মমি করে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রচলন ছিল। ইনকা, অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী, প্রাচীন ইউরোপিয়ান সভ্যতা সহ আরও অনেক সভ্যতায় মৃতদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার বছর ধরে মমিকরণ প্রথা প্রচলিত ছিল।

কোন সভ্যতার সংস্কৃতিভেদে মমিকরণ প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে। ধারনা করা হয়, কোন কোন রীতিতে পুরো শহরের বাসিন্দাদের মমিকরণ করা হত। আর অন্যান্য রীতিতে মমিকরণ করা হত সমাজের ধনী এবং উচ্চবর্গীয় মানুষদের মৃতদেহ। যেহেতু বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া চরম তাপমাত্রায় বাড়তে পারেনা, সেহেতু মৃতদেহকে সূর্যের প্রচণ্ড তাপমাত্রায় রেখে বা হিমায়িত করার মাধ্যমে যে মমিকরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হত তা অনেকটাই অসম্পূর্ণ একটি প্রক্রিয়া ছিল।
কিছু মমি সৃষ্টি হয়েছিল দুর্ঘটনাবশত। যেমন, গুয়ানাজুয়াতো, মেক্সিকোতে একশ এর বেশি মমির সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের ইচ্ছাকৃত ভাবে মমিকরণ ঘটেনি। ধরে নেয়া হয়, প্রচণ্ড তাপমাত্রা অথবা সেই এলাকার মাটির নিচে বিপুল পরিমাণে সালফার এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের কারণে সেই মৃতদেহগুলো মমিতে পরিণত হয়েছে।

আরও আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেরাই নিজেদেরকে মমিতে রূপান্তরিত করতেন বছরের পর বছর অনশন করে সেই সব খাবার খেয়ে যা খেলে মানবদেহ ক্ষয় হয়। যখন তাদের দেহে আর কোন চর্বি থাকেনা তখন তারা এমন বিষাক্ত কিছু সেবন করে যা খেলে তাদের বমি হয় এবং বমির সাথে দেহের জলীয় অংশগুলো বের হয়ে যায়। বিষাক্ত এই পানীয় দেহকে মৃত্যুর পর পোকামাকড়ের হাত থেকেও রক্ষা করে। প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে সন্ন্যাসীরা নিজেদের মৃত্যু এবং মমিতে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা করে। তাদের মৃত্যু হত ঠিকই, কিন্তু খুব কম সন্ন্যাসীর লাশ মমিতে পরিণত হত।
মমির ধরন
মমি সাধারণত দুই ধরনের হয়- এন্থ্রোপজেনিক মমি এবং স্পন্টেনিয়াস মমি। এন্থ্রোপজেনিক মমি বলতে সেই মমিগুলোকে বুঝায় যেগুলোকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হত। সাধারণত ধর্মীয় কারণে এই ধরনের মমি বানানো হত। স্পন্টেনিয়াস মমি তৈরি হত প্রাকৃতিক ভাবে, প্রচণ্ড গরম বা তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে অথবা বদ্ধ কোন জলাভূমির মত বায়ু শূন্য অবস্থায়। অধিকাংশ মমি ১ম ধরনের অন্তর্ভুক্ত হলেও মমির এই দুই ধরণই একক সংস্কৃতির অংশ। যেমন, প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতি এবং দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্ডিন সংস্কৃতি।

মিশরীয় মমি ইতিহাস
প্রাচীন মিশরে বিশ্বাস করা হত যে, মৃত্যুর পর মানুষ আরেক পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই যাত্রা শেষে পরকালে বসবাসের জন্য তাদের দেহ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। মমিকরণের এই প্রথা মূলত সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের জন্য প্রচলিত থাকলেও মিশরের ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি প্রস্তর ছিল এই অনুশীলন।
প্রথম দিকের মমিগুলো তৈরি করা হত প্রাকৃতিক ভাবে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালের আগের যুগে মিশরীয়রা তাদের মৃতদেহগুলোকে গভীর কোন গুহার ভেতরে কবর দিত। এই গুহাগুলো কখনও কখনও অনেক সংকীর্ণ হত এবং এর ফলে মরুভূমির শুষ্ক ও উত্তপ্ত বালির তাপে প্রাকৃতিক উপায়ে মৃতদেহের মমিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত।

মৃতদেহের ইচ্ছাকৃত মমিকরণ প্রথার চল শুরু হয় মিশরে ২য় রাজশাসন (খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ সাল) চলাকালীন সময়ে। ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক, ম্যাকারি ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এর ১১ বছরের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, অনুমান করা সময়েরও প্রায় ১,৫০০ বছর আগে থেকে মমিকরণের প্রথা চালু হয়। সমৃদ্ধিশালী হওয়ার সাথে সাথে মিশরে মমিকরণ প্রথা হয়ে উঠে সমাজে পদমর্যাদা এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে। সাংস্কৃতিক এই শ্রেণিবিন্যাসের কারণে মিশরে জাঁকজমক সমাধি এবং মমিকরণে আধুনিক পদ্ধতির চল শুরু হয়।

৪র্থ রাজবংশের শাসনামলে (খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ সাল) বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং সুগন্ধি তেল দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ প্রথা চালু হয়। তবে এই প্রথার ব্যাপারে বেশিরভাগ তথ্য এখনও উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি। কিছু ডকুমেন্টে গ্রেকো-রোমান পিরিয়ডে মমিকরণের কথা সরাসরি উল্লিখিত আছে। যে সকল প্যাপিরি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে সেখান থেকে শুধু মাত্র মমিকরনের আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত জানা যায়। দ্য রিচ্যুয়াল অব এম্বলেমিং শীর্ষক বইটিতে মমিকরনের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত কিছু তথ্য আর চিত্র পাওয়া যায় তবে তা অসম্পূর্ণ। আরেকটি পুঁথি যেখানে পরবর্তী সময়ের মমিকরনের প্রক্রিয়া বর্ণিত আছে তা হল হেরোডোটাসের হিস্টোরিস। এই পর্যন্ত মমিকরনের যতগুলো বর্ণনা পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে হিস্টোরিস এর ২য় পর্বে। পুঁথিতে এও লেখা আছে যে প্রাচীন মিশরে মমি তৈরিতে মৃতদেহ শুকাতে ন্যাট্রন ব্যবহার করা হত; তবে বর্ণনা গুলো সংক্ষিপ্ত এবং অস্পষ্ট।
কিভাবে মমি বানানো হয় – মমিকরনের প্রক্রিয়া
মমিকরণের যে পন্থাই অবলম্বন করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য একটাই থাকে, সেটা হল যতটা সম্ভব দেহের চামড়া ও অবয়ব সংরক্ষণ করা। প্রাচীন মিশরীয় পুরোহিতদের মমিকরণে দক্ষতা ছিল বলে ধরে নেয়া হয়। মিশরের গরম আবহাওয়া এমনিতেই মমিকরণের জন্য উপযোগী হলেও পরকালে যাত্রা নিশ্চিত করতে আরও বিস্তারিত উপায়ে মৃতদেহকে মমিকরণ করা হত।
রাজকীয় এবং ধনী ব্যক্তিদের মমিকরণ প্রক্রিয়া নিম্নে দেয়া হল–

১। মৃতদেহটিকে ধুয়ে নেয়া হত।
২। তলপেটের বাম দিকে একটা ছেদ কাটা হয় এবং সেই ছেদ দিয়ে নাড়ীভুঁড়ি, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি বের করে ফেলা হয়। তবে হৃদপিণ্ড, শরীরের যে অংশকে মিশরীয়রা অনুভূতি এবং বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্র মনে করত, রেখে দেয়া হত শরীরের ভেতরেই যাতে পরকালে ব্যবহার করতে পারে। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো বের করার পর ওই কাটা অংশকে তালের মদ দিয়ে পরিষ্কার করে, বিভিন্ন গাছ গাছড়া এবং মসলা দেহের ভেতরে প্রবেশ করানো হত।
৩। হুকের মত একটা যন্ত্র ব্যবহার করা হত মাথা থেকে নাক দিয়ে মগজ বের করার জন্যে। মগজকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হতনা। মগজ নাক দিয়ে বের করে ফেলে দেয়া হত।
৪। শরীর এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ৪০ দিন ন্যাট্রন লবণে মাখিয়ে রাখা হয় যাতে মৃতদেহ থেকে সব আর্দ্রতা বের হয়ে যায়।
৫। শুকনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো লিলেন কাপড়ে পেঁচিয়ে কেনোপিক বয়ামে ভরে রাখা হত। প্রতিটি বয়ামের ঢাকনাগুলো দেবতা হোরাসের ৪ পুত্র- ইমসেটি, হেপি, কেবেসেনাফ, দুয়ামাটেফ এর আদলে তৈরি ছিল।
৬। শরীর থেকে লবণ পরিষ্কার করে শুষ্ক চামড়ায় তেলের প্রলেপ দেয়া হত।
৭। কাঠের গুঁড়া এবং কাপড়ের টুকরা দিয়ে শরীর প্যাঁচানো হত এবং কাটা জায়গাটিকে মোম দিয়ে আটকে দেয়া হত।
৮। তারপর লিলেন কাপড়ের ব্যান্ডেজ দিয়ে ১৫-২০ দিন ধরে প্রায় ২০ ধাপে মৃতদেহটি প্যাঁচিয়ে রাখা হত।
৯। ব্যান্ডেজের উপরে ডেথ মাস্ক বা মৃত্যু মুখোশ বসিয়ে দেয়া হত।
১০। ব্যান্ডেজে মোড়ানো মৃতদেহটিকে একটা বড় কাপড়ের টুকরায় আবৃত করা হত এবং পড়ে তা লিলেন কাপড়ের টুকরার সাহায্যে শক্ত করে বেঁধে ফেলা হত।
১১। সবশেষে মৃতদেহকে নকশাকৃত মমি কেস বা কফিনে স্থাপন করা হত।

উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মমি তৈরিতে প্রায় ৭০দিন লেগে যেত। আর এই উপায়কে মমি বানানোর সবচেয়ে উপযুক্ত এবং ব্যয়বহুল পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা হত। যদিও হেরোডোটাস আরও দুই ধরনের মমি করণের বর্ণনা দেয় তবুও এই প্রক্রিয়া পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
দেশে দেশে মমিকরণ
আফ্রিকা
আফ্রিকা মহাদেশেও মমির সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে কিছু মমির বয়স প্রায় কয়েক হাজার বছর এবং মমির শরীরে ইচ্ছাকৃত এবং প্রাকৃতিক- দুই উপায়েই মমিকরনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

লিবিয়াতে পাওয়া মমির সন্ধান পায় পুরাতত্ত্ববিদ ফাব্রিজিয়ো মোরি। দক্ষিণ আফ্রিকাতে বাভিয়ান্সক্লুফ বনাঞ্চলে ১৯৯৯ সালে ড. জোহান বিনেম্যান একটি মমির সন্ধান পান যার নাম রাখা হয়েছে মোসেস এবং গবেষণা করে বের করা হয়েছে যে, মমিটির বয়স প্রায় ২০০০ বছর।
এশিয়া
এশিয়াতে যে সকল মমি পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই দুর্ঘটনাবশত তৈরি হওয়া মমি। মৃতদেহগুলোকে সেই স্থানেই কবর দেয়া হয়েছিল যে স্থান প্রাকৃতিক ভাবে মমিকরনের জন্য উপযুক্ত। মমিগুলো পাওয়া গেছে তারিম উপত্যকা ও ইরানের মত মরু এলাকায়। যদিও এই মমিগুলো কবর থেকে তোলার পর খুব দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়।

চীনের ইতিহাসেও মমিকরণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চীনের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন রাজশাসনের সময়কার মমির সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের বেশিরভাগই মমিতে পরিণত হয়েছে, পরিণত করা হয়নি। চীনে প্রাপ্ত মমির উদাহরণ রূপে বলা যায় শিন ঝুই এর মমির কথা। লেডি ডাই হিসেবে পরিচিত এই মমি মাওয়াং দুই প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট থেকে আবিষ্কৃত হয় ১৯৭০ সালে। হান রাজশাসন চলাকালীন সময়ে মারকুইস ডাই এর পত্নী ছিলেন তিনি। যদিও তার সাথে আরও এক জনকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, শুধুমাত্র লেডি ডাই এর দেহটিই মমিতে পরিণত হয়েছে। কিভাবে তার দেহটি মমিতে রূপান্তরিত হয়েছিল তা এখন অজানা।
উত্তর আমেরিকা
উত্তর আমেরিকার মমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এবং সুসংরক্ষিত মমি হিসেবে বিবেচনা করা হয় Kwaday Dan Ts’inchi বা “অনেক কাল আগে খুঁজে পাওয়া মানুষ” নামের মমিকে। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে তিনজন ফার্স্ট ন্যাশন’স হান্টার তাতশেনশিনি-আলসেক প্রভিন্সিয়াল পার্ক, ব্রিটিশ কলোম্বিয়া, কানাডায় অবস্থিত হিমবাহের কিনার থেকে এই মমি খুঁজে পাওয়া যায়। রেডিওকার্বণ টেস্ট থেকে ধারণা করা হয় যে, মমিটি সম্ভবত ৫৫০ বছরের পুরনো।
১৯৭২ সালে গ্রিনল্যান্ডের কুইলাকিতসোক নামক পরিত্যক্ত ইনুইট বসতি থেকে খুব সুন্দরভাবে সংরক্ষিত আটটি মমির সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রিনল্যান্ডের মমিগুলোর মধ্যে ছিল ৬ মাসের শিশু, ৪ বছর বয়সী ছেলে এবং বিভিন্ন বয়সের ৬ জন মহিলা যারা প্রায় ৫০০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছিল।
প্রি-কলম্বিয়ান মেক্সিকোতে অ্যাজটেক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মমিকরণ প্রথার প্রচলন ছিল। এই মমিগুলোকে বলা হত অ্যাজটেক মমি। অ্যাজটেক মমিগুলো হাতে বোনা কাপড়ে স্তূপের মত করে প্যাঁচানো থাকতো এবং অনেক সময় মমিগুলোর মুখ আনুষ্ঠানিক মুখোশে আবৃত থাকতো। মেক্সিকোতে আবিষ্কৃত মমিগুলোর মধ্যে গুয়ানাজুয়াতো মমিগুলো বিখ্যাত। এল মুসেও দে লাস মমিয়াস মিউজিয়ামে মমিগুলো ১৯৭০ থেকে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত আছে।
দক্ষিণ আমেরিকা
দক্ষিণ আমেরিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো মমিগুলোর মধ্যে কিছু মমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সবচেয়ে পুরনো চিনচোরো মমিগুলোকে তৈরি করা শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম বর্ষে এবং প্রায় ৩,৫০০ বছর পর্যন্ত এই প্রথার প্রচলন ছিল। ইনকা সভ্যতার মমিগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা অঞ্চলে। এই মমিগুলোকে একত্রে বলা হয় “আইস মমি”। ইনকা সভ্যতার প্রথম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মমি হিসেবে ধরে নেয়া হয় ১৯৫৪ সালে চিলির এল প্লোমো চূড়ায় আবিষ্কৃত একটি ছেলে বাচ্চার মমি। এর দেহাবয়ব থেকে ধারণা করা হয় যে, মমিটি কোন ধনী পরিবারে সন্তানের মমি ছিল। ১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ জোহান রেইনহার্ড মমি জুয়ানিতা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এই মমিকেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুসংরক্ষিত আইস মমি হিসেবে ধরা হত। মমি জুয়ানিতা আবিষ্কৃত হয় আন্দিজ পর্বতমালার আম্পাটো চূড়া থেকে। এই মমির দেহ এমন ভাবে হিমায়িত ছিল যে, মমিটির চামড়া, মাংসপেশি এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মুল কাঠামো অবিকৃত ছিল। ধরে নেয়া হয়, জুয়ানিতাকে দেবদেবীদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল। এমনই আরো অনেকগুলো মমির সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালে যাদের নামকরণ করা হয় লুলাইলাকো মমি।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইটালি সহ আরো অনেকগুলো দেশে মমিকরণ প্রথার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বর্তমান যুগে মমি
বর্তমান যুগে সবচেয়ে জনপ্রিয় মমি হিসেবে রাজা তুতানখামুনের নাম উঠে আসে। রাজা তুত এর সমাধি এবং মমি আবিষ্কৃত হয় ১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ডস কার্টার দ্বারা। আর এই আবিষ্কারের সাথে জরিয়ে আছে বেশ কিছু মৃত্যু এবং অভিশাপের গল্প।

ধর্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচ্য হওয়া ছাড়াও মমি হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অংশ। মমির ধারনার ভিত্তিতে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস রচিত এবং চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। মূলত হরর কোন গল্পের বা সিনেমার ভিলেন হিসেবেই মমির আবির্ভাব ঘটে। আর চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী, ভয়ানক এই খলচরিত্রকে মারার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হল আগুনে পুরিয়ে ফেলা। তবে বাস্তব এবং ভয়ংকর দর্শন হলেও হলিউডে জম্বিদের মত এতটা কুখ্যাতি মমিদের নেই।