আজকালকার যুগে যে দেশের যে উৎসবই থাকুক না কেন সেটা নিয়ে মেতে থাকে সবাই। ব্যাপারটা আসলে এমন হয়ে গিয়েছে, একটা সীমানায় কোন কিছুকেই বেঁধে রাখা যাচ্ছে না, সংস্কৃতির বিশ্বায়ন হয়ে যাচ্ছে। এর যেমন ভাল দিক আছে, তেমনি আছে কিছু খারাপ দিকও আছে। সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য অবশ্য লিখছি না। আজ হ্যালোইন (Halloween) উৎসব, পাশ্চাত্য এই সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের উৎসবমুখর আবেশটা না থাকলেও কৌতুহলটা কিন্তু ষোলআনা। সবথেকে বেশি হ্যালোইন এর ইতিহাস জানার কৌতুহল । চেষ্টা করছি সেই কৌতুহলটা কিছুটা মেটানোর জন্য।
বলছি প্রায় দুই হাজার বছরের আগেকার কথা এক ইন্দো ইউরোপিয়ান জনগোষ্ঠী (ধারনা করা হয় আয়ারল্যান্ড এর অধিবাসী তারা) যাদের কেল্টিক ( এদের প্যাগান রুট আছে বলে মনে করা হয়) নামে ডাকা হত, তাদের ক্যালেন্ডারের নাম গেলিক। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে শীতের শুরু। এই দিন ফসল কাটা শেষ হয় তাদের। এই দিনটাকে বলা হয় সাম-হীন। “সাম-হীন” শব্দটির অর্থ হল End of the summer অর্থাৎ গ্রীষ্মকালের সমাপ্তি। এই কেল্টিক সভ্যতায় সাম-হীন কে মৃত্যুর দেবতা হিসেবে ধরা যেত। আয়ারল্যান্ড শীতপ্রধান অঞ্চল, তো শীতকাল বেশ কষ্টকর ছিল জীবনধারন করার জন্য। তো সেই সময়টাকে তারা অশুভ সময় মনে করত। তাহলে সেই দিনটি হচ্ছে অশুভ সময়ের শুরু। তারা বিশ্বাস করত জীবিত এবং মৃতদের জগতের মাঝে যে সূক্ষ্ম ফাঁক থাকে সেটা এইদিন বিলুপ্ত হয়ে যায়। তো মৃত মানুষ গুলো তখন নেমে আসতে পারে এই জীবিতদের জগতে। পরবর্তীতে এই এলাকা গুলোতে খৃস্টান ধর্ম প্রাধান্য পেলেও এই দিনটিকে এখন তারা সংস্কৃতি হিসেবে ধরে রেখেছে। তাছাড়া ১ নভেম্বর “ অল সেইন্টস ডে” পালিত হয় যা যিশু খৃস্টের জন্য শহীদদের স্মরণার্থে পালিত হয়। তো এই ধর্মীয় উৎসবের আগে সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেই পালিত হয় এই হ্যালোইন ।
আমরা হয়ত সবাই খেয়াল করেছি যে, হ্যালোইন উৎসবে সবাই নানা ধরনের ভৌতিক পোষাক ও মুখোশ পড়ে রাস্তায় বের হয় এবং বাচ্চারা বিভিন্ন ভৌতিক পোষাক পড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি সংগ্রহ করে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? তৎকালীন সমাজের মানুষরা মনে করত যে এইদিন মৃতরা তাদের মাঝে এই পৃথিবীতে তাদের সাথেই ঘুরে বেড়ায়। তো সেই আত্মারা যে তাদের ক্ষতি না করতে পারে, তাদেরকে নিজেদেরই একজন মনে করে সেজন্য তারা বিভিন্ন ভৌতিক পোষাক পড়ে রাস্তায় বের হত। আর এই আত্মাদের সন্তুষ্ট করার জন্যই তারা তাদের বাড়িতে ভৌতিক পোষাকে কেউ এলেই মিষ্টি দিয়ে খুশি করার চেষ্টা করা হত। কেজানে হয়ত এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোন অতৃপ্ত আত্মা।
এবার আসি জ্যাক ও ল্যন্টার্ণ নিয়ে। জ্যাক ও ল্যান্টার্ণটা হচ্ছে মিষ্টিকুমড়োর প্রদীপ। এই কাহিনীটা এসেছে এক আইরিশ রূপকথা থেকে। কেল্টিক বিশ্বাস অনুযায়ী জ্যাক নামের এক প্রতারক একবার ডেভিলকে তার সাথে মদ পান করার জন্য আহবান করল। ডেভিল তার আহবানে সাড়া দিয়ে মদ পান করতে আসলো জ্যাক এর সাথে, মদ পান শেষ করে জ্যাক বললো আমার কাছে তো টাকা নাই তুমি কি নিজে কয়েন হতে পারবে যাতে আমি মদের টাকা শোধ করতে পারি, ডেভিল তাকে বিশ্বাস করে কয়েন হয়ে গেলো, কিন্তু দেখা গেলো জ্যাক তাকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল আর বের করল না। ডেভিল তখন তাকে অনুরোধ করতে লাগল তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। জ্যাক তার কথায় রাজি হলো এই শর্তে যে ডেভিল আর কখনো তাকে বিরক্ত করবেনা এবং তার মৃত্যূর পর তাকে দাবি করবেনা।
একদিন জ্যাক মারা গেলো কিন্তু সে স্বর্গে যেতে পারলনা কারন সে প্রতারক আর ডেভিল তাকে নরকে নিতে পারছেনা যেহেতু সে প্রমিজ করেছ, তখন ডেভিল কয়েক টুকরা জ্বলন্ত কয়লা সহ জ্যাককে ছেড়ে দিলো অন্ধকার ঘরে, জ্যাক সেখানে একটা মিষ্টিকুমড়া দেখতে পেলো যাকে ছিদ্র করে তার ভেতরের সব উপাদান বের করে জলন্ত কয়লা রাখলো এবং সেই থেকে জ্যাক এর আত্মা সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই থেকে এইভাবে মিষ্টিকুমড়োর ভেতর বাতি জ্বালিয়ে এই রূপকথা স্মরণ করা হয়।
এই উৎসবটা অনেকটাই রূপকথা, কিছুটা ইতিহাস। আইরিশরা এই উৎসব শুরু করলেও বর্তমানে এই রূপকথার প্রথা এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দুনিয়ায় বিশ্বায়নের জোয়ারে।