পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় কোন লিগে? টাকার ঝনঝনানি কোন লিগে বেশি? কোন লিগে পাঁচ-ছয়টি দল শিরোপার জন্য লড়াই করে? কোন লিগে যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারে? সবকটি প্রশ্নের উত্তর মনে হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, বলবেন যে কেউ। জানুয়ারি ট্রান্সফার মার্কেট খুলতে না খুলতেই শুরু হয়ে গেছে ক্লাবগুলোর বিক্রিবাট্টা। বড় দলগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি মধ্যম দলেরও ট্রান্সফার আপডেট থাকছে ২য় পর্বে ।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
যাদের কিনেছে এখনওঃ
কেনার দরকার খুব করে হলেও এখনও কাউকে কিনেনি মরিনহো বাহিনী।
যাদের কিনতে পারেঃ
রাইট উইঙ্গার এবং প্লে-মেকার এর বড়ই দরকার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর এই মুহূর্তে। রাইট উইঙ্গার এখন অনেক কমে গেছে। তার মাঝে ম্যালকম, লুকাস মাউরা, মাহরেজ এরা বিদ্যমান। মাহরেজ এর নাম শোনা না গেলেও ম্যালকম বা লুকাস মাউরার যে কোন একজনকে হয়ত কিনে ফেলতে পারে মরিনহো।
সাঞ্চেজ এর ক্লাব ছাড়া মোটামুটি শিওর হয়ে গেছে, এই ফাঁকে হয়ত চুক্তির ৬মাস বাকি থাকা ওজিলকেও টান মারতে পারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মরিনহোর সাথে পুরনো যোগাযোগ তো আছেই তার। জানুয়ারিতে এর বেশি আর কাউকে কেনার কোন জোর সম্ভাবনা নেই মরিনহোর।
যেখানে প্লেয়ার দরকার এখনওঃ
রিবিল্ডিং এর জালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আটকে আছে আজ ৪ বছর হল। এখনও তাদের প্লেয়ার দরকার। গত ট্রান্সফার উইন্ডোতে গ্রিজি এবং পেরিসিচ মরিনহোর লিস্টে থাকলেও দুইজনকেই মিস করেছে তারা। সামনের দিনের জন্য তাদের CAM, CM, Right Back, Left Back এই ৪টি জায়গাতে অবশ্যই প্লেয়ার লাগবে। এর সাথে হয়ত একজন এক্সট্রা CDM লাগবে ম্যাটিচকে বিশ্রামে থাকার কথা চিন্তা করে। ৪/৫টি জায়গাতে নতুন প্লেয়ার দরকার তাদের। কেনাকাটা এই উইন্ডোতেই শুরু করা উচিৎ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর।
যাদের ছেড়ে দিতে পারে/দিচ্ছেঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সাথে চুক্তি নিয়ে বলিবনা হচ্ছে না ফেলাইনির। তার সাপ্তাহিক ১৫০,০০০ ইউরোর দাবীর সাথে মিলছে না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বোর্ডের। ৬মাস বাকি থাকায় হয়ত তাকে বেচে কিছুটা পকেট ভারী করেও রাখতে পারে ইউনাইটেড।
রোমেরোর দল ছাড়ার খুব দুর্বল গুজব থাকলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ক্লাব এ থাকতে তার কোন সমস্যা নেই।
এই হল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কেনাকাটার খবর।
ম্যানচেস্টার সিটি
যাদের কিনেছেঃ
অফিশিয়ালি কাউকে কেনেনি তারা এখনও। কিন্ত ট্রান্সফার মার্কেটে ডিমারজিও কিছু বলা মানে সেটা অফিশিয়াল ধরে নেয়াই যায়। সাঞ্চেজ আসছেন আসন্ন সামারেই। চুক্তি হয়ে গেছে, বাকি শুধু ঘোষণা আসা। কিন্ত আর্সেনাল চাইলে ২০মিলিয়নে এ মাসেই তাকে পাঠিয়ে দিতে পারে সিটিতে।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কেউ না ।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
Inigo Martinez অথবা ইভান্স এর পেছনে খোঁজ নিচ্ছে সিটি। মাঙ্গালা থাকতে হয়ত তারা আসতে চাইবেন না, কিন্ত মাঙ্গালার চলে যাওয়া এই মাসে না হলেও জুনে মোটামুটি সিওর। অর্থাৎ এই দুজনের একজন হয়ত আসবেন।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
সিটির টিম এখন বিশ্বমানের। অ্যাটাকে তার বেঞ্চ যারা গরম করছেন সেই মানের প্লেয়ার অনেক বড় দলের একাদশেও নেই এখন। ডিফেন্স এ সেন্টার ব্যাক এখন তাদের দরকার। মাঙ্গালার টিম এর সিস্টেম এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না, তাকে হয়ত ছেড়ে দেব। পুরনো সেনানী কোম্পানির বিকল্প খুঁজতে হবে তাদের। মেন্ডি আসার আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর মত কোন লেফট ব্যাক পেলেও মন্দ হয়না তাদের, সিএসকে এর একজনের সাথে মিডিয়ার হালকা লিঙ্ক করার খবর ছিলও। তবে আপাতত সেন্টার ব্যাক ছাড়া তাদের তেমন কাউকে দরকার নেই।
লিভারপুল
যাদের কিনেছেঃ
ভার্জিল ভ্যান ডাইককে রেকর্ড ৭৫মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে। গত ট্রান্সফার সিজনে না পারলেও এবার ঠিকই নিয়ে এসেছে তারা। তিনিই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
কৌতিনহোর বিকল্প হিসেবে মাহরেজকে ভেবে দেখছে লিভারপুল। গোরেটজকার কথা ভাবলেও তাকে আপাতত পাচ্ছেনা তারা। রোমার গোলকিপার অ্যালিসন এর দিকেও তাদের নজর রয়েছে পিএসজি এর সাথে সাথে।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কৌতিনহোকে রেকর্ড ১৬০মিলিয়ন ইউরোতে বেচে দিয়েছে তারা বার্সার কাছে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
একজন গোলকিপার, সেন্টার ব্যাক, সিএম।
চেলসি
যাদের কিনেছেঃ
রস বার্কলিকে এভারটন থেকে ১৫মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে এনেছে তারা। এই বাজারে নিতান্তই নামমাত্র মূল্যে এনেছে তারা।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
বেশ কয়েকজন প্লেয়ার এর সাথে চেলসির নাম শোনা যাচ্ছে। লিওন বেইলির সাথে বেশ ভালো গুঞ্জন উঠেছে। সম্প্রতি অ্যান্ডি ক্যারলের সাথেও কথা শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে। হ্যাজার্ড এবং কোর্তোয়ার সাথে রিয়াল মাদ্রিদের গুজব ওঠার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে বোর্ড। গত উইন্ডোতেই স্যান্ড্রোকে কেনার জন্য দামাদামি না মিললেও এবার আবারও পালে হাওয়া লাগলেও এখন তা স্তিমিত।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
ডিয়েগো কস্তাকে তার পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিক মাদ্রিদ এর কাছে বেচে দিয়েছে তারা। ক্লার্ক সল্টার কে সান্ডারল্যান্ড এর কাছে লোণে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
সেন্টার মিড। ফ্যাবরেগাস অফ ফর্ম এবং বয়সের এর চিন্তা করে বিকল্প হয়ত চেলসি খোঁজা শুরু করেও দিয়েছে।
আর্সেনাল
যাদের কিনেছেঃ
পাস জিয়ান্নিনা থেকে সেন্টার ব্যাক কন্সটান্টানোস মাভ্রোপানোসকে দলে এনেছে তারা।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
অফিশিয়ালি কেউ না হলেও সাঞ্চেজ সামারে চলে যাচ্ছেন ধরে নেওয়াই উত্তম।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
সাঞ্চেজ এর চলে যাওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর আবারও মোনাকোর থমাস লেমার এর পিছনে লাগতে যাচ্ছে আর্সেনাল। এছাড়াও লেমারকে না পেলে ব্যাকআপ হিসেবে বায়ার লেভারকুসেনের উইঙ্গার লিওন বেইলির পেছনে লাগবে তারা। বেইলির বাজার মূল্য ৪০মিলিয়ন ইউরো বলে ধারনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জনি ইভান্সকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়ার খবর টাউর হয়েছে। সিটিও চায় ইভান্সকে। এলনেনি, ককিউলিন কে দলে চাচ্ছেন ময়েস, এদের কেউ যদি ক্লাব ছাড়েন তাহলে হয়ত মিড এ একজনকে অবশ্যই কিনবেন ওয়েঙ্গার। ইভান্সের জন্য ম্যাথিউ ডেবুচি এর সাথে টাকা অফার এর কথা ভাবছে আর্সেনাল। সাঞ্চেজ এর প্রস্থান এর সাথে ডিফেন্স এর দুর্দশা মিলিয়ে ব্যস্ত একটি ট্রান্সফার সিজন যাচ্ছে হয়ত আর্সেনাল এর সামনে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
সেন্টার ব্যাক, লেফট ব্যাক, সিডিএম, লেফট উইং, সিএম।
এভারটন
যাদের কিনেছেঃ
কেঙ্ক টসুন। বেসিকতাস এর এই ফরওয়ার্ড কে ২২মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে এনেছে তারা। কালভার্ট লুইস লেউইন বা নিয়াস নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কোচ। লুইসের জন্য ১৩মিলিয়ন দাম হাকিয়েছে তারা। লোণ শেষে দলে ফিরেছেন সেন্টার মিড কনর গ্রান্ট।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
রস বার্কলি (চেলসি) ১৫মিলিয়নের বিনিময়ে এবং কেভিন মিরালাসকে লোণে পাঠানো হয়েছে অলিম্পিয়াকস এর কাছে।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
নিস এর ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ডার সেরি এর উপর নজর দিয়েছে তারা। এনজনজি, ওয়ালকট এর সাথে খুব হালকা লিঙ্কড খবর পাওয়া গিয়েছিল।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
দুই জন সেন্টার মিড
টটেনহ্যাম হটস্পার
যাদের কিনেছেঃ
কেউ না।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কেউ না।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
পচেত্তিনো রস বার্কলিকে মিস করার পর এখন বার্সার আন্দ্রে গোমেজের দিকে হাত বাড়িয়েছেন। রায়ান সেসেঙ্গনকে চাইলে হয়ত পিএসজি এর সাথে যুদ্ধ করতে হতে পারে তাদের। কোন ফ্রেঞ্চ পত্রিকা নয় কিন্ত ইংলিশ ২/১টি পত্রিকার মতে ম্যালকম এর দিকে নজর রাখছে স্পার্সরা।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
সিডিএম এবং সিএম।
সাউথহ্যাম্পটন
যাদের কিনেছেঃ
কেউ না।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
ভার্জিল ভ্যান ডাইককে রেকর্ড ৭৫মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বেচে দিয়েছে তার।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
আর্সেনাল এর ওয়ালকটকে কেনার ব্যাপারে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আর্সেনাল এর এখন কিছুটা ব্রাত্য ওয়ালকট। ফরওয়ার্ড এর দুর্দশা তাদের চলছেই। তারই সুবাদে গিডিওন ক্যারিল্লিও এর সাথেও শোনা যাচ্ছে রিউমার।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
রাইট ব্যাক, সিএম।
বেশিরভাগ ক্লাবই উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডোতে প্লেয়ার কিনে না। এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে অবশ্য। আগামি বিশ দিন হয়ত আরও অনেক চমক আসবে যাবে, পাশার ডান উল্টে যাবে। শীতে জমে যাওয়ার অবকাশ হয়ত দেবে না ক্লাবগুলো।
তথ্যসূত্রঃ
টুইটার, RMC, BBC, SkySports, ESPN, Di Marzio