গেম অফ থ্রনস সিরিয়ালের জনপ্রিয় একটি উক্তি ছিল “উইন্টার ইস কামিং”। গেল সিজন যাওয়ার পর যেটি রুপ নিয়েছে “উইন্টার ইস হেয়ার” এ। দেশে চলছে তীব্র শীত। শীতের মৌসুমে ইউরোপে আবার চলছে ট্রান্সফার সিজনের গরমকাল। গরম এখন ট্রান্সফার মার্কেটও। আগুনটা তো গেল জুলাইতে নাসের আল খেলাইফি সাহেবই লাগিয়ে দিয়েছেন। উত্তাল এই ট্রান্সফার মার্কেটে মোটামুটি বড় সবগুলো দলই সক্রিয়।
ট্রান্সফার মার্কেটে কার কথা বিশ্বাস করবেন? সাধারণত ট্রান্সফার মার্কেটের খবর কিছুটা হলেও গুজব আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেটারই ফায়দা নিয়ে অনেকেই অনেক আকাশ কুসুম লিখে ফেলেন। যেনতেন একটা গুজব এর সাথে কয়েকটি দলের নাম বসিয়ে দিতে পারলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল। সেসব ক্ষেত্রে অনেক সময় নিজেই দেখে বুঝতে পারবেন যে কত বড় বানোয়াট খবর। ডি মারজিও, বউহাফসি এর মত কিছু নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক, ওয়েবসাইট এর ভিত্তি করে ইউরোপের বড় কিছু দলের কেনাকাটার খবর, কাকে কিনছে আর কাকে বা ছেড়ে দিচ্ছে, কাদের কিনতে পারে, ক্লাব সিইও/কোচের মন্তব্য কি সেসব নিয়ে কিছু আলোচনা থাকছে আজ রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, পিএসজি, ডর্টমুন্ড এবং বায়ার্ন মিউনিখ নিয়ে। পরের পর্বে থাকবে ইপিএল এর ক্লাবগুলো।
বার্সেলোনা
যাদের কিনেছে এখনওঃ
জানুয়ারিতে বড় সাইনিং করা যায়না, প্লেয়াররা ইউসিএল কাপ টাইড থাকে, টিম মাঝ পথে এসে প্লেয়ার ছাড়তে চায়না এইসব যুক্তিকে মুলো দেখিয়ে বার্সা কৌটিনহোকে কিনে ফেলল তাও আবার নিজেদের ক্লাব রেকর্ড দামে!!! এবার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সক্রিয় এই বার্সাই। জুন-জুলাই ট্রান্সফার মার্কেটে ভেরাত্তির পিছনে লেগে নেইমারকেই হারিয়ে ফেলেছিল বার্সা। কৌটিনহোকে চেয়েও পায়নি সেবার। রিজেক্টেড হয়েছিল ২দফা। এবার আর আটকে রাখতে পারলনা লিভারপুল।
কৌটিনহোকে €১২০ মিলিয়ন দামে কিনেছে বার্সা। appearance + trophy এর উপর ভিত্তি করে আরও €৪০ মিলিয়ন দেবে পরে। কৌতিনহোকে কেনার সাথে সাথে এই সিজন শেষেই চলে যাওয়া মাশ্চেরানোর বদলি হিসেবে ইয়েরি মিনা কে লাস পালমাস থেকে €৯ মিলিয়ন এর বিনিময়ে কিনে নিয়েছে। যদিও গত জানুয়ারিতেই প্রি-ডিল করা ছিল এটা।
যাদের কিনতে পারেঃ
সুয়ারেজ এর দিন ফুরিয়ে আসছে, তার বদলি হিসেবে হয়ত বার্সা গ্রিজিকে ধরেও রেখেছে। সিমিওনের কথাতেও বোঝা যাচ্ছে এই ৬ মাসই আর আছেন গ্রিজি। বার্সা এই মাসেই কিনে ফেলত যদি না বাই আউট ক্লজ ২০০ মিলিওনের ঘরে না হত।
পুরানো সেনানী মাসচেরানোর চলে যাওয়াতে তার স্থলে আরেকজন আসবেন। জুনে বার্সায় গ্রিজি যোগ দিচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর আগ্রহ কমে যাওয়াতে গুঞ্জনের পালে হাওয়া লেগেছে বেশ ভালোই। জুনে যে আরও একটি বড় সাইনিং হবে তা তো আশা করাই যায়।
যেখানে প্লেয়ার দরকার এখনওঃ
র্যাকিটিচ এর বিকল্প, সুয়ারেজ ফুরিয়ে আসছেন। এছাড়া বার্সা টিম এখন যথেষ্ট ব্যালান্সড। ইনিয়েস্টার জায়গা কৌটিনহো ভালোভাবেই নিতে পারবে। সুয়ারেজ এর জায়গায় হয়ত মেসি আবারও তার সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশন এ আবারও ফেরত চলে যাবেন। পাউলিনহো, কৌটিনহো, ইয়েরিমিনার জন্য non-eu কোটার জন্য এখন আর্থারকে আনা যাচ্ছেনা। সামনের ট্রান্সফার সিজনে হয়ত আনবে। এই হল বার্সার কেনাকাটার খবর। কিছু প্লেয়ার হয়ত ছেড়ে দিতে পারেন তারা এর বাইরে।
রিয়াল মাদ্রিদ
যাদের কিনেছেঃ
একটা সময় ছিল যখন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ট্রান্সফারগুলো শুধু মাদ্রিদই করত। এখন সেসব অতীত মনে হচ্ছে। বার্সাই বরং এখন লামাসিয়ার সুফল আর না পেয়ে ছুটছে মাদ্রিদের আগের দেখানো পথে। রিয়াল গত ট্রান্সফার সিজনে মোরাতা এবং জেমস রদ্রিগেজকে ছেড়ে তাদের বিকল্প হিসেবে তেমন কাউকে না কিনে হতাশ করেছিল সমর্থকদের। ফলটাও পেয়ে গেছে তারা যা বার্সার থেকে ১৬ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকাই বলে দিচ্ছে। বেঞ্জেমার মিস সহ্য করতে হচ্ছে রাতের পর রাত, সাথে রন এর হঠাৎ গোলখরা, এলোমেলো অচেনা এক ডিফেন্স। এমন অবস্থায় কাউকে কেনা হয়ত তাদের জন্য ফরয হয়ে গেছে। কিন্ত জিদান বা পেরেজ সম্ভবত এই টিম এর উপরেই ভরসা রাখবেন আরও। টানা দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা টিম এ যোগ হয়েছিল থিও, সেবায়স, মায়োরাল মত তরুনতুর্কীরা। সমর্থকরা ধরেও নিয়েছিল ভালো আরেকটি সিজনের। কিন্ত হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। কেপা ছাড়া এখন পর্যন্ত কাউকে কিনেনি তারা। তাও কেপা জুনের আগে দলে যোগ দিচ্ছেন না আর। জিদানও বলে দিয়েছেন যে তার আর গোলকিপার এর প্রয়োজন নেই। ডেগিয়া তাহলে আর হচ্ছে না বলাই যায়।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কাউকে না কিনলেও কাউকে ছেড়েও দেয়নি এখনও মাদ্রিদ। ছাড়ার কথাও না কাউকে আপাতত। ইঞ্জুরি এবার বেশ ভুগিয়েছে মাদ্রিদকে, অর্থাৎ ছাড়ার সম্ভাবনা বেশ কম।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
বেঞ্জেমার প্রতি জিদানের অগাধ বিশ্বাস ব্যাকফায়ার করেছে। এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাই ফরওয়ার্ড এর ব্যাপারে খোজ ও নিয়েছে। ২~৩ বছর হল ফর্মে থাকা ইকার্দি, নতুন সেনসেশন টিমো ওয়ার্নার এর ব্যাপারে খোজ নিলেও তাদের ক্লাব থেকে বলে দেওয়া হয়েছে এবার হচ্ছেনা। ইন্টারমিলান বহু বছর পর শিরোপার জন্য এভাবে লড়তে পারছে। এমতাবস্থায় টিম ক্যাপ্টেন তথা ফরওয়ার্ড হারানোর মানেই হয়না। সামনের মৌসুমে তাই আবারও ইকার্দিকেই হয়ত টার্গেট করবে লস ব্লাঙ্কোসরা।
ইডেন হ্যাজার্ড এর বাবা বলেছেন যে “হ্যাজার্ড চেলসির সাথে ২দফা চুক্তি নাকচ করেছেন, কারণ সে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে প্রস্তাব আশা করছে”। রন এর বয়স হয়ে যাচ্ছে, কে জানে পেরেজ হয়ত হ্যাজার্ড এর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ নজর দেবেন আবারও। বলা যায়না স্পার্স থেকে হয়তবা জুনের শেষ মুহূর্তে কেনকেও উরিয়ে আনতে পারে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
১জন ফরওয়ার্ড, ১জন সেন্টার ব্যাক, রোনালদোর মত একজন গেম চেঞ্জার।
এসি মিলান
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
গত ট্রান্সফার উইন্ডোতে এক ঝাঁক প্লেয়ার কেনার পর এবারও সরগরম। একজন মিডফিল্ডার চেয়েছেন কোচ। সম্ভাব্য নাম মউসা ডেমবে্লে এবং এন জনজি। যদিও এসি মিলান এর স্পোর্টিং ডিরেক্টর ম্যাস্যামিলিয়ানো মিরাবেলে জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডো নিয়ে বলেছেন “I am only working to sell.”
যাদের কিনেছেঃ
এখন পর্যন্ত কেউ না। লোণ থেকে ফেরত এসেছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সসা।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কাউকে না ছাড়লেও আন্দ্রে সিলভার জন্য কোন ভালো অফার এলে তাকে ছেড়ে দেবে। লোকাতেল্লিকে লোণে পাঠানো হতে পারে। ডোন্নারুম্মা এবং বনুচ্চি এবারের মত থেকে যাচ্ছেন।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
একজন পারফেক্ট ফরওয়ার্ড, ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার। গোল করার মত প্লেয়ার নেই। তাদের এবার সর্বোচ্চ গোল করেছেন কুট্রোন(৯) যা লিগের অন্যদের তুলনায় অনেক কম।
ইন্টার মিলান
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
স্পালেত্তি বলেছেন “এমনকি আমার ৮০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ মা যিনি বাড়িতে বসে আছেন তিনিও জানেন যে এই মুহূর্তে আমার একজন সেন্টার ব্যাকের প্রয়োজন” টার্গেট হিসেবে আছেন বরুসিয়া মনচেনগ্লাডবাক এর সেন্টার ব্যাক জ্যানিক ভেস্টগার্ড এর নাম। দাম পড়তে পারে £১৫ মিলিয়ন। স্পারস ও আর্সেনাল এরও নজর রয়েছে তার উপর। এর বাহিরে রামিরেসকে লোণে নিয়ে আসার চিন্তা করছেন স্পালেত্তি, হাভিয়ের স্তোরে,মিখিতারিয়ান,দেলোফিউ এর নাম ও শোনা যাচ্ছে।
মিখিকে তারা লোণে চাচ্ছে কারণ ঐ পরিমাণ টাকা আপাতত দিতে পারছেনা তারা এফএফপি এর জন্য।
যাদের কিনেছেঃ
সদাইপাতি করার আগেই ফেসে গিয়েছে ইন্টার। এফএফপি এর জন্য তাদের ব্যয় করার আগে কিন্ত বিক্রিবাট্টা করে টাকা তুলতে হবে। তাই আপাতত কাউকে কিনেনি তারা।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
জোয়াও মারিয়াওকে ছাড়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে। প্লেয়ার বেচে টাকা বের করার জন্য হয়ত আরও ১-২ জনকে ক্লাব ছাড়তে হতে পারে।ইকার্দিকে আপাতত আটকে রাখতে পারছে তারা।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
একজন মিডফিল্ডার খেলা কন্ট্রোলে রাখতে পারবে এমন এবং সেন্টার ব্যাক।
বায়ার্ন মিউনিখ
যাদের কিনেছেঃ
সান্ড্রো ওয়াগ্নার(সেন্টার ফরওয়ার্ড) কে ১৩মিলিওন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে বায়ার্ন। লেওয়ানডস্কির বিশ্রামের জন্য বেশ ভালো একটি সাইনিং
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
কাউকেই নয়।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
তরুন জার্মান গোরেটজকাকে ফ্রি ট্রান্সফারে দলে ভেরাবে বায়ার্ন খুব সম্ভবত। লিভারপুল এর অনেক আগ্রহ থাকলেও তারাও সরে এসেছে। রাস্তা এক প্রকার পরিষ্কার এখন।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিতঃ
আরিয়েন রবেন এর বদলি।
পিএসজি
যাদের কিনেছেঃ
কাউকেই নয় তার মানে কাউকে বিক্রি করার আগ পর্যন্ত কিনতে পারছে না তারা আপাতত।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
২১বছর বয়সী গোল কিপার রেমি দেশাম্পস কে ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এছাড়াও গোলী কেভিন ট্র্যাপকে লোণে ডিলে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে tyneside. জানুয়ারির শেষে ৭৫মিলিওন ইউরো তাদের প্লেয়ার বেচে পাওয়া হিসেবে উয়েফাকে দেখাতে হবে, যেখানে খুব বড় সমস্যা চলছে বলা যায়। ডি মারিয়া-লুকাস মাউরা-পাস্তোরে কে বেচে এই টাকা তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
লুকাস মাউরা কে সিজনের শেষ পর্যন্ত হয়ত লোণে নিতে পারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, কিন্ত সম্ভাবনা কম অনেক।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
ফেলাইনিকে ফ্রিতে দলে টানার চেষ্টা চলছে সামনে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর মিডফিল্ডার 150k/week চাচ্ছেন কিন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তা দিতে নারাজ। টালবাহানার ফ্রি সুযোগ নিতে চায় পিএসজি। এবার না হলেও জুন-জুলাইতে হয়ত হয়েও যাবে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
অ্যাটাকে তেমন কাউকে দরকার নেই তাদের। সিডিএম পজিশন এ একজনকে আর ভালো একজন গোলকিপার পেলেই হয়ে যাবে তাদের।
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
যাদের কিনেছেঃ
কাউকেই নয়।
যাদের ছেড়ে দিয়েছেঃ
পিয়েরে আউবামেয়াং কে গুয়াংঝু এভারগ্রেনেড এর কাছে ৭২ মিলিওন ইউরোর বিনিময়ে চুক্তি করে ফেলেছে দুই ক্লাব। বুন্দেসলিগা সিজন শেষে তিনি যোগ দেবেন।
যাদের কিনতে পারে বলে গুজব রয়েছেঃ
বোর্দোর উইঙ্গার ম্যালকমকে সাইন করাতে আগ্রহী ডর্টমুন্ড সান পত্রিকার মতে।
যেখানে প্লেয়ার কেনা উচিৎঃ
আউবামেয়াং চলে গেলে অবশ্যই তাদের একজন ফরওয়ার্ড কিনতে হবে। লেওয়া যাওয়ার পর খুব বিপদে পরেছিল তারা।
পরের পর্বে থাকবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর সদাইপাতি নিয়ে।
নিউজ সোর্সঃ
১. টুইটার
২. the sun
৩. www.skysports.com
৪. www.espnfc.com
৫. DiMarzio
side effects of stopping zetia
social anxiety disorder wellbutrin
zyprexa weight gain prevention
drug category for zofran