স্মৃতিগুলো এখনো ঝাপসা হয় নি। চোখ বন্ধ করলে এখনো চোখের সামনে দৃশ্যপট গুলো স্পষ্ট ভেসে উঠে। এই যেন কয়েকদিন আগে ঘটে গেলো ঘটনা গুলো। ডি বক্সের বাইরের ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে দৌড়ে এসে লিওনেল মেসির বা পায়ের বাঁকানো শটে করা ৯০ মিনিটের গোলটি, কিংবা ডি বক্সের বাইরে থেকে করা হামেস রদ্রিগেজের দূর পাল্লার ভলি অথবা নিজেকে শূন্যে ভাসিয়ে দিয়ে ঠিক যেনো পাখির মতো উড়ে গিয়ে করা রবিন ভ্যান পার্সির মনোমুগ্ধকর গোল, ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আর্জেন রবেনের উপর করা মাশ্চেরানোর সেই দুর্দান্ত ট্যাকেল বা ফাইনাল ম্যাচে এক্সট্রা টাইমে করা মারিও গোতজের গোল। সব গুলো স্মৃতিই এখনো একদম টাটকা।
এতোটাই টাটকা যে, বিশ্বাসই হতে চায় না ঘটনা গুলো চার বছর আগের। সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে চার চারটি বছর। দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্বকাপ। প্রতিবারের মতো এবার ও ফুটবল প্রেমীদের দিয়ে যাবে সারাজীবন মনে রাখার মতো আরও কিছু স্মৃতি। ইতিমধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সমর্থকদের মধ্যে। প্রস্তুতি চলছে বাড়ির ছাদে নিজ সমর্থিত দলের পতাকা লাগানোর। এ যেনো এক প্রতিযোগিতা। এলাকার চায়ের টং গুলো আবার কিছুদিনের জন্য রাজনৈতিক আলোচনা কে পাশে রেখে ফুটবল তর্কে মেতে থাকবে। এ যেন এক অন্যরকম উন্মনা।
আর মাত্র ১ মাস পরেই জুনের ১৪ তারিখ মাঠে গড়াচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই ফুটবল টুর্নামেন্ট। এবছর টুর্নামেন্ট টি আয়োজন করবে রাশিয়া। প্রতিবছরের মতো এবারো ৩২ টি দল অংশগ্রহণ করবে এবং তাদের ভাগ করা হয়েছে ৮ টি গ্রুপে। লটারির পর গ্রুপ পর্বেই আমরা পেতে যাচ্ছি কয়েকটি আকর্ষণীয় ম্যাচ। ম্যাচের ৪-৫ মাস আগে থেকেই এই ম্যাচগুলো উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফুটবল ভক্ত রা মুখিয়ে আছে ম্যাচ গুলো উপভোগ করার জন্য।
সেরকম কয়েকটি ফিক্সচারই আজকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো, যেগুলো ফুটবলপ্রেমীরা কখনোই মিস করতে চাইবেন নাঃ
পর্তুগাল বনাম স্পেন
১৬ জুন
ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম, সচি
গ্রুপ বি
ম্যাচ টি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায়।
এই ম্যাচ সম্পর্কে বেশী কিছু বলার প্রয়োজন নেই। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের মুখোমুখি হবে সদ্য ইউরো ২০১৬ জিতে আসা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। রামোস, ইনিয়েস্তা, ইস্কো, ডে হায়া, পিকে, এসেন্সিও দের নিয়ে গড়া শক্তিশালী স্পেন দল শিরোপার অন্যতম দাবিদার। খাতা-কলমের হিসেবে রোনালদো, ন্যানি, মৌতিনহো, পেপে দের নিয়ে পর্তুগাল দল ফেভারিট টিম না হলেও অনেকের বাজি থাকবে পর্তুগালের দিকেই। কেননা এই দলে আছেন ৫ বার বিশ্বসেরা হওয়া ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বিশ্বকাপ ছাড়া সম্ভাব্য সব শিরোপাই নিজের করে নিয়েছেন এই পর্তুগীজ, তাই বিশ্বকাপ জিততে নিজের সেরা টা দিবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ওয়ান ম্যান আর্মি বলা হলেও দল হিসেবে তারা কতোটুকু পরিণত সেটার প্রমাণ গত ইউরো কাপেই রেখেছে তারা। এছাড়া স্পেনের সাথে পুরনো কিছু হিসাব কিতাব তো বাকী আছেই পর্তুগীজ দের। এই স্পেনের কাছে হেরেই ২০১০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্ব থেকে এবং ২০১২ ইউরোর সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো তারা। তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে তারা। অন্যদিকে স্পেন ও ছেড়ে কথা বলবে না। শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রথম বাধা এই পর্তুগালকে তাই উড়িয়ে দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করতে চাইবে রামোস ইনিয়েস্তারা। সর্বোপরি ফুটবল ভক্ত রা এখন থেকেই দিন গুনছে এই ম্যাচটির।
ইংল্যান্ড বনাম বেলজিয়াম
২৯ জুন
কিলিনিংগ্রাদ স্টেডিয়াম, কিলিনিংগ্রাদ
গ্রুপ জি
ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায়।
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। তারকা মহাতারকাদের দিয়ে গড়া এই দুইদলের খেলার উপর দর্শকদের চোখ গ্রুপ পর্বের ড্র এর পর থেকেই। বিশেষভাবে বলতে গেলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সমর্থকদের উত্তেজনা টা যেনো কয়েকধাপ উপরে। হবেই বা না কেনো? এ যেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অল স্টার ইলেভেন ম্যাচ। প্রিমিয়ার লিগের মাঠ মাতানো সব ফুটবলার রাই খেলবেন এই ম্যাচে। চেলসির ইডেন হ্যাজার্ড ও থিয়াবু কর্তোয়া, ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইন ও ভিনসেন্ট কোম্পানি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রোমেলু লুকাকু ও মার্লন ফেলাইনী, টটেনহ্যাম হটস্পারের ভার্টংহেন, এল্ডারউইরেল্ড, এবং মুসা ডেম্বেলে, এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ান বেন্টেকে ওরিগি সহ আরো অনেক বেলজিয়ান ফুটবলার খেলেন এই লিগে। ইংলিশ ফুটবলার রাও প্রায় সবাই খেলেন এখানে। তারা নিয়মিত একে অপরের মুখোমুখি হন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্লাব ফুটবলের সতীর্থ রা এখানে হয়ে যাবেন প্রতিপক্ষ এবং প্রতিপক্ষ রা হয়ে যাবেন সতীর্থ। সর্বোপরি, একটি জমজমাট খেলার অপেক্ষায় পুরো ফুটবল বিশ্ব।
আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া
২২ জুন,
নিঝনী নভগরদ স্টেডিয়াম।
গ্রুপ ডি।
রাত ১২ টা (বাংলাদেশ সময়)
শক্তির বিচারে হয়তো আর্জেন্টিনার চেয়ে ক্রোয়েশিয়া তুলনামূলক দুর্বল। কিন্তু লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিটিচ, ইভান পেরিসিচ, মারিও মানজুকিচ, মাতেও কোভাচিচ দের নিয়ে গড়া ক্রোয়েশীয় দল যে মেসি, আগুয়েরো, দিবালা দের ঘাম ছুটাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাছাইপর্ব টা খুব একটা সুবিধার যায় নি আর্জেন্টিনার। গতবারের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে এবার শিরোপা ঘরে নেয়ার গুরুদায়িত্ব পড়েছে মেসি আগুয়েরো হিগুয়েন দিবালাদের কাঁধে। পিছনে তাকানোর কোন সুযোগ নেই। এই বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে ক্রোয়েশিয়া যে শক্তিশালী বাধা, সেটা বুঝার জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয় না। ম্যারাদোনার উত্তরসূরি মেসির হয়তো শেষ বিশ্বকাপ এটা, তাই নিজের সেরাটাই যে দিবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে মদ্রিচ রাকিটিচ রাও চাইবেন বিশ্বকাপ টি স্মরণীয় করে রাখতে। তাই নিঃসন্দেহে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই পেতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্ব।
রাশিয়া বনাম সৌদিআরব
১৪ জুন
লুঝনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো
গ্রুপ এ
রাত ৯ টা (বাংলাদেশ সময়)
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ এটি, যেখানে স্বাগতিক রাশিয়া মুখোমুখি হবে সৌদি আরবের। অনেকের মনে হতে পারে, এতো এতো হাই ভোল্টেজ ম্যাচের মাঝে এই ম্যাচটিকে কেনও রাখা হলো। একটি মজার তথ্য দেই। রাশিয়া এবং সৌদি আরবের ফিফা র্যাংকিং হচ্ছে যথাক্রমে ৬৩ এবং ৬৫। এই টুর্নামেন্টে খেলা ৩২ টি দলের মধ্যে এদের র্যাংকিংই সবার নিচে। তাই বলা যায় সমশক্তির দুই দলের মধ্যে সমানে সমানে লড়াই দেখতে পাবো আমরা। যদিও স্বাগতিক হিসেবে সুবিধায় থাকবে রাশিয়া।
জার্মানি বনাম মেক্সিকো
১৭ জুন
লুঝনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো
গ্রুপ এফ
রাত ৯ টা (বাংলাদেশ সময়)
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে এই ম্যাচের মাধ্যমেই। ফরওয়ার্ড লাইনে হাভিয়ের হার্নান্দেজ এবং মিডফিল্ডে জিওভানি ডস সান্তোস কে নিয়ে গড়া মেক্সিকো দলকে নিয়ে ছক কষতে হবে জোয়াকিম লো’ কে। গোলবার আগলে রাখবেন ওচোয়া, যিনি গত বিশ্বকাপে পরাস্ত করেছিলেন ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণ। পূর্ণ পয়েন্ট আদায় করতে না পারলে, সামনে ভুগতে হবে জার্মানি কে। যদিও বিশ্বকাপে পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছে জার্মানি, তাই প্রতিবারের মতো এবার ও শিরোপার দাবিদার তারাই। তবুও ম্যাচ টি উত্তাপ ছড়াবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
ফ্রান্স বনাম অস্ট্রেলিয়া
১৬ জুন
কাজান স্টেডিয়াম, কাজান
গ্রুপ সি
বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪ টা।
অজিরা তাদের বিশ্বকাপ শুরু করবে এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে। যদিও ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়ার জন্য অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু ফ্রান্স কে আগেও আটকে দেয়ার রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়ার। শক্তিমত্তার হিসেবে ফ্রান্স এবার শিরোপার অন্যতম দাবিদার। অস্ট্রেলিয়া কি পারবে তাদের আটকাতে? উত্তর পাওয়ার জন্য হাজারো সমর্থক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বসবেন টেলিভিশনের পর্দার সামনে।
আর্জেন্টিনা বনাম আইসল্যান্ড
১৬ জুন
অটক্রাইট এরিনা, মস্কো
গ্রুপ ডি
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭ টায় শুরু হবে ম্যাচ টি।
আপাতদৃষ্টি তে দেখে ম্যাচটি সহজ মনে হলেও, আইসল্যান্ড কে সহজভাবে নেয়ার কোন উপায় নেই। গত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে পর্তুগাল কে আটকে দেয় তারা। দ্বিতীয় পর্বের খেলায় ইংল্যান্ড বধ করে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় আইসল্যান্ড। এই অনন্য পারফর্মেন্সে জিতে নেয় হাজারো ফুটবলভক্তের মন। আর্জেন্টিনা কে আটকে আরেকটি রূপকথার জন্ম হয় কিনা সেটাই দেখার জন্য এই ম্যাচটিতেও চোখ থাকবে সবার।
ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড
১৮ জুন
রোস্তভ এরিনা
গ্রুপ ই
বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টা।
টুর্নামেন্টের আরেক ফেভারিট দল ব্রাজিল। নেইমার কৌতিনহো ফিরমিনো দের নিয়ে গড়া ব্রাজিল দলের সাথে সুইজারল্যান্ড টিমের কোন তুলনাই চলে না। কিন্তু বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর বাজে সূচনার রেকর্ডের কারণেই এই ম্যাচের দিকেও চোখ থাকবে ফুটবল বোদ্ধা দের।
উরুগুয়ে বনাম মিশর
১৫ জুন
সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম ইয়েকাটেরিনবার্গ
গ্রুপ এ
ম্যাচ টি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায়।
লুইস সুয়ারেজ, এডিসন কাভানি দের মতো বিশ্বসেরা ফরওয়ার্ড লাইন নিয়ে গড়া উরুগুয়ে টিম যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই দুঃস্বপ্নের কারণ। কিন্তু নাটকীয়ভাবে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা মিশরের উপর ও চোখ থাকবে শুধুমাত্র একজন প্লেয়ারের জন্য। তিনি হচ্ছেন মোহাম্মদ সালাহ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজের জাদু দেখিয়েই যাচ্ছেন। করেছেন এক সিজনে লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল। তার কাঁধে ভর করে মিশর কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, সেটা দেখতেই এই ম্যাচেও চোখ থাকবে সবার।
যদিও বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচই অন্য যেকোনো ম্যাচের চেয়ে অনেক বেশী উত্তেজনা বহন করে। তবুও গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচ গুলোর যেকোনো একটি মিস করলেই হয়তো আপনাকে পরে আফসোস করতে হতে পারে। তাই আফসোস এড়াতে ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনি দাগ দিয়ে রাখুন এবং উপভোগ করুন বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ।
তথ্যসূত্রঃ
১. Fifa.com
২. Theworldgame.sbs.com
order rybelsus online cheap – buy DDAVP no prescription buy generic desmopressin for sale
zyprexa medicine
zofran breastfeeding safety
where can i buy prandin – buy jardiance 25mg without prescription buy jardiance 25mg for sale