১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জহির উদ্দিন বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন মোঘল সাম্রাজ্যের। আর এই সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট ছিলেন সম্রাট হুমায়ুন। কোমল হৃদয়ের এই সম্রাট রাজ্য পরিচালনায় ছিলেন অত্যন্ত খামখেয়ালিপনা স্বভাবের এবং অলস প্রকৃতির। সম্রাটের বোন গুলবদন ‘হুমায়ুন নামা’য় লিখেছেন- “হুমায়ুন ছিলো মার্জিত আচরণের অধিকারী, দয়ালু হিসেবেও তার সুনাম ছিলো। তার চরিত্রের একমাত্র ত্রুটি ছিলো, তিনি আফিমে আসক্ত। এই আসক্তি তাকে সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা সৃষ্টি করেছিলো।”
সম্রাট হুমায়ুনের এই খামখেয়ালিপনার সুযোগে ভারতবর্ষের একপ্রান্তে আফগান শাসক শেরখানের উত্থান ঘটে এবং কনৌজের যুদ্ধ এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মোঘল সাম্রাজ্যের ভীতের উপর সাময়িক সময়ের জন্য আফগান শাসকদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে।
মোঘলের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুন প্রথমত সরাসরি শের খানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন নি। ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে শের খান বাংলা আক্রমণ করে সুলতান মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে রাজধানী গৌড় দখল করেন। হুমায়ুন শেরখানের উত্তরোত্তর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভীত হয়ে বাংলা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন।
বাংলা আক্রমণের পথে হুমায়ুন শের খানের কর্মকেন্দ্র চুনার অবরোধ করেন। ‘হিস্ট্রি অফ দ্যা আফগানে’ ডক্টর ডোরন এটাকে হুমায়ুনের অদূরদর্শীটার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করেন। শের খান নিজের শক্তিবৃদ্ধি করে রোটস দুর্গ অধিকার করলে হুমায়ুন ১৫৩৮ সালে বাংলা আক্রমণ করে বাংলা অধিকার করতে সক্ষম হন। বাংলা জয়ের পর বাংলার সৌন্দর্যে সম্রাট হুমায়ুন মুগ্ধ হয়ে বাংলার নাম রাখেন ‘জান্নাতাবাদ’।
হুমায়ুনের বাংলা জয়ের সময় শের খান বিহার ও জৈনপুরের মোগল অঞ্চলগুলো জয় করে কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হলেন। এতে হুমায়ুনের বাংলা জয়ের পর দিল্লী ফেরার পথ একরকম বন্ধ হয়ে যায়। হুমায়ুন যেকোনো উপায়ে দ্রুত দিল্লীর আগ্রায় ফিরতে চাইলে ফেরার পথে চৌসা নামক স্থানে শেরখানের বাহিনীর হাতে বাধাপ্রাপ্ত হন।
১৫৩৯ সালের ২৬ জুন এই চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন। পলায়নের সময় এক ভিস্তিওয়ালা তার মশকের সাহায্যে সম্রাট হুমায়ুনকে গঙ্গা নদী পার করে হতভাগ্য সম্রাটের জীবন রক্ষা করেছিলেন। ভিস্তিওয়ালার নাম নিজাম। হুমায়ুন কৃতজ্ঞতা সহকারে ভিস্তিওয়ালাকে দিল্লীর নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সাথে তুলনা করেন। পরে এই ভিস্তিওয়ালাকে একদিনের জন্য দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়ে হুমায়ুন চিরকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন। (দ্রষ্টব্যঃব্যানার্জী, হুমায়ুন। পৃঃ২৩১। এডওয়ার্ডস এন্ড গ্যারেট)
এ যুদ্ধের পর শের খান ‘শাহ’ উপাধি ধারণ করেন। শের শাহ তাঁর বিজিত অঞ্চল সুসংগঠিত করে তাঁর শক্তি আরো বৃদ্ধি করেন। চৌসার যুদ্ধে পরাজয় হুমায়ুনকে ভীত করে তুললেও তিনি সাহস হারান নি। হুমায়ুন আবারো তার সৈন্য সংগ্রহে লিপ্ত হন। তার ভাই হিন্দাল মির্জা ও কামরান মির্জার কাছে সহায়তা কামনা করলেও তার ভাতৃদ্বয় তাকে সহায়তা করতে চায়নি। হুমায়ুনকে একাই লড়তে হয় শের শাহের বিরুদ্ধে।
হুমায়ুন তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মে কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রাম নামক স্থানে সৈন্যে সহকারে প্রস্তুত হলেন।
কনৌজের যুদ্ধ এর বর্ণনা:
কনৌজের যুদ্ধ এ হুমায়ুনের ৪০ হাজার সৈন্য ছিলো। হুমায়ুনের আত্মীয় বাবরের পিতৃব্যপুত্র হায়দার মির্জা কনৌজের যুদ্ধে সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে শের শাহ ছিলেন অত্যন্ত ধূর্ত, মেধাবী ও রণকৌশলী সেনানায়ক। তিনি সম্রাট বাবরের সময়ে তার সেনা দক্ষতার জন্য সেনানায়ক হয়েছিলেন।
হুমায়ুনের সৈন্য সবাই চৌসার যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত ছিলো। তীরন্দাজ বাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনী কিছুক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে নিলেও কামানচির দল কামানের একটি গোলাও ছুঁড়তে না পারায় হুমায়ুনের দল দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। হুমায়ূনের ছত্রভঙ্গ বাহিনীর একটা বড় অংশ গঙ্গার পানিতে ডুবে মারা যায়। যারা বেঁচে রইল তাদের তাড়া করল শের শাহ’র বড় পুত্র জালাল খাঁ। জালাল খাঁ পরাজিত সৈন্যদের ধাওয়া করে দিল্লী পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে তাদের অনেককে হত্যা করলেন। চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয়ের পর এই যুদ্ধেও হুমায়ুন শের শাহের নেতৃত্বে আফগানদের হস্তে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
এ পরাজয়ের জন্য হায়দার মির্জা তার তারিখ-ই-রাশিদি গ্রন্থে সেনাবাহিনীর নীতিভ্রষ্ট, চরিত্রহীনতা ও কাপুরুষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ যুদ্ধ নিয়ে হায়দার মির্জা একটা মিথও ছড়িয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন এই যুদ্ধে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু সমসাময়িক অনেক লেখকই তার কথাকে মিথ্যে বলেছিলেন। হায়দার মির্জা তার সেনাবাহিনীর বিশৃঙ্খলা ও পরাজয়ের কথা গোপন রাখার জন্য এমন কথা বলেছিলেন তারা বর্ণনা করেন। সমসাময়িক লেখক, হুমায়ুনের বিশ্বস্ত ভৃত্য জওহর মির্জা বলেছিলেন, “কনৌজের যুদ্ধ এ অনেক সৈন্য নিহত হয় এবং অধিকাংশ সৈন্য নদীতে ডুবে প্রাণ হারায়”।
চৌসার যুদ্ধে হুমায়ূন গঙ্গার পানিতে পড়েছিলেন। এবারও তাই হলো। তিনি হাতি নিয়ে গঙ্গার পানিতে পড়লেন। হাতি তাঁকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। সেসময় শের শাহ’র তীরন্দাজ বাহিনী ধনুক উঁচিয়ে আছে সম্রাট হুমায়ুনের দিকে। ইচ্ছা করলেই তীর ছুড়ে তারা সম্রাটকে মারতে পারতো। তারা এই কাজটি করতে পারছে না, কারণ শের শাহ’র কঠিন নির্দেশ ছিলো হুমায়ূনকে হত্যা বা আহত করা যাবে না। তাকে বন্দি করাও যাবে না। তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। হুমায়ুন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। শের শাহ হুমায়ুনকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক শ্রদ্ধা করতেন। সম্রাটের হুমায়ুনের সরলতা, কোমলতা, সাধারণ জীবন যাপন শের শাহকে মুগ্ধ করেছিলো। তাই তিনি সম্রাট হুমায়ুন কে হত্যা না করে পালিয়ে যেতে দিলেন।
মোগল সাম্রাজ্যের এমন দুর্দিনেও হুমায়ুনের ভ্রাতাগণ সংঘবদ্ধভাবে শের শাহের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। তাঁর ভাইদের এমন উদাসীন ও বিরোধী আচরণ মোগল স্বার্থের পরিপন্থী হয়েছিলো। হুমায়ুন লাহোরে গিয়ে ভাই কামরানের সাহায্য চাইলেও কামরান তাকে কোনপ্রকার সহযোগিতা করেনি।। হুমায়ুন সিন্ধু প্রদেশে গিয়ে সৈন্য সংগ্রহ করতে চাইলেও ব্যর্থ হন। ভাগ্য কোনদিক দিয়েই তার সহায় হচ্ছিল না। কনৌজের যুদ্ধ এ শের শাহের কাছে পরাজিত হওয়ার পর হুমায়ুন আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ দেশান্তর ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। হতভাগ্য সম্রাটের এমন দুর্দিনে একমাত্র বিশ্বস্ত ভৃত্য জওহর সবসময় তার সঙ্গী হিসেবে ছিলো।
অমরকোটের রাণাপ্রাসাদে হুমায়ুন প্রাথমিক ভাবে আশ্রয় পেলেও তারা কিছুদিন পরই শের শাহের বিরুদ্ধতা হবে বলে হুমায়ুনকে আশ্রয় ও সাহায্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। হুমায়ুনকে রাণাপ্রাসাদ সিন্ধু দেশের বাক্কার ও থাট্টা অধিকার করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। সম্রাটের সেই চেষ্টাও ভেস্তে গেলো। তারপর হুমায়ুন কান্দাহারে তাঁর স্বীয় ভ্রাতা আসকারীর সাহায্য প্রার্থনা করলেও প্রত্যাখ্যাত হন। সেখানে তার শিশুপুত্র আকবরকে রেখে হুমায়ুন পারস্য সম্রাট শাহ তামাস্পের সাহায্য প্রার্থনার জন্য তার কাছে গমন করেন। পারস্য সম্রাট শাহ তামাস্প হুমায়ুনকে সর্বদিক দিয়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। হুমায়ুন কে তার হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিতে শাহ তামাস্প সহায়তা করবেন বলে চুক্তি করেন। বিনিময়ে হুমায়ুন শাহ তামাস্পকে কান্দাহার ফরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
কনৌজের যুদ্ধ এ পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে দিল্লীতে ১৫ বছরের জন্য মোগল শাসন হস্তচ্যুত হয়। দীর্ঘ পনের বছর আফগান শাসকরা দিল্লী শাসন করেন। শের শাহের শাসনামল দিল্লীসহ সমস্ত ভারতবর্ষের উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। বিখ্যাত ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ শের শাহের আমলে নির্মিত হয় যা তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের সোনারগাঁও হতে সিন্ধু দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। এছাড়াও ভারতবর্ষে দ্রুত সরকারী ডাক আদান প্রদানের জন্য ‘ঘোড়ার ডাক’ প্রচলন করেন শের শাহ।
কনৌজের যুদ্ধ এর পরাজয় হুমায়ুনকে গৃহহীন করে দিয়েছিলো। হতভাগ্য সম্রাট হুমায়ুন দীর্ঘ পনের বছর যাবতকাল অন্যত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে সম্রাটকে। তাঁর পিতৃব্য ভাইও তাকে সহায়তা করেনি তাঁর দুর্দিনে। রাজ্য পুনরুদ্ধারে পারস্য সম্রাট শাহ তামাস্প এগিয়ে আসেন এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর হুমায়ুন ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষত হন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হুমায়ুনকে বাধ্য হয়ে তার ভাই কামরানকে বন্দী করতে হয়, এবং পরবর্তীতে কামরানকে অন্ধ করে দিয়ে মক্কায় প্রেরণ করে দেন।
হতভাগ্য সম্রাট হুমায়ুন বারবার পতনের স্বাদ গ্রহণ করেন। পতনই যেন ছিলো তার ভাগ্যের লিখন। তাঁর জীবনের বারবার এমন পতনের মতই তাঁর মৃত্যুও হয়েছিলো পতনের মধ্যে দিয়ে। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি সম্রাট হুমায়ুন তাঁর পাঠাগারের সিঁড়ি হতে পদস্থলিত হয়ে অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করেন। সম্রাট হুমায়ুনের সম্পূর্ণ জীবন তাঁর ভাগ্য পতনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত ছিলো।
তথ্যসূত্র:
১. ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস- এ.কে.এম.আবদুল আলিম। পৃষ্টা ১৬৬-১৮৩
২. বাদশাহ নামদার– হুমায়ুন আহমেদ
৩. ‘হুমায়ুন নামা’ গুলবদন।
৪. A History of Ancient and Early Medieval India. P: 575
http://mexicoph24.life/# п»їbest mexican online pharmacies
online pharmacy india india pharmacy reputable indian pharmacies
mexico pharmacies prescription drugs: Online Pharmacies in Mexico – mexico drug stores pharmacies
http://mexicoph24.life/# п»їbest mexican online pharmacies
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy uk delivery
https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
top 10 online pharmacy in india: indian pharmacy fast delivery – cheapest online pharmacy india
http://canadaph24.pro/# cheap canadian pharmacy online
п»їbest mexican online pharmacies: cheapest mexico drugs – medicine in mexico pharmacies
canadian world pharmacy canadian pharmacies safe reliable canadian pharmacy
mexican drugstore online medicine in mexico pharmacies mexico drug stores pharmacies
top online pharmacy india: indian pharmacy – indian pharmacy paypal
http://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online
http://mexicoph24.life/# reputable mexican pharmacies online
https://indiaph24.store/# best online pharmacy india
http://mexicoph24.life/# mexican drugstore online
india pharmacy mail order buy medicines from India п»їlegitimate online pharmacies india