বিশ্বকাপ ২০১৮ মাঠে গড়ানোর পর পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুদিন। ৩২ টি দল থেকে এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ১৬ টি দল। জমজমাট নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ গ্রুপ পর্বের খেলার পর আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে নক আউট পর্ব। এবং উত্তেজনাপূর্ণ নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বর্তমান ফুটবলের অন্যতম দুই সেরা দল আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। বাংলাদেশ সময় রাত আট টায় ম্যাচ টি শুরু হবে।
দুই দলই বিশ্বকাপে এসেছিলো ফেবারিটের তকমা লাগিয়ে। কিন্তু কেউই আশানুরূপ সূচনা করতে পারে নি আসরটিতে। প্রায় বাদ পড়তে পড়তে নাটকীয়ভাবে নক আউট পর্ব নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। অন্যদিকে ফ্রান্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও, নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারেনি তারাও। তারকা সমৃদ্ধ এই দল নিয়ে ৩ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল কিছুটা হতাশাজনকই। গ্রুপ তুলনামূলক দুর্বল থাকায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক আউট পর্ব নিশ্চিত করে ফ্রান্স। দুই দলেরই আরো ভালো খেলার সামর্থ্য আছে। তাই নক আউট পর্বের এই ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে জ্বলে উঠতে চায় তারা। এমনটা হলে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ দেখতে পাবে ফুটবল বিশ্ব।
সাম্প্রতিক ফর্মঃ
দুই দলই কিছুটা ফর্মহীনতায় ভুগছে। দলের সেরা তারকারা জ্বলে উঠতে না পারায়, দুই দলকেই কিছুটা ভুগতে হয়েছে গ্রুপ পর্বে।
আর্জেন্টিনার ফর্ম টা একটু বেশীই খারাপ যাচ্ছে। প্রথম ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের সাথে ড্র করে হোচট খায় তারা। পরবর্তী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে ঘুরে দাড়ানোর পরিবর্তে লজ্জাজনক পরাজয়ের শিকার হতে হয় তাদের। দুই ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে ফিরছিলেন দলের মূল তারকা লিওনেল মেসি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে কিছুটা মেসি জাদু এবং দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে কোয়ালিফাই করে আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি জয়, একটি হার এবং একটি ড্র। ফর্ম বিবেচিনায় তাই কিছুটা পিছিয়েই থাকবে আর্জেন্টিনা।

অন্যদিকে সহজভাবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও নিজেদের পার্ফমেন্সে নিজেরাই সন্তুষ্ট না ফ্রান্সের খেলোয়াড় রা। বিশ্বসেরা আক্রমণ ভাগ থাকার পরেও গোলক্ষরায় ভুগছে দল। যেখানে হেসেখেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা, সেখানে প্রতিটি জয় পেতেই ভুগতে হয়েছে তাদের। যদিও ৩ ম্যাচে ২ জয় এবং ১ ড্র, ফর্ম বিবেচনায় ফ্রান্স কে এগিয়ে রাখবে, কিন্তু নিজেদের ভুল গুলো বের করে শোধরাতে না পারলে, এর মাশুল দিতে হবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।

গ্রিজম্যানের সাথে উদযাপন করছেন এম্বাপ্পে Source: hindustantimes.com
টিম নিউজঃ
ফ্রান্স দলে শুধুমাত্র স্যামুয়েল উমতিতিকে নিয়ে কিছুটা ইঞ্জুরীর শংকা আছে। তিনি এখনো অনিশ্চিত। বাকি সব খেলোয়াড়ই ফিট আছেন। ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচে বিশ্রামে থাকা হুগো লরিস, পল পগবা, কিলিয়েন এম্বাপ্পে সবাই দলে ফিরবেন এই ম্যাচে। তাই প্রায় পূর্ণশক্তির মূল একাদশই থাকবে ফ্রান্সের।
আর্জেন্টিনা দলে কোন ইঞ্জুরী সমস্যা নেই আপাতত। নাইজেরিয়ার সাথে শেষ ম্যাচে দল কিছুটা ছন্দ ফিরে পাওয়ায় সেই একাদশই অপরিবর্তিত থাকতে পারে এই ম্যাচে।
সম্ভাব্য একাদশঃ
আর্জেন্টিনাঃ
- আরমানি
- মার্কাদো
- ওটামেন্ডি
- রোহো
- ট্যাগ্লিয়াফিকো
- বানেগা
- মেজা
- মাশ্চেরানো
- ডি মারিয়া
- মেসি
- আগুয়েরো/হিগুয়েন

ফ্রান্সঃ
- হুগো লরিস
- ভারানে
- পাভার্ড
- কিম্পেম্বে
- মেন্ডি
- পগবা
- কান্তে
- লেমার/মাতুইদি
- গ্রিজম্যান
- এম্বাপ্পে
- জিরু

দলের মূল তারকাঃ
আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের মোড় যেকোন সময় ঘুড়িয়ে দিতে পারেন লিওনেল মেসি। শেষ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ১ গোল করে নিজেকে খুজে পেয়েছেন, তাই ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রধাণ বাধা হয়ে দাড়াবেন তিনি। এছাড়াও আক্রমণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে ম্যাচের নায়ক হয়ে যেতে পারেন সার্জিও আগুয়েরো। এই ম্যাচে ভালো করতে চাইলে ফ্রান্সের শক্তিশালী ফিজিক্যাল মাঝমাঠের বিরুদ্ধে মাশ্চেরানো-বানেগা জুটিকে জ্বলে উঠতে হবে।

ফ্রান্সের মূল তারকা এন্তনিও গ্রিজম্যান এখনো নিজেকে খুজে ফিরছেন। নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কিই বা হতে পারে। তারকা স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুও ভুগছেন ফর্মহীনতায়। মাঝমাঠে পগবা-কান্তে জুটির উপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। তারা জ্বলে উঠলে ম্যাচ ফ্রান্সের হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দলের শক্তিমত্তা/দূর্বলতাঃ
দুই দল একই সমস্যায় ভুগছে। বিশ্বসেরা আক্রমণভাগ নিয়ে গঠিত দুই দল। নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে সবাই মাঠ কাপিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপের আগে, কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে জালে বল জড়াতে পারছে না কোনদলই। মেসি, আগুয়েরো, হিগুয়েন, ডি মারিয়া দের নিয়ে গড়া শক্তিশালী আক্রমণভাগই আর্জেন্টিনার মূল শক্তি। এই আক্রমণভাগ ফর্মে থাকলে প্রতিপক্ষ দল উড়ে যাবে খড়কুটার মতো। তবে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দুশ্চিন্তার জায়গা তাদের নড়বড়ে ডিফেন্স। ৩ ম্যাচে গোল হজম করেছে ৫ টি, ক্লিনশিট নেই একটি ম্যাচেও। এই রক্ষণভাগ নিয়ে ফ্রান্স কে আটকে রাখা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়।

ফ্রান্সের ব্যালেন্সড দলে তাদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে প্রতি পজিশনে অনেক অপশন আছে কোচের হাতে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আক্রমণভাগ কে সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হলেও, তাদের রক্ষণই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচে তাদের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ মাত্র ৫ বার অন টার্গেট শুট নিতে পেরেছে। একমাত্র গোলটি হজম করেছে পেনাল্টি তে। তাই এই রক্ষণ ভাংতে মেসি আগুয়েরোদের ভালো কিছু করে দেখাতে হবে।

হেড টু হেডঃ
দুই দল সর্বমোট ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে আর্জেন্টিনা জিতেছে ৬ বার, ফ্রান্স জিতেছে ২ বার, বাকি ৪ ম্যাচ ড্র।
শেষ ২ বারের দেখায়ই আর্জেন্টিনা জয় পেয়েছে ফ্রান্সের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপে দুই দল সর্বমোট ২ বার মুখোমুখি হয়েছে। দুইবারই জয়ী হয়েছে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা সর্বমোট বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে ২ বার এবং ফ্রান্স করেছে ১ বার। শেষ শিরোপা উত্তোলনের পর আর্জেন্টিনার পেরিয়ে গেছে ৩২ বছর, ফ্রান্সের পেরিয়েছে ২০ বছর। ম্যারাদোনার পর লিওনেল মেসির পিঠে ভর করে আবারো শিরোপা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টাইনরা, অন্যদিকে জিদান-হেনরীদের উত্তরসূরী পগবা গ্রিজম্যান রাও দেশকে উপহার দিতে চায় আরেকটি বিশ্বকাপ। বর্তমান ফুটবলের অন্যতম সেরা দুই দলের লড়াইয়ে রেজাল্ট যেটাই হোক, উপভোগ্য একটি ম্যাচের অপেক্ষায় থাকবে ফুটবল বিশ্ব। শেষ ষোলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কার মুখে ফুটবে তা জানা যাবে কয়েক ঘন্টা পরেই।
Reference:
Fifa.com
Sporting News
Whoscored.com
rybelsus sale – order semaglutide pills buy desmopressin online cheap
buy terbinafine pills – order griseofulvin 250mg grifulvin v