“এপ্রিল ফুল” সারাবিশ্বে পালিত বহুল প্রচলিত কয়েকটি দিবসের মধ্যে একটি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের প্রথম তারিখে পুরো বিশ্বে সড়াম্বরে পালিত হয় এই দিবস। বলা হয়ে থাকে, প্রতিবেশী বা বন্ধুকে বোকা বানানো কিংবা তাদের নিয়ে কৌতুক করার একটি দিন এটি। কেউ কেউ একে “অল ফুলস ডে” বলেও অভিহিত করেন। আর এপ্রিল ফুল দিবসে বোকা হওয়া ব্যক্তিদের বলা হয় “এপ্রিল ফুল”। ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি দিন এটি। দিনটিতে পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমও ভুয়া ও ভূল সংবাদ সরবরাহের মাধ্যমে এপ্রিল ফুল পালন করে থাকেন। অবশ্য তারপরের দিনই, সেই ভূল সংবাদ সম্পর্কে পুনরায় জানিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও বিশ্বজুড়ে খুবই সরাম্বড়ে এই দিন পালিত হয়, তথাপি এ দিবসের উৎপত্তি আজও আমাদের কাছে রহস্যময়। ইতিহাসের হালখাতা উল্টিয়ে এপ্রিল ফুলের উৎপত্তি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা পাইনা। তবে বিভিন্ন দেশের প্রাচীন সাহিত্যে আমরা এপ্রিল ফুল নির্দেশক নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে থাকি।
সর্বপ্রথম ১৩৯২ সালে ইংরেজী সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি জিওফ্রি চচারের “দি কেন্টারবেরী টেলস” কাব্যে এপ্রিল মাসের ১ম তারিখ এবং বোকামির একটা যোগসূত্র পাওয়া যায়। যদিও এই তথ্য নিয়েও বিতর্ক দেখা যায়। এছাড়া ১৫০৮ সালে ফরাসী লেখক এলোয় এম্যাবেল তার লেখায়, এপ্রিলের ১তারিখকে ছুটির দিন হিসেবে উল্লেখ করেন। আর দিনটিকে “ফিস অব এপ্রিল” নামে অভিহিত করেন। আবার ১৬৮৬ সালে বৃটিশ কবি জন অব্রে এ দিনটিকে সরাসরি “ফুলস হলি ডে” বা বোকাদের ছুটির দিন বলে অবিহিত করেন।

এপ্রিল ফুলের ইতিহাসে সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ১৬৯৮ সালে। এবছরের ১লা এপ্রিল ইংল্যান্ডের টাওয়ার অব লন্ডনে “ওয়াশিং দ্যা লায়ন্স” অনুষ্ঠান দেখানোর নাম করে টিকিট বিক্রি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে হাজারো দর্শক নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে ভীড় করে এবং দেখে সেখানে অনুষ্টান আয়োজনের নামমাত্র নেই। এভাবে সেদিন হাজারো মানুষকে বোকা বানানো হয়। ইংল্যান্ডের অনেক মানুষ, এ ঘটনা থেকেই “এপ্রিল ফুলের” উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন।

এছাড়াও মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মার্চের শেষের দিকে (মার্চের ২৫তারিখ) নতুন বছর উদযাপন করা হতো। এছাড়া ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায়ও মার্চে নিউ ইয়ার উদযাপনের পাশাপাশি এপ্রিলের ১তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী ছুটি থাকতো। এসময় জানুয়ারির ১ তারিখ নতুন বছর উদযাপনকারী ব্যক্তিরা মার্চে নতুন বছর উদযাপনকারীদের “এপ্রিল ফুল” নামে অভিহিত করতো।
তবে উপরোল্লিখিত মতের বাইরে আরো একটি মত রয়েছে “এপ্রিল ফুল”র ইতিহাস নিয়ে। অনেকেই মনে করে থাকেন, ১৪৯২ সালে রাজা ফার্দিনান্দ স্পেনের মুসলিম অদ্যুষিত গ্রানাডার অভিমুখে হামলা করেন। এসময় ফার্দিনান্দ শহরের আশেপাশের সকল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। ফলে শহরের মুসলিমদের মাঝে মারাত্মক খাদ্য সংকট নেমে আসে এবং অচিরেই সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষ যখন মারাত্মক অবস্থায় গিয়ে দাড়ায় তখন রাজা ফার্দিনান্দ ঘোষণা করেন যে, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দিয়ে নিরস্ত্রভাবে মসজিদে আশ্রয় গ্রহন করে তবে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেওয়া হবে। এসময় দুর্দশাগ্রস্ত লাখো নারী ও পুরুষের কথা ভেবে খুলে দেওয়া হয় শহরের প্রধান ফটক এবং মুসলমানরা নিরস্ত্রভাবে শহরের মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেয়। এসময় খ্রীস্টান সৈন্যবাহিনী শহরে প্রবেশ করে মসজিদগুলোতে তালা আটকে দেয় এবং শহরের প্রত্যেকটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়। এঘটনায় লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী ও পুরুষ মর্মান্তিকভাবে মসজিদের ভেতর প্রাণ হারায়। এভাবে মুসলমানদের সহজভাবে বোকা বানানোর ঘটনাকে “এপ্রিলফুল” হিসেবে পালন করার রীতি চালু করে খ্রিষ্টান দেশগুলোতে।
উপোরুক্ত মতামতটি নিয়ে অনেকেই মনে করেন, ১৪৯২ সালের ঐদিন এমন কোনো ঘটনায় ঘটেনি। আর যে ঘটনাকে “এপ্রিল ফুল”র উৎপত্তির কারন মনে করা হয়, তা ঘটেছিল ঐ বছরের ২ রা জানুয়ারি। আপনারা এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ে আসতে পারেন এই বইটি A History of Medieval Spain । বইটি অনলাইন থেকেই পড়তে পারবেন – এই লিঙ্ক থেকে ।
A History of Medieval Spain বই থেকে উদ্ধৃত করলে, “১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি ইসাবেলা আর ফারদিনান্দ গ্রানাডায় প্রবেশ করেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সেদিন গ্রানাডার শাসক দ্বাদশ মুহাম্মাদের কাছ থেকে গ্রানাডার চাবি নেন।”

আপনি বলতেই পারেন, এই বইয়ে যা লিখেছে তার সত্যতা কতটুকু? স্পেনে যে মুসলিমদের উপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল তা সব ইতিহাসের বইয়েই আছে কিন্তু সেটা ১ লা এপ্রিল এই তারিখে নয়। কেননা ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারী ইসাবেলা গ্রানাডা প্রবেশ করে এবং ২ জানুয়ারী তা মুসলমানদের কাছ থেকে দখল করে নেয়।
মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস বইতেই এই কাহিনী নেই এবং যারা এটা প্রচার করছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা ইতিহাস পড়ে শেয়ার করছে না, বরং কেবল শুনেই শেয়ার করে ফেলছে।
আবার বিশ্ববিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাও “এপ্রিল ফুল” নিয়ে ভিন্ন একটি মতামত পেশ করে। এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, এপ্রিলফুলের উৎপত্তি মূলত রোমান উৎসব হিলারিয়া থেকে। যা পালিত হতো ২৫মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে ঐ উৎসব আশেপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পরে। যার ধারবাহিকতায় আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে “এপ্রিলফুল”
উপরোল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিত এটাই বলা যায় যে, এপ্রিল ফুলের ইতিহাস একটি অমীমাংসিত রহস্য মাত্র। তবে সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে, এপ্রিলফুলের ইতিবাচক বার্তায় সমাজকে প্রভাবান্বিত করবে এটাই কামনা।
তথ্যসূত্র: (১) এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা
(২) উইকিপিডিয়া
(৩) ইন্টারনেট
purchase avodart online cheap buy dutasteride for sale buy ondansetron online
levofloxacin cost levaquin 500mg pills
Whats up! I just want to give a huge thumbs up for the great data you’ve got here on this post. I might be coming again to your blog for more soon.
I conceive you have remarked some very interesting points, regards for the post.