ট্রাম্পের একবছরে যুক্তরাষ্ট্র

2

গত জানুয়ারিতে এটা ধরেই নেয়া হয়েছিল যে ট্রাম্পের হাতে আমেরিকার ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার ও কণ্টকাকীর্ণ । গত ফেব্রুয়ারিতে যখন প্রেসিডেন্ট-ডে তে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প ইজ নট মাই প্রেসিডেন্ট নামে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছিল তখন হয়ত অনেকেই ভেবেছিলেন যে, ট্রাম্পের আগামীর পথচলা হবে এক অনিশ্চিত সমুদ্র যাত্রার মতো।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প source: cnn.com

নির্বাচনে রাশিয়ার সাথে সম্পৃক্তার মতো বিতর্কিত বিষয় এখনো তার পিছু ছাড়ছে না।  ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প এক বছর পার করে দিয়েছেন। এখন বলা চলে যে ট্রাম্প  প্রতিকূলতা কাটিয়ে কিছুটা হলেও গুছিয়ে নিয়েছেন। তবে তিনি এই একবছর সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন বহুবার। আবার সফলতাও যে পাননি তা কিন্তু নয়। তবে ট্রাম্পের একবছরে সবকিছু ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরেই কিছুনা কিছু পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে তা বলা যায় নিশ্চিত করে।

গত বছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আমেরিকান নাগরিকরা
গত বছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আমেরিকান নাগরিকরা source: ncbnews.com

বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়েন তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বেশ ভঙ্গুর। ট্রাম্প এক বছরেই বেশ অর্থনৈতিক সাফল্য দেখিয়েছেন। বেকারত্ব কমেছে ৪.৮% থেকে ৪.১% পর্যন্ত। পাশাপাশি জিডিপিও তুলনামূলক বেড়ে চলছে। যদিও আশানুরূপ বেতন বাড়েনি। ওদিকে ওয়াল স্ট্রিটেও ভালো আবহাওয়া বইছে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে ট্রাম্প বেশ সফলতাই দেখিয়েছেন।

ট্রাম্পের আমলে অর্থনীতির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটে
ট্রাম্পের আমলে অর্থনীতির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটে source: channel14.com

অর্থনীতিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গিয়ে ট্রাম্প পরিবেশের বারোটা বাজিয়েছেন। গত জুনে প্যারিস পরিবেশ চুক্তি থেকে বের হয়ে ট্রাম্প খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছেন। পরিবেশ বিষয়ে গবেষণা খাতে অর্থ কমিয়ে দেয়ায় একাধিক বিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, জলবায়ুর পরিবর্তনে আমেরিকার অস্তিত্ব ভয়ংকরভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশন এর মতে গত বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে প্রায় ১৫মিলিয়ন বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি উষ্ণ বছর। যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশ ইস্যুতে বড় দাতা দেশ হিসেবে পিছিয়ে আসায় বিশ্বের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করাটা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কিছুটা শঙ্কা তৈরি করেছে।

দূষিত আমেরিকার আকাশ
দূষিত আমেরিকার আকাশ source: nationalgeographic.com

পরাশক্তি হিসেবে বিশ্ব শান্তি ও গণতন্ত্র বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র যে, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ধারণ করে আসছিল ট্রাম্পের আমলে তা নগ্নভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। কিম জং উনের সাথে পুরো বছরটাই ট্রাম্পের চলেছে বাদানুবাদ আর হুমকি ধমকির মধ্য দিয়ে। উত্তর কোরিয়াকে উদ্দেশ্য করে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যে ভাষণ দেন তা আমেরিকার সংস্কৃতি ও আদর্শের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত।

ট্রাম্প আর উনের মধ্যে চলছে তুমুল বাকবিতণ্ডা
ট্রাম্প আর উনের মধ্যে চলছে তুমুল বাকবিতণ্ডা source: dailymail.com

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু বাজে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প সরকার নিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ক্ষমতায় এসেই সাত মুসলিম দেশের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কিত পদক্ষেপ। এরপর একের পর এক মুসলিম বিদ্বেষী বার্তা তিনি ছড়িয়েছেন। খুব সম্প্রতি সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়াই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি এক অপমানজনক তকমা তিনি এঁটে নিয়েছেন। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র আরবের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো তো হারালই পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের মধ্যে আমেরিকা বিদ্বেষ আরো একধাপ চাঙ্গা করে দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ পাকিস্তানকেও বাগে রাখতে পারেনি ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন।

ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা ট্রাম্পের
ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা ট্রাম্পের source: rt.com

এছাড়াও ন্যাটোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিঃসন্দেহে কমিয়ে দেবে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্নায়ুযুদ্ধে হারিয়ে যে একক আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্র কায়েম করেছিল তা ট্রাম্প বজায় রাখতে কার্যতই ব্যর্থ হবেন বা অনেকাংশে হচ্ছেন। আমেরিকা  ১৯২০ এর দশকের মতো আরেকবার নিঃসঙ্গ হবার পথে; যার প্রমাণ মেলে জাতিসংঘে বাজেট কমিয়ে দেয়া, অভিবাসন ইস্যুর মতো মানবিক বিষয়ে কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে। তবে বর্তমানে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যে, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র একবার পিছিয়ে গেলে আর ফিরতে পারবে বলে মনে হয়না। নিঃসন্দেহে ট্রাম্প যে, আমেরিকা ফাস্ট নামে অতি সংরক্ষণশীল চিন্তা চেতনা আঁকড়ে আছেন তা একসময় আমেরিকার আধিপত্য বিলুপ্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

নিঃসঙ্গ ট্রাম্পের হাত ধরে আমেরিকাও আইসোলেটেড হতে চলছে
নিঃসঙ্গ ট্রাম্পের হাত ধরে আমেরিকাও আইসোলেটেড হতে চলছে source: ibtimes.com

এবার দেশের ভিতরের রাজনীতির কথায় আসা যায়। বর্তমানে সিনেটে রিপাবলিকান আছেন ৫১ জন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল যে, আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে কি পারবেনা। বর্তমানে এমনিতেই রিপাবলিকানদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আন্তঃকোন্দল। আর ট্রাম্পের বাজে সব নীতির কারণে হলেও জনমত রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে যাবে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প সরকার ডেমোক্রিটাসদের বাজেট সংকটে পড়ে সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব প্রশাসন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

গত কিছুদিন আগেই সাময়িকভাবে বন্ধ হয় আমেরিকার প্রশাসন
গত কিছুদিন আগেই সাময়িকভাবে বন্ধ হয় আমেরিকার প্রশাসন source: globalnews.com

এই সংকটময় পরিস্থিতি ট্রাম্প কিভাবে মোকাবেলা করবেন এবং সিনেটে কতটা ডেমোক্রেটদের দ্বারা কোণঠাসা হয়ে তার সময় অতিবাহিত করবেন তাই এখন দেখার বিষয়। প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি কয়েকদিন আগেই বলছিলেন যে, ট্রাম্প একবছর পার করে দিলেও আগামী বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে বলে মনে হয়না।

 

Leave A Reply
2 Comments
  1. Dfohiq says

    buy generic terbinafine – diflucan without prescription order griseofulvin generic

  2. Nbzccv says

    glucophage for sale online – sitagliptin us acarbose 25mg brand

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More