আমরা বুদ্ধিমত্তা বলতে যা বুঝি তা প্রচলিতভাবে একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের ধার বুঝাতে ব্যবহার করে থাকি। আমরা অনেক সময়ই বলি, লোকটি বুদ্ধিমান। কিন্তু শুধু “বুদ্ধিমান” শব্দটি ব্যবহারেই আমরা বুঝি না লোকটি কোন দিক দিয়ে বুদ্ধিমান বা মেধাবী।
১৯৮৩ সালে হাওয়ার্ড গার্ডেনার নামক আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধিমত্তাকে ৯ টি ভাগে ভাগ করে দেখান।
তার দেখানো বুদ্ধিমত্তার বিভাগটি নিম্নরূপ:
১) প্রকৃতিবাদী বুদ্ধিমত্তা (Naturalist)
২) সংগীতধর্মী বুদ্ধিমত্তা (Musical)
৩) গাণিতিক-যুক্তিবাদী বুদ্ধিমত্তা (Logical-mathmatical)
৪) অস্তিত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা (Existentialist)
৫) আন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তা (Interpersonal)
৬) শরীরবাদী বুদ্ধিমত্তা (Bodily-kinesthetic)
৭) ভাষাবাদী বুদ্ধিমত্তা (Linguistic)
৮)অন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তা (Intra-personal)
৯) দূরত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা (Spatial)
সব সময় প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ ভাবেও কাজ করে বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন নিয়ামকগুলি। হাওয়ার্ড গার্ডনার এর দেখানো এই নয় ধারার বুদ্ধিমত্তার ধরণটি ঠিক কি রকম তা নিচে ব্যাখ্যা করা হল:
প্রকৃতিবাদী বুদ্ধিমত্তা:
এ ধরণের বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তির বিশেষ গুণ হল বিভিন্ন জীবিত প্রাণী ও প্রাকৃতিক উপাদানের উপর প্রাধান্য দেয়া ও একটি থেকে আরেকটি আলাদা করার ক্ষমতা। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের বুদ্ধিমত্তায় এই দিকগুলি প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল যখন তারা শিকারে যেত বা আকাশে মেঘের গর্জন শুনে ভয় পেত। বর্তমান ভোগবাদী যুগে প্রকৃতিবাদী বুদ্ধিমত্তার জৌলুস কমে আসছে ধীরে ধীরে।
সংগীতধর্মী বুদ্ধিমত্তা:
এ ধরণের বুদ্ধিমত্তা হল তাল, তীক্ষ্ণতা, সুর ও স্বর আলাদা করে ঠাহর বা উপলব্ধি করার ক্ষমতা। এই বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তিরা বিশেষভাবে সংগীত অনুরাগী হয়ে থাকে এবং তাদের পেশাজীবী সুরকার, বাদক, গায়ক হতেও দেখা যায়।
শব্দের প্রতি অধিক সংবেদনশীলতা এ ধরণের বুদ্ধিমত্তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।সংগীতের সাথে জোর সম্পর্ক আছে অনুভূতির। এ বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তি সূক্ষ্ম অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে থাকেন।
গাণিতিক-যুক্তিবাদী বুদ্ধিমত্তা:
গাণিতিক-যুক্তিবাদী বুদ্ধিমত্তা হল গণনা, পরিমাপ, অনুমান করার বিশেষ ক্ষমতা। এটি আমাদের সাংকেতিক ও বিমূর্ত উপাদানের মাঝে সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে। যুক্তিবাদী বুদ্ধিমত্তা অধিকভাবে লক্ষ্য করা যায় বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও গোয়েন্দাদের মাঝে। কিশোর ও তরুণ যারা এমন বুদ্ধিমত্তার অধিকারী তাদের বিভিন্ন ধরণের যুক্তিবাদী ধারার খেলায় আগ্রহী হতে দেখা যায়।
অস্তিত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা:
স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার অনেকেই অস্তিত্ববাদী বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তিকে পাগল ভাবতে ভালবাসেন। অধিক সংবেদনশীলতা ও গভীর অনুভূতিজাত প্রশ্ন কাজ করে এমন ব্যক্তির মাথায়। জীবনের মানে, মানবজাতির শেষ কোথায়, আমরা কিভাবে এখানে এলাম, আমরা মারা যাই কেন-এমন গভীর প্রশ্নগুলো আচ্ছন্ন করে রাখে অস্তিত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন ব্যক্তিকে।
আন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তা:
অপর ব্যক্তির সাথে সুচারুভাবে যোগাযোগ ও বুঝতে পারার ক্ষমতা এমন বুদ্ধিমত্তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কার্যকর ভাষাগত যোগাযোগ, সাংকেতিক যোগাযোগ, মানসিক অবস্থা বুঝতে পারা-এমন বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন ব্যক্তির বিশেষ গুণ। সহজেই মিশে যেতে পারেন তিনি সবার সাথে এমনকি সবার খুব প্রিয়ও হয়ে যেতে পারেন তিনি খুব দ্রুত। শিক্ষক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদেরা এমন ধারার বুদ্ধিমত্তা ধারণ করে থাকেন।
শরীরবাদী বুদ্ধিমত্তা:
কোন বস্তুকে শরীরের কোনো বিশেষ কসরতে নিয়ন্ত্রণ করা এই বুদ্ধিমত্তার একটি বৈশিষ্ট্য। সময়-জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণ হল এমন বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন ব্যক্তির বিশেষ গুণ। এথলেট, নৃত্যশিল্পী ও সার্জনরা সাধারণত শরীরবাদী বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তি হয়ে থাকেন।
ভাষাবাদী বুদ্ধিমত্তা:
ভাষাবাদী বুদ্ধিমত্তা হল চিন্তাকে দ্রুত ভাষায় প্রকাশ করার অনবদ্য ক্ষমতা। ভাষাকে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি দুর্দান্ত মাধ্যম মনে করে থাকেন ভাষাবাদী বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন ব্যক্তি। অনেক দুর্বোধ্য অনুভূতিও সাবলীলভাবে প্রকাশ করে দিতে পারেন এমন ব্যক্তি। শব্দের অর্থ ও শব্দবিন্যাস ক্রিয়ায় ভাষাকে বশে আনা এমন বুদ্ধিমত্তার বিশেষ আকর্ষণ। কবি, লেখক, সাংবাদিক ও বক্তারা সাধারণত ভাষাবাদী বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকেন।
অন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তা:
অন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তা হল নিজেকে ভালমতো বুঝতে পারা এবং নিজের অনুভূতি ও চিন্তাগত অবস্থানে পরিষ্কার থাকা। নিজেকে বুঝতে পারা মানে এক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা নয় বরং মানবজাতির মনস্তাত্ত্বিক যাত্রাকে বুঝতে পারা। এমন বুদ্ধিমত্তার কিশোর ও তরুণেরা সাধারণত লাজুক ধাঁচের হয়ে থাকে। তারা নিজেদের নিয়ে খুব বেশি পরিমাণ চিন্তাশীল থাকে। দার্শনিক, মনস্তত্ত্ববিদ ও আধ্যাত্মিক গুরুরা অন্ত:ব্যক্তিগতবাদী বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়ে থাকেন।
দূরত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা:
দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা, এই তিনটি মাত্রাকে সজ্ঞানে ও অজ্ঞানে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন দূরত্ববাদী বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন ব্যক্তি। এ ব্যক্তিরা আঁকাআঁকি, নকশা করা বা যেকোনো ধরণের চিত্রায়নে ভাল হয়ে থাকেন এবং তাদের কল্পনাশক্তি প্রখর হয়। যেসব শিশু-কিশোর ও তরুণদের এমন গুণ থাকে তারা সাধারণত অংকন, ধাঁধার সমাধান ও দিবাস্বপ্নে ব্যস্ত থাকে বেশি।
নাবিক, বৈমানিক, ভাস্কর, চিত্রকর ও চিত্রনির্মাতারা সাধারণত দূরত্ববাদী বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়ে থাকেন।
বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন স্তরে কেউ কেউ জন্মগত ভাবেই অবস্থান করে আর কাউকে তা অর্জন করতে হয় অধ্যবসায়ের দ্বারা। হাওয়ার্ড গার্ডনারের দেখানো বুদ্ধিমত্তার এই শ্রেণীবিভাগই এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক বলে মানা হয়।
semaglutide pills – purchase desmopressin without prescription brand DDAVP