মুভি রিভিউঃ A.I. Artificial Intelligence(২০০১)

0

অমরত্ব কিছুমাত্র শান্তি দিল না যখন, সে মানুষ হতে চাইল (শেষ দৃশ্যটা আবার মনে করা যেতে পারে)।

মানুষ হতে তো দেবীর কাছে যেতে হয়, প্রার্থনা করতে হবে। সে গেল। হাসিমুখে দেবী তাকে টানল। বছরের পর বছর সে চেঁচিয়ে গেল আমায় মানুষ করে দাও বলে। পাথরের দেবী (মানুষ তো আর দেবী হতে পায় না, পাথর খুব একটা কাজে লাগে না, তারা হয়) সদাহাস্যমুখে প্রবঞ্চনা করেই গেল করেই গেল। হাজার বছর ধরে অনন্যোপায় ডেভিড নামের বাচ্চা রোবটটা একঠাঁই বসে মানুষ হতে চাইল। এরপর চার্য শেষ হয়ে বন্ধই হয়ে গেল, মরে নি।

তাকে খুঁজে পেয়ে রোবটেরা যখন স্মৃতি থেকে নিয়ে ওর বাড়িটা বানিয়ে দিল আর ও মা মা বলে ছুটছিল, আমার ঋত্বিকের ‘সুবর্ণরেখা’র কথা মনে পড়ল। সেই নতুন বাড়ি, প্রজাপতি, গান, সেখানে মাকে পাবো….। সীতাকে অবশ্য কেউ নতুন বাড়ি বানিয়ে দেয় নি, সীতাই আত্তাহুতি দিয়ে অন্য নতুন বাড়িতে চলে গেল। সীতা তো মানুষ, কোন দেবী তার এইটুকু(শুধু বাড়ি, মা এনে দেয়া দূরস্থান) উপকারও করতে ক্ষমতা রাখে না। দেবীর উপরে মানুষ সত্য।
যাই হোক, ডেভিড তো যন্ত্র, সে একটা বাড়ি পেল। দেবীও এলেন!

“তুমি আমায় খুঁজছিলে তো?”
“আমার সারাটা জীবন ধরে তোমায় খুঁজেছি!”
না দেবী, আমি সারাজীবন দিয়ে তোমায় খুঁজেছি তোমাকে পেতে নয়, একটা সামান্য মানুষ, মরণশীল মানুষ..যে তোমার মত হাজার বছর ধরে বাঁচে না, হাসে না..অল্প তাঁর আয়ু, আমি তাঁকে পাবো বলে তোমায় খুঁজেছি। এছাড়া তোমাকে আমার দরকার নেই, কোনকালেও ছিল না।
স্বর্গের দেবী, তুমি মানুষ থেকে বেশি কাম্য কক্ষনো নও!

এরপরে, মা কে পাবে সে জানা গেল। একদিনের জন্যে, ঘুমানোর পর আর জেগে উঠবে না মা। হিমু মা’র ছবি কখনো দেখেনি কারণ একবার দেখামাত্র পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ডেভিড মা’কে চাইল। সে তো মরণশীল নয়, আজীবন হাহাকারের বদলে একদিনের সুখস্পর্শ নিয়ে চলাটা বাছলো। মা’কে নিয়ে একটা অসম্ভব ভালো দিন কাটাল।

শেষ দৃশ্য। মা ঘুমিয়ে যাবেন। এবং হাবেহাবে বোঝা যাচ্ছে তার মা ও আলাদা না, আর সব এক্সপেরিমেটের মতই সেও ঘুম ভেঙে আর জাগবে না। মানে অল মেন মাস্ট ডাই! সব জেনেবুঝে ‘মুখে হাসি চোখে জল’ নিয়ে মা’কে ঘুম পাড়াচ্ছে সে। এবার মা’র পাশে সেও ঘুমিয়ে পড়ল। আজকের সারাদিনের স্মৃতি সম্বল করে। তার মৃত্যু হবে না! মনে পড়ে সত্যজিতের ‘Two’ ছবিটার শেষ দৃশ্য, যেখানে একে একে সব খেলনাগুলো (গাড়ি,রোবট এইসব) পড়তে থাকে। আর ছেলেটা এককোনায় বসে থাকে। বাইরের বাতাসে ঘুড়ি ভেঙে ফেলে আসলে কিছুই জয় হয় না, গন্ডীত্ব তো রোবটত্বই!

পরদা কালো করে ভেসে ওঠে ডিরেক্টেড বাই স্টিফেন স্পিলবার্গ আর আমরা ভাবতে বসি ধন্য এ মানবজন্ম! কি অসামান্য বর (boon) মৃত্যু নিয়ে আমরা জন্মেছি! কেউ যদি কখনো মুহূর্তের জন্যেও আমাকে ভালবেসে থাকে, তবে একদিন আমি শেষ হয়ে যাবো, আমাকে আর পাওয়া যাবে না এই ভেবে পুড়েছে আরেক মুহূর্ত! এ কি সহজ গান?
কি অসম্ভব দামি আমরা!

জয়তু স্পিলবার্গ!

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More