মনসামুড়াঃ অভিশপ্ত এক বাঁশঝাড়ের ইতিবৃত্ত

13

বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা। তার ৪ নং সহদেবপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম দহুলিয়া, নয়াকান্দি, মেঘদাইর এবং ভুঁইয়ারা যথাক্রমে ইউনিয়নের উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ভুঁইয়ারা ও নয়াকান্দি গ্রামের ঠিক মধ্যখান দিয়ে সুন্দরখাল নামের একটি খাল উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দহুলিয়া গ্রামকে ডিঙিয়ে পালাখাল হয়ে সাচার পর্যন্ত চলে গেছে। সুন্দরীখালের পূর্বপাড়ে টিলাসদৃশ একটি ঘন বাঁশঝাড়ের দৃষ্টিগোচর হয়। স্থানীয়ভাবে বাঁশঝাড়টি পরিচিত মনসামুড়া বা মনসার বাঁশঝাড় নামে। বাঁশঝাড়ের ঠিক মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় বছরে দুইবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজোর আয়োজন করে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় হিন্দু মুসলিম সব শ্রেণীপেশার লোকের ঢল নামে মনসামুড়ায়। শীতকালে আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আসে শিক্ষার্থীরা।

পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে নগণ্য এক বাঁশঝাড় নিয়ে কেন মানুষের এত আগ্রহ। এর পেছনের প্রেক্ষাপট কি। কি বৃত্তান্ত!
তবে আর দেরি কেন চলুন জেনে আসি কচুয়া উপজেলার সেই অভিশপ্ত মনসার বাঁশঝাড়ের আদিঅন্ত।

 

মনসামুড়ার উৎপত্তি ও নামকরণঃ

রহস্যময় মনসার বাঁশঝাড়ের উৎপত্তি ও নামকরণ নিয়ে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কিংবদন্তি অনুসারে বলা হয়ে থাকে, সাপের দেবী মনসার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হয়েছে এ বাঁশঝাড়। অনেক অনেক বছর আগে সাপের দেবী মনসা ও তার সঙ্গীরা সুন্দরখালের পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে গেলে দেবীর দল বিশ্রাম নেয়ার জন্য খালের পূর্বপাড়ে নৌকা ভেড়ান। বিশ্রাম শেষে চলে যাওয়ার সময় মা মনসা সেখানে একটি বাঁশের চারা রোপণ করে যান। আর এ চারা থেকে কালক্রমে অসংখ্য বাঁশের সৃষ্টির ফলে জন্ম হয় এ বিশাল বাঁশের ঝাড়ের।

স্থানীয়দের নিপাট বিশ্বাস এ ঝাড়ে আছে অগণিত সাপ। দিনের বেলা মানুষের চলাচলের কারণে বাঁশের রূপ ধারণ করে থাকা এ সাপগুলো রাতের বেলা হয়ে উঠে জীবন্ত। বাঁশের একটি কঞ্চি বা পাতা ছিঁড়াতে রয়েছে সেখানে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। অদ্ভুত এক নারীকন্ঠ ভেসে আসে প্রতিরাত। পরতে পরতে আধিভৌতিকতার নানা উপাখ্যান জন্ম দিয়ে ভয় আর আতংকের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়ে থাকা মনসামুড়ার পেছনে আছে মৃত্যুরও উদাহরণ। পারতপক্ষে তাই এখানটার ছায়াও মাড়ায় না কেউ।

 

অভিশাপের শুরু যেখানেঃ

পৃথিবীর ব্যাখ্যাতীত আধিভৌতিক ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই মাঝে আছে। আবার অনেকেই এসব ঘটনাকে সাদরে গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত। মনসার বাঁশঝাড় নিয়ে প্রচলিত অবিশ্বাস্য ঘটনার যে বর্ণনা দেয়া হবে তা স্থানীয় জনশ্রুতি এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতের ভিত্তিতে বলা হবে। তাই উপরোক্ত দুই গোষ্ঠীকে এ বর্ণনাকে সহজভাবে নেয়ার আবেদন জানিয়ে শুরু করছি মনসার অভিশাপের প্রথম কাহিনী।

দহুলিয়া গ্রামের এক লোক একদিন তার জ্বালানির জন্য মনসামুড়া থেকে কিছু পাঁকা বাঁশ কেটে নিয়ে যায়। তখন পর্যন্ত মনসামুড়া নিয়ে মানুষের ধারণা স্বাভাবিকই ছিল। অতঃপর রাতে যখন তার স্ত্রী রান্না করার জন্য রান্নাঘরে যান তখন একটি দৃশ্য তাকে হতভম্ব করে তোলে। তিনি লক্ষ্য করেন বাহারি প্রকারের অসংখ্য সাপ রান্নাঘরে কিলবিল করছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি মূর্ছা যান। পরদিন তার স্বামী বাঁশঝাড় থেকে আনা সকল বাঁশ যথাস্থানে রেখে আসে।
এই ঘটনার অব্যবহিত পর মনসার বাঁশঝাড় নিয়ে মানুষের মনে আতংক দানা বাঁধতে থাকে।

স্থানীয়ভাবে বাঁশ কাটা নিয়ে এরকম আরও একটি মর্মান্তিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
নিজের বসতবাড়ি নির্মাণ করার জন্য ভুঁইয়ারা গ্রামের এক লোক একদিন মনসার বাঁশঝাড় থেকে কিছু বাঁশ কেটে এনে তার ঘরে লাগিয়ে দেয়। তার পরেরদিন ঐ লোক রাতে স্বপ্নে দেখে যে, কেউ একজন তাকে বলছে বাঁশঝাড় থেকে আনা বাঁশ যাতে সে অতিসত্বর যথাস্থানে রেখে আসে অন্যথা তাকে বরণ করতে হবে করুণ পরিণতি, অপঘাতে মারা যাবে সে।
কিন্তু ঐ লোক স্বপ্নের ঘটনাটিকে কোনরকম গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করতে থাকে। এর ফলাফল হিসেবে ২/৩ দিন পর আকস্মিকভাবে রক্তবমি করে মারা যায় সে।
মনসার বাঁশঝাড় যখন একটি মৃত্যুর গোড়াপত্তন করে তখন থেকেই সাধারণের মনে এক অজানা আতংক আর ভয় বিরাজ করতে থাকে।

 

মনসামুড়ার দুই রূপ-কাহিনীঃ

অজানা আতংক আর বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মনসামুড়া তখন পর্যন্ত লোমহর্ষকতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি যতক্ষণ না পর্যন্ত দুই প্রসিদ্ধ সাপুড়ের মৃত্যু-কাব্য রচিত না হয়। সাপ তুলতে গিয়ে দুই অভিজ্ঞ সাপুড়ের মৃত্যু মনসার বাঁশঝাড়ের প্রধান রূপ-কাহিনী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। ১৯৪০ সালের দিকে বেদে সম্রাটের মৃত্যুর পর প্রায় ৩০-৪০ বছর পর আরেক সাপুড়ের আশ্চর্য তিরোধানের পর গা ছমছম আর রোমাঞ্চের অকুস্থল হয়ে উঠে মা মনসার একান্ত এই মনসামুড়া।

 

সাপ ধরার প্রথম ঘটনা ও সাপুড়ের মৃত্যুঃ

১৯৪০ সাল। ভ্রাম্যমাণ বেদে সম্প্রদায়ের একটি বহর এসে ভিড় করে পালাখাল বাজারের অদূরে। বেদে দের পেশা ছিল সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখানো। পালাখাল বাজারে বেদের একটি দল প্রথম মনসার বাঁশঝাড় সম্পর্কে অবগত হয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে তারা জানতে পারে এ বাঁশঝাড়কে জড়িয়ে যত লোককাহিনী। গ্রামবাসীরা একে একে তাদের মনসামুড়া নিয়ে সব ধরণের অস্বাভাবিকতার ব্যাখ্যা দেয় বেদের এ দলকে। এমন সব আশ্চর্য ঘটনা শুনে বেদের ঐ দলের এক সাহসী সাপুড়ে সিদ্ধান্ত নেয় মনসামুড়া থেকে সাপ বের করে সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। এলাকাবাসী তার এ ঘোষণায় যথেষ্ট উৎফুল্লিত হয়ে আশেপাশে প্রচার করতে থাকে। দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়।
অবশেষে, একদিন সকালবেলা সাপুড়ে তার সহযোগীদের নিয়ে নৌকাযোগে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। সুন্দরীখালের নিকটে এসে সাপুড়ের দল বাঁশি বাজাতে শুরু করে। আর তার চারপাশে ঘিরে থাকে উৎসাহী হাজার জনতা। একই সময়ে ভুঁইয়ারা গ্রামের ইয়াছিন মিয়া (মৃত) মনসামুড়ার পাশেই ঘাস কাটায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে তিনি সবাইকে বলেছিলেন যে, সাপুড়ের দল যখন বাঁশি বাজাতে বাজাতে মনসামুড়ার দিকে যাচ্ছিল তখন মনসার ভেতর থেকে রেলগাড়ির মতন গরগর শব্দ শুনা যাচ্ছিল। সে যাইহোক, ঐ সাপুড়ে সর্দার বাঁশি বাজিয়ে যখন মনসামুড়ার খুব নিকটে চলে যায় তখন আকস্মিকভাবে ‘মা মনসা তুই আমাকে বাঁচা‘ রব তোলে চিৎকার দিতে শুরু করে। এতে আশেপাশের উৎসুক জনতার ভেতর আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। দুয়াটি গ্রামের ডাক্তার শাহ এমরানের পিতা সিরাজুল ইসলাম যখন এ ঘটনার বর্ণনা দেন তখন তার বয়স ৯০ বছর। তিনি গত ১২ ই জুন ২০১৩ তে মৃত্যুবরণ করেন। তার ভাষ্যমতে, এ সময় অসংখ্য সাপ মনসামুড়ার প্রতিটি কঞ্চি ও পাতায় অবস্থান নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেদের দল তাড়াহুড়ো করে অভিযানে সমাপ্তি টেনে চম্পট দেয়। কথিত আছে, বেদেরা যখন নৌকা থেকে বাঁশি বাজাচ্ছিল তখন একটি সাপ নৌকার গলুইয়ে ছোবল মারে আর এই ছোবলের ফলে পুরো গলুই পানিতে দেবে যায়।
এই ঘটনার দু একদিন পরে সাপুড়ে সর্দারের শারীরিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে শুরু করে এবং এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

 

সাপ ধরার দ্বিতীয় ঘটনা ও সাহসী মালেকের মৃত্যুঃ

প্রথম সাপুড়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর পেরিয়ে যায় আরও চার দশক। মনসামুড়া তখনো রহস্য আর ভয়ভীতির মোক্ষম কেন্দ্রস্থল হয়ে বীর-দর্পে বিরাজ করছিল। দিনকে দিন যেন মা মনসার এ সৃষ্টি তার অস্তিত্বের বড়াই করে সাধারণের সম্মুখে অট্টহাসি দিচ্ছিল। ১৯৮০ সালের দিকে ঘটে সাপ ধরার দ্বিতীয় ঘটনাটি। এবার আর কোন সাপুড়ে নয়, খোদ ভুঁইয়ারা গ্রামের এক অসমসাহসী যুবক মনসামুড়া থেকে সাপ ধরে এনে এলাকাবাসীর সামনে উপস্থাপন করার ভয়ানক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
যুবকের নাম আব্দুল মালেক। শৈশব থেকেই ছিল সে ডানপিটে স্বভাবের। ঘরে তার মন বসত না। একবার বাড়ি থেকে রাগ করে আসামে চলে যায় মালেক। কামরূপ কামাক্ষায় দীক্ষা নিতে থাকে তন্ত্রমন্ত্র আর যাদুবিদ্যার। পরিণত হয়ে ফিরে আসে তার নিজ গ্রাম ভুঁইয়ারাতে। আত্মস্থ করা যাদুবিদ্যার ভেলকিবাজি এলাকায় এসে প্রদর্শন করে। পাশাপাশি সাপের খেলা ও তন্ত্রমন্ত্রের ভোজবাজি দেখিয়ে অচিরেই গ্রামবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয় সে। একদিন গ্রামের কিছু লোক কৌতুক-বশত মালেককে মনসামুড়া থেকে সাপ তুলে আনার ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। আব্দুল মালেক অহংকারভরে পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও সাদরে এ প্রস্তাব গ্রহণ করে। তার এ উদ্যোগে জোরেশোরে সায় দেন ৪নং সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। মালেক নিজ উদ্যোগে তার সাপ ধরার সেই মাহেন্দ্রক্ষণের কথা এলাকায় প্রচার করতে থাকে। অবশেষে, সাপ ধরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়। সেদিন ছিল রোববার। মাইক-যোগে আশেপাশের এলাকায় প্রচার করা হয় মালেকের সাপ ধরার ঘটনা। প্রায় ৪০ বছর পর রোমাঞ্চের নতুন ঘটনার সাক্ষী হতে দূর দূরান্ত থেকে মনসামুড়ার আশপাশে জড়ো হয় হাজারো মানুষ।
মালেক তন্ত্রমন্ত্র পড়া শুরু করে। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মালেক একটি সাপ ধরে উৎসুক জনতার সামনে তুলে ধরে। কিন্তু সবাই বলাবলি করতে লাগল যে, মালেক নাকি পূর্বেই একটি সাপ মনসামুড়াত ছেড়ে দিয়ে যায় আর সেই সাপই ধরে সে বাহাদুরি দেখাচ্ছে। এ কথা শুনে মালেক উত্তেজিত হয়ে যায় এবং যেকোনমূল্যে আরও সাপ ধরে সবার সামনে উপস্থাপন করার দৃঢ়-সংকল্প গ্রহণ করে। পূর্বের সাপুড়েদের বাঁশি বাজানোর কারণে শত শত সাপ বেরিয়ে আসার ভয়ানক অভিজ্ঞতার কারণে সতর্কতাবশত মালেক সাপ ধরার ভিন্ন পন্থা প্রয়োগ করে। সে মনসামুড়ার এক প্রান্তে গর্ত খুঁড়তে থাকে। ২/৩ ঘণ্টা টানা খোঁড়াখুঁড়ির পরও সাপের কোন দেখা না পাওয়ায় জনতা মালেককে গালমন্দ করতে থাকে। অবশেষে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটি বিষধর কোবরা সাপ হাতে করে সহাস্যে সবার সামনে তুলে ধরে ঝাঁপিতে পুরে রাখে আব্দুল মালেক। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে সেই সাপ ঝাঁপি থেকে উধাও হয়ে যায়।
ঐদিনই রাতে মালেক স্বপ্নে দেখে কে যেন তাকে বলছে, “তুই আমার মুড়ায় হাত দিতে গেলি কেন। তুই আর বেশিদিন বাঁচবি না

এই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর কচুয়ার কাছাকাছি এক গ্রামে অভিজ্ঞ বেদের দলের পরামর্শ উপেক্ষা করে সাপ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারায় মালেক।
অনেক তন্ত্রমন্ত্র আর ঝাড়ফুঁক দিয়েও বাঁচানো যায়নি মালেককে। স্থানীয়দের বদ্ধমূল বিশ্বাস, মা মনসার অভিশাপের কারণেই এমন করুণ পরিণতি বরণ করতে হয় সাহসী মালেককে

মনসার বাঁশঝাড়কে কেন্দ্র করে মনসামুড়ার ঠিক পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি লক্ষীমন্দির। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সেখানে পূজো দেয়। কথিত আছে, একবার পূজোতে ঘাটতি থাকার কারণে মন্দিরে ১২ টি সাপ উঠে আসে। পরে আবার নতুন করে পূজো দিলে সাপগুলো সেখান থেকে চলে যায়।

Leave A Reply
13 Comments
  1. Uzsfmc says

    rybelsus 14mg drug – rybelsus price order DDAVP for sale

  2. MichaelLIc says

    http://canadaph24.pro/# safe online pharmacies in canada

  3. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# best online pharmacy india

  4. StevenJeary says

    mexican rx online: Mexican Pharmacy Online – medicine in mexico pharmacies

  5. StevenJeary says

    mexico drug stores pharmacies: medication from mexico pharmacy – mexico drug stores pharmacies

  6. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# top 10 online pharmacy in india

  7. StevenJeary says

    buy medicines online in india: Cheapest online pharmacy – reputable indian online pharmacy

  8. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# medication from mexico pharmacy

  9. StevenJeary says

    best mail order pharmacy canada: Large Selection of Medications from Canada – online canadian drugstore

  10. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy store

  11. RickyGrila says

    mexico pharmacy cheapest mexico drugs mexican rx online

  12. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  13. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# cheapest online pharmacy india

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More