সব ধরণের ঘরোয়া লিগের খেলাই প্রায় শেষ। ফুটবল বিশ্ব নতুন করে মেতে উঠছে ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। ক্লাব ফুটবল নিয়ে তাই আপাতত খুব একটা উন্মাদনা থাকার কথা ছিলো না। কিন্তু তবুও বিশ্বকাপের আগে শেষ রাজকীয় লড়াই নিয়ে এখনো তর্ক বিতর্ক চলছে ফুটবল বিশারদ দের মধ্যে। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় খেলাটাই যে এখনো বাকী। কালই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। লড়বে এই টুর্নামেন্টটির অন্যতম সফল দুইটি দল। একদিকে স্পেনের সবচেয়ে সফল দল, ১২ বার শিরোপা জয়ী রিয়াল মাদ্রিদ অন্যদিকে টুর্নামেন্টটিতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল দল, ৫ বার শিরোপা জয়ী লিভারপুল। তাই আপাতদৃষ্টি তে ম্যাচটি রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল মনে হলেও ফুটবলভক্ত রা ম্যাচটিকে স্পেন বনাম ইংল্যান্ড এর মতো করেই দেখছে।
ফুটবলবিদদের মতে টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলই ফাইনালে উঠেছে। অন্ততপক্ষে খাতা কলমের হিসেব তাই বলছে। একদিকে লিভারপুল, যারা পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সর্বমোট ৪০ গোলই প্রমাণ করে দেয়, টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগ তাদেরই। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ, যাদের নিয়ে আলাদা ভাবে বলার কিছু নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রিয়াল মাদ্রিদ মানেই যেনো অন্যরকম একটা আতংক। তাই অনেকের মতেই খুবই জমজমাট একটি ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্ব।
অনেক বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে এসেই ফাইনলে উঠে, সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লিভারপুল কোচ জর্গেন ক্লপ। সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকলেও, সাম্প্রতিক পার্ফমেন্স বিবেচনায় লিভারপুল আট দশটি সাদা মাটা দলের মতোই ছিলো। কিন্তু এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম থেকেই দাপিয়ে বেড়ানো লিভারপুল যেনো আগে থেকেই ফাইনালের ইংগিত দিচ্ছিলো। ম্যাচের পর ম্যাচ গোলবন্যায় প্রতিপক্ষকে বিদ্ধস্ত করে জানান দিয়েছিলো, শিরোপা নেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগ নিঃসন্দেহে তাদেরই। সর্বমোট ৪০ গোল করেছে তারা, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ১০ গোল বেশী। তাদের ফ্রন্ট ট্রায়োর পার্ফমেন্স পেছনে ফেলেছে অন্য যেকোন দলের আক্রমাণভাগ কে। উড়তে থাকা মোহাম্মদ সালাহ, সাথে ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডার বয় ফিরমিনো এবং সাদিও মানের এই ত্রয়ী নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের সেরা।
তিনজনের সম্মিলিত ২৯ গোলই বলে দিচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য কতোটা কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সামনে। এই ২৯ গোলের মধ্যে মোহাম্মদ সালাহ, ফিরমিনো এবং সাদিও মানে করেছেন যথাক্রমে ১০ গোল, ১০ গোল এবং ৯ গোল। দলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট টা এখানেই। দল কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল না। তাই প্রতিপক্ষ কে চোখ রাখতে হবে সবার উপরেই। আপাতদৃষ্টিতে মোহাম্মদ সালাহ কে সবচেয়ে ভয়ংকর মনে হলেও, চুপি প্রতিপক্ষ কে ঘায়েল করার কাজ করে গিয়েছেন রবার্তো ফিরমিনো। নিজে ১০ গোল করেছেন, সাথে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরো ৭ গোল। সরাসরি ১৭ গোলে অবদান রেখেছেন। মূল একাদশে এই ত্রয়ী থাকছেন তা নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায়। আক্রমণভাগের সব কৃতিত্ব এই ত্রয়ীর উপর গেলেও নিচ থেকে কলকাঠি নেছেড়েন কিন্তু অন্য একজন। সর্বোচ্চ ৯ এসিস্ট করে এক টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশী এসিস্টের রেকর্ডটিও নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন তিনি। হ্যা, মিডফিল্ডার হয়েও পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো জেমস মিলনারের কথাই বলছি। সুন্দর আক্রমণের সূচনা তার মাধ্যমেই হয়, যেটায় শেষ পেরেক ঠুকে দেন সালাহ ফিরমিনো রা। আক্রমণ ভাগ নিয়ে কোচ যতোটা স্বস্তিতে আছেন, ঠিক ততোটাই দুঃশ্চিন্তায় আছেন রক্ষণ নিয়ে। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৪ গোল হজম করাটা এখনো ঠিক মেনে নিতে পারছেন না তিনি। এখন পর্যন্ত খুব একটা কঠিন পরীক্ষার সম্মুক্ষীণ হতে হয়নি তাদের। এই রক্ষণ রোনালদো বেল দের কতোক্ষণ আটকে রাখতে পারবে সেটা ভেবেই ঘাম ঝড়ছে ক্লপের। তবে সর্বোপরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো খেলার রেকর্ড আছে লিভারপুলের। সেটা আবারো প্রমাণ হয় কিনা সেটাই দেখা বাকি।
অন্যদিকে টানা তৃতীয় শিরোপা জিতে হ্যাট্রিক করতে চায় জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ। “চ্যাম্পিয়ন্স লিগ” শব্দটা যেনো রিয়াল মাদ্রিদের সাথে জুড়ে গেছে পুরোপুরি। পুরো দলের ফর্ম যেমনই হোক না কেনো, এই টুর্নামেন্ট টিতে আসলে যেনো তাদের রূপ পাল্টে যায়। নয়তো লিগে ছোট ছোট দলের সাথে ভুগতে থাকা দলটি কিভাবে ইউরোপের বাঘা বাঘা ক্লাব গুলোকে বধ করে ফাইনালে উঠে গেলো তা কোন সূত্রেই মিলানো সম্ভব নয়। অবশ্য দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড় থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। প্রতিপক্ষ যতোটা ভয়ংকর, রোনালদো ঠিক ততোটাই। বড় মঞ্চে দলের প্রয়োজনে কখনোই হতাশ করেন নি তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদের টুর্নামেন্ট টি শুরু হয়েছিলো গ্রুপ অফ ডেথে টটেনহ্যাম এবং বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের প্রতিপক্ষ হিসেবে। সিজনের শুরুটা দল খুব একটা ছন্দে না থাকায় সেটার মাশুল দিতে হয় তাদের। গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে কোয়ালিফাই করে পরের রাউন্ডে। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এবার মাদ্রিদের দৌড় খুব বেশী দূরের নয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ নির্বাচিত হলো প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। এ যেনো মরার উপর খরার ঘা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পিএসজি কে তখন চীনের প্রাচীর মনে হচ্ছিলো রিয়াল মাদ্রিদের সামনে। তবে দলে একজন সুপারহিরো থাকলে কোন দেয়ালই পার করা কঠিন নয়। এবং বরাবরের মতোই সেই সুপার হিরোর মতো আবির্ভাব ঘটলো রোনালদোর। প্রথম লেগে জোড়া গোল এবং পরবর্তী লেগে আরো ১ গোল করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান। কোয়ার্টারে প্রতিপক্ষ ছিলো ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাস। প্রথম লেগে জুভেন্টাসের মাঠেই ম্যাচ টা নিজেদের করে নিতে দেরী করেনি তারা। রোনালদোর জোড়া গোল, এবং তার পাস থেকেই মার্সেলোর করা আরেক গোলে
৩-০ গোলের জয় নিয়ে ফেরে তারা। তবে পিকচার তখনো শেষ হয়নি। ফিরতি লেগে নাটকীয়ভাবে কামব্যাক করে জুভেন্টাস। ৩ গোল দিয়ে এগ্রিগেটে ৩-৩ সমতা আনে। ম্যাচ তখন অতিরিক্ত টাইমের দিকে গড়াচ্ছিলো, এমন সময় গোলপোষ্টের সামনে লুকাজ ভাস্কেজকে ফাউল করায় পেনাল্টি রিয়াল মাদ্রিদ। স্পট কিক থেকে গোল করে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেমি তে গিয়ে পরীক্ষা টা আরো কঠিন হয়ে গেলো। জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ। দল ততোদিনে ছন্দে ফিরে গেছে। দলের মূল তারকা রোনালদোও ছিলেন পুরো ফর্মে। বায়ার্নের সাথে ভালো খেলার তার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। অবশ্য বায়ার্ন ও রোনালদো কে নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছিলো ভালোভাবেই। একই তীরে বার বার বিদ্ধ হতে কারই বা ভালো লাগে? কিন্তু পরীক্ষায় প্রশ্ন এলো সিলেবাসের বাইরে থেকে। প্রথম লেগে মার্সেলো এবং এসেন্সিও, ফিরতি লেগে বেনজেমার জোড়া গোল। আবারো স্বপ্ন ভঙ্গ বায়ার্নের। ৪-৩ এগ্রিগেটে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ।
দল ফাইনালে পৌছালেও কোচ জিদানের দুঃশ্চিন্তার কারণ আছে অনেকগুলো। রক্ষণভাগ নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন তিনি। জুভেন্টাসের মাঠে ৩-০ তে জিতে আসার পরও, নিজেদের মাঠে ৩ গোল খেয়ে পা ফসকাতে বসেছিলো তারা। বায়ার্নের সাথেও অনেকটা একই অবস্থা। রাইট ব্যাক ড্যানি কার্ভাহাল এর ইঞ্জুরীর পর ডিফেন্সের এক পাশ সম্পূর্ণ নড়বড়ে হয়ে গেছে। কোনভাবেই এর সমাধান পাচ্ছেন না তিনি। তবে স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, ফাইনালে কার্ভাহাল কে পাবেন তিনি। আরেক দুঃশ্চিন্তা
আক্রমণ ভাগ নিয়ে। এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ছাড়া, গোল পাচ্ছেন না আর কেউই। রোনালদোর ১৫ গোল এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার করিম বেঞ্জেমা (৪ গোল)। বিবিসি ত্রয়ী ফর্মে থাকলে জিদান কে হয়তো এতোটা দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হতো না।
দুই দলই আক্রমণাত্বক ফুটবলে বিশ্বাসী। একদিকে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, অন্যদিকে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ টপ স্কোরার সালাহ, ফিরমিনো এবং মানে। একদিকে জেমস মিলনার, অন্যদিকে ক্রুস মদ্রিচ। দুই দলেরই দুর্বলতা তাদের রক্ষণ। তাই ফাইনালের প্রচুর গোল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সবাই। সর্বোপরি একটি জমজমাট এবং উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালের অপেক্ষায় আছে সবাই।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক টুর্নামেন্টের টপ পার্ফমার দের লিস্ট
টপ স্কোরারঃ
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (১৫গোল)
মোহাম্মদ সালাহ (১০গোল)
রবার্তো ফিরমিনো (১০ গোল)
সাদিও মানে (৯ গোল)
টপ এসিস্ট মেকারঃ
জেমস মিলনার (৯)
রবার্তো ফিরমিনো (৮)
লুইস সুয়ারেজ (৫)
ইডেন হ্যাজার্ড (৪)
রিয়াল মাদ্রিদ কিছুটা এডভান্টেজে থাকবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে। তাদের সব খেলোয়াড়েরই ২-৩ টা ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। অন্যদিকে এতোদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে আসা লিভারপুল ফাইনালের প্রেসার কাটিয়ে কতোটা ভালো খেলতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
সিজনে প্রথমবারের মতো নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং মোহাম্মদ সালাহ। এই লড়াই দেখার জন্য মুখিয়ে আছে ফুটবল বিশ্ব। দলকে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসাতে পারে সেটা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২৬ তারিখ পর্যন্ত।
দুইদলেরই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের রেকর্ড ভালো। লিভারপুলের এটি অষ্টম ফাইনাল। আগের সাতটির মধ্যে ৫ টিই জিতেছে তারা। অন্যদিকে ১৫ টি ফাইনাল খেলা রিয়াল মাদ্রিদ হেরেছে মাত্র ৩ টি তে। যার একটি আবার এই লিভারপুলের বিরুদ্ধেই। ১৯৮১ সালের সেই ফাইনালের পরাজয়ের বদলা নিতে চায় লস ব্লাংকোস রা। ৮১ কে উল্টো করে লিখলে হয় ১৮। কাকতালীয়ভাবে এই দুইদল আবার ২০১৮ এর ফাইনালেই মুখোমুখি হলো। রিয়াল মাদ্রিদ কি পারবে ৮১ ফাইনালের প্রতিশোধ নিয়ে ১৩ তম শিরোপা ঘরে তুলতে? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েকদিন।
buy semaglutide generic – semaglutide us where can i buy DDAVP
buy terbinafine without a prescription – buy cheap fulvicin buy griseofulvin sale