সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন অপার রহস্য আর সৌন্দর্যের মিশ্রণে। সারা পৃথিবীতেই রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর বস্তু যা প্রতিনিয়ত আমাদের আশ্চর্যান্বিত করে থাকে। এরমধ্যে সমুদ্রসৈকত কিংবা দ্বীপ ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। আজ পৃথিবীর এমন সুন্দর ও চমকপ্রদ ১০টি দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত নিয়ে পুরো লেখাটি সাজালাম।
১.নাগাভিও সমুদ্র সৈকত: (Navagio Beach)
নাভাগিও সমুদ্রসৈকত ভাঙ্গা জাহাজের দ্বীপ কিংবা স্মাগলারদের উপসাগর নামেও পরিচিত। এটি গ্রীসের জোকিন্থাসের উপকূলীয় লুনিয়ায় দ্বীপের কাছে অবস্থিত। মূলত আশির দশকেও এটিকে এগিউস গোর্জিয়াস নামে পরিচিত ছিল। কথিত আছে যে ১৯৮০ সালে স্মাগলারদের একটি জাহাজ খারাপ আবহাওয়ায় এই দ্বীপে এসে বিধ্বস্ত হয়। এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দিয়েছে পুরো দ্বীপটিকে নতুন একটি রূপ। পিছনে পাহাড় আর সামনে নীলা সমুদ্রের পানি যে কোন সমুদ্র প্রেমীকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে।
২.বেনাগিল সমুদ্রসৈকত: (Benagil Sea Cave in Portugal)
ইউরোপ তথা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি সমুদ্রসৈকত হল বেনাগেল। পর্তুগালের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে এটি অবস্থিত। শুধুমাত্র জলপথেই এখানে পৌঁছানো যায়। গ্রীষ্মকালে এখানে অনেক পর্যটক এসে ভিড় জমায়। বিশেষত সূর্যাস্ত দেখার জন্য সমুদ্রসৈকতটি এক লোভনীয় স্বপ্নপুরী।
৩. বোনারীর গোলাপি সমুদ্রসৈকত: (Pink Beach in Bonaire)
ক্যারবীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই সমুদ্রসৈকতটি একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত, আর তা হল সমুদ্র পাড়ের গোলাপি বালু। যখন আস্তে আস্তে রোদ বাড়ে কিংবা জল কমে যায় তখন এই সমুদ্রের বালি গোলাপি হতে থাকে। দ্বীপটি খুবই নির্জন। তাই ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য অত্যন্ত পছন্দের একটা যায়গা হতে পারে এটি।
৪.কাউয়াপিয়া সমুদ্রসৈকত: (Kauapea Beach in Hawaii)
যুক্তরাষ্ট্র অধ্যুষিত হাওয়াই দ্বীপের অন্তর্গত এই সমুদ্রসৈকতকে অনেক সময় “সিক্রেট বিচ” নামেও ডাকা হয়। সমুদ্রসৈকতের অদূরেই রয়েছে বাতিঘর যা ভ্রমণকারীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি জিনিস। এছাড়াও যারা সার্ফ করতে ভালোবাসেন তারাও এই সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে থাকেন বিশেষ আগ্রহ নিয়ে।
৫.পালায়া দেল আমর: (Playa del Amor in Mexico)
এই সমুদ্র সৈকতটি মেক্সিকোর পুয়ের্তো ভ্লায়াতরা থেকে স্পিড বোট দিয়ে ঘণ্টাখানিক পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। একটি কৃত্রিম টানেলও আছে এই দ্বীপের মধ্যে। এই দ্বীপ সমুদ্রসৈকতটি অন্তর্জাতিক পর্যটক বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। রোমান্টিক সময় পার করতে চাইলে এই সমুদ্রসৈকতের বিকল্প আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয়না।
৬. ড্রাই তর্তুগাজ সমুদ্রসৈকত: (Dry Tortugas in Florida)
সবাই হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতের নাম শুনে থাকবেন কিন্তু ড্রাই তর্তুগাজের সাথে কম পরিচিত থাকবেন। মূল ফ্লোরিডা থেকে প্রায় সত্তর কিলোমিটার দূরে এই সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান। পর্যটকমহলে এটির বেশ গুরুত্ব আছে। তবে জেনে রাখা ভালো যে এই সমুদ্রসৈকতেই সাধারণত বিভিন্ন অভিবাসীরা অবৈধভাবে এসে ভিড় জমায়।
৭. লর্ড হোয়ে দ্বীপ: (Lord Howe Island in Australia)
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশ্রণে গঠিত এক অপার মহনীয় স্থান। কাঁধে ব্যাকপ্যাক আর সাথে একটা মাউন্টেন সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে চাইলে এর থেকে সুন্দর যায়গা আর কিছু হতে পারেনা। তবে আপনি চাইলেই এই দ্বীপে যে কোন সময় ঘুরতে যেতে পারবেন না। একই সময়ে মাত্র ৪০০শত মানুষকে একসাথে এই দ্বীপে অবস্থান করতে দেয়া হয়। তাই আপনাকে আগে থেকেই যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
৮. হোয়াইট হেবেন সমুদ্রসৈকত: (Whitehaven Beach in Australia)
অনেক দ্বীপে ঘেরা অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি সমুদ্রসৈকত হল হোয়াইট হেবেন সমুদ্রসৈকত। বিস্ময়করভাবে এই সমুদ্র সৈকতের সব বালি সাদা রঙয়ের। এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে পৃথিবীর সবথেকে সাদা আর পরিষ্কার বালি শুধু হোয়াইট হেবেনেই মিলবে।
৯. কো লানাতে দ্বীপ: (Koh Lanta in Thailand)
আন্দামান সমুদ্রের উপকূলে থাইল্যান্ড এর অন্তর্গত এই দ্বীপটি বিশ্বের অন্যতম কয়েকটি দ্বীপের একটি। কিছুটা বন্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আর প্রকৃতির অনন্য সুন্দর এই দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এক বস্তু। এই দ্বীপের আশেপাশে বিভিন্ন জেলে গোষ্ঠীর বসবাস।
১০. হলবক্স দ্বীপ: (Holbox Island in Mexico)
মেক্সিকোর উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপটি অনেকটা যান্ত্রিকতার বাইরে। ফেরি কিংবা বোট দিয়ে এখানে যেতে হয়। একবার পৌঁছে গেলে কেউ আর এই আবর্জনায় ভরা পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না। তেমন কোন ইঞ্জিনের গাড়িঘোড়া নেই। একমাত্র ভরসা হল পায়ে হাটা কিংবা ছোট গল্ফারদের জন্য ব্যবহৃত দুই সিটের ছোট গাড়ি পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্রঃ
১. worlfortravels.com
২. tourbybeaches.com