প্রোগ্রাম হচ্ছে কম্পিউটারের ভাষায় লিখা কতগুলো কমান্ড বা নির্দেশের সমষ্টি যা দিয়ে কম্পিউটার মূলত কোন সমস্যার সমাধান করে থাকে । কম্পিউটার প্রোগ্রামের এই ধারনা প্রথম দেন ১৯ শতকের এক নারী গণিতবিদ , অগাস্টা অ্যাডা ।
১০ ডিসেম্বর ১৮১৫, জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক পিরিয়ডের বিখ্যাত কবি লর্ড জর্জ বায়ারন এবং লেডি এনা ইসাবেলা বায়রনের কণ্যা অগাস্টা অ্যাডা বায়রন । ১৮৩৫ সালে ৮ম ব্যাবন কিং উইলিয়াম কিং কে বিয়ে করার পর তিনি কাউন্টেস অব ল্যাভলেস বা অ্যাডা ল্যাভলেস নামে পরিচিত হন ।
জন্মের কিছুদিন পরেই বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় অ্যাডা তাঁর মার কাছেই বড় হন । অন্যদিকে বায়রনের ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ায় অ্যাডা তাঁর পিতাকে কোনদিন দেখতে পাননি । ১৮২৪ সালে অ্যাডার বয়স যখন ৮ তখন লর্ড বায়রন মৃত্যুবরণ করেন ।
মা লেডি বায়রন সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন এবং গণিতে পারদর্শী ছিলেন । তিনি চাইতেন মেয়ে অ্যাডা যেন তাঁর পিতার পথানুসারী না হয় । এজন্য তিনি অ্যাডাকে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষায় জোর দেন । অল্প সময়ের মধ্যেই সংখ্যা এবং ভাষার উপর অ্যাডার বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পায় । অ্যাডা সমাজ সংস্কারক উইলিয়াম ফ্র্যান্ড, পারিবারিক ডাক্তার উইলিয়াম কিং এবং স্কটিশ জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ মেরি সমারভিল –এর সহচারয পান । বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে এবং চার্লস ডিকেন্স এর সাথেও তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল ।
অগাস্টা অ্যাডা ১৭ বছর বয়সে কম্পিউটারের জনক ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ এর সাথে পরিচত হন । কিশোরী অ্যাডার বুদ্ধিমত্তায় ব্যাবেজ মুগ্ধ হন । তাঁদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও গড়ে উঠে । ব্যাবেজের সাহায্যে অ্যাডা প্রফেসর ডি মর্গান এর কাছে গণিত শিক্ষা শুরু করেন । ব্যাবেজ ১৮৩৩ সালে এন্যালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন যেটাতে সাধারণত অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম করার ব্যবস্থা ছিল । ব্যাবেজ এন্যালিটিক্যাল ইঞ্জিনের গবেষণা নিয়ে অগাস্টা অ্যাডার সাথে আলোচনা করতেন ।
১৮৪২ সালে ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্যালিটিক্যাল ইঞ্জিন নিয়ে একটি বক্তৃতা দেন । ইতালিয়ান গণিতবিদ লুইজি মেনেব্রেয়া এই বক্তৃতাটির উপর ফ্র্যান্স ভাষায় একটি আর্টিকেল লিখেন । এই আর্টিকেলটি ইংরেজিতে অনুবাদ করার অনুমতি পেয়ে অ্যাডা শুধু অনুবাদই করেননি বরং এতে তিনি তাঁর নিজস্ব চিন্তা ভাবনাও যুক্ত করেন । ১৮৪৩ সালে একটি ইংলিশ জার্নালে এই অনুবাদটি প্রকাশিত হয় । মূল আর্টিকেল হতে অ্যাডার মতামত সংবলিত নোটটি ছিল তিনগুন বড় ।
অ্যাডার আর্টিকেল থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, এন্যালিটিক্যাল ইঞ্জিন সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা ছিল । তিনি এতে ব্যাখা করেন, কিভাবে code করলে তা যন্ত্রটি অক্ষর ও চিহ্নকে নাম্বারের সাথে সাথে প্রসেস করতে পারবে । অ্যাডা তাঁর নোটে একটি method ও উল্লেখ করেন যা দিয়ে Series of instruction এর পুনরাবৃত্তি করা যায় । বর্তমানে এই method টি কম্পিউটার প্রোগ্রামে Looping নামে পরিচিত । তিনি প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার নিয়ে আরও কিছু উন্নত ধারণা তাঁর নোটে উল্লেখ করেন । অ্যাডা তাঁর অসামান্য কাজের জন্যই কম্পিউটার ইতিহাসে প্রথম প্রোগামারের স্বীকৃতি পান ।
ল্যাভলেস ২৭ নভেম্বর ১৮৫২ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান ।
মৃত্যুর প্রায় ১৫০ বছর পর ১৯৫০ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যাডা ল্যাভলেসের অবদানটি নজরে আসে এবং ১৯৫৩ সালে B.V. Bowden অ্যাডার আর্টিকেলটি “ Faster than Thought: A Symposium on Digital computing Machines” –এ পুনঃপ্রকাশ করেন । ১৯৮০ সালে The U.S Department of defense একটি নতুন কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজের নামকরন করে “Ada” । অগাস্টা অ্যাডা ল্যাভলেসের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী ২৪ মার্চ “অ্যাডা ল্যাভলেস” দিবস হিসেবে পালিত হয় ।
সূত্রঃ biography.com, mentalfloss.com, WiKi
prandin 2mg for sale – buy prandin 2mg pills order empagliflozin 25mg online