ইলন মাস্ক: বর্তমান দুনিয়ার সেরা উদ্ভাবক, একজন স্বপ্নদ্রষ্টার গল্প

1

একজন ব্যক্তি একাধারে উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক এবং ভবিষ্যৎ প্রবক্তা। এতগুলো বিশেষণ দিয়েও হয়তো পরিচয় আন্দাজ করা সহজ নয় কিন্তু পেপাল অথবা স্পেসএক্স এর নাম শোনার সাথে সাথে চকিতেই পাঠক বুঝে যাবেন কার কথা বলছি! তিনি আর কেউ নন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টা ইলন মাস্ক, বর্তমান বিশ্বের এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যবসায়িক দুনিয়ার পথপ্রদর্শকও বলা চলে !

ইলন মাস্কের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

ইলন মাস্ক এমন এক ব্যক্তি যিনি শুধু স্বপ্ন দেখেন না স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেন! স্পেসএক্স, টেসলা, সোলারসিটি- এই তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে মাস্কের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এছাড়াও তিনি  পেপাল এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সারা বিশ্বে খ্যাত। মাস্ক একাধারে স্পেসএক্স (SpaceX) এর সিইও, সিটিও এবং লিড ডিজাইনার, টেসলা ইনকর্পোরেটেড (Tesla Inc.) এর সিইও, চেয়ারম্যান ও প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট আর সেই সাথে সোলার সিটি’ র (Solar City) চেয়ারম্যান। মানব জাতির বিলুপ্ত রোধে কাজ করছেন “মাল্টি-প্ল্যানেটারী প্রজেক্টে”। তিনি স্বপ্ন দেখেন মঙ্গলে উপনিবেশ স্থাপন করার; ২০২৪ সালের মাঝে মানবজাতিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো শুরু করবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন মাস্ক । মহাকাশ যাত্রাকে মাস্ক এতটাই সস্তা করেছেন যে এর খরচ এখন আগের থেকে ৯০% এর মতো কমে এসেছে। কিছুটা খ্যাপাটে ধরনের লোকই বলা চলে তাঁকে! নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা আর সেগুলোর বাস্তবায়ন করে প্রতিনিয়ত সংবাদের শিরোনাম হয়ে চলেছেন। জন্মগতভাবে তিনি আফ্রিকান হলেও মোট তিনটি দেশের নাগরিকত্ব (আফ্রিকা, কানাডা এবং আমেরিকা) রয়েছে তাঁর। বর্তমানে আমেরিকাতেই বসবাস করছেন।

ইলন মাস্ক এর সব কোম্পানি
ইলন মাস্ক এর সব কোম্পানি; Source: seafoodnet.info

জন্ম ও বাল্যকাল

পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা কানাডিয়ান এবং বাবা দক্ষিণ আফ্রিকান। জন্মের পর ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আফ্রিকায় ছিলেন। এরপর কানাডায় চলে আসেন।

ছোটবেলায় মাস্ক ;
ছোটবেলায় মাস্ক ; Source: Pulsuz Mobil Portal!

ইলন মাস্কের ছেলেবেলাটা বেশ বৈচিত্র্যময়। মাত্র নয় বছর বয়সেই তার বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিলো। এই মানসিক ধাক্কা সামলাতেই তিনি কম্পিউটারের সাথে সময় কাটানো শুরু করেন। বার বছর বয়সে নিজে নিজেই প্রোগ্রামিং শিখে একটি ভিডিও গেমসও বানিয়ে ফেলেছিলেন।

কম্পিউটারের সামনে মাস্ক
কম্পিউটারের সামনে মাস্ক; Source: Happenings@LPU

শিক্ষাজীবন:

মাস্ক ছোটবেলায় বাবার সাথে আফ্রিকায় থাকাকালীন সেখানকার স্থানীয় বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করেন। ১৯৮৯ সালে ১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা পরিহার করে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মা কানাডিয়ান হওয়ার সুবাদে তিনিও সহজেই কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যান। অতঃপর সেখান থেকে ১৯৯২ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান ইউনিভার্সিটি অব পেনসেলভেনিয়াতে ব্যবসা ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার জন্য। অর্থনীতিতে প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করার পর দ্বিতীয় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন পদার্থবিজ্ঞানে। সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন এনার্জি ফিজিক্সে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য। ঠিক সে সময়েই ইন্টারনেট বিপ্লবের সূচনা হয় এবং মাস্ক এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মাত্র দুই দিন পিএইচডি প্রোগ্রামে কাজ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। তিনি নিজেও হয়তো জানতেন না সে সময় নেয়া এই হঠকারী সিদ্ধান্ত একসময় তাঁর ব্যক্তি জীবন এবং বিশ্বকে বদলে দিতে পারে !

পেশাজীবনের সফলতা:

পেশাজীবনে মাস্ক এক জাদুকর বটে! যেখানে হাত দিচ্ছেন সফলতার মুখ না দেখা পর্যন্ত অদম্য পরিশ্রম করে চলেছেন। একের পর এক অবদান রেখে চলেছেন সমাজের নানা ক্ষেত্রে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে হয়ে উঠেছেন তিনি আজকের ইলন মাস্ক –

জিপ ২

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ভাইয়ের সাথে মিলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রথম কোম্পানি “জিপ২”। জিপ ২ আসলে ছিল একটি অনলাইন ভিত্তিক সিটি গাইড। এটি মূলত ছিল পত্রিকা প্রকাশকদের জন্য যা ব্যবসায়িক দিক-নির্দেশনা এবং মানচিত্র প্রদান করত।

জিপ২
ইলন মাস্ক ও তার ভাই মিলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রথম কোম্পানি “জিপ২” ;Source:trendingonlinenow.in

১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কম্পিউটার্স নগদ ৩০৭ মিলিয়ন ডলার ও ৩৪ মিলিয়ন ডলারের স্টকের বিনিময়ে জিপ টু কিনে নেয়। এখান থেকে ইলনের ভাগে জোটে প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার। যা তিনি তাঁর পরবর্তী উদ্যোগের মূলধন হিসেবে ব্যবহার করেন।

পেপাল

১৯৯৯ সালে আরো কয়েকজন সহ নির্মাতার সঙ্গে x.com নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা সাইট চালু করেন যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পেপাল (PayPal) হিসেবে পরিচিতি পায়। শুরুতে এই সেবাটি কেউ গ্রহণ করতে না চাইলেও বর্তমানে এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক টাকা লেনদেনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

পেপালের সহ নির্মাতার সঙ্গে ইলন মাস্ক
পেপালের সহ নির্মাতার সঙ্গে ইলন মাস্ক; ;Source: trendingonlinenow.in

২০০২ সালে পেপালকে  eBay কিনে নেয় প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। বিক্রির পূর্বে মাস্ক পেপাল এর ১১ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাকায় প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেন।

স্পেসএক্স

২০০২ সালে মাস্ক তাঁর তৃতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন” বা স্পেসএক্স (SpaceX) এর যাত্রা শুরু করেন।

২০০২ সালে আরো একটি ঘটনা ঘটে মাস্ক এর জীবনে। বহুল প্রতীক্ষিত আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। যাই হোক, স্পেসএক্সের কথায় আসা যাক; এটি মূলত মহাকাশযান তৈরি এবং উৎক্ষেপণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। স্পেসএক্স থেকে এমন রকেট তৈরি করা হয় যেগুলো প্রচলিত রকেটের চাইতে অনেকগুণ বেশী সস্তা কিন্তু কার্যকারিতার দিক দিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করছে। রকেট সম্পর্কে তেমন কোন পূর্বজ্ঞান না থাকলেও দিনের পর দিন বই পড়তে পড়তে নিজেকে রীতিমত রকেট বিজ্ঞানীতে পরিণত করেন তিনি।

স্পেসএক্স এর রকেটের সামনে ইলন মাস্ক
স্পেসএক্স এর রকেটের সামনে ইলন মাস্ক; Source: Pinterest

স্পেসএক্সই একমাত্র ব্যক্তি মালিকাধীন কোম্পানি যেখান থেকে প্রথম কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়। নাসার সাথেও স্পেসএক্সের চুক্তি হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মালামাল পৌঁছানো এবং নাসার নিজস্ব মহাকাশযানের বদলে স্পেসএক্স এর যানে মহাকাশচারী আনা নেয়ার ব্যাপারে। কারণ স্পেসএক্সের মহাকাশযানগুলো একাধিকবার ব্যবহারোপযোগী। তাছাড়া এ বছরের (২০১৮) শেষের দিকে স্পেসএক্স থেকে চাঁদের মাটিতে ২ জন পর্যটক নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ফ্যালকন ৯ রকেট

২০১২ সালের ২২ মে স্পেসএক্সের পাশাপাশি ইলন মাস্কও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পান একটি নামহীন ক্যাপসুল সহ ফ্যালকন ৯ রকেট উড্ডয়ন করার মাধ্যমে। মহাকাশযানটিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের জন্য ১০০০ পাউন্ড ওজনের রসদ ছিল। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স আরও একটি মাইলফলক অতিক্রম করে ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে একটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়ে।

ফ্যালকন-৯ এর উৎক্ষেপণের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে ইলন মাস্ক;
ফ্যালকন-৯ এর উৎক্ষেপণের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে ইলন মাস্ক; Source: Wikipedia

এছাড়াও সম্প্রতি ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু ১’ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

ফ্যালকন হেভি 

তবে সব মাইলফলক ছাড়িয়ে যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন ইলন মাস্ক তা হচ্ছে ফ্যালকন হেভি। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয় বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাশালী রকেট ফ্যালকন হেভি। ফ্যালকন হেভির প্রথম উৎক্ষেপণে ভর হিসেবে একটি টেসলা রোডস্টার গাড়ি মহাকাশে পাঠিয়েছে স্পেসএক্স। গাড়ির চালকের আসনে বসানো হয়েছে মানবাকৃতির ডামি। এটি পুরোপুরি সফল হলে প্রয়োজন মত যে কোনও কৃত্রিম উপগ্রহ বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ মহাকাশে পাঠাতে পারবে তারা।

ফ্যালকন হেভির উৎক্ষেপণ;
ফ্যালকন হেভির উৎক্ষেপণ; Source: tn.com.ar

টেসলা

২০০৩ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি টেসলা মোটরস। গাড়ি প্রেমিকদের কাছে টেসলা এক পরিচিত নাম। যদিও  কোম্পানির শুরুতে মাস্ক ছিলেন না। ২০০৪ সালে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। মাস্ক টেসলাতে যোগদান করার পর কোম্পানিটি নতুন করে যাত্রা শুরু করে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে টেসলা স্পোর্টস কার এর একটি এডিশন ‘রোডস্টার’ বাজারজাত করে।

টেসলার তৈরিকৃত রোডস্টার গাড়ির সামনে মাস্ক;
টেসলার তৈরিকৃত রোডস্টার গাড়ির সামনে মাস্ক; Source: inverse.com

২০১৬ তে মাস্ক Tesla.com ডোমেইনটি একজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নেন যার কাছে ডোমেইন নেইমটি প্রায় ২৪ বছর ধরে ছিল। এছাড়াও এই কোম্পানি থেকে ইলেকট্রিক সিডান “Model-S”, “মডেল ৩ সিডান” বাজারে আনা হয় যা গাড়ির জগতে রীতিমত শোরগোল ফেলে দেয়। ২০১৯ সালে টেসলা সেমি নামে একটি ট্রাক প্রস্তুতের কাজ শুরু হবার কথা রয়েছে যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলে প্রায় ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির মর্যাদা পাওয়া রোডস্টার এর নতুন এডিশন ২০২০ সালে বাস্তবতার মুখ দেখবে বলে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, টেসলা কোম্পানির নামকরণ করা হয় কিংবদন্তী বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার নামানুসারে।

টেসলা সেমি ট্রাকের সামনে মাস্ক
টেসলা সেমি ট্রাকের সামনে মাস্ক ; Source: Metro

সোলারসিটি

২০০৬ সালে ইলন এবং তাঁর দুই কাজিন মিলে গড়ে তোলেন সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোলারসিটি। ২০১৬ সালে মাস্ক এটিকে সম্পূর্ণ টেসলার অধীনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে দুই প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শেয়ারই তাঁর।

সোলার সিটির তৈরি সোলার প্যানেল
সোলার সিটির তৈরি সোলার প্যানেল; Source: techdailytimes.com

স্পেসএক্স ও টেসলার বাইরেও ইলন মাস্ক আরো অনেক সংস্থা ও গবেষণার কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন –

হাইপার লুপ

২০১৩ এর অগাস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের একটি নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা দেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লুপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অল্প সময়ে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। ক্যাপসুলের মতো দেখতে এই যান একটি লো প্রেশার টিউবের নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারবে। টিউবটি হবে সম্পূর্ণ বায়ু-মুক্ত, কাজেই এতে ঘর্ষণ থাকবে না বললেই চলে।

মাস্কের মতে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন ও ব্যবহারোপযোগী হতে সাত থেকে দশ বছর সময় লাগবে।

হাইপারলুপ
হাইপারলুপ; Source: ResearchGate

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ২০১৫ এর শেষের দিকে যাত্রা শুরু করে। মাস্ক কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। এই কোম্পানিটি মানবতার কল্যাণে ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের জন্য গবেষণার কাজ করে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে মাস্কের আগ্রহ বরাবরই ছিল ।

নিউরালিঙ্ক

স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থাটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিউরালিঙ্ক নামের এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন একের পর এক উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করে যাওয়া মাস্ক। যদিও জনসমক্ষে ২০১৭ সালে খবরটি প্রকাশিত হয়।

নিউরালিঙ্ক
নিউরালিঙ্ক
Source: corriere.it

দ্য বোরিং কোম্পানি

মাস্ক যখন দেখলেন যে রোজ ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থেকে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে তখন তিনি আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেন! তিনি একটি টানেল নির্মাণকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি “দ্য বোরিং কোম্পানি” নামে খননকারী প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন যার প্রথম কাজ ছিল লস এঞ্জেলসে অবস্থিত স্পেসএক্স এর আওতাভুক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক খননকার্য চালানো। অক্টোবরের শেষের দিকে মাস্ক কোম্পানির কাজের অগ্রগতির ছবি পোস্ট করেন তাঁর ইন্সটাগ্রামে।

দ্য বোরিং কোম্পানি
দ্য বোরিং কোম্পানি Source: engadget.com

প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যখন বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা ঘোষণা দেন– মাস্ক নতুন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর উপদেষ্টামন্ডলীর সাথে নিজের চিন্তার বেশ মিল খুঁজে পান। সে বছরের ডিসেম্বরেই ট্রাম্পের কৌশল ও নীতি বিষয়ক ফোরামে তাকে আহ্বান জানানো হয় এবং তার পরের জানুয়ারিতে তিনি ট্রাম্পের “ম্যানুফ্যাকচারিং জবস ইনিশিয়েটিভ”-   এ যোগ দেন। বিতর্কিত ট্রাম্প প্রশাসনে তাঁর যুক্ত হওয়ার মূল লক্ষ ছিল মূলত সৌরশক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর যাত্রাকে গতিশীল করা আর এর ফলে লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে সেই বছরের ১ জুন ট্রাম্প প্যারিসে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করার পর মাস্ক তাঁর উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

ট্রাম্প আর মাস্ক ; Source:huffingtonpost.com
ট্রাম্প আর মাস্ক ; Source: huffingtonpost.com

ইলন মাস্কের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান

মানবজাতির কল্যাণে বিশেষ করে মহাকাশ অন্বেষণ এবং মানবজাতির স্থায়িত্ব দীর্ঘায়ত করার লক্ষ্যে  ইলন মাস্ক “মাস্ক ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বিধ্বস্ত এলাকাতে বিনামূল্যে সৌরশক্তি সরবরাহ করে থাকে, এছাড়াও বহু ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস খুঁজে বের করা বা মহাকাশসংক্রান্ত গবেষণার কাজে সাহায্য করে থাকে।

ব্যক্তিগত জীবন

ইলন মাস্ক পেশা জীবনে শতভাগ সফল হলেও দাম্পত্য জীবনে খুব একটা সফল নন। বিয়ে করেছেন দুইজনকে। দ্বিতীয় স্ত্রীকেই আবার করেছেন দুইবার! ২০০০ সালে কানাডিয়ান লেখিকা জাস্টিন উইলসনকে বিয়ে করে ছয় পুত্র সন্তানের জনক হন।

জাস্টিন উইলসন আর মাস্ক
জাস্টিন উইলসন আর মাস্ক ; Source: nextshark.com

তাঁর প্রথম সন্তান মাত্র দশ সপ্তাহ বয়সে এসআইডিএস (নবজাতকদের হঠাৎ করে মৃত্যু ঘটার একটি বিরল রোগ) এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কয়েক বছর সংসার করার পর বিচ্ছেদ ঘটে দুইজনের।

২০১০ সালে অভিনেত্রী টালুলাহ রেইলির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এই সম্পর্কও বেশিদিন টিকেনি। দুই বছরের মধ্যেই আবারও বিচ্ছেদের সুর।

টালুলাহ রেইলির সাথে মাস্ক
টালুলাহ রেইলির সাথে মাস্ক; Source: independent.co.uk

২০১৩ তে তাঁরা আবার বিয়ে করেন এবং ২০১৪ তে এসে আবার বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৭ সালে মাস্ক হলিউড অভিনেত্রী এ্যামবার হার্ড এর সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তুললেও সেই সম্পর্কেও ভাঙন ধরে।

এ্যামবার হার্ড এর সাথে মাস্ক
এ্যামবার হার্ড এর সাথে মাস্ক; Source: people.com

ব্যক্তিজীবনে মাস্ক ধর্মে খুব একটা বিশ্বাস করেন না। তিনি নিজেকে বিধর্মী দাবি করেন। কিন্তু শোনা যায় স্পেসএক্সের প্রথম ফ্যালকন রকেট উৎক্ষেপণের সময় নাকি তিনি প্রার্থনা করেছিলেন!

মাস্কের সম্মানজনক স্বীকৃতি

তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি লাভ করেন।

২০১০ সালে মহাকাশে রেকর্ডের জন্য প্রাইমারি ওয়ার্ল্ড সংগঠন এর পক্ষ থেকে তিনি ”ফেডারেশন এয়ারোনটিক ইন্টারন্যাশনাল” এফএআই গোল্ড স্পেস পুরস্কার পান।

২০১৬ সালে পৃথিবীর সেরা ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৮৩ তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নেন।

ফোবর্স এর কভারে মাস্ক;
ফোবর্স এর কভারে মাস্ক; Source: evannex

২০১৭ এর ফোর্বস এর ৪০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায়  আমেরিকার ২১ তম ধনী হিসেবে জায়গা করে নেন।

ইলন মাস্কের জীবনী থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে “আয়রনম্যান” খ্যাত টনি স্টার্ক এর চরিত্র। “আয়রনম্যান টু” এ ক্যামিও আছে মাস্কের এমনকি আয়রনম্যান টু ফিল্মটির কিছু অংশ তাঁর স্পেসএক্সের ভিতরে দৃশ্যায়িত হয়েছিলো ।

আয়রন ম্যান- ২ তে মাস্ক
আয়রন ম্যান- ২ তে মাস্ক; Source: inverse.com

মোট সম্পদের পরিমাণ

ফোর্বস এর ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এর মোট সম্পদের পরিমাণ তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের থেকেও বেশি।

ইলন মাস্ক তাঁর সফল পেশাজীবনে কিছু নীতি সবসময়ই মেনে চলেন। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভেবে থাকেন বা একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে অনুসরণ করতে পারেন মাস্কের সাফল্যের মূলমন্ত্র গুলো –

১. পড়ার কোন বিকল্প নেই

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটলেও স্বশিক্ষার কোন সীমা-পরিসীমা নেই এটা বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করতেন মাস্ক। মাস্কের মতে, আমরা কি জানিনা তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানিনা। তিনি এমনই পড়ুয়া ছিলেন যে ছেলেবেলাতেই এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পুরোটা পড়েছিলেন। ছোটবেলায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ে গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন তিনি।

বই পড়ছেন মাস্ক
বই পড়ছেন মাস্ক; Source: Quora

২. প্রচারের পেছনে বেশি খরচ করার চেয়ে পণ্যের মান উন্নয়ন করা জরুরি

ইলন মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের প্রচারের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করার চেয়ে পণ্যের মান উন্নয়নের ব্যাপারে সবসময়ই জোড় দেন। এই মনোভাব সময়, শক্তি আর অর্থ সবই বাঁচায় এবং সাথে সাথে দ্রুত সামনে এগোতেও সাহায্য করে। মাস্ক বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা এমন সব খাতে অর্থ ব্যয় করে, যেগুলো তাদের উৎপাদনকে উন্নত করে না’। তাই বলে বিজ্ঞাপনের জন্য একেবারেই খরচ করবেন না তা কিন্তু নয় !

৩.  উদ্যোক্তা হতে হলে জীবনে ঝুঁকি নেয়া শিখতে হবে

মাস্কের মতে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তরুণ বয়স, যখন আপনার হাতে অফুরন্ত সময়। কারণ এ সময়ে কোন সাংসারিক দায়িত্ব বা পিছুটান থাকে না। আপনার বয়স যত বাড়তে থাকবে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ তত বাড়তে থাকবে, সময়ের সাথে বোঝাপড়া করে চলতে হবে তাই তখন আর ঝুঁকি নেওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। সত্যিই তো, জীবনে কিছু পেতে হলে ঝুঁকি তো নিতেই হবে !  জিপ২ বিক্রি করে তিনি এক্স ডটকম শুরু করেছেন, পেপালের মতো একটা সফল প্রতিষ্ঠানে নিজের শেয়ারের অংশটা বিক্রি করে দিয়ে তিনি স্পেসএক্সের পেছনে লগ্নি করেছেন। এমন খ্যাপাটে মানুষ পাওয়া ভার !

৪. দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করুন

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন মাস্ক। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক। ইলন মাস্ক কখনো কখনো সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টাও কাজ করেন। আপনি যদি কখনো দিনের পর দিন একই কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন তাহলে ইলন মাস্কের কথা স্মরণ করুন।

৫. অভিযোগ না করে বরং সমাধান খুঁজুন

যখন কেউ কোন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ বা সমালোচনা করতে থাকে ইলন মাস্ক সেই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন। যানজটের বিষয়টাই ধরা যাক! এটা নিয়ে মানুষের বিরক্তির শেষ নেই কিন্তু ইলন মাস্ক ব্যতিক্রম! তিনি অভিযোগ বা সমালোচনা করে সময় নষ্ট না করে বরং এর সমাধান খোঁজার পেছনে নিজের মেধা এবং সময় ব্যয় করেন। আর এরই প্রেক্ষিতে গড়ে তুলেছেন তাঁর “বোরিং কোম্পানি”। তবে তিনি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া বেশ গুরুত্বসহকারে শোনার চেষ্টা করেন কারণ এর থেকেই তিনি নতুন নতুন উদ্ভাবনের ধারণা পেয়ে থাকেন।

৬. স্টেকহোল্ডারদের নিজের পরিবারের মতো ভালোবাসুন

আপনার বিনিয়োগকারী এবং সহকর্মী থেকে শুরু করে ক্রেতা সাধারণ পর্যন্ত সবাই একটি পরিবারের অংশ। সবাইকে সেভাবেই মূল্যায়ন করুন। ইলন মাস্ক এই সহজ শিষ্টাচারটি খুব গুরুত্বের সাথে মেনে চলেন। তিনি নিয়মিত ক্রেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে টুইট করে থাকেন।

৭. সাফল্যের জন্য পরিকল্পনা করুন তবে ব্যর্থতার জন্যও তৈরি থাকুন

ইলন মাস্ক সবসময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবলে চলবে না যে সব কাজ সফল হবেই। ব্যর্থতার জন্যও তৈরি থাকা উচিত। তিনি মনে করেন যে কোন কাজেরই একটি ব্যাকআপ প্ল্যান থাকা দরকার। তাহলে সহজেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এমনকি তিনি নিজেও জানতেন না তাঁর টেসলা মোটর কোম্পানি সফলতার মুখ দেখবে কিনা !

৮. স্রোতে গা না ভাসিয়ে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করুন

মাস্ক সবসময়ই ব্যতিক্রমী এবং উদ্ভাবনী কিছু করার পক্ষপাতিত্ব করেন। তিনি কখনোই সফলতা পাবার আশায় গতানুগতিক ধারার প্রতিযোগিতায় নামেন নি। তিনি বিশ্বাস করেন অন্যকে অন্ধঅনুকরণ না করে বরং আট-দশটা মানুষের চেয়ে একটু ইউনিক কিছু করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।

৯. জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করুন

ইলন মাস্ক সবসময়ই ভাবতে থাকেন কিভাবে আরো নিখুঁত কাজ করা যায়। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করেন।

অন্যের সমালোচনাও মনোযোগ দিয়ে শুনেন। তাতে হতাশ হয়ে পড়েন না বরং সেটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন। পণ্যের মান উন্নত করতে হলে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানাটা জরুরি। সমালোচকেরাই মূলত সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারে যেগুলো হয়তো নিজের চোখে পড়ে না। নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন।

১০. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন

আপনি একদিনে পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারবেন না। একাও পারবেন না। আপনার অবস্থান থেকেই ছোট ছোট কাজ করে যান। আর সেটাই হয়তো বৃহৎ এক গোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে। ইতিবাচক মনোভাব থেকে কাজ করার চেষ্টা করুন সেটা যত ছোট কাজই হোক না কেন ! ইলন মাস্ক সেটাই বিশ্বাস করেন।

ইলন মাস্ক নিঃসন্দেহে এক অনুপ্রেরণার নাম। যিনি তাঁর মেধা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করে মানবহিতৈষী কাজ করে চলেছেন। আউট অব দ্যা বক্স চিন্তা করাই যার সহজাত প্রবৃত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

Source Featured Image
Leave A Reply
1 Comment
  1. Coyxov says

    semaglutide 14 mg cost – buy rybelsus 14 mg order desmopressin for sale

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More