ফুটবল প্রেমীরা আর্জেন্টিনা বলতেই পাগল। ফুটবলের ছোট্ট এই দেশে জন্ম নিয়েছে, বিশ্ব কাঁপানো অনেক নামীদামী ফুটবলার। আর্জেন্টিনার নাম শুনলেই আমাদের মনে চলে আসে, দিয়েগো মারাদোনা বা লিওনেল মেসির নাম। কিন্তু ফুটবলের এই আর্জেন্টিনাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করতে অবদান রয়েছে আর্জেন্টাইন আরও অনেক ফুটবলারের। তেমনি একজন “হার্নান জর্জ ক্রেসপো”, আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার।
পুরো নাম “হার্নান জর্জ ক্রেসপো”। ৫ জুলাই ১৯৭৫ সালে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের হার্নান জর্জ ক্রেসপো তিনশত গোলের মালিক ছিলেন। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ম্যাচে ৩৫ গোল করেন তিনি, লিওনেল মেসি এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। হার্নান জর্জ ক্রেসপো আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের তিনটি আসরে অংশগ্রহণ করেছিলো (১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬)। ২০০০ সালে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড় ছিলেন হার্নান ক্রেসপো। ২০০০ সালে ৫৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতালিয়ান ক্লাব পারমা থেকে আরেক ইতালিয়ান ক্লাব লাজিওতে খেলেছিলেন তিনি। ২০০০-২০০১ মৌসুমের ক্লাব ফুটবলে লাজিওর হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন হার্নান ক্রেসপো। ২০০৪ সালে ফিফা কর্তৃক ফুটবল ইতিহাসের সেরা ১০০ জীবিত ফুটবলারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় হার্নান ক্রেসপোর নাম। এটি সত্যিই বিস্ময়কর যে, হার্নান জর্জ ক্রেসপো তার দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে কখনো লাল কার্ড পায়নি।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
১৯৯৫ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে হার্নান জর্জ ক্রেসপোর অভিষেক ঘটে এবং ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জয় পায়। ক্রেসপো ১৯৯৫ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে “কিং ফাহাদ কাপ” খেলেছিলেন, এবং আর্জেন্টিনা রানার্স আপ হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালে, ক্রেসপো অলিম্পিক গেমসের জন্য আর্জেন্টিনার পুরুষদের ফুটবল স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন। তিনি আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে এবং সেমি ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে ফাইনালে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে হেরে যায় এবং এই টুর্নামেন্টে ক্রেসপো মোট ছয়টি গোল করেন।
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে হার্নান জর্জ ক্রেসপো আর্জেন্টিনার হয়ে ইকুয়েডর এবং এফ আর যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপের মূল আসরে খেলার জন্য ক্রেসপোকে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের মূল একাদশে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিলো, কিন্তু স্ট্রাইকার হিসেবে তখনও যেহেতু গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা দারুন ফর্মে ছিল এবং আর্জেন্টিনার আক্রমনভাগের নেতৃত্ব দিতো বাতিস্তুতা, তাই ক্রেসপোকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছিলো। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেন ক্রেসপো। দলের হয়ে তিনি ৯টি গোল করেন। এমনকি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের মূল একাদশে খেলার জন্য গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা মূল ফরোয়ার্ড হিসেবে ক্রেসপোর পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু ২০০২ এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ১ম রাউন্ড থেকেই বাদ পরে যায়। ২০০২ বিশ্বকাপের পর গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা আর্জেন্টিনার জাতীয় দল থেকে অবসর নেন এবং হার্নান জর্জ ক্রেসপো তার স্থলাভিষিক্ত হন। তখন ক্রেসপো বাতিস্তুতার ৯ নম্বর জার্সিটি গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ক্রেসপো আর্জেন্টিনার হয়ে ৭টি গোল করেন এবং তিনি আবারও তার যোগ্যতার প্রমাণ দেন। আইভরি কোস্টের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপের মূল আসরে প্রথম গোলটি করেছেন ক্রেসপো। এছারাও তিনি সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং মেক্সিকোর বিপক্ষের ম্যাচগুলিতে গোল করেন। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা জার্মানির বিপক্ষে হেরে গিয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায়।
২০০৭ সালে কোপা আমেরিকাতে আর্জেন্টিনার হয়ে অংশ নেন ক্রেসপো এবং নিজদের প্রথম ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। ৪টি গোল আসে ক্রেসপোর পা থেকে। ২য় ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের বিনিময়ে আর্জেন্টিনা জয় পায়। পেলান্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেন ক্রেসপো। ইনজুরির কারণে তিনি টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলি খেলতে পারেননি। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকার পর ক্রেসপো জাতীয় দল থেকে আর ডাক পাননি। ক্রেসপো জাতীয় দলের হয়ে তার ফুটবল কারিয়ারে ৬৪ ম্যাচ খেলে ৩৫ গোল করেন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ক্রীড়া প্রেমিদের জন্য হার্নান জর্জ ক্রেসপোর দীর্ঘ ক্লাব ক্যারিয়ারের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
রিভার প্লেট (১৯৯৩-১৯৯৬)
১৯৯৩-১৯৯৪ মৌসুমে রিভার প্লেটের হয়ে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক করেন “হার্নান জর্জ ক্রেসপো”। এই ক্লাবের হয়ে তিনি ২৫ ম্যাচ খেলে ১৩টি গোল করেন এবং অ্যাপারচার লীগের শিরোপা জিতেন। ১৯৯৬ সালে রিভার প্লেটকে কোপা লিবার্তাদোরেসের শিরোপা জেতাতে হার্নান জর্জ ক্রেসপো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
পারমা (১৯৯৬-২০০০)
হার্নান জর্জ ক্রেসপো ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে রৌপ্য পদক জিতেছেন এবং অলিম্পিকে ছয়টি গোল দিয়ে শীর্ষ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এর পরপরই তিনি রিভার প্লেট ছেড়ে ১৯৯৬ সালের ১৪ই আগস্ট ইতলিয়ান ক্লাব পারমায় যোগ দেন। এই ক্লাবের হয়ে প্রথম ছয় মাস তিনি ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করতে ব্যর্থ হোন। এজন্য তৎকালীন পারমা ক্লাবের প্রধান কোচ কার্লো আনসেলত্তি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে কোচের প্রতি মর্যাদা রেখে ক্রেসপো তার ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে ফিরে আসে। ক্লাব পারমা ১৯৯৮-১৯৯৯ মৌসুমে কোপা ইতালিয়া শিরোপা জয় করে। দলকে শিরোপা জেতাতে হার্নান জর্জ ক্রেসপো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একই মৌসুমে ক্লাব পারমা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে ৩-০ গোলের ব্যবধানে জিতে উয়েফা কাপ শিরোপা অর্জন করে এবং ফাইনাল খেলার উদ্বোধনী গোলটি করেন হার্নান জর্জ ক্রেসপো। চার মৌসুমে ক্লাবের হয়ে তিনি ৮০ গোল করেন।
লাজিও (২০০০-২০০২)
২০০০ সালে ইতালিয়ান ক্লাব লাজিও ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে হার্নান জর্জ ক্রেসপোকে কিনে নেয়। ২০০১ সালে ক্লাব লাজিও কোন শিরোপাই ঘরে তুলতে পারেনি এবং এই মৌসুমে হার্নান জর্জ ক্রেসপো গুরুতর কিছু ইনজুরির শিকার হয়।
ইন্টার মিলান (২০০২-২০০৩)
ইনজুরি কাঁটিয়ে ওঠার পর ২০০২ সালের ৩১শে আগস্ট ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান হার্নান জর্জ ক্রেসপোকে ৩১.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পারমার কাছ থেকে কিনে নেয়। তিনি এই মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ১২ ম্যাচ খেলে ৯ গোল করেন, এবং ২০০৩ সালের প্রথম দিকে ৪ মাস তিনি ইনজুরিতে ভুগেন।
চেলসি (২০০৩-২০০৪)
২০০৩ সালের ২৬শে আগস্ট ইংলিশ ক্লাব চেলসি ১৬.৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইন্টার মিলানের কাছ থেকে হার্নান জর্জ ক্রেসপোকে কিনে নেয়। যদিও অর্থের এই পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ক্রেসপো ২০০৩ সালের ৩০শে আগস্ট ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে অ্যাড্রিয়ান মুলারের পরিবর্তে নিজের লিগ শুরু করেন। ২০০৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ক্লাব চেলসির হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্রেসপোর অভিষেক ঘটে। লিগের ৩১টি খেলায় অংশ নিয়ে ক্রেসপো ১২টি গোল করেন।
মিলান (২০০৪-২০০৫)
২০০৪-২০০৫ মৌসুমে ক্লাব চেলসির ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহন করেন হোসে মরিনহো। দায়িত্ব গ্রহনের পর মরিনহো, দিদিয়ে দ্রগবাকে ক্রেসপোর স্থলাভিষিক্ত করেন। যার ফলে ক্রেসপোকে ক্লাব চেলসি, ইটালিয়ান ক্লাব মিলানের নিকট বিক্রি করে দেয়। ক্লাব মিলানের হয়ে ২০০৫ সালে উয়েফা চাম্পিয়ন্স লিগে হার্নান জর্জ ক্রেসপো ১০টি গোল করে, এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে ২টি গোল করে দলকে শিরোপা এনে দেয়।
চেলসি (২০০৫-২০০৬)
২০০৫ মৌসুমে ক্লাব চেলসি ভালো স্ট্রাইকারের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে পয়েন্ট হারাচ্ছিলো, এবং ম্যানেজার হোসে মরিনহোর পছন্দের স্ট্রাইকার দিদিয়ে দ্রগবাও ভালো পারফর্ম করতে পারছিলনা। এসময় ক্রেসপো দারুন ফর্মে ছিলেন। ম্যানেজার হোসে মরিনহো, হার্নান ক্রেসপোর গুরুত্ব অনুভব করলেন, এবং বুঝতে পারলেন ক্রেসপো ইংলিশ ফুটবল লিগের ভবিষ্যৎ। সেজন্য তিনি ক্লাব মিলানের কাছ থেকে ক্রেসপোকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। হার্নান জর্জ ক্রেসপোকে ক্লাব চেলসিতে ফিরিয়ে আনা হয়, এবং ক্রেসপোর দারুন ফর্মের কারনেই ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে ক্লাব চেলসি ইউরোপীয় লিগের শিরোপা ঘরে তোলে।
ইন্টার মিলান (২০০৬-২০০৯)
যদিও ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে ক্লাব চেলসিতে ক্রেসপোর সময়টা ভালোই কাটছিল, তবুও তিনি ইতালিতে খেলার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু ক্লাব চেলসি তাকে ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তারা ক্রেসপোকে প্রস্তাব করে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভালো দাম না পায়, ততক্ষন পর্যন্ত ক্রেসপোকে ক্লাব চেলসিতেই খেলতে হবে। ২০০৬ সালের ৭ই আগস্ট ক্লাব ইন্টার মিলান, হার্নান জর্জ ক্রেসপোকে ক্লাব চেলসির কাছ থেকে ২ বছরের জন্য ঋণ নেয়। এই ২ বছর ফুটবলের সেরা ৫ খেলোয়াড়ের মধ্যে ক্রেসপো ছিলেন একজন। ২০০৮ সালে ক্লাব চেলসির সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের আগ্রহের কারণেই ক্রেসপো এক বছরের জন্য ক্লাব ইন্টার মিলানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।
জেনোয়া (২০০৯-২০১০)
ইন্টার মিলানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০০৯ সালে ক্রেসপো ইটালিয়ান ক্লাব জেনোয়াতে যোগ দেন এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এই ক্লাবের হয়ে ২০০৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর নেপোলির বিপক্ষে ক্রেসপো তার প্রথম গোলটি করেন।
পারমা (২০১০-২০১২)
২০১০ সালের জানুয়ারিতে হার্নান জর্জ ক্রেসপো জেনোয়া ছেড়ে ক্লাব পারমায় চুক্তিবদ্ধ হন। আর্জেন্টিনার এই স্ট্রাইকার প্রায় ১০ বছর পর তার পুরনো ক্লাব পারমায় যোগ দেন। ২০১০-২০১১ মৌসুমে ক্রেসপো ক্লাব পারমার হয়ে ১১টি গোল করে চতুর্থবারের মত ক্লাব পারমার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এই ক্লাব থেকেই ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে হার্নান জর্জ ক্রেসপো তার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
purchase rybelsus online cheap – buy glucovance pills for sale order desmopressin sale
buy generic lamisil – buy fluconazole 100mg without prescription grifulvin v usa