হলিউড, বলিউড কিংবা সংবাদমাধ্যম যার মাধ্যমেই হোক না কেন আমরা সবাই কমবেশি পৃথিবীর বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা যেমন সিআইএ, এমআইসিক্স, র, আইএস, জিআরইউ, মোসাদ ইত্যাদি সম্পর্কে কমবেশি জানি। সিনেমার পর্দায় কিংবা বিভিন্ন ইংরেজি সিরিজে কিংবা মাসুদ রানার গল্পে এইসব গোয়েন্দা বাহিনীর কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে বা পড়তে বেশ ভালো ও রোমাঞ্চকর লাগে সবারই। কিন্তু বাস্তবে এইসব গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকান্ড আরও অনেক বেশি বিস্তৃত ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভয়াবহও। যদি পৃথিবীর বিখ্যাত সব গোয়েন্দা বাহিনী গুলোর মধ্যে কর্মদক্ষতার দিক থেকে র্যাংকিং করতে বলা হয় তবে নিঃসন্দেহে সবার প্রথমে থাকবে মোসাদ। ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, এর সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি কারণ প্রায় সময়ই কোন না কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে মোসাদের নাম আমাদের সামনে আসে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক মোসাদ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য।
আরব লীগের প্রত্যাখ্যানের মুখে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে দখল-ভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ইউরোপে ইহুদী নিধনযজ্ঞ বা ‘শোয়া’র দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারে নি সেদেশের মানুষ৷ ফলে আরও একবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছোট্ট এই ইহুদী রাষ্ট্র৷
১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গোরিওন তার খুব কাছের বন্ধু রিউভেন শিওলাহ ( মোসাদের প্রথম পরিচালক) কে সুপারিশ করেন ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যা “দ্য সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অব কোঅরডিনেশন” নামেও পরিচিত গড়ে তুলার জন্য। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালের মার্চে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগেই যেসব ইহুদি নিষিদ্ধ সংগঠন সংগ্রাম চালাচ্ছিল, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাকে ‘মোসাদ’ এর পূর্বসূরি বলা হয়। মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয়। যদিও অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সের।
১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সংস্থাটার প্রধানের কথা। ১৯৯৬ সালে যখন সাবতাই কে অপসারণ করে ডেনি ইয়াতমকে নিয়োগ দেওয়া হয় এক ঘোষণার মাধ্যমে, তখন প্রথমবারের মত বিশ্ববাসী জানতে পারে এই সংস্থাটার প্রধান কে। ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে যখন নিকিতা ক্রুসচেভ এক গোপন মিটিংয়ে ‘স্টালিনকে’ অভিযুক্ত ও অস্বীকার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে, ঐ বক্তব্যের এক কপি মোসাদ সিআইএর হাতে দিয়ে দেয়। এই প্রথম সিআইএ মোসাদের কার্যক্রম উপলব্ধি করে যাতে সিআইএ অভিভূত হয়। কারণ সিআইএর মত সংস্থাটিও এই রকম একটা সেন্সেটিভ সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছিল।
এই সংস্থা গড়ে তুলার পিছনে কারণ ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা যেমন আমান, শিন বেত এদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলা। মোসাদ কে গড়ে তুলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি ইউনিট হিসেবে, এটি তার সকল কাজকর্ম ও গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিতে বাধ্য।
শুরুতে মোসাদের মূল নীতিবাক্য ছিল বাইবেলের একটি উক্তি যার অর্থ ছিল অনেকটা এইরকম “ যুদ্ধ শুরু করার আগে বিজ্ঞতাপুর্ণ নির্দেশনা দরকার”। পরবর্তীতে এই নীতিবাক্য পরিবর্তন করে বাইবেলেরই আরেকটি উক্তি কে নীতিবাক্য করা হয় যার অর্থ বাংলায় অনেকটা এইরকম “পথ-নির্দেশনা ছাড়া একটি জাতি সবসময়ই অসফল, কিন্তু যোগ্য পরামর্শকের প্রাচুর্য থাকলে অসফল হওয়ার ভয় থাকেনা”।
মোসাদ বিশ্বের সর্বোত্তম গোয়েন্দা সংস্থা হওয়ার দরুন এর অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ এবং গঠন সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানা যায়। সত্যি কথা বলতে মোসাদ সম্পর্কে মানুষ ঠিক ততোটাই জানতে পারে যতটা মোসাদ জানতে দেয়। মোসাদের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত ৮ টি বিভাগ রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে মাত্র ৫ টি বিভাগের নাম ও আনুমানিক কাজ সম্পর্কে বাইরের দুনিয়া জানতে পেরেছে। এই ৫ টি বিভাগ হল:
১. কালেকশন বিভাগঃ
এটি মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক হিসেবে ছদ্মবেশে কাজ করে এই বিভাগের কর্মকর্তারা।
২. লিয়াজো বিভাগঃ
এই বিভাগের কাজ প্রত্যেকটি বন্ধু ও বন্ধু-ভাবাপন্ন রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
৩. বিশেষ অপারেশন ইইউনিটঃ
গুপ্তহত্যার কাজ করা এই বিভাগের দায়িত্ব।
৪. ল্যাপ বিভাগঃ
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে ও শত্রু শিবিরে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করা এই বিভাগের কাজ।
৫. রিসার্চ বিভাগঃ
যাবতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে গবেষণা করে মোসাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত বিভাগ এটি।
কাউন্টার টেরোরিজমের জন্য মোসাদের ৩ টি ইউনিট রয়েছে। যেমনঃ
১. মেস্টাডাঃ
এই ইউনিটের কাজ হল শত্রুদের উপর হামলা করা। এই হামলা করার জন্য তাদের দক্ষ লোক রয়েছে যাদের প্রধান কাজ গুপ্তহত্যা এবং নাশকতা।
২. কিডনঃ
এই ইউনিটটি মোসাদের সিজারিয়া ( ৮ টি বিভাগের একটি) বিভাগের অধীনে কাজ করে থাকে। এই ইউনিটটি মূলত সিজারিয়া বিভাগের গুপ্তচরবৃত্তির কাজে সহায়তা করে। এই বাহিনী তে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনীর সৈনিকেরা। মোসাদের এই এলিট ইউনিট টির গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয় বলে জানা যায়।
৩. ভেঞ্চার ক্যাপিটালঃ
মোসাদ একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড চালু করেছে যার মূল কাজ হল উন্নত প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ করা। মোসাদ একটি উন্নত সাইবার প্রযুক্তি বের করার চেষ্টা করছে। তবে সেই প্রযুক্তি টি কি বা তার নাম কি হবে তা কখনই বাইরের দুনিয়া জানবে বলে মনে হয়না।
মোসাদ বাহিনীর সবকিছু এতো গোপনীয়তার সাথে করা হয় যে এটা সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ এইজন্য আরও বেড়ে যায়। তেমনি একটি আগ্রহের বিষয় হল মোসাদ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কিভাবে দেয়া হয়। মোসাদের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার জন্য যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাদের কে কয়েক দফায় মনস্তাত্ত্বিক ও দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়, এক্ষেত্রে মোসাদের চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করে নিয়োগ পেলে প্রার্থীদের কে মোসাদ একাডেমী যা হার্যলিয়া শহরের কাছে অবস্থিত সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই মোসাদ একাডেমী টা হল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্য নির্মিত বাংলো। এখানে তাদের কে ৩ বছর বুদ্ধিমত্তার কারিগরি কৌশল শিক্ষা দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে যে বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় তা হল “কাতসাস”। কাতসাস হল কিভাবে এজেন্ট খুঁজে, নিয়োগ দিয়ে গড়ে তুলে সবার সাথে গোপনে যোগাযোগ করা যায় সেই বিদ্যা। এছাড়াও কিভাবে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দৃষ্টি বা ফাঁদ এড়িয়ে চলা যায়, হত্যা করে কিভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালানো যায় তার প্রশিক্ষণ ও দেয়া হয়। সফলভাবে প্রশিক্ষণ পর্যায় শেষ হলে সরাসরি মোসাদ এর অধীনে কাজ করার সুযোগ পায় একজন প্রার্থী।
মোসাদ গঠনের পিছনের উদ্দেশ্য, এর পরিচালক বৃন্দ, বিভিন্ন দেশে তাদের করা অসংখ্য অপারেশন সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আজকের এই লেখায় আমি এমন কিছু বিতর্কিত ঘটনার সাথে মোসাদের সম্পর্ক তুলে ধরবো যা কত টা সঠিক তা হয়তো কারো জানা নেই তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করে এইসব ঘটনায় মোসাদের সম্পৃক্ততা ছিল।
ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রয়ঃ
শাহ শাসনামলে ইসরায়েল ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতো, কিন্তু অস্ত্র বিক্রয়ের এই চুক্তি বাতিল হয়ে যায় যখন ইসলামিক বিপ্লবের দরুন ইরানের সাথে ইসরায়েলের সকল কূটনৈতিক ও আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। কিন্ত ১৯৮০ সালে যখন ইরাক ইরান আক্রমণ করে তখন ইসরায়েল আবার ইরানে অস্ত্র বিক্রি করা শুরু করে তবে সেটা খুব গোপনে।
টেকনিক্যালি ইরান ইসরায়েল একে অপরের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অস্ত্রের ক্রয় বিক্রয় চলে। কারণ ঐ সময় ইরানের অস্ত্রের খুব দরকার ছিল আর ইসরায়েলের ও অনেক বাড়তি অস্ত্র ছিল যা বিক্রি করে তারা নগদ টাকা উপার্জন করতে চেয়েছিল। আর তাছাড়া কথায় আছে যে “ শত্রুর শত্রু হল বন্ধু” । ইসরায়েল সেই প্রবাদ টির মত কাজ করছিল। কারণ ইরান সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ছিল আর ইসরায়েল ও সাদ্দাম বিরোধী ছিল। এটা ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করার অনেক বড় একটা কারণ। ঐ সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের উপদেষ্টা এই গোপন সন্ধির কথা জানলেও সেটা না দেখার ভান করে থাকেন এবং ইরানে যে কোন প্রকার বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র সরকার। হয়তো শত্রুর শত্রু বন্ধু এই সূত্র মেনে চলছিল যুক্তরাষ্ট্রও।
১৯৮১ সালে ইসরায়েল থেকে ইরান গামী একটি অস্ত্র-বাহী বিমান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তুরস্ক সীমান্তে ধ্বংস হয়। তবে অস্ত্র বাণিজ্যের এই প্রস্তাব ইরান, ইসরায়েল এর মধ্যে কে আগে উত্থাপন করেছিল তা জানা যায়নি আজো।
এছাড়াও “ Tipped kettle” নামে মোসাদ বাহিনী একটি অপারেশন চালায় যেখানে তারা “ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন” এর কাছ থেকে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে সেগুলো কে নিকারাগুয়ার কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে বিক্রয় করতো। সিআইএ এর সমর্থন ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহায়তায় শুধু ১৯৮৩ সালেই প্রায় ৬০০০ অস্ত্র ইসরায়েল নিকারাগুয়ায় পাঠায়। এবং সাংবাদিক দের দেয়া তথ্য মতে ঐ সময় নিকারাগুয়ায় ব্যবহৃত অস্ত্র গুলো দেখতে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন এর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা অস্ত্র গুলোর মত ছিল দেখতে।
পাসপোর্ট স্ক্যান্ডালঃ
২০১০ সালে একটি আন্তর্জাতিক স্ক্যান্ডাল খুব হৈচৈ তৈরি করেছিল আর সেই স্ক্যান্ডাল টি ছিল ৩ জন মোসাদ সদস্য জাল অস্ট্রেলিয়ান ভিসা ব্যবহার করে দুবাই প্রবেশ করে এবং হামাস বাহিনীর প্রধান মাহমুদ আল মাবহু কে হত্যা করে। অস্ট্রেলিয়ান ভিসা ব্যবহার করার ব্যাপারে তৎকালীন মোসাদ কেইস অফিসার ভিক্টর অস্ত্রভস্কি এবিসি রেডিও কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন যে “গোয়েন্দা সংস্থার কাজে জাল ভিসা ব্যবহার করা এমন কোন বড় ব্যাপার না, আর তাদের কাছে অস্ট্রেলিয়ান ভিসাও যা , আমেরিকান বা নিউজিল্যান্ডের ভিসা ব্যবহার করাও তাই, অস্ট্রেলিয়ান ভিসা ব্যবহার করার পিছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নেই। আর তাছাড়া মোসাদ ছাড়া অন্য সংস্থাও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ব্যবহার করেছে আর হয়তো ভবিষ্যতেও করবে”। অস্ট্রেলিয়া ইসরায়েল কে সতর্ক করে দিয়ে বলে যে মোসাদের এইরকম কার্যকলাপ তাদের মাঝের ভালো সম্পর্ক কে নষ্ট করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মোসাদ সদস্য তাদের দেশের ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করায়। অস্ত্রভস্কির মতে, মোসাদ তাদের রিসার্চ ইউনিট যেটা নকল কাগজপত্র ও পাসপোর্ট তৈরির কাজে নিয়োজিত তাতে অনেক বড় অংকের টাকা খরচ করে মোসাদ। তারা মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর খালি বা চুরি হওয়া পাসপোর্ট গুলো কে ব্যবহার করে আরব দেশগুলোতে মোসাদের লোক পাঠাতে, কারণ আরব দেশে কোন ইসরায়েলি পাসপোর্ট ধারি লোক গেলে সেটা খুব সহজেই চোখে পরে যায় যেটা মোসাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়। যদিও মোসাদ অস্ত্রভস্কির এইসব দাবি অস্বীকার করে এবং এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু না। ২০১১ সালেও এইরকম আরেকটি স্ক্যান্ডাল হয়।
তখন অস্ত্রভস্কি ব্রিটিশ- ইসরায়েল দ্বিনাগরিকত্তের ৬ জন কে সতর্ক করে দেয় এটা বলে যে তাদের যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট চুরি হয়েছে এবং মোসাদ বাহিনী সেগুলো ব্যবহার করেছে তাই তারা যেন একা একা বাড়ির বাইরে না যায় বা বিদেশে ভ্রমন না করে কারণ হামাস বাহিনী তাদের কে টার্গেট করেছে হয় দুর্ঘটনাবশত না হয় কোন বার্তা পাঠানোর জন্য।
প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুঃ
প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর পিছনে পরোক্ষভাবে দায়ী এই নিন্দিত মোসাদ বাহিনী বলে অনেকের দাবি। জী আপনি ঠিকই পড়েছেন। যে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য অমীমাংসিত রহস্য, সেই মৃত্যুর জন্য মোসাদও অনেকটা দায়ী।
প্যারিসের রিটজ হোটেল মোসাদের সর্বপুরি পরিকল্পনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছিল। জানা যায় যে এই হোটেল মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্রের দালাল ও পাশ্চাত্যের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাক্ষাৎ করার জায়গায় পরিণত হয়েছিল। যে কোন গোয়েন্দা সংস্থার উন্নতি নির্ভর করে তারা কত গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে তার উপর। মোসাদ ঠিক করলো যে তারা হোটেল রিটজ এ এমন একজন গুপ্তচর স্থাপন করবে যে হোটেলের অতিথিদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সকল প্রকার তথ্য দিতে সক্ষম। এই কাজের জন্য হোটেলের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী বা নিচু পর্যায়ের কর্মী কাউকে নির্বাচন করা সম্ভব ছিলনা কারণ এদের কারোরই হোটেলের অতিথিদের সব তথ্য দেয়ার ক্ষমতা ছিলনা। এই কাজের জন্য তারা তখন হেনরি পল নামে এক ব্যক্তি কে ঠিক করলো। হেনরি ছিলেন হোটেলের সার্বিক নিরাপত্তার ডেপুটি প্রধান অর্থাৎ অতিথিদের সকল তথ্য তার কাছে থাকা সম্ভব। বিনা বাক্য ব্যয়ে সে অতিথিদের হোটেল বিল, টেলিফোন রেকর্ড থেকে শুরু করে সবকিছু সম্পর্কে তথ্য দেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল। এবং ভিআইপি অতিথিদের ড্রাইভার হওয়ার ফলে সে যেকোনো ভিআইপি অতিথির কথা আড়ি পেতে শুনতে পারতো, তাদের আচরণ দেখতে পারতো, তারা কখন, কোথায়, কার সাথে দেখা করছে তাও জানতো। তাই হেনরি পল মোসাদের জন্য এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হল।
হেনরিকে তাদের কাজের কথা বলার আগে মোসাদ তার সম্পর্কে একটি মনস্তাত্ত্বিক ফাইল তৈরি করে। এর জন্য প্যারিসে অবস্থানরত মোসাদের মাঠ কর্মীরা হেনরির সম্পর্কে সকল তথ্য যোগাড় করে। এখানে সকল তথ্য বলতে হেনরির কারো সাথে সম্পর্ক আছে কিনা, তার খাদ্যাভ্যাস, ছুটি কাটানোর জায়গা, কোন পতিতার সাথে যোগাযোগ আছে কিনা ইত্যাদি বুঝাচ্ছে। এক কথায় হেনরির যে কোন দুর্বল দিক খুঁজে বের করার কাজ করে তারা। এবং মোসাদ জানতে পায় যে হেনরি পাপারাজ্জিদের কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হোটেলের বিখ্যাত সেলিব্রেটি অতিথিদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য দিতো, কোন জায়গায় দাঁড়ালে ভালো ফটো তুলতে পারবে তা জানিয়ে দিতো। আপাতদৃষ্টিতে এটা কারোর জন্য ক্ষতিকর মনে না হলেও, হোটেলের কর্মী দ্বারা অতিথিদের একান্ত গোপনীয়তা রক্ষার যে আশ্বাস দেয়া হয় তার বিপরীত হচ্ছিলো।
এই তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে মোসাদ তাদের এক মাঠ কর্মীর সাহায্যে হেনরির সাথে যোগাযোগ করে। প্রথমে নরম গলায় বলে তারপর লোভ দেখিয়ে এবং পরোক্ষ হুমকির মাধ্যমে হেনরি কে তাদের কাজ করানোর জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে। মোসাদ খুব ভালমতো হেনরি কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে তারা ঠিক কত গভীর তথ্য তার সম্পর্কে জানে এবং এইসব কথা বাইরে প্রকাশিত হলে তার কি অবস্থা হতে পারে। মোসাদ প্রতিনিয়ত হেনরি কে চাপ দিতে থাকে এবং যে এজেন্ট এর মাধ্যমে হেনরির সাথে তারা যোগাযোগ করেছিল সেই এজেন্ট হেনরি কে সব জায়গায় ফলো করতে থাকে এবং তাকে বুঝায় যে সে যেখানেই যাক না কেন, মোসাদের চোখের আড়াল হতে পারবেনা।
আগে থেকেই মদ্যপানে অভ্যাসী হেনরি চিন্তায় দিশেহারা হয়ে আরও বেশি করে মদপান করা শুরু করে, সাথে অবসাদ দূরীকরণের বিভিন্ন ওষুধ ও খাওয়া শুরু করে। মানসিক দিক থেকে হেনরি একদম ভেঙ্গে পড়ে।
প্রিন্সেস ডায়না ও তার প্রেমিক দোদি আল ফায়েদ হোটেল রিটজ এর মালিকের ছেলে ছিলেন। তাদের হোটেলে অবস্থানকালে নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল হেনরির উপর। ঐ সময় পাপারাজ্জিদের কাছ থেকে তার কাছে অনবরত কল আসছিলো বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে প্রিন্সেস ডায়নার সম্পর্কে তথ্য দেয়ার জন্য। চারদিক থেকে চাপের মুখে হেনরি দিগ্বিদিক ভুলে বসে। দুর্ভাগ্যবশত ঐদিন প্রিন্সেস ডায়নার গাড়িচালক ছিল এই হেনরি যে কিনা একজন মদ্যপ,ইনসমনিয়ার রুগী, এবং মানসিক অবসাদ গ্রন্থ একজন লোক। হেনরির এই অবস্থার জন্য পরোক্ষ ভাবে মোসাদ দায়ী ছিল। ঐদিন হেনরির অসতর্ক গাড়ি চালানোর ফলে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে তাতে প্রাণ যায় প্রিন্সেস ডায়না, তার প্রেমিক ও হেনরির, এবং গুরুতর আহত হয় দেহরক্ষী ট্রেভর।
এরপর এই ঘটনা কে ঘিরে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়, আসে অনেক কন্সপাইরেসি থিওরি। কিন্তু কোন রহস্যেরই কূলকিনারা হয়নি, রহস্য শুধু দিন দিন গভীর হয়েছে। কে জানে, হয়তো মোসাদ হেনরি কে এতো চাপ ও হুমকি না দিলে ঐদিন ঐ দুর্ঘটনা টি ঘটতো না।
এছাড়াও অনেকে দাবি করেন যে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর সাথেও মোসাদ জড়িত। বলা হয়ে থাকে যে মোসাদ ইয়াসির আরাফাত কে এমন একটি বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে যা ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়েনা।
মোসাদ যেমন বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ গোয়েন্দা সংস্থা তেমনি এটি সবচেয়ে নিন্দিতও বটে। কারণ তারা মুখে সন্ত্রাস বিরোধী হলেও প্রকৃত পক্ষে নিজেরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে এবং সন্ত্রাসীদের ইন্ধন যোগায়। জানা যায়, মোসাদ বিশ্বের সকল প্রভাবশালী নেতাদের উপর একটি করে মনস্তাত্ত্বিক ফাইল তৈরি করে, যেখানে সেই নেতার মন মানসিকতা বিশ্লেষণ করা হয়, ঘুষ নাকি অন্য কোন ফাঁদ তাকে কোন পন্থায় প্রভাবিত করা যাবে তাও গবেষণা করা হয়।
এমন আরও অনেক অনেক অমীমাংসিত ব্যাপার রয়েছে মোসাদের। মোসাদ খুব সতর্কতার সাথে তার গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে একদম শুরু থেকেই তাই হয়তো এটি বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা।
তথ্যসূত্রঃ
১. https://en.wikipedia.org/wiki/Mossad
২. http://www.encyclopedia.com/history/asia-and-africa/middle-eastern-history/mossad
৩. https://www.theatlantic.com/international/archive/2010/02/5-mysteries-about-mossad/
order semaglutide 14 mg sale – DDAVP uk buy DDAVP sale
purchase terbinafine sale – buy generic terbinafine 250mg where to buy griseofulvin without a prescription