ফুটবল মাঠে দুর্ঘটনা: খেলোয়াড়ের আকষ্মিক মর্মান্তিক মৃত্যু

4

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম ফুটবল। সারা পৃথিবীর এমন কোনো মানুষকে পাওয়া  যাবে না যে ফুটবল খেলা দেখে না বা পছন্দ করে না। কিন্তু এই ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক খেলোয়াড় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফুটবল মাঠে মৃত্যু তাঁর করাল থাবা দিয়েছে অনেকবারই। ছিনিয়ে নিয়ে গেছে অনেক তরুণ তাজা প্রাণ। কখনো অনেকে গোল উদযাপন করতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন পিটার বিকাসাংজুয়ালার মত। আবার ফুটবল খেলতে গিয়ে হটাৎ হার্ট এ্যাটাকের শিকার হয়েছেন অনেকে। আবার কখনো প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের বাজে ট্যাকলের জন্য দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন অনেক খেলোয়াড় যেমন- এনডুরেন্স ইদাহোর। অনেকবারই বিশ্ব ফুটবলে এমন অনেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখেছে। এসব দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সব খেলোয়াড়েরই খেলার সময় সতর্ক থাকা দরকার। চলুন আজ দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু দূর্ঘটনা যেখানে ফুটবল খেলতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে খেলোয়াড়দের।

এনডুরেন্স ইদাহোরঃ

১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ছিলেন এনডুরেন্স ইদাহোর। তিনি খেলতেন সুদানের প্রিমিয়ার লীগে আল-মেরিখের হয়ে। ২০০৬ সালে আরব আমিরাতের ক্লাব আল-নাসের থেকে ট্রান্সফার হয়ে তিনি সুদানের ক্লাব আল-মেরিখে যোগ দেন। আল-মেরিখকে আশ্চর্যজনক সাফল্য এনে দেওয়া এনডুরেন্স ইদাহোর দূর্ঘটনার শিকার হন ২০১০ সালের ৬ই মার্চ। সেদিন আল-মেরিখের সাথে আল-আমানের খেলা চলছিল। খেলার ১৫ মিনিটের সময় বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন ইদাহোর। তখনি আল-আমানের এক খেলোয়াড়ের কনুইয়ের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এনডুরেন্স ইদাহোর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এম্বুলেন্সের ভিতরেই মৃত্যু হয় এনডুরেন্স ইদাহোরের। এজন্য মাঠেই খেলোয়াড়দের ভিতরে হতাশা সৃষ্টি হয় এবং দর্শকদের ভিতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই রেফারি ম্যাচটি পরিত্যক্ত করতে বাধ্য হন।

দ্রুত এম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছে ইদাহোরকে
দ্রুত এম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছে ইদাহোরকে Source: http://www.gettyimages.co.uk

আকলি ফাইরুজঃ

ভয়াবহ ট্যাকলে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফুটবলার আকলি ফাইরুজের। ইন্দোনেশিয়াতে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া আকলি ফাইরুজ খেলতেন ইন্দোনেশিয়ান প্রিমিয়ার লীগে। ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ১০ মে। ইন্দোনেশিয়ার প্রিমিয়ার লিগে পেরসিরাজা আর পিএসএপি সিগলির ম্যাচে পেরসিরাজার ফরোয়ার্ড আকলিকে চ্যালেঞ্জ করেন সিগলির গোলকিপার আগাস রহমান। তাঁর ডান পায়ের বুট সজোরে আঘাত করে আকলির তলপেটে। এ ঘটনার জন্য মাঠেই হাতাহাতি বেধে যায় দু’পক্ষের ফুটবলারদের। কিছুক্ষণ পর আকলির বদলি ফুটবলার নামানো হয়। কিছুটা শ্রুশ্রূষার পর রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বাকি খেলাও দেখেন আকলি। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দেখা যায় শরীরের ভিতরে একাধিক জায়গায় গুরুতর চোট লেগেছে। অস্ত্রোপচার করতে হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। ছ’দিন পর ২০১৪ সালের ১৬ মে না ফেরার দেশে চলে যান আকলি।

হাসপাতালে শয্যাশায়ী ফাইরুয
হাসপাতালে শয্যাশায়ী ফাইরুয Source:Tribunnews.com

পিয়েরমারিও মোরোসিনিঃ

ইতালীতে জন্ম নেওয়া এই পেশাদার ফুটবলারে মৃত্যু হয় ১৪ এপ্রিল ২০১২ সালে। সিরি “বি”র ম্যাচে সেদিন লিভর্নোর মিডফিল্ডার পিয়েরমারিও মোরোসিনি পেসকারার বিপক্ষে ম্যাচের ৩১ মিনিটে হূদ্যন্ত্রের বৈকল্যে মাঠে ঢলে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে পরপর তিনবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় তাৎক্ষণিকই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মোরোসিনির ভাগ্যটাই ছিল খারাপ। ১৫ বছর বয়সে মা ক্যামেলিয়াকে হারানোর দুই বছরের মধ্যেই হারিয়েছেন বাবা আলদোকেও। ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ দলের সাবেক এই ফুটবলারের ছিল এক ভাই ও এক বোন, দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাইটি বছর কয়েক আগে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। আর ঐ দিন বড় বোনটাকে একা করে নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন লিভর্নোতে খেলা এই ফুটবলার। মোরোসিনির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে ইতালীতে। ইতালীর ঐ সপ্তাহের সব ফুটবল ম্যাচ স্থগিত করা হয়।

হার্ট এ্যাটাকের পর পিয়েরমারিও মোরোসিনি
হার্ট এ্যাটাকের পর পিয়েরমারিও মোরোসিনি Source: http://www.lettera43.it

পিটার বিকাসাংজুয়ালাঃ

১৯৯১ সালে ভারতের মিজোরামে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার মারা যান ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর। বিকাসাংজুয়ালা খেলতেন মিজোরামের ক্লাব বেথেলহাম ভিংথালাংহে। চানমারি ওয়েস্টের বিপক্ষে ম্যাচের ৬২ মিনিটে দারুণ একটি গোল করে দলকে সমতায় ফেরালেন পিতার বিকাসাংজুয়ালা। গোল করেই ছুটলেন গোল উদযাপনের জন্য। উদযাপনটা ছিল জার্মান তারকা মিরোস্লাভ ক্লোসার মত। প্রথম ডিগবাজিটা ঠিকমতই হল। কিন্তু দ্বিতীয় ডিগবাজির সময় ঘটল দূর্ঘটনা। দ্বিতীয় ডিগবাজির সময় ভূমিতে পা না পড়ে মাথা পড়াতে মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পেলেন বিকাসাংজুয়ালা। দ্রুতই তাকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। চার দিন পর মারা গেলেন ২৩ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। মারা যাওয়ার আগে চোঁখজোড়া দান করে গেছেন তিনি।

যে উদযাপন মৃত্যু ডেকে আনে বিকাসাংজুয়ালার
যে উদযাপন মৃত্যু ডেকে আনে বিকাসাংজুয়ালার Source: sportskeeda.com

মার্ক ভিভিয়েন ফোঃ

১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া ক্যামেরুনের কিংবদন্তী ফুটবলার ছিলেন মার্ক ভিভিয়েন ফো। ২০০৩-এর ২৬ জুন লিয়ঁ-তে কনফেডারেশনস কাপে কলাম্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যান তিনি। মারা যাবার আগে এমন ক্রীড়াশৈলি দেখিয়ে গেছেন যা তাকে চিরদিন অমর করে রাখবে। । ম্যাচের ৭৩ মিনিটে জ্ঞান হারিয়ে মাঠেই পড়ে যান ভিভিয়েন ফো। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন চিকিৎসকেরা। ফো কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘসময় ধরে তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন সিপিআর পদ্ধতিতে তাঁর হৃদযন্ত্র চালু করার। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ডাক্তার ফোকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর পর জানা যায় তিনি মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। যেকোন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম তার জন্য ঝুঁকি ছিল। তারপরও তিনি নিয়মিতই মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ফো-র মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিল গোটা ফুটবল বিশ্ব।

মাঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন ভিভিয়েন
মাঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন ভিভিয়েন Source: tinzwei.com

হ্রভজ কসটিচঃ

১৯৮৩ সালে জন্ম নেওয়া ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডারের মৃত্যু হয় ২০০৮ সালের ৩ এপ্রিল। ২০০৮ সালের ২৯ মার্চ ক্রোয়েশিয়ার প্রথম ডিভিশনের খেলায় মাঠে নেমেছিলেন তিনি। খেলার প্রথম মিনিটেই তিনি মাঠের সাইডলাইনের কংক্রিটের দেয়ালের সাথে ধাক্কা খান। এতে মাথেয় গুরুতর চোট পান কসটিচ। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তাকে সার্জারী দেওয়া হয়। সার্জারীর পর তিনি কোমায় আক্রান্ত হন। এরপর ৩ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুপথযাত্রী কসটিচ
মৃত্যুপথযাত্রী কসটিচ Source: dalje.com

অ্যান্টোনিও পুয়ের্তোঃ

১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া এই স্প্যানীশ ফুটবলার লা লিগায় খেলতেন সেভিলার হয়ে। ২০০৭ সালের ২৫ আগস্ট লা লিগায় গেটাফের বিপক্ষে মাঠে নামেন এই ফুটবলার। খেলার ৩৫ মিনিটের সময় কার্ডিয়াক এ্যারেস্টের শিকার হন পুয়ের্তো। এরপর তাকে মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাকে দ্রত বদলি করার পর ড্রেসিংরুমে গেলে তার আবার কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যান্টোনিও পুয়ের্তোর মৃত্যু হয় ২৮ আগস্ট। ডাক্তারের ভাষ্যমতে তিনি মাল্টিপল অরগান ফেইলারে ভুগছিলেন যার কারণে ব্রেইন ডেমেজ হয়ে তার বারবার কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হচ্ছিল।

অ্যান্টোনিও পুয়ের্তো
অ্যান্টোনিও পুয়ের্তো Source: http://www.20minutos.es

সার্জিনহোঃ

ব্রাজিলে ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার খেলতেন সাও পাওলোর হয়ে। ২০০৪ সালের ২৭ অক্টবর ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও কাতানোর বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানত সেই খেলাই যে তার শেষ খেলা হবে! সেদিন সাও পাওলো আর সাও কাতানোর খেলার ৬০ মিনিটের সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় সার্জিনহোর। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তার জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় নি।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সার্জিনহো
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সার্জিনহো Source: alchetron.com

মিক্লোস ফেহেরঃ

১৯৭৯ সালে হাঙ্গেরীতে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলারের মৃত্যু হয় ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারী। সেদিন ভিটোরিয়া ডি গুইমেরেসের বিপক্ষে খেলায় বেনফিকার হয়ে মাঠে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেছিলেন মিক্লোস ফেহের। খেলার অতিরিক্ত সময়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় মাঠেই পড়ে যান ফেহের। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।

মৃত্যুর আগে মাঠে পড়ে আছেন ফেহের
মৃত্যুর আগে মাঠে পড়ে আছেন ফেহের Source: socqer.com

তথ্যসূত্রঃ

Wikipedia

http://archive.prothom-alo.com/detail/news/240588

http://www.prothom-alo.com/sports/article/348985

Leave A Reply
4 Comments
  1. Cdypdm says

    repaglinide 1mg over the counter – buy jardiance 25mg sale where to buy jardiance without a prescription

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More