আবার ফিরে আসলাম আরও দুইটা গল্প নিয়ে, তাহলে মোট চারটে অভিযান হচ্ছে এই দু’টো মিলিয়ে। বেশ জমে উঠেছে হারকিউলিস মহাশয়ের অভিযানের কাহিনী। দেখা যাক কি হয় সামনে।
তৃতীয় অভিযানঃ
দ্বিতীয় অভিযানের পরই আবার ডেকে পাঠানো হল হারকিউলিসকে। এবারের কাজটা একটু অদ্ভুত। এবার কাউকে মারার কথা বলা হয় নি, বলা হয়েছে জীবিত ধরে আনার কথা। কিন্তু কাকে ধরে আনতে হবে, কি তার বিশেষত্ব! ধরে আনতে বলা হল সেরেনিয়াস অঞ্চলের হাইন্ড বা হরিণী ধরে নিয়ে আসার জন্য। শুনতে ছেলে খেলা মনে হলেও বিষয়টি সহজ ছিল না। সে হরিণী ছিল শিকার ও চাঁদের দেবী ডায়ানার পোষা হরিণী। সোনালী শিং এবং পেতলের খুর ছিল তাদের, বাতাসেরও আগে ছুটতে পারত তারা। তীর ছুড়ে মারলে তীরের গতিবেগকে টেক্কা দিত সে হরিণী। জীবিত সে হরিণী ধরে আনা ছিল মোটামুটি ভাবে অসম্ভব ব্যাপার, তার উপর দেবী ডায়ানার পোষা প্রাণী, তিনিও তো আর ছেড়ে কথা বলবেন না।
এই সব ভয়ঙ্কর ব্যাপারের মাঝেও হারকিউলিস হাল ছাড়লেন না, পুরো এক বছর এক নাগারে দৌঁড়ে ধাওয়া করতে লাগলে সেই হরিণীর। মাঠঘাট, পাহাড় পর্বত ভেঙে ছুটতে লাগল সেই হরিণী আর পিছু পিছু হারকিউলিস। শেষটায় বছর-খানেক বাদে ক্লান্ত হরিণীটি একটি নদী পার হওয়ার আগে একটু থমকে দাঁড়াল। সেই অবসরে তীর দিয়ে হরিণীর গতিরোধ করলেন হারকিউলিস। তারপর জাপটে ধরে ফেললেন হরিণীটিকে। কিন্তু ঝামেলার শেষ তখনই পুরোপুরি হয় নাই। দেবী ডায়ানা তো ক্ষেপে আগুন, তাঁর প্রিয় প্রাণী ধরে নিয়ে যাচ্ছে কোথাকার কোন এক মানুষ। সাথে সাথে উপস্থিত হলেন তিনি হারকিউলিসের সামনে। হারকিউলিস আগেই আঁচ করেছিলেন যে দেবী ডায়ানা তাঁকে এত সহজে ছেড়ে দিবেন না, তাই তিনি প্রস্তুতই ছিলেন। সামনে আসা মাত্রই তিনি সবিস্তারে নিজের দুঃখের কাহিনী বলা শুরু করলেন। কাহিনী শুনে দেবীর মনও গলে গেল। দেবী ডায়ানা এই শর্তে মুক্তি দিলেন যে, হরিণীটি যাতে আবার ফিরে আসতে পারে। হারকিউলিস রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু ঝামেলা বাঁধল হরিণীটি দেখা মাত্রই রাজা এটাকে নিজের কাছে রেখে দিতে চাইলেন। তখন হারকিউলিস একটা বুদ্ধিমানের মত কাজ করলেন। তিনি বললেন, “যে রাজা মহাশয় আপনি ধরুন হরিণীটিকে।” যেই হারকিউলিস একবার ছেড়ে দিল হরিণীটিকে রাজার ধরার জন্য। কিন্তু ছাড়া পাবা মাত্রই ছুটে পালিয়ে গেল সেটি।
চতুর্থ অভিযানঃ
এবার আসি চতুর্থ অভিযান নিয়ে। হাইন্ড ধরে আসার পর কয়েকদিনের মাঝেই নতুন ফরমাইশ দেয়া হল তাঁকে। এরামেন্থিয়ার বারাহ বা শুকর কে পাকড়াও করা। এই কাজে যাওয়ার প্রাক্কালে সে তার সেন্টর বন্ধু ফোলাসের বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। সেখানে সেন্টরদের সাথে মদ খাওয়া নিয়ে বেশ একটা মারামারিও হয়েছিল তাঁর (এইটা নিয়েও মজার এবং দুঃখের গল্প আছে, হারকিউলিসের বন্ধু ফোলাস দুর্ঘটনাবশত মারা যায়। গল্পটা একদিন সময় করে বলব)। তো গুরু চীরনের বুদ্ধি নিয়ে শীতকালে এরামিন্থিয়াম পর্বতে গেলেন। সেখানে পৌঁছে দেখেন যে সেই বরাহ মহাশয় হুরুমতারুম করে বেশ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। হা হা করে তাড়া দিয়ে হারকিউলিস সেই বিশাল শুকরকে পর্বতের বরফজমা অংশে নিয়ে গেলেন। বিশাল-দেহী সেই শুকর আঁটকে গেল বরফের মাঝে। হারকিউলিস ভাবলেন এই সুযোগ, বেশ কষে এই বরাহ মহাশয়কে বেঁধে নিয়ে হাজির করিলেন রাজার সামনে। কিন্তু রাজা মানুষটা বেশ ভিতু আগেই বলেছি। তিনি সাহসই পেলেন না এই বিশাল বরাহের সামনে আসার জন্য। তিনি এক পেতলের কলসির ভেতর লুকিয়ে থেকে হারকিউলিসকে বলল এই শুকরকে অন্য কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসতে। হারকিউলিস শুকরটাকে তখন সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসল।
মিথলজি ব্যাপারটা আসলে অদ্ভুত। অবাস্তব সব ঘটনা, কিন্তু শুনতে ভাল লাগে, পড়তে ভাল লাগে, সব বয়সেই, সব সময়ই। আসলে আমাদের মনের ভেতর একটা বাচ্চা মানুষ সব সময়ই বাস করে, আমাদের বয়স যতই বাড়ুক না কেন গল্প শুনতে কখনই খারাপ লাগে না। ঠাকুমার ঝুলির গল্পগুলোর মতই এই সব মিথলজিক্যাল গল্পগুলো কখনই পুরনো হয় না। সব সময়ই নতুন, চিরতরুণ। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
প্রথম পর্বে পারসিয়াস এর কাহিনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ প্রথম পর্ব (পারসিয়াস)
দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ দ্বিতীয় পর্ব (হারকিউলিস)
তৃতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজিঃ দেবতাদের মানব সন্তান, তৃতীয় পর্ব (হারকিউলিসের দ্বিতীয় অভিযান)
order semaglutide 14mg generic – order generic rybelsus 14mg purchase DDAVP