হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৪৬ সালে। দেশভাগের উত্তপ্ত সময়ে অবিভক্ত বাংলার নেতৃত্বে যে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিলো তাতে প্রতিনিধিত্ব করে জয় পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক দুবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। খাজা নাজিমউদ্দিন ছিলেন উর্দুভাষী বাঙালি এবং মুসলিম লীগের নেতা। তার সময়ে ‘তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ’ হয়েছিলো এবং এই দুর্ভিক্ষে সারা বাংলায় অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। অপরদিকে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন কৃষক-প্রজা পার্টির অবিসংবাদিত নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বাংলার অনেক উন্নয়ন কাজে হাতে দিয়েছিলেন। সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অবিভক্ত বাংলায়।
১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা জাহিদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের খ্যাতনামা বিচারক এবং মাতা খুজাস্তা আখতার বানু ছিলেন নামকরা উর্দু সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন মাতাপিতার কনিষ্ঠতম সন্তান। পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী উর্দু শিখলেও পরে নিজ উদ্যোগে বাংলা শিখেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে যোগ দেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। তবে মায়ের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে সাম্মানিক স্নাতক অর্জন করেন। এখানে তিনি আইন বিষয়েও পড়াশোনা করার পর বিসিএল ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে গ্রে’স ইন হতে বার এট ল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারঃ
স্বরাজ পার্টি থেকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। ১৯২৪ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তখন চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি গ্রুপ ছিল। এসময় চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ১৯২৭ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯২৮ সালে সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলিমদের মধ্যে প্রভাব থাকায় তিনি ১৯৩৬ সালে ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এই-বছরের শেষের দিকে এই দলটি প্রাদেশিক বাংলা মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়। ফলে তিনি বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ বা বিপিএমএল এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মন্ত্রীসভার পদত্যাগের পর খাজা নাজিমউদ্দিন মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর করাচী থেকে ঢাকায় এসে সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের শোষণ-নীতির প্রতিবাদ ও দাবি-দাওয়া উত্থাপনের জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা চিন্তা করতে থাকেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। হ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থাতেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। তবে পাকিস্তানের অখণ্ডতার কথা ভেবে নাম রাখা হয় পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে এই দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ যায়।
পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দুই বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল। ১৯৫৩ সালে তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে একত্রে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে এই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এই যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন – মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ওই ইশতেহারের মধ্যে প্রধান দাবি ছিল – লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা, ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনার নির্মাণ করা ইত্যাদি।
১৯৫৪ সালের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে ২৩৭ টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি আসন পায়। এর মধ্যে ১৪৩ টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।
এই নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ব্যাপক ভরাডুবি ঘটে। মুসলিম লীগ মাত্র ৯ টি আসন পায়। যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলায় সরকার গঠন করে। ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় ও ১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন।
এসময় সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয় এবং করাচী কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীন করা হয়। কারামুক্ত হন ১৯ আগস্ট। কারামুক্ত হয়ে অক্টোবর মাসে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিএফ) গঠন করেন। যার অঙ্গ সংগঠন ছিল আওয়ামী লীগ। এসময় থেকেই আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ মুজিবুর রহমান।
বৃদ্ধ বয়সে কারাবাস, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য লেবাননের বৈরুতে যান। ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। তাঁর এই মৃত্যু ছিল আকস্মিক। বৈরুতের একটি হাসপাতালে সকালে তাঁর লাশ হাসপাতালের টেলিফোন রিসিভারের টেবিলের পাশে পাওয়া যায়। টেবিলে তখন টেলিফোনের ডায়াগ্রামটি ঝুলছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় যে সম্ভবত তিনি কেবিন থেকে পরিচিত কাউকে ফোন করার জন্য টেলিফোন রিসিভারের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে গভীর রাতে কাউকে না পেয়ে তিনি নিজেই টেলিফোনটি নিয়েছিলেন।
order generic lamisil 250mg – buy griseofulvin generic buy grifulvin v generic
buy semaglutide no prescription – buy generic semaglutide over the counter purchase DDAVP generic