সাইবেরিয়া: বিস্ময় যেখানে বরফ আচ্ছাদিত

0

প্রথমেই একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। সাইবেরিয়া কি কোন শহর নাকি কোন দেশ? অনেকেই হয়ত এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান। আসলে সাইবেরিয়া এর কোনটিই নয়। সাইবেরিয়া একটি বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চল যা রাশিয়ায় অবস্থিত। হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত এই অঞ্চলটি পুরো রাশিয়ার প্রায় ৭৭% (মতান্তরে ৫৭%)  জুড়ে রয়েছে। যদি সাইবেরিয়ার আয়তনকে একটি দেশ হিসেবে তুলনা করা হয় তবে এর আয়তন প্রায় কানাডার কাছাকাছি। অর্থাৎ সাইবেরিয়া যদি কখনো নিজেকে রাশিয়ার থেকে আলাদা করতে চায় তবে এটি বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হবে।

আয়তনের বিশালতার মতই সাইবেরিয়ার বৈচিত্র্যে রয়েছে বিশালতা। বিশালতা কেন বলছি, সেটা জানা যাবে বাকিটা পড়লেই। সাইবেরিয়ায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে বা ঘটেছে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই বা ঘটেনি।

প্রথমত বলা যায় বৈকাল হ্রদ এর কথা। বৈকাল হ্রদের নাম শুনেনি এমন মানুষ কমই আছে । বৈকাল হ্রদ পৃথিবীর গভীরতম (১৬৪২/১৬৩৭ মিটার) বিশুদ্ধ পানির হ্রদ যা সাইবেরিয়ায় অবস্থিত। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম হ্রদ ও বটে। পৃথিবীর সমগ্র বিশুদ্ধ পানির ২০% শুধুমাত্র এই হ্রদেই বিদ্যমান। অর্থাৎ, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি দৈনিক ৫০০ লিটার করে পানিও খরচ করে, তবুও পুরো বিশ্বের মানুষের ৪০ বছরের জন্যে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করার সামর্থ্য রয়েছে এই হ্রদের। তবে হ্রদের বয়স মিলিয়ন মিলিয়ন বছর হলেও, এর পানি কিন্তু এত পুরাতন নয়, কেননা হ্রদের পানি প্রতি ৩৮৩ বছর পর পর নবজীবন প্রাপ্ত হয়। জীববৈচিত্রের এক স্বর্গ বলা হয় বৈকাল হ্রদকে। হাজারো প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল এটি। এসব জীববৈচিত্রের ৬০ শতাংশই বৈকাল হ্রদ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। হ্রদের পানিতে প্রায় ১৪৫৫ প্রজাতির এন্ডেমিক(Endemic) প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলো পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। অবশ্য প্রতিটি গবেষণাতেই এই সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বৈকাল হ্রদ, সাইবেরিয়া
বৈকাল হ্রদ, সাইবেরিয়া Source: Amazing Nature

এখানে বাস করে Acanthogammarus victorii নামের একটি বড়সড় আকৃতির অ্যাম্ফিপড। এরা দেখতে অনেকটা চিংড়ির মত। ৭০ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এরা। মিঠাপানির চিংড়িরা সাধারণত ২০ মিলিমিটারের বড় হয়না। সে হিসেবে এটাকে মোটামুটি দানবাকৃতিই বলা চলে। বৈকাল হ্রদে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির অ্যাম্পিপড রয়েছে, যাদের বিচরণ পুরো হ্রদ জুড়েই। এই বিশেষ অ্যাম্পিপড জৈব উপাদান খেয়ে বেঁচে থাকে যেমনঃ মৃত পোকা বা মাছ। এসব মৃত জীব খাওয়াটা বৈকাল হ্রদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যার কারণেই এই হ্রদ এতোটা বিশুদ্ধ থাকে।এই হ্রদের পানি শুধু বিশুদ্ধতমই না, এটি পৃথিবীর স্বচ্ছতম পানিও বটে। এখানকার পানি এতটাই স্বচ্ছ যে কিছু কিছু জায়গায় পানির ৪০ মিটার নিচে পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। বৈকাল হ্রদের পানি জমে যে বরফ হয় সেটাও এত স্বচ্ছ যে এর নিচে পানি বরফের উপর থেকে দেখা যায়। শীতকালে এই বরফে ফাটল ধরে। এই ফাটলের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বরফের এই ফাটল দিয়ে পানিতে অক্সিজেন প্রবেশ করে যা মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করে। বৈকাল এর তীরে রয়েছে ৫৫০ বছরের পুরাতন সিডার বৃক্ষ যা এখন পর্যন্ত ফল দেয় বলে জানা যায়।

সিডার বৃক্ষ, সাইবেরিয়া
সিডার বৃক্ষ, সাইবেরিয়া Source: Steemit

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর প্রাদুর্ভাব ও অবশ্য এখানে বেশ প্রকট। প্রতিবছর বৈকাল হ্রদ অঞ্চলে ২০০০ এরও বেশি বার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এছাড়াও হ্রদে গুরুতর ধরনের ঝড় ও হয়ে থাকে। ঝড়ের সময় বৈকাল হ্রদের ঢেউয়ের উচ্চতা ৪/৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে যায়। প্রায় ৫৪৪ রকমের জলস্রোত বয়ে যায় এই হ্রদে জার মধ্যে কিছু কিছু আবার মৌসুমী।

পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরু পলি মাটির তল (৮৫০০ মিটার) বিশিষ্ট হ্রদও বৈকাল হ্রদ। তবে একদিনে জমে উঠেনি এই পলি, এই পলি জমা শুরু হয় আনুমানিক ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে অর্থাৎ বৈকাল হ্রদ সৃষ্টিরও অনেক আগে থেকে। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই হ্রদ বিগত কয়েকবছর ধরে, এমন কিছু ক্ষতিকারক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যা বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময় হয়ে থেকেছে। আমুল মাছের হারিয়ে যাওয়া, বিশেষ শেওলার বেড়ে যাওয়া, আবার বিরল প্রজাতির স্পঞ্জদের হারিয়ে যাওয়া ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। বিস্তৃত ২.২ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা জুড়ে এসব প্রাণীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।

চলতি বছরের অক্টোবরে হ্রদে বাণিজ্যিকভাবে কয়েক ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে আমুল মাছ, যা শুধুমাত্র বৈকাল হ্রদেই পাওয়া যায়। রাশিয়ান ফিসারিজ এজেন্সির শঙ্কা, মাছ শিকার বন্ধ না হলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে তা। সংস্থাটি বলছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে এই মাছের মোট পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি নেমে গেছে। বছরে যেখানে আগে ২৫ মিলিয়ন টন পাওয়া যেত, এখন সেখানে তা পাওয়া যায় মাত্র ১০ মিলিয়নটন । মাছের এই কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় মৎস্য জীববিজ্ঞানী এনাটলি ম্যমানটভ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিরিক্ত চাপের সঙ্গে যোগ হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত মাছ শিকার।

তিনি বলেন, ‘বৈকালের পানি জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত। উষ্ণতা বাড়ায় নদীগুলো অগভীর হয়ে পড়ছে, খাবারে টান পড়ছে আবার বৈকালের পানির তাপমাত্রাও বাড়ছে। আমুল মাছ গরম পানিতে টিকতে পারে না।’

গত মাসে ইউনেস্কো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, হ্রদের ইকোসিস্টেম প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। মাছ কমে যাওয়া শুধুমাত্র দৃশ্যমান একটি প্রভাব। স্থানীয়দের কাছে বিপুল জনপ্রিয় মাছ আমুল। কয়েক শতাব্দী ধরে স্থানীয়দের খাবার তালিকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। প্রাকৃতিকভাবেই শুধু এই মাছ সংগ্রহ করা যায়। চাষ করে এর উৎপাদন সম্ভব নয়।এ ছাড়া আরেকটি প্রভাব বৈকাল জুড়ে দেখা যাচ্ছে। তা হলো এর বালুভর্তি সৈকতগুলোতে পড়ে থাকছে স্পাইরোগাইরা প্রজাতির স্পঞ্জ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মাধ্যমে ধারণা করা যায় হ্রদ আর মানুষের দূষণ নিতে পারছে না।

সাইবেরিয়ার আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো টুংগুস্কা (Tunguska) ভূপাতিত উল্কাপিণ্ড। মহাকাশীয় অদ্ভুত ঘটনা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি এই ঘটনা। ১৯০৮ সালের ৩০ জুন টুংগুস্কা নদীর পাশে একটি উল্কাপিণ্ড পতিত হয়। তাতে প্রায় ২০০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বনাঞ্চল মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল যেখানে উল্কাপিণ্ডটি পতিত হয় সেখানে কোন জ্বালামুখ বা গর্ত খুঁজে পাওয়া যায় নি। অথচ এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড ধ্বসের ঘটনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই জ্বালামুখের খোঁজ কেউ পায় নি যদিও শতাব্দী ধরে এর খোঁজ চলছে।

টুংগুস্কা (Tunguska)
টুংগুস্কা (Tunguska) Source: History Key

আর ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালের সকালে, বাংলাদেশের তরুণরা যখন শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনে উত্তাল, তখন এরকমই একটা ঘটনা ঘটল সাইবেরিয়ার আরেকটি অঞ্চলে। চেলিয়াবিনস্কের আকাশের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এক উল্কাপিণ্ড। বিস্ফোরণটি ৫০০ কিলোটন টিএনটির সমান শক্তির ছিল। শক্তির একক জুলের হিসেবে এটা হবে ২০০০ টেরা জুলস বা ২x১০১৫ জুল। হিরোশিমায় যে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল সেটির শক্তি ছিল ১৬ কিলোটন টিএনটি বা ৬৭ টেরা জুলস। দেখা যাচ্ছে, এ উল্কার বিস্ফোরণে হিরোশিমার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে। কিন্তু হিরোশিমার মতো কোনো ধ্বংসযজ্ঞই তো চেলিয়াবিনস্কে হয়নিএর মূল কারণ হচ্ছে যে, হিরোশিমার বোমাটি মাটি থেকে মাত্র ৬০০ মিটার ওপরে বিস্ফোরিত হয়। যদি উল্কাটি মাটি থেকে ২৫ কিলোমিটার ওপরে বিস্ফোরিত হত, তবে (৬০০/২৫,০০০)২ x ৩০ ~ হিরোশিমা বোমার ২% শক্তি মাটিতে পৌঁছুত যদি বায়ুমণ্ডল না থাকত। যেহেতু অনেকখানি শক্তি বায়ুতে শোষিত হয়েছে তাই শেষাবধি মাটিতে অনেক কম আঘাত অনুভূত হয়েছে। এ শক্তির অভিব্যক্তিই আমরা দেখেছি যখন একটা বিশাল জায়গা জুড়ে সবগুলো দালানের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। ১৯০৮ সনে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস্কায় যে উল্কাটি পড়েছিল, ধারণা করা হয় সেটির শক্তি ছিল ১৫ মেগাটন টিএনটি যা কিনা ১৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার ৩০ গুণ বেশি। কাকতালীয়ভাবে সে সময়ই সারা পৃথিবী ৫০ মিটার ব্যাসের ‘২০১২ ডিএ১৪’ নামের একটি গ্রহাণুর পৃথিবীর নিকট দিয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। অনেকেই ভেবেছিল, সাইবেরিয়ার গ্রহাণু বোধহয় এর সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত। নাসা থেকে পাওয়া এ ছবিতে সূর্যের চারদিকে ‘২০১২ ডিএ১৪’ ও চেলিয়াবিনস্কের উল্কার কক্ষপথের পার্থকটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। ‘২০১২ ডিএ১৪’ ও এর কক্ষপথটি ছোট, এবং উল্কার কক্ষপথটি বড়। ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইবেরিয়ার উল্কাটি যখন পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছুটে যাচ্ছিল, ‘২০১২ ডিএ১৪’ তখন ভ্রমণ করছিল দক্ষিণ থেকে উত্তরে। কাজেই এ দুটি গ্রহাণু একে অন্যের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চেলিয়াবিনস্কের উল্কার ব্যাস হচ্ছে ১৭ মিটারের মতো। এ ধরনের গ্রহাণুখণ্ড কি আগেই আবিষ্কার করা সম্ভব নয়?আমাদের কি অন্তত ২৪ ঘন্টা আগে কোনো সতর্কবাণী দেওয়া যায় না? আমরা জানি, ওই একই সময়ে ৫০ মিটার ব্যাসের ‘২০১২ ডিএ১৪’কে বিজ্ঞানীরা অবলোকন করছিলেন। এক বছর আগে জ্যোতির্বিদরা এটি আবিষ্কার করেন। তাহলে ১৭ মিটারের গ্রহাণুকে আবিষ্কার করা কি বর্তমান পর্যবেক্ষণ দিয়ে সম্ভব নয়?

পারমাফ্রোস্ট (Permafrost), সাইবেরিয়া
পারমাফ্রোস্ট (Permafrost) Source: Al Jazeera

পারমাফ্রোস্ট (Permafrost) অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল, সাইবেরিয়ার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। রাশিয়া একটি অত্যন্ত শীতল দেশ, সাইবেরিয়া ও তাই। রাশিয়ার প্রায় ৬৫% অঞ্চল অধিকাংশ সময় হিমায়িত থাকে। রাশিয়ার অধিকাংশ স্থলভূমি পারমাফ্রোস্ট দিয়ে গঠিত। এবং অধিকাংশ পারমাফ্রোস্টই সাইবেরিয়াতে। পারমাফ্রোস্ট এর অভ্যন্তরীণ ভাগে জমা রয়েছে প্রচুর মিথেন গ্যাস। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দরুন বরফ গলে এই মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি এখন ছোট মনে হলেও, ভবিষ্যতে এর প্রভাব অনেক ভয়াবহ হবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

বিশ্বের দীর্ঘতম নদী নীলনদ মিশরে থাকলেও, বিশ্বের প্রথম ১০টি দীর্ঘতম নদীর ৪টিই রয়েছে সাইবেরিয়াতে। নদীগুলো হচ্ছেঃ অব (Ob), আমুর (Amur), লেনা (Lena) এবং ইয়েনিসেই (Yenisei) । তবে সাইবেরিয়ার নদীগুলোর মধ্যে বিখ্যাত একটি হচ্ছে ডাল্ডিকেন (Daldykan) । এটি দৈর্ঘ্যে অন্যগুলোর চেয়ে বড় নয়, কিন্তু এটি বিখ্যাত হওয়ার কারন হল একবার এই নদীতে রক্তলাল পানি প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার লোকজন এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে এই নদীর আশে-পাশে বসবাসকারীরা। ন্যাশনাল-জিওগ্রাফীর (National Geography) মতে এর পেছনে দুটো কারণ হতে পারে। প্রথমত, পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন এর উপস্থিতি ; দ্বিতীয়ত, ক্যামিকাল লিক। তবে কারণ যেটাই হোক, একটা নদীর সম্পূর্ণ পানি রক্তলাল হয়ে যাওয়া সত্যি অদ্ভুত।

অব(ob)
অব(ob) Source: Asergeev

পোষা প্রাণী বিশেষ করে কুকুর অনেক মানুষই পছন্দ করে। পোষা কুকুরের যে জাতিটি সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় সেটিও কিন্তু সাইবেরিয়া থেকে আগত। আজকাল পোষা কুকুর নিয়ে ইন্টারনেটে যে জাতের কুকুরের কথা বেশী হয় সেটা হল সাইবেরিয়ান হাস্কি। হাস্কি গড়ে ১২-১৪ বছর বাঁচে। ধারনা করা হয় আমাদের পূর্বপুরুষরা সাইবেরিয়াতে বসবাস করতো। সাইবেরিয়াতে একটি জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে প্রস্তর যুগে লোকজন বসবাস করতো আজ থেকে ১,০০০০০০-৮,০০০০০০ বছর আগে। ঐ সময় সাইবেরিয়াতে অনুকূল আবহাওয়া ছিল। জীনগত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেছেন যে, Homo Erectus নামে একটি এশিয়ান প্রজাতি আজকের আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হতে পারে।

শুধু পূর্বপুরুষই না, নতুন এক প্রজাতির মানুষও নাকি সাইবেরিয়াতে আবিষ্কৃত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। ২০০৮ সালে সাইবেরিয়ার ডেসিনভ গুহায় বিজ্ঞানীরা একটি ফ্যালাঙ্কস (Phalanx) খুঁজে পায় যেখান থেকে তারা একটি DNA কে আলাদা করতে সক্ষম হয়। DNA বিশ্লেষণ করে জানা যায় হাড়ের টুকরাটি একটি মেয়ের এবং মেয়েটি একটি নতুন প্রজাতির মানুষ বলে তারা দাবি করে। শুধুমাত্র আমাদের পূর্বপুরুষরাই না, ইউনিকর্ন যাকে আজ পর্যন্ত আমরা শুধু পৌরাণিক চরিত্র ভাবতাম তার আদিনিবাস ও এই সাইবেরিয়া। যদিও পুরাণের ইউনিকর্ন আর সাইবেরিয়ার ইউনিকর্ন এর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। এখানকার ইউনিকর্ন দেখতে অনেক টা গণ্ডারের মত। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন প্রায় ৩৩৫,০০০০ বছর আগে ইউনিকর্ন রা এখানে বাস করতো। কিন্তু পড়ে জানা যায় তারা ২৯০০০ বছর আগে বাস করতো সাইবেরিয়া তে। বিজ্ঞানীদের মতে, তারা ঘাস খেয়ে বাঁচত, তারা এই ঘাস তাদের শক্ত ঠোঁট দিয়ে খেত কারণ তাদের দাঁত ছিলনা। ইউনিকর্ন রা যখন সাইবেরিয়া তে ছিল তখন সাইবেরিয়া উষ্ণ ছিল ,ধারনা করা হয় আমাদের পূর্বপুরুষরা এই ইউনিকর্ন দের হত্যা করেছিল।

আসলে সাইবেরিয়া নিয়ে জানা-অজানা বহু তথ্য রয়েছে যা আমাদের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করে। সাইবেরিয়া যেন আমাদের সামনে তার অসংখ্য বিস্ময়তার ভাণ্ডার তুলে ধরেছে যুগে যুগে। যতই দিন যাচ্ছে নতুন নতুন রহস্যের দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে সাইবেরিয়াকে ঘিরে। হয়ত আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে অনেক রহস্যেরই সমাধান হবে সেই চিন্তা থেকেই আজকের লেখা সমাপ্ত করছি।

 

তথ্যসুত্রঃ

https://en.wikipedia.org/wiki/Siberia

https://en.wikipedia.org/wiki/Russian_conquest_of_Siberia

 

 

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More