গায়ে ট্যাটু (বাংলায় “উল্কি” বলা হয়) করানো বর্তমান সময়ে তরুণ তরুণীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় একটি বিষয়। এটি আদিম সংস্কৃতির একটি অংশ যা সেই প্রাচীনকাল থেকে এখনো জনপ্রিয়তার সাথে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রসার লাভ করেছে।
প্রাচীন নিউলিথিক যুগে ট্যাটুর উৎপত্তি । তখনকার সময়ের গুহাচিত্র বা যন্ত্রপাতি দেখে এসব ধারণা করা যায়। তবে সুস্পষ্টভাবে ট্যাটু আঁকা মমি পাওয়া যায় অটজি দি আইসম্যানের বডিতে, যেটি ৩১৭০-৩৩০০ খ্রীষ্টপূর্বের ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন মিশরীয় মহিলাদের শরীরেও পাওয়া গেছে উল্কির প্রমাণ। তবে ১৯৯১ সালে ইটালিয়ান-অস্ট্রিয়ান সীমান্তে ‘বরফমানব’ আবিষ্কৃত হওয়ার পর ট্যাটুর ইতিহাস গেছে পাল্টে। কারণ বরফমানবের শরীরেও পাওয়া গেছে স্থায়ী নকশা। আর এই বরফমানবের বয়স কার্বন-ডেইট অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার দু’শ বছর।
অনেকে ধারণা করে থাকেন যে, ট্যাটু শব্দটি এসেছে সামোয়ান শব্দ “টাটাও” থেকে, যার অর্থ হল “কোনো কিছু মার্ক করা”। সামোয়াতে ছেলেদের ট্যাটুকে বলে pe’a আর মেয়েদের ট্যাটুকে বলে malu। ট্যাটু করা তাদের সামাজিক আর ঐতিহ্যের একটা অংশ। এছাড়াও এক এক অঞ্চলে ট্যাটু নিয়ে এক এক ধরণের মিথ প্রচলিত। চীনে তারিম বেসিনের কবরস্থানের মধ্যে কয়েকটা ট্যাটু করা মমির খোজ পাওয়া যায়। সেখানে ট্যাটুকে কাজে লাগানো হত ডাকাত, চোর এবং দাসদেরকে চেনার জন্য। অনেকসময় গুরুতর অপরাধ করলে তাদের মুখে ট্যাটু এঁকে দেওয়া হত। Jōmon বা Paleolithic পিরিয়ডে ট্যাটুকে ঘর সাজানো এবং ধর্মীয় কাজে ব্যাবহার করত জাপানিরা। কিন্তু পরবর্তীতে তারা চীনের মতই অপরাধী শনাক্তকরণের কাজে একে ব্যাবহার করতে শুরু করে।ফিলিপাইন, নিউজিল্যান্ড, নর্থ আমেরিকা এসব দেশে ট্যাটুকে মনে করা হত ম্যাজিকাল শক্তির প্রতীক। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ট্যাটুকে নিয়ে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ সৌন্দর্যের জন্য আবার কেউ অশুভ শক্তি থেকে রেহাই পেতে ট্যাটু আঁকত।
বিভিন্ন ধরণের ট্যাটু ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ইঙ্গিত প্রদান করে। বিভিন্ন ডিজাইনের ট্যাটুর মধ্য জনপ্রিয় হচ্ছে, ড্রাগন, সান,ড্রিমক্যাচার, টারটল, হোল্ড ফার্স্ট, ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় ব্যক্তির সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের কথা বিবেচনা করে।
হাল ফ্যাশনে তারকাদের ট্যাটুপ্রীতি তুঙ্গে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট , জনি ডেপ, সিলভেস্টার স্ট্যালোন, কঙ্গনা রানাওয়াত, অজয় দেবগন, মেসি, সঞ্জয় দত্ত সহ আরো অনেক তারকাই গায়ে ট্যাটু আঁকিয়েছেন।
এবার জানা যাক, ট্যাটু করাতে হলে কি কি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে?
যে কোন ঋতুতেই আপনি উল্কি নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়, যদি গরমের সময় আপনি এটা না নেন। কেননা ঘামে আপনার ট্যাটু নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ত্বকও জ্বালা করতে পারবে। সস্তার উল্কি পরিহার করুন। খুব কম দামে কখনই কোন ট্যাটু নিবেন না। এগুলো ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।অনেকেই আছেন যারা তাদের ভালোবাসার মানুষের নাম ট্যাটুতে লিখে রাখেন। এটা আসলে ঠিক কাজ নয়। এ কারণে পরবর্তীতে পস্তাতে হয়। ভেবেচিন্তে সুন্দর ডিজাইনের ট্যাটু আঁকাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবসময় মুখের প্রতিচ্ছবি সংক্রান্ত ট্যাটু এড়িয়ে চলুন। এটা অনেক সময় হরর কোন স্টোরির দিকে ইঙ্গিত করে থাকে। এতে করে যে কেউ ভয় পেয়ে যেতে পারে। যদি আপনি ট্যাটু নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে নিয়েই নিন। কেউ কেউ এটা নেওয়া নিয়ে অনেক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকেন। এতে মনের উপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
অভিজ্ঞ বন্ধুর সাহায্য নিন। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আপনার ভীতিও কাটবে। এমনকি ট্যাটু নেওয়ার পর কিভাবে তার যত্ন নিতে হয় তা জানা না থাকলে তাও জেনে নিন। আজকাল বাজারে এর যত্নে নানা ক্রিম পাওয়া যায় তার কথাও জানুন।
শুধু ট্যাটু নিলেই হবে না, এর সঠিক যত্ন নেওয়াও সমান জরুরি। এক্ষেত্রে ট্যাটু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।সুঁচের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ট্যাটু আঁকার সময় পুরানো সূচ বাদ দিয়ে শিল্পীরা নতুন সুঁচ লাগায় কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কেননা পুরানো সুঁচ ত্বকে নানা ইনফেকশন হতে পারে। আবার এর কারণে ত্বকে অ্যালার্জি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হোন।
বর্তমানে সাধারণত বিদ্যুৎচালিত একটি যন্ত্রের সাহায্যে ট্যাটু করা হয়। দেখতে তা অনেকটা ডেনটিস্টের ড্রিল মেশিনের মত যা দিয়ে দাঁতের চিকিৎসা করানো হয়। মেশিনের মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি সুঁচ। এই সুঁচটির মাথায় রঙ লাগনো থাকে। প্রতিবার সুঁইটি যখন চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করানো হয় সেই সঙ্গে রঙও ভেতরে প্রবেশ করে। রঙের পরিমাণ এক মিলিলিটারেরও কম। চামড়ার যে স্তরে রঙটি লাগানো হয় তার নাম ডের্মিস। এই স্তরে যে কোন রঙ ঢোকাতে পারলে তা সারাজীবন দেখা যাবে।
অনেকেই জানেন না যে রঙ ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে মেশানো হয় মারাত্মক একটি রসায়নিক পদার্থ। এই রসায়নিক পদার্থ চামড়ার একেবারে ভিতর থেকে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। আর যেহেতু এই উল্কি সারাজীবন শরীরে থাকবে তাই এই রসায়নিক পর্দাথও সারাজীবন দেহে থেকে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে ট্যাটু ফেইডিং ক্রিম ইউজ করে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ট্যাটু অপসারণ করা সম্ভব। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে যে কোন সময় মুছে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের ট্যাটু।
এবার দেখা যাক, বিভিন্ন ধর্ম ট্যাটু করা প্রসঙ্গে কি বলে থাকে?
হিন্দু ধর্মে সুস্পষ্ট করে ট্যাটু করা নিয়ে কোন বিধি নিষেধ পাওয়া যায় নাই। দক্ষিণ এশিয়ান দেশে তন্ত্র-মন্ত্রের শক্তি কিংবা ধর্মীয় কারণে মানুষ ট্যাটু করে বেড়াত। এখনো থাইল্যান্ড, ভারতের সন্ন্যাসী এলাকায় ট্যাটু আঁকা হয় স্রষ্টার নৈকট্য লাভের আশায়। ঈশ্বরের নাম, ধর্মীয় চিহ্ন ইত্যাদি শরীরে খোদাই করে তা শরীরের রক্ষাকবচ হিসেবে অনেক হিন্দু বিবেচনা করে থাকেন।
বৌদ্ধধর্মে ট্যাটু করা নিয়ে তেমন কিছু উল্লেখ না করা হলেও বৌদ্ধরা এটি কঠিনভাবে মেনে থাকেন যে, শরীরের কোথাও বুদ্ধের ছবি আঁকা ধর্মীয় অনুভূতিকে হীন করা। তবে বুদ্ধের প্রতি ভালবাসা থেকে পাশ্চাত্যের অনেকেই নিজের শরীরে বুদ্ধের ট্যাটু করিয়ে থাকেন।
ইসলাম ধর্মে, ট্যাটু করা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে ট্যাটুঃ
The Messenger of Allah (saws) specifically forbade and invoked the curse of Allah on the people who applied the tattoo and the ones who had the tattoo applied. Sahih Al-Bukhari Hadith 7.816 Narrated by Humaid bin Abdur Rahman bin Auf The Prophet (saws) said, “Allah has cursed the lady who artificially lengthens (her or someone else’s) hair and the one who gets her hair lengthened, and the one who tattoos (herself or someone else) and the one who gets herself tattooed.” Sahih Al-Bukhari Hadith 7.820 Narrated by Ibn Umar The Messenger of Allah (saws) said, “Allah has cursed such a lady as lengthens (her or someone else’s) hair artificially or gets it lengthened, and also a lady who tattoos (herself or someone else) or gets herself tattooed.”
তবে যেটি শুরুতেই বলা হয়েছে যে, ট্যাটু করা ছিল আদিম সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আদিমসময়ে মানুষের রক্ষাকবচ বা চিহ্নিত করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হত। তাই অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠির কাছে এটি ধর্মীয় মর্যাদা পেয়ে এসেছে।
এবার সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিন ট্যাটু করাবেন কি না?
buy rybelsus generic – glucovance brand where to buy desmopressin without a prescription
prandin without prescription – order prandin 1mg generic order jardiance generic