বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা, বিশ্বকাপ মানেই নাটকীয়তা, বিশ্বকাপ মানেই চমক, বিশ্বকাপ মানেই নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি। প্রতিবারের মতো ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপও ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলো বিভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা অবতারণার মাধ্যমে। টুর্নামেন্ট শেষে “শৈল্পিক” কিংবা “সুন্দর” উপাধি না পেলেও, বেশ উপভোগ্য ছিলো এই বিশ্বকাপ তা সবাই মেনে নিবে অকপটেই।
চোখ বন্ধ করে ২০০৬ বিশ্বকাপের কোন স্মৃতি মনে করতে চাইলে চোখের সামনে ইতালীর শিরোপাজয়ের আনন্দের চেয়ে বেশী স্পষ্টভাবে ভেসে উঠবে ফাইনাল ম্যাচে জিদানের নাটকীয় বিদায়। মাতেরাজ্জির বুকে ষাঁড়ের মতো হঠাৎ ঢুস মেরে বসার অংকের উত্তর এখনো খুঁজে বেড়ান অনেকেই। সেই ঘটনা টা না ঘটলে হয়তো ইতিহাস আজ লেখা থাকতো অন্যভাবে,অন্য কালিতে।
তবে টুর্নামেন্টে সুন্দর ফুটবল পরিবেশন করতে না পারলেও, মাত্র দুই গোল হজম করে ইতালীও প্রমাণ রেখে গেছে কেনো তারা শিরোপার যোগ্য দাবীদার ছিলো। ২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে বিতর্কিত ম্যাচে হেরে বিদায় নেয়ার পর অনেকেই ইতালীর সেই স্কোয়াড কে “বাতিল আরেকটি জেনারেশন” বলে দাবী করেছিলেন। কিন্তু সেই জেনারেশনই সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রমাণ করে গিয়েছে নিজেদেরকে। রক্ষণকে কিভাবে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই দল। যদিও দলটি বিশ্বসেরা ফরওয়ার্ড দিয়ে পরিপূর্ণ ছিলো, কিন্তু কেউই খুব বেশী সুবিধা করতে পারেননি। ইতালীর সাফল্যের পিছনে ছিলো পারফেক্ট ট্যাকটিক্স, টিম ওয়ার্ক, মাঝমাঠে আন্দ্রে পিরলোর সৃজনশীলতা, ফাবিও ক্যানাভারো দের ইস্পাত কঠিন ডিফেন্স এবং বুফনের ওয়ার্ল্ড ক্লাস কিপিং। ইতালীর হয়ে সর্বমোট ১০ জন প্লেয়ার গোল করেছিলেন আসরটিতে। বুঝাই যাচ্ছে, টিম ওয়ার্ক এবং সম্মিলিত ইফেক্টই দলের সাফল্যের মূল কারণ। এবং সব দিক বিবেচনায় যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপা জিতেছিলো তারা।
২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ ছিলো টুর্নামেন্টটির ১৮ তম আসর। হোস্ট করেছিলো জার্মানী। ব্যাটেল অফ নুরেমবার্গ, জার্মানী-ইতালীর শ্বাসরূদ্ধকর সেমিফাইনাল, পর্তুগাল-ইংল্যান্ড ম্যাচে ওয়েন রুনীর লাল কার্ড, জিদানের ঢুশসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনার কারণে আসরটি আজীবন গেঁথে থাকবে ফুটবল ভক্তদের মনে।
আসুন দেখে নেয়া যাক, আসরটির কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
অংশগ্রহণকারী দলঃ ৩২
মোট ম্যাচঃ ৬৪
ভেন্যুঃ ১২
মোট গোলঃ ১৪৭
এভারেজ গোল পার গেমঃ ২.৩০
হাইয়েস্ট স্কোরিং গেমঃ জার্মানী ৪-২ কোস্টারিকা, আর্জেন্টিনা ৬-০সার্বিয়া এন্ড মন্টেনিগ্রো
ম্যাচ প্রতি দর্শকঃ ৫২,৩৮৪
গোল্ডেন বলঃ জিনেদিন জিদান
গোল্ডেন বুটঃ মিরোস্লাভ ক্লোজ
বেস্ট ইয়াং প্লেয়ারঃ লুকাস পোডলস্কি
বেস্ট গোলকিপারঃ জিয়ানলুইজি বুফন
অন্যান্য ফ্যাক্টঃ
- আসরটিতে সর্বমোট ৩৪৫ বার হলুদ কার্ড এবং ২৮ বার লাল কার্ড দেখানো হয়। যা ফিফার যেকোন আসরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
- “The Battle of Nuremberg” নামে খ্যাত পর্তুগাল এবং নেদারল্যান্ডের ম্যাচটিতে রাশিয়ান রেফারি ভেলেন্টিন ইভানভ সর্বমোট ১৬ জন খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখান, যা একটি রেকর্ড এবং ৪ জনকে লাল কার্ড দেখান, এটিও একটি রেকর্ড।
- অস্ট্রেলিয়া-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে ইংলিশ রেফারী গ্রাহাম পোল, ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার জোসেফ সিমুনিক কে তিনবার হলুদ কার্ড দেখান। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পর তাকে লাল কার্ড দেখা তে ভুলে গিয়েছিলেন রেফারী। বিশ্বকাপে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।
- ১৯৮২ সালের পর প্রথম বারের ৬ মহাদেশের দলই টুর্নামেন্টটিতে অংশগ্রহণ করে।
- সেমিফাইনালের ৪ টি দলই ছিলো ইউরোপের। এবং এটি ছিলো টুর্নামেন্টটির ইতিহাসের চতুর্থ অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল।
- প্রথমবারের মতো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ব্রাজিলকে সরাসরি কোয়ালিফাই করা হয় নি। তাদেরকে বাছাইপর্ব খেলেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে হয়।
- ৮ টি দেশ প্রথমবারের মতো আসরটিতে কোয়ালিফাই করে। যাদের মধ্যে চেক-রিপাবলিক, সার্বিয়া এন্ড মন্টেনিগ্রো এবং ইউক্রেইন প্রথম বারের মতো স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে।
- সার্বিয়া এন্ড মন্টেনিগ্রোর বিরুদ্ধে ৩১ মিনিটে ক্যাম্বিয়াসোর দ্বিতীয় গোলটি ছিলো টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল। গোলটি দেয়ার আগে তারা ২৪ টি সফল পাস সম্পন্ন করে।
- দ্বিতীয় রাউন্ডে ঘানার বিপক্ষে গোল দিয়ে রোনালদো লিমা ১৫ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতার লিস্টে সবার উপরে চলে যান। আগের রেকর্ড টি ছিলো জার্মান কিংবদন্তী জার্ড মুলারের (১৪ গোল)
- জার্মানীর বিপক্ষে করা দেল পিয়েরোর ১২১ মিনিটের গোলটি ফিফার সব আসরের সবচেয়ে দেরীতে দেয়া গোল।
এবার আসুন দেখে নেয়া যাক, চ্যাম্পিয়ন দল ইতালীর বিশ্বকাপ যাত্রাঃ
স্কোয়াডঃ
গোলকিপারঃ
জিয়ানলুইজি বুফন
এঞ্জেলো পেরুজ্জি
মার্কো এমেলিয়া
ডিফেন্ডারঃ
ফাবিও ক্যানাভারো
ফাবিও গ্রোসো
আন্দ্রে বার্জাগলি
আলেসসান্দ্রো নেস্তা
জিয়ানলুকা জামব্রোত্তা
মার্কো মাতেরাজ্জি
ম্যাসিমো ওড্ডো
মিডফিল্ডারঃ
আন্দ্রে পিরলো
ড্যানিয়েল ডি রসি
ফ্রানসেস্কো টট্টি
গাত্তুসো
মাউরো ক্যামোরানেসি
সিমিয়ন পেরোত্তা
ফরওয়ার্ডঃ
দেল পিয়েরো
লুকা টনি
ফিলিপ্পে ইনজাঘি
আলবার্তো জিলার্তিনো
ভিনকেনজো ইয়াকুইন্তা
কোচঃ লিপ্পি মার্সেলো
ফর্মেশনঃ
কোচ লিপ্পি দলের প্রকৃত শক্তি চিনতে ভুল করেননি। তাই টিপিক্যাল ইতালীয় ধারা বজায় রেখেই দলের ফর্মেশন সাজান ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ছিলেন বুফন। রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন দলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দুই তারকা ক্যানাভারো এবং নেস্তা। সেন্ট্রাল ব্যাক পজিশনে এই জুটি থাকলে রক্ষণ নিয়ে আর দুশ্চিন্তার কোন কারণই থাকে না। তবে নেস্তার ইঞ্জুরির পর সেই জায়গাটি নেন মাতেরাজ্জি এবং সফলভাবেই পালন করেন নিজের দায়িত্ব। রাইট ব্যাকে জামব্রোত্তা এবং লেফটে গ্রোসো, সবমিলিয়ে এই চার জনের জমাট ডিফেন্স ভাঙা যেনো প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য ছিলো প্রায় অসম্ভব। আর এদের সাথে যখন ডেস্ট্রয়ার হিসেবে সাথে যোগ হন গাত্তুসো, তখন এই রক্ষণকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ হিসেবে মেনে নেয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। মাঝমাঠে হোল্ডিং পজিশনে থেকে রক্ষণের সাথে আক্রমণের সমন্বয় ঘটানোর মূল দায়িত্ব থাকতো আন্দ্রে পিরলোর কাঁধে। মাঝমাঠে বল কন্ট্রোল এবং আক্রমণে সৃজনশীলতার জন্য তার কোন জুড়ি ছিলো না। কিছুটা উপরে এটাকিং মিডে টট্টি, রাইট উইং এ ক্যারামোনেসি, লেফট উইং এ পেরোত্তা এবং স্ট্রাইকার দেল পিয়েরো বা লুকা টনিকে নিয়ে আক্রমণভাগ, যারা আক্রমণের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ কে প্রেসিং এ রেখে বল আদায়ে সাহায্য করতো। আক্রমণে সবারই অবদান থাকতো। এজন্যই সর্বমোট ১০ জন গোল করতে সমর্থ হয়েছিলো ইতালীর হয়ে।
রোড টু ফাইনালঃ
গ্রুপ পর্বঃ
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ ছিলো ঘানার বিপক্ষে। “slow starter” হিসেবে পরিচিত ইতালীর জন্য একটি ভালো সূচনার খুবই প্রয়োজন ছিলো। এবং সেজন্যই ২-০ তে ম্যাচটি জিতে পুরো তিন পয়েন্ট আদায় করে নেয় তারা। প্রথম গোলটি করেছিলেন আন্দ্রে পিরলো তার ট্রেডমার্ক বাকানো শটের মাধ্যমে এবং শেষ গোলটি করেছেন ইয়াকুইন্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচেই হোচট খায় ইতালী। ফাইনালের যাওয়ার পথে শুধুমাত্র এই ম্যাচেই একটি গোল হজম করে ইতালী। যদিও পরবর্তীতে আন্দ্রে পিরলোর ফ্রি কিক থেকে জিলার্দিনহোর ডাইভিং হেডে করা গোলের কারণে ১-১ গোলে ম্যাচ সমাপ্ত হয় এবং ১ পয়েন্ট পায় ইতালী।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটিতে ইতালী কে খেতে হয়েছিলো অনেক বড় এক ধাক্কা। প্রতিপক্ষ ছিলো চেক রিপাবলিক। খেলার ১৩ মিনিটের মাথায়ই রক্ষণের মূল কান্ডারী নেস্তা ইঞ্জুরী আক্রান্ত হন। তাকে চলে যেতে হয় মাঠের বাইরে। ইতালী শিবিরে এটা ছিলো বিশাল এক ধাক্কা। নেস্তার বদলে বদলী হয়ে মাঠে নামেন মাতেরাজ্জি। নেস্তার অভাব কতোটুকু পূরণ করতে পারবেন, সেই চিন্তায় জল ঢেলে দিয়ে ম্যাচের ২৬ মিনিটের মাথায় পেরোত্তির এসিস্ট থেকে গোল করে মাতেরাজ্জি দলকে এগিয়ে দেন ১-০ গোলে। পুরো ম্যাচ জুড়ে রক্ষণ কেও আগলে রাখেন সুনিপুণভাবে। কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে ইতালী শিবিরে। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বদলি হয়ে নামা ইনজাঘীর গোলে ২-০ গোলের জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ইতালী।
দ্বিতীয় রাউন্ডঃ
দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে আসা অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কিছুটা ভয়েই ছিলো ইতালী। ম্যাচেও খুব বেশী সুবিধা করতে পারে নি কোন দল। বার পোস্টে লেগে বল ফিরে আসাই সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিলো। ম্যাচ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে, ইঞ্জুরী টাইমে ফাবিও গ্রোসো কে ডি বক্সে ফেলে দেয়ায় পেনাল্টির বাশিঁ বাজান রেফারী। সেটি কি আদৌ পেনাল্টি ছিলো, নাকি ভুল ডিসিশন- এ নিয়ে তর্ক চলেছে বহুদিন। বিতর্কিত এই পেনাল্টির জন্য সমালোচনার ঝড় ও উঠেছিলো অনেক। ম্যাচের এই অন্তিম সময়ে স্পট কিক নিতে আসেন ফ্রান্সেস্কো টট্টি। নার্ভাসনেস কে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে বুলেট গতিতে শট নিয়ে পরাজিত করেন অস্ট্রেলিয়ান গোলকিপার কে। ১-০ গোলের জয় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয় ইতালীর।
কোয়ার্টার ফাইনালঃ
অনেকেই জপতে শুরু করে দিয়েছিলেন, ইতালীর ভাগ্য অনেক ভালো। নয়তো দ্বিতীয় রাউন্ড এবং কোয়ার্টারে বাকিদের চেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ পায় কিভাবে!
সহজ এবং দুর্বল ইউক্রেনের বিপক্ষে শুরু থেকেই চড়াও হয় ইতালী। পুরো টুর্নামেন্টে নিজের গোলের খাতা খুলতে না পারা লুকা টনি জোড়া গোল করেন সাধারণ মানের ইউক্রেন ডিফেন্সের বিপক্ষে। ৩-০ গোলের সহজ জয় নিয়ে সেমিফাইনালে চলে যায় ইতালী।
সেমিফাইনালঃ
আসরের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এবং জমজমাট ম্যাচ ছিলো এটি।
জার্মানীর একের পর এক ক্ষুরধার আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন ইতালীর গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। তার সামনে পুরো ম্যাচ জুড়েই সলিড ছিলেন ফাবিও ক্যানাভারো। ফুটবল বিশারদদের মতে এই জুটিই ইতালীর সাফল্যের মূল কারণ ছিলো আসরটিতে।
গোলশূন্য শেষ হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ টি। ১২০ মিনিটের বাশিঁ বাজার ঠিক আগের মুহূর্তে আন্দ্রে পির্লোর ডিফেন্স চেড়া পাস থেকে বা পায়ের দুর্দান্ত বাকাঁনো শটে গোল করেন ফাবিও গ্রোসো। এ যেন ছিলো ফুটবল বিধাতার নিজের হাতে লিখা কোন ট্র্যাজেডি। গোল শোধ দিতে মরিয়া জার্মানী সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণে যায়। কাউন্টার এটাক থেকে মিনিটের মধ্যেই দর্শনীয় আরেকটি গোল করে জার্মানীর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন দেল পিয়েরো। আবারো স্বপ্নভংগ হয় জার্মানীর। কান্নায় ভেংগে পড়ে স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শক। ইতিহাস রচনা করে বার্লিনের ফাইনালে নিজেদের নাম লিখিয়ে নেয় ইতালী।
ফাইনালঃ
ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ফাইনাল হয়ে থাকবে ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল। জমজমাট লড়াই বা দুর্দান্ত ফুটবলের জন্য নয়, বরং জিনেদিন জিদানের বিতর্কিত সেই হেডবাট ভুলতে পারবে না কোন ফুটবল ফ্যান।
একদিকে আসরের সবচেয়ে সলিড দল ইতালী অন্যদিকে আসরের অন্যতম সেরা দল ফ্রান্স। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো ফুটবল বিশ্ব।
ম্যাচ শুরু হওয়ার পর যথারীতি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ফ্রান্স। আক্রমণের পসরা সাজানো ফ্রান্সের ফল পেতে দেরী হয়নি। ফ্লোরেন্স মালুদাকে ডি বক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। স্পট কিক থেকে দৃষ্টিনন্দন চিপ শটে গোল করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান জিদান। মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দুই বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করেন তিনি। বাজে এই সূচনার পর পরিশ্রমী গাত্তুসো এবং পিরলো মাঝমাঠ থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই পিরলোর নেয়া কর্নার কিক থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান মাতেরাজ্জি। এরপর আরো কয়েকবার কর্নার থেকে ভয়ের সঞ্চার করে ইতালী। প্রথমার্ধে কিছুটা নিঃপ্রাণ থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে উঠেন থিয়েরি হেনরি। তার পুনঃপুনঃ আক্রমণে ইতালীর ডিফেন্সকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। ৯০ মিনিটের খেলায় কোন দলই আর গোল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। মাতেরাজ্জির সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের এক পর্যায়ে মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে আঘাত করে বসেন জিদান। ফলস্বরূপ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এই ঘটনা হয়তো এখনো ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে জিদানের কাছে।
বাকি সময়টা ইতালীকে রুখে দিয়ে খেলা পেনাল্টি শুট আউট পর্যন্ত নিয়ে যায় ফ্রান্স। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউট। দুই ফাইনালেই কমন ইতালী দল। আগের বারের ঘা এখনো শুকায়নি। তাই এই ফাইনালে আর ভুল করেনি তারা। ৫ টি শটই জালে জড়ায়। ফ্রান্সের ত্রেজেগুয়েতের শট ক্রস বারে লেগে ফিরে আসায় ৫-৩ এ ম্যাচ জিতে নেয় ইতালী। ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে নেয় তারা। চতুর্থবারের মতো শিরোপা জয় করে ছাড়িয়ে যায় জার্মানি কে।
ফুটবল কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুট আউটে ব্রাজিলের কাছে হারার পর কান্নায় জর্জরিত ইতালীই তাদের চতুর্থ শিরোপা জিতে নিলো ১২ বছর পর সেই পেনাল্টি শুট আউটের মাধ্যমেই। নেস্তার ইঞ্জুরী যখন অভিশাপ মনে হচ্ছিলো, তখন দেখা গেলো এটিই ইতালীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসাধারণ ডিফেন্সের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দুই গোল (যার মধ্যে একটি ফাইনালে) করে দলকে শিরোপা জিতাতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন নেস্তার বদলী হিসেবে দলে জায়গা করে নেয়া মাতেরাজ্জি।
অনেকের মতে ভাগ্যের সহায়তায় কাপ জিতেছে ইতালী। কিন্তু সত্য টা হচ্ছে, ভাগ্যকে নিজেদের বশ বানিয়ে নিয়েছিলো তারা তাদের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতার মাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি তে করা গোল, জার্মানীর সাথে ইঞ্জুরী টাইমে দুই গোল ভাগ্যের দান মনে হলেও শেষ পর্যন্ত স্নায়ু চাপ ধরে রেখে লড়াই করে যাওয়াটাই প্রমাণ করে, ইতালী এসেছিলো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এবং লড়াই করে প্রমাণ করে গেছে কেনো তারা এই শিরোপার যোগ্য ছিলো।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি এই দল ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাইই করতে পারে নি। ইতালী কে ছাড়া এই টুর্নামেন্টের আমেজ কিছুটা হলেও কমে যাবে। পরবর্তী বিশ্বকাপে হয়তো তারা আবারো দুর্দান্ত এক কামব্যাক করবে ২০০৬ এর মতো। সেই অপেক্ষায়ই থেকে এবারের মতো ইতালীকে ছাড়াই উপভোগ করতে হবে বিশ্বকাপ। দেখতে হবে, শিরোপা উঠে কার ঘরে। শৈল্পিক ফুটবল খেলা কোন দল, ক্ষুরধার আক্রমণাত্বক কেউ, নাকি ইতালীর মতো রক্ষণাত্বক কোন দল। উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আর অল্প কটা দিন।
mexico drug stores pharmacies Mexican Pharmacy Online medication from mexico pharmacy
http://indiaph24.store/# legitimate online pharmacies india
mexican online pharmacies prescription drugs purple pharmacy mexico price list medicine in mexico pharmacies
http://mexicoph24.life/# reputable mexican pharmacies online
medicine in mexico pharmacies: Mexican Pharmacy Online – buying from online mexican pharmacy
http://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
pharmacies in mexico that ship to usa buying prescription drugs in mexico online mexican border pharmacies shipping to usa
http://mexicoph24.life/# purple pharmacy mexico price list
mexican online pharmacies prescription drugs Online Pharmacies in Mexico mexican drugstore online
oral rybelsus 14 mg – DDAVP brand buy DDAVP sale
http://indiaph24.store/# india online pharmacy
http://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
mexico drug stores pharmacies Online Pharmacies in Mexico mexican mail order pharmacies
mexican pharmaceuticals online: Online Pharmacies in Mexico – mexican drugstore online
http://mexicoph24.life/# mexican border pharmacies shipping to usa
canadian neighbor pharmacy canadian pharmacies canadian pharmacy meds reviews
http://canadaph24.pro/# canada drugs online review
https://indiaph24.store/# indian pharmacy paypal
reputable indian pharmacies buy medicines from India online pharmacy india
http://canadaph24.pro/# legit canadian pharmacy online
canadian pharmacy ratings canadian pharmacies canada drugstore pharmacy rx
safe online pharmacies in canada: Large Selection of Medications from Canada – canadian pharmacy ltd
https://indiaph24.store/# buy medicines online in india
https://indiaph24.store/# best online pharmacy india
reputable mexican pharmacies online mexican pharmacy mexican rx online
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy checker
canadianpharmacyworld Large Selection of Medications from Canada trusted canadian pharmacy
п»їlegitimate online pharmacies india: indian pharmacy fast delivery – top 10 pharmacies in india
https://canadaph24.pro/# global pharmacy canada
http://indiaph24.store/# indianpharmacy com
reputable mexican pharmacies online mexico pharmacy reputable mexican pharmacies online
https://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
buy medicines online in india indian pharmacy india pharmacy
india pharmacy mail order india online pharmacy cheapest online pharmacy india
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy prices
п»їlegitimate online pharmacies india Cheapest online pharmacy reputable indian online pharmacy
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacies comparison
mexican border pharmacies shipping to usa mexican pharmacy mexican pharmacy
http://mexicoph24.life/# purple pharmacy mexico price list
http://canadaph24.pro/# canadian mail order pharmacy
top 10 pharmacies in india buy medicines from India india online pharmacy
http://canadaph24.pro/# maple leaf pharmacy in canada