পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ১ম বিশ্বযুদ্ধ বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তন করে নতুন রাজনৈতিক পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটায়। অস্ট্রিয়ার যুবরাজের হত্যাকাণ্ড উপলক্ষ করে অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাশক্তি অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার পক্ষে করে এ যুদ্ধকে বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তর করে। দেড় কোটি মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি দুই কোটি মানুষ আহত হয়। যার ফলাফল পুরো বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক আবহে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস:
১ম বিশ্বযুদ্ধ আধুনিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মোড় পরিবর্তন করে দেয়। বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যেমন প্রভাবশালীর আগমন ঘটে, তেমনি প্রভাবশালী দেশের পতনও ঘটে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরিধি ও গুরুত্ব বিবেচনা করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
১ম বিশ্বযুদ্ধের কারণ:
ফরাসি বিপ্লবের ফলে ১৮৭০ সালে ইউরোপে পূর্ণ জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। ১৮১৫ সালে ভিয়েনা কংগ্রেসের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ উপেক্ষিত হয়েছিলো। পূর্ণ জাতীয়তাবাদ বিকাশে ১৮৭১ সালে ইতালি ও জার্মানি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ণ জাতীয়তাবাদের বিকাশ একসময় উগ্র জাতীয়তাবাদে পরিণত হলে রাজনৈতিক ও স্বার্থের দ্বন্দ বেড়ে যায়। ফ্রান্সের হারানো রাজ্য আলসেস ও লোরেন ফিরে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। ইতালি অস্ট্রিয়ার কাছ থেকে ট্রেনটিনো ও ট্রিয়েস্ট লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে, অপরদিকে সার্বিয়া ও বসনিয়া হারজেগোভিনিয়া লাভের জন্যও ব্যাকুল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোতে একে অপরের বিরোধ অনিবার্য ছিল।।
উনিশ শতকের শেষার্ধে অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের অধীনে তিনটি জাতি পোল, চেক ও সার্বক্রোট সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য উদগ্রীব ছিল। রাশিয়ার অন্তর্গত জাতিগোষ্ঠী ও জাতীয় সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত ছিল।
উগ্র জাতীয়তাবাদ:
অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। প্রত্যেক দেশের উৎকট জাতীয়তাবাদ নিজ নিজ দেশের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে থাকে। জার্মানি ছিল এ ধরণের উগ্র ও অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। জার্মানির অনেক ঐতিহাসিক সাহিত্যিক দার্শনিক লেখক তাদের রচনার মাধ্যমে জার্মান জাতীয়তাবাদের জয়গানের মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচার করতে থাকে। এ সংকীর্ণ উগ্র জাতীয়তাবাদ জার্মানি ছাড়াও ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও জাপানেও প্রকাশ পায়। ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে এমনভাবে বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেতে থাকে যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সামরিকবাদঃ
উগ্র ও অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদ জন্ম দেয় সামরিকবাদ (Militarism) এর। উনবিংশ শতাব্দী থেকে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলো ধারণা করতে থাকে যে, যুদ্ধ ছাড়া জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা লাভ করা যায় না। ১৮৭১ এর ফ্রান্স ও প্রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইউরোপের অনেক দেশ জার্মানি সামরিকবাদকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে ইউরোপে শুরু হয় অশুভ অস্ত্র প্রতিযোগিতা। ফ্রান্স ও রাশিয়া বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা চালু করে। সামরিক শক্তি হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে রেষারেষি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ:
উনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের উন্নতিতে বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলিতে নানা ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। শিল্প উৎপাদিত দ্রব্য উৎপাদনের বাজার ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য শিল্পোন্নত দেশ গুলোর মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো গ্রাস করার এক নগ্ন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। জার্মানি যখন অর্থনৈতিক ভাবে ইংল্যান্ড ফ্রান্স ব্রিটেনের কাতারে চলে আসে, তখন তাদের মধ্যে এক অর্থনৈতিক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়। যা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।
অস্ট্রিয়ার যুবরাজের হত্যা:
১ম বিশ্বযুদ্ধের অনেকগুলো কারণ থাকলেও যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রধান ও অন্যতম কারণ সার্বিয়ায় অস্ট্রিয়ার যুবরাজ হত্যা। ইউরোপের রাজনৈতিক আবহাওয়া আগে থেকেই হিংসা, ঘৃণা ও দ্বন্দ্বের ধূম্রজালে আচ্ছন্ন হয়েছিল। এমন সময় ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী যুবরাজ ফার্ডিন্যান্ড স্ত্রীকে নিয়ে বসনিয়ার রাজধানী সেরাজিভোতে ভ্রমণ করতে গেলে প্রিন্সিপ নামক জনৈক বসনিয়া সার্ব কর্তৃক দুজনেই নিহত হন। অস্ট্রিয়ান সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং সার্বিয়ার কাছে এক চরমপত্র পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শর্ত পূরণ করতে বলা হয়। এমন সময় সার্বিয়ার আচরণে সন্তুষ্ট না হয়ে অস্ট্রিয়া ১৯৪৮ সালের ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বেই জার্মানি অস্ট্রিয়াকে পূর্ণ সমর্থন দেয়।

পরস্পর বিরোধী শক্তিজোট:
জার্মানি অস্ট্রিয়াকে পূর্ণ সমর্থন দেয়, ফলে অস্ট্রিয়া দ্রুতই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে রাশিয়াও ৩০ জুলাই থেকে সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। এমন অবস্থায় জার্মানি রাশিয়াকে সৈন্য সমাবেশ না করতে চরমপত্র পাঠায়। রাশিয়া জার্মানির চরমপত্রের কোন উত্তর না দিলে ১ আগস্ট জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জার্মানি ফ্রান্স কে নিরপেক্ষ থাকতে বললেও ফ্রান্স কোন উত্তর না দেয়ায় ৩ আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জার্মানি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে বেলজিয়াম আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৯ সালে স্বাক্ষরিত ইংল্যান্ডের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বেলজিয়াম আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড বেলজিয়ামের পক্ষে অবস্থান করবে। ৪ আগস্ট ইংল্যান্ড জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ৬ আগস্ট অস্ট্রিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ১০ আগস্ট ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে সমগ্র বিশ্বের পরাশক্তি গুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

১ম বিশ্বযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ঘটনা:
১ম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ সালে আরম্ভ হয়ে চার বছর স্থায়ী হয়েছিলো। প্রথমে জার্মানদের প্রবল আশা ছিল অতি দ্রুত শত্রুদের পরাজিত করতে পারবে। কিন্তু জার্মানি শত্রুদের পুরোপুরি দমন করতে না পারলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রণাঙ্গনে জার্মান বাহিনী এগিয়ে ছিল।
যুদ্ধের প্রথমেই বেলজিয়াম দখল করে নেয় জার্মান বাহিনী, বেলজিয়াম দখল করে ফ্রান্সের দিকে অগ্রসর হলে ফ্রান্স সেনাধ্যক্ষ মার্ন নদীর তীরে জার্মান বাহিনীকে দমন করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে জার্মান সেনাধ্যক্ষ হিন্ডেনবার্গের সহকারী সেনাপতি লুভেনডর্ফ টেননবার্গের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করে। ১৯১৫ সালে রাশিয়া আক্রমণ করে ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া অধিকার করে জার্মান বাহিনী। পরবর্তীতে রাশিয়া বিভিন্ন ভাবে জার্মান আক্রমণ করতে চাইলেও জার্মান বাহিনী তা দৃঢ়তার সাথে প্রতিহত করে।

তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়ে মিত্রশক্তির গতিরোধের জন্য দার্দানেলিস প্রণালী বন্ধ করে দেয়। ইঙ্গ-ফরাসী বাহিনী দার্দানেলিস প্রণালী দখল করতে চাইলে তুরস্কের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধের প্রথমদিকের দাপুটে সার্বিয়াও যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর অস্ট্রিয়ার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
জাটল্যান্ডের নৌযুদ্ধ:
জার্মান নৌবাহিনীর সাথে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর যুদ্ধে জার্মান নৌবাহিনীর পরাজয় ঘটে, এবং জার্মানির অধিকাংশ যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রিটিশদেরও অনেক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ যুদ্ধে জার্মান নৌবহর বিধ্বস্ত হলে জার্মান নৌবাহিনী বেপরোয়া হয়ে সাবমেরিন আক্রমণ শুরু করে। সাবমেরিন আক্রমণের মাধ্যমেই জার্মান ব্রিটিশ ব্যতীত যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ যাত্রীবাহী জাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজের ক্ষতি সাধন করে। যার ফলে মিত্রশক্তির পক্ষে জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১ম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়ার প্রস্থান:
১ম বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে মিত্রশক্তি অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে দাড়াতে পারেনি। ১৯১৭ সালে মিত্রশক্তির ভাগ্যে একে একে ভাগ্য আরও বিপর্যয় হতে থাকে। জার্মান বাহিনী বেলজিয়াম, সার্বিয়া, রুমানিয়া, পোল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্স দখল করে রাশিয়া ও ইতালিকে কোণঠাসা করে ফেলে। এ সময় রাশিয়ার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পূর্ব রণাঙ্গনের যুদ্ধ পরিস্থিতির মোড় সম্পূর্ণরূপে ঘুরিয়ে দেয়। বলশেভিক বিপ্লবের ফলে বিপ্লবী সোভিয়েত সরকার জার্মানির সঙ্গে ব্রেটলিটভস্কের সন্ধি সাক্ষর করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
জার্মানি পূর্ব রণাঙ্গন থেকে পশ্চিম রণাঙ্গনে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে আবার ফ্রান্স ও বেলজিয়াম আক্রমণ করে। এমন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ যুদ্ধের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র্ব্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে ব্রিটিশ দীপপুঞ্জের বিরুদ্ধে জার্মানের নৌ-অবরোধ সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
১ম বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান:
১৮২৩ সালের ‘মনরো নীতি’ (Monroe Doctrine) অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না। ১৯১৪ সালে ইউরোপের রাজনীতিতে ১ম মহাযুদ্ধ শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র কোন পক্ষে না জড়িয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। কিন্তু জার্মানি বেপরোয়া হয়ে ইংল্যান্ডের সাথে সাবমেরিন যুদ্ধ শুরু করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এরপর জার্মান সাবমেরিনের আঘাতে মার্কিন যাত্রীবাহী জাহাজ বিলাস তরণী আক্রান্ত হলে এক হাজার যাত্রীসহ জাহাজ ডুবে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়। জার্মানির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবাদ করলেও জার্মানি কোন উত্তর দেয়নি। এভাবে ঘটনাক্রমে চলতে থাকলে, জার্মানের উগ্রতা ধীরে ধীরে চরম আকারে প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি বাণিজ্য জাহাজ আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ১৯১৭ সালের ৬ এপ্রিল জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মিত্রশক্তির পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৯১৮ সালে জার্মানি সামরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে সর্বশেষ চরম অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। জার্মান বাহিনী পরপর তিনটি প্রচণ্ড আক্রমণ করে মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। জার্মানি তার চূড়ান্ত অভিযানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে হতবিহবল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শীঘ্রই তুরস্ক, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া একে একে পরাস্ত হয়ে মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। অপরদিকে জার্মানির অভ্যন্তরে নৌবাহিনী ও বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এমতাবস্থায় জার্মানির সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম প্রবল গণ অসন্তোষ ও বিদ্রোহের মুখে শেষ পর্যন্ত সিংহাসন ত্যাগ করে হল্যান্ডে পালিয়ে যায়। জার্মানিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার স্থাপিত হয়। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রজাতান্ত্রিক সরকার মিত্রশক্তির সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সাক্ষর করলে ১ম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:
১ম বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানুষের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ গুলোর একটি, যার স্মৃতি দুঃস্বপ্নের ও হৃদয়বিদারক। নবজাতক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আঘাত করেছিলো। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন আসে। পুরাতন রাজনৈতিক শক্তির পতনের সাথে নতুন নতুন রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটে। মধ্যপ্রাচ্য ও ভিয়েতনামে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। ফলাফল হিসেবে ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক শাসন বন্ধ হতে শুরু করে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শিল্প উৎপাদনের চেয়ে মারণাস্ত্র উৎপাদনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। ব্রিটেনের কাছে ঋণগ্রস্ত থাকা আমেরিকা যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।
এ মহাযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী ধারণা করেছিলো এ বিশ্ববাসীকে আগামীতে আর যুদ্ধের অভিশাপ বইতে হবেনা। কিন্তু বিশ্ব শান্তির পক্ষে কাজ করার জন্য যে লীগ অব নেশনস গঠন করা হয়, তার বিশ্বব্যাপী কার্যত প্রভাব না হওয়ার ফলে জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের ফ্লট তৈরি হয়।
১ম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল:
দীর্ঘ ৪ বছর ব্যাপী ব্যয়বহুল এ বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিহত ও ২ কোটি মানুষ আহত হয়। যেখানে ৬ কোটি সৈনিকের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লক্ষ সৈনিক মৃত্যুবরণ করে। ৭০ লক্ষ মানুষ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে। ১৮৬ ও ১৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খরচ হয় এ বিশ্বযুদ্ধে।
মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোন রাষ্ট্রের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনেনি। আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর ইতিহাস চর্চায় জার্মানিকে পরাজিত দেশ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় এবং শুধুমাত্র জার্মানির উপরেই সকল দায়ভার চাপিয়ে জার্মানিকে কোণঠাসা করে দেয়া হয়।

১ম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রথমে প্যারিস সম্মেলন ও পরে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জার্মান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, অটোমান ও রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে নতুন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সৃষ্টি করে ১ম বিশ্বযুদ্ধ। যে চুক্তির মাধ্যমে অস্ট্রিয়া, চেক স্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া লিথুনিয়া এবং তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতাই রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের গতি ত্বরান্বিত করে রাশিয়ায় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হন।

১ম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ও প্রভাব পুরো বিশ্বে বৃদ্ধি পায়। কারণ বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানান অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে নানানভাবে আর্থিক সাহায্য সাহায্য দিতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাজনে পরিণত হয়, ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।
লীগ অব নেশনসঃ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধই প্রথম আন্তর্জাতিকতার সূচনা করে। ইউরোপের সংকীর্ণ গণ্ডি অতিক্রম করে গোটা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য যে আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গভীরভাবে অনুভূত হয়। এ উপলব্ধি থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিখ্যাত চৌদ্দ দফা শর্তের উপর ভিত্তি করে লীগ অব নেশনস নামক একটি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র সংঘ গড়ে উঠে। এ সংস্থা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা ছাড়াও জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসার, দাস প্রথার অবসান, শ্রমিকের উন্নতি প্রভৃতি নানা জনহিতকর কার্যাবলী লীগ অব নেশনস এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যদিও লীগ অব নেশনস শেষ পর্যন্ত তার পূর্ণ কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছিলো। কারণ লীগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠার ২০ বছরের মধ্যেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। তবুও বিশ্বযুদ্ধ রোধে লীগ অব নেশনস ব্যর্থ হলেও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবতার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে।
buy dutasteride order avodart sale generic zofran 4mg
levaquin uk order generic levofloxacin 500mg
I don’t usually comment but I gotta admit thankyou for the post on this amazing one : D.
I was just searching for this info for a while. After 6 hours of continuous Googleing, at last I got it in your site. I wonder what’s the lack of Google strategy that do not rank this kind of informative sites in top of the list. Generally the top web sites are full of garbage.
I was recommended this web site by my cousin. I’m not sure whether this post is written by him as no one else know such detailed about my problem. You’re amazing! Thanks!
Thank you for sharing superb informations. Your web site is very cool. I’m impressed by the details that you have on this blog. It reveals how nicely you understand this subject. Bookmarked this web page, will come back for more articles. You, my pal, ROCK! I found simply the information I already searched all over the place and just could not come across. What an ideal site.
Hello. Great job. I did not expect this. This is a great story. Thanks!
Thanks a lot for sharing this with all of us you actually know what you are talking about! Bookmarked. Please also visit my website =). We could have a link exchange arrangement between us!