ভারতীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিলো মহেঞ্জোদারো ও হরোপ্পা থেকে । হরোপ্পান সভ্যতা হচ্ছে ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা । কেন্দ্রস্থল ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল সিন্ধু নদের অববাহিকা । যা বর্তমানে পাঞ্জাব প্রদেশ নামে পরিচিত ।
১৮৪২ সালে চার্লস ম্যাসন Narrative of Various Journey in Baluchistan, Afganistan And the Punjab গ্রন্থে হরোপ্পার ধ্বংসাবশেষের বিষয়ে প্রথম আভাস দেন । এরপর আর কেউ এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় নি ।
১৮৫৬ সালে করাচি ও লাহোরে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি লাইন স্থাপনের দায়িত্ব পান ব্রিটিশ প্রকৌশলী জন উইলিয়াম । রেললাইন স্থাপনের জন্য ব্যালাস্ট খুঁজতে গিয়ে জানা যায় যে স্থানে রেললাইনের খনন কাজ করা হবে সে স্থানে ব্রাহ্মনাবাদ নামে একটি প্রাচীন শহরের অস্তিত্ব সম্পর্কে । মজার ব্যাপার এই যে, জন তখনো জানতেন না এই শহরের ব্যাপারে । তিনি ব্যালাস্ট খোঁজার জন্য খনন করেছিলেন । কয়েক মাস পর তার ভাই উইলিয়াম ব্রান্টনের কর্মশিবির লাইনের অংশে একটি শহরের সন্ধান পায় । এই শহরে তৈরি ব্যালাস্ট দিয়ে লাহোর থেকে করাচি পর্যন্ত তৈরি হয় ৯৩ মাইল (১৫০ কিলোমিটার) দীর্ঘ রেলপথ ।

Source: The Better India
আচ্ছা রেলপথের কথা এখন থাক । এখন আসি হরোপ্পার কথায় । ১৯৩১ সালের মধ্যে মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চলতে থাকে । ১৯৪৪ সালে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের তদনীন্তন ডিরেক্টর স্যার মর্টিমার হুইলারের নেতৃত্বে অপর একটি দল এই অঞ্চলে খননকার্য চালায়। ১৯৪৭ সালের পূর্বে আহমদ হাসান দানি, ব্রিজবাসী লাল, ননীগোপাল মজুমদার, স্যার মার্ক অরেল স্টেইন প্রমুখ এই অঞ্চলে খননকার্যে অংশ নিয়েছিলেন ।
শহর হরোপ্পার বিন্যস্ত পরিবেশ
হরোপ্পা সভ্যতার সময়কাল ২৬০০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত ধরা হয় । এই সভ্যতাকে সিন্ধু সভ্যতার পূর্ব ও উত্তরসূরি সভ্যতা বলা হয়ে থাকে । এই শহর ছিলো পরিকল্পিত এবং দুটো অংশে বিভক্ত । এর উপরের অংশে ছিলো মন্দির, রাজার বাসভবন ও অন্যন্য ভবন । উপরের অংশকে বলা হয় ’সিটাডেল’ । বন্যা হলে নিম্নাঞ্চলের মানুষ উপরের অংশে আশ্রয় নিতো । আর নিম্নাঞ্চলে ছিলো সাধারণ ভবন । এই শহরের ভবনগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সব সমান । মনে হয় সব পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছিলো । এই শহরে নর্দমায় অপরিষ্কার পানি, মূত্র, বর্জ্য ও আবর্জনা বিলীন হয়ে যেত ।

Source: Sci-News.com
ভারতীয় সভ্যতার স্থায়িত্ব
অন্যান্য সভ্যতার মতো ভারতীয় সভ্যতা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় নি । প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা শুরু হয়েছিলো নীলনদের অববাহিকায় । নীলনদের তীরে মিশর ছিলো পিরামিডের দেশ । সেকালে মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাস ছিলো মৃত্যুর পর দেহে আত্মা প্রবেশ করবে । তারপর একটি শেয়ালরূপী মানুষের কাছে যাবে । তার দাড়িপাল্লায় সবার হৃৎপিণ্ড পরিমাপ করা হবে । সত্য কথা বললে ও ভালো মানুষ হলে হৃৎপিণ্ডটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে । আর অসচ্চরিত্র হলে হৃৎপিণ্ডটি আর ফেরত দেওয়া হতো না । বরং একটি কুমির এসে খেয়ে ফেলবে । আর সেই দেহ বিকৃত আত্মা হিসেবে পড়ে থাকবে । আর ভালো মানুষ ওসিরিসের কাছে গিয়ে সারা দিন ধান কাটবে । আর রাতে আনন্দ উপভোগ করবে । ভারতীয় সনাতন ধর্মের প্রধান অবতার শ্রীকৃষ্ণ । সনাতন ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি আবার ভিন্ন । এই ধর্মে রয়ে জন্মান্তরবাদ । পূর্বজন্মে কোনো পাপকাজ করলে পরজন্মে তার শাস্তি এবং নরকবাসের বিধান এই ধর্মে রয়েছে । মেসোপটেমিয়া ইউফ্রেতিস ও তাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত । তাহলে আমার আলোচনাকে যদি সংক্ষিপ্ত করি তবে-
১. ভারতীয় সভ্যতা সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত
২. মিশরীয় সভ্যতা নীলনদের তীরে অবস্থিত
৩. মেসোপটেমিয়া ইউফ্রেটিস ও তাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত
সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম কারণ আর্যদের আগমন । অর্থ-বিত্ত-অহংকার-অলংকারে শোভিত আর্যরা এদেশে এসে অনার্যদের সাথে সম্ভবত যুদ্ধে লিপ্ত হয় । এছাড়াও তাদের দমন করার মনোভাবের ফলে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় ।
নদী একটি সভ্যতার নির্ণায়ক । নদীই বলে দেয় সভ্যতার ভবিষ্যৎ । ভারতের প্রধান দুটি নদী গঙ্গা ও যমুনা । নদী ভেঙে শাখাপ্রশাখা বের হয় । সিন্ধু নদ ভেঙেও তেমনই শাখাপ্রশাখা বের হয়েছে । আর এই কারণে ভারতীয় সভ্যতা এখনো হারিয়ে যায় নি ।
buy levaquin 500mg online cheap levaquin 250mg price