প্রাচীন ভারতের একটি শহর পাটলিপুত্র। মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই শহরটি কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবে এক সময় শহরটি ছিল ঐতিহাসিক স্থাপনা সমৃদ্ধ ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর। প্রাচীন শহর হওয়ায় খুব বেশি লিখিত দলিল না থাকায় শহরটির বিস্তারিত ইতিহাস সম্পর্কে জানা কিছুটা কষ্টসাধ্য বটে। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে হারিয়ে যাওয়া শহরটির ইতিহাসের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে অনেকাংশেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া হারানো শহর পাটলিপুত্রের ইতিহাসই আজকের আলোচনার বিষয়।
নামকরণ:
পাটলিপুত্রের নামকরণের ইতিহাস কিছুটা অস্পষ্ট। ‘পুত্র’ শব্দের অর্থ ছেলে আবার ‘পাটলি’ ধানের একটি প্রজাতির নাম। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ধানের উক্ত প্রজাতিটির নামেই এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল। অন্য আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, ‘পাটলিপুত্র’ নামটির অর্থ পাটলির পুত্র। এই পাটলি ছিলেন রাজা সুদর্শনের কন্যা। এই শহরটি আগে পাটলিগ্রাম নামেও পরিচিত ছিল। কোনো কোনো গবেষকের মতে ‘পাটলিপুত্র’ শব্দটি এসেছে ‘পাটলিপুর’ শব্দটি থেকে।
প্রাচীন শহরটির ইতিহাস:
পাটলিপুত্র আধুনিক পাটনা শহরের প্রাচীন নাম। খ্রিস্টপূর্ব তিন অব্দে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে পাটলিপুত্র ছিল পৃথিবীর বৃহত্তর শহরগুলির মধ্যে অন্যতম জনাকীর্ণ একটি শহর। দীর্ঘতম সময়ে টিকে থাকা শহর হিসেবে পাটনা বিভিন্ন শাসনামলে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলো। যেমন-পাটলিগ্রাম, পাটলিপুত্র, কুসুমপুর, পুষ্পপুরা, আজিমাবাদ এবং বর্তমানের পাটনা যাকে বলা হয় প্রাচীন পাটলিপুত্রের নতুন রূপ। শহরটি মূলত অজাতশত্রু ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বে গঙ্গানদীর নিকটে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির দুর্গ (পাটলিগ্রাম) আকারে নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে যা প্রাচীন মহাজনপদ সমূহের মধ্যে মগধ রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।
আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির (ত্রিপিটক ও আগম) আগে পাটলিপুত্রের কোনো লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় না। উক্ত ধর্মগ্রন্থগুলিতেও এটিকে পাটলিগ্রাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলির তালিকায় পাটলিগ্রামের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গৌতম বুদ্ধ এ গ্রামেই তাঁর জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন। আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে জানা যায় যে, গৌতম বুদ্ধের জীবনের শেষ পর্যায়ে পাটলিগ্রামের কাছে একটি শহর তৈরি হচ্ছিল। এখানেই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো- প্রথমটি গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর সময় ও দ্বিতীয়টি সম্রাট অশোক এর রাজত্বকালে।
পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য থেকেও জানা গিয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় বা ৪র্থ শতাব্দীর আগে ওই অঞ্চলে নগরায়ণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০৩ অব্দে গ্রিক ঐতিহাসিক ও রাজদূত মেগাস্থিনিস তাঁর গ্রন্থ “ইন্ডিকাতে” পাটলিপুত্রের নাম উল্লেখ করেন।
পাটলিপুত্র শহরটি উত্তর-মধ্য ভারতে অবস্থিত থাকায় এখানেই পরপর অনেকগুলি রাজবংশ তাদের রাজধানী স্থাপন করেছিল। এই রাজবংশগুলির মধ্যে নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, গুপ্ত ও পাল রাজবংশ উল্লেখযোগ্য। পাটলিপুত্র মৌর্য শাসকদের অধীনে রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার পরই তা উন্নতির শীর্ষে অবতীর্ণ হয়। পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করেই মৌর্যদের বিখ্যাত রাজা চন্দ্রগুপ্ত (খ্রি.পূ.৩২২-৩০১) বঙ্গোপসাগর হতে আফগানিস্তান পর্যন্ত তাঁর রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক বিস্তৃত ভূ-খণ্ড শাসন করেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কৌটিল্যের তত্ত্বাবধানে রাজধানী পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করে জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা সহ একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গুপ্ত রাজবংশীয় শাসনামল (৩-৪ শতক) থেকে পাল সাম্রাজ্য (৮-১০ শতক) পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পাটলিপুত্র রাজধানীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলো। গঙ্গা, গণ্ডকী ও শোন নদীর সংযোগ স্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র ছিল একটি ‘জলদুর্গ’। এই অবস্থানগত সুবিধের জন্য মগধ সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে উক্ত সাম্রাজ্যের শাসকদের সুবিধা হয়েছিল। পাটলিপুত্র ছিল ব্যবসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। কালের বিবর্তনে শহরটি প্রায় হারিয়ে যেতে থাকে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বা জুয়ানজ্যাং তাঁর সফরকালে শহরটির প্রায় ভগ্নদশা দেখতে পান। শের শাহ শুরী তাঁর রাজধানী পাটলিপুত্রে স্থাপন করে নতুন নামকরণ করেন পাটনা।
মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় পাটলিপুত্র:
গ্রীক রাজার দূত হয়ে শহরে আসেন মেগাস্থিনিস। শহর দেখে তো তিনি অবাক। এত বড় আর সুন্দর শহর। শুধু শহরটাই নয় পুরো দেশটাই ভালো করে দেখার চেষ্টা করলেন তিনি। দেখা শেষে এ নিয়ে বইও লিখলেন। বইয়ে তিনি লিখলেন যে, পাটলিপুত্র নগরীটি গঙ্গা আর শোন নদীর মিলনস্থলে অবস্হিত। এটি মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী। মস্ত বড় এ সাম্রাজ্য। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত এলাকা থেকে পাটলিপুত্র পর্যন্ত চওড়া এক রাজপথ আছে। বহু দূর-দূরান্তের মানুষ এই শহরে আসে। লম্বায় এগারো মাইল আর চওড়ায় দুই মাইল। কাঠের তৈরি উঁচু প্রাচীর ঘিরে রেখেছে পুরো শহরটাকে। প্রাচীরের মাঝে মাঝে ছিল মস্ত বড় বড় ফটক। এমন ৬৪ টি ফটকের বর্ণনা দিলেন তিনি। শহরে আছে ৫০০টির মতো কেল্লা। শহরের নিরাপত্তার জন্য বড় একটি পরিখা দিয়ে শহরটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই পরিখা বা খালটি দুশো গজ চওড়া আর বিশ গজ গভীর। এই শহরের মাঝে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক চমৎকার রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের থামগুলো সাজানো আছে সোনার তৈরি আঙুরলতা আর রূপোর তৈরি পাখি দিয়ে।
মেগাস্থিনিস অবশ্য বইটা লিখেছিলেন তাঁর মাতৃভাষায়। তাঁর ভাষায় পাটলিপুত্রকে তিনি বলেছিলেন পালিবোথরা। বইটি পরবর্তীতে গোটা দুনিয়ায় খ্যাতি অর্জন করেছিল। এটির নামই “ইন্ডিকা”। বইটির যেটুকু অংশ এখন পাওয়া যায় তা পড়লেও গল্পের মতো মনে হয়। মেগাস্থিনিস কিন্তু আজকের দুনিয়ার মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও আরো তিনশ/চারশ বছর আগের মানুষ।
ভারতের বিহার এলাকার প্রাচীন মগধ এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই রাজ্য। পরে অবশ্য পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পশ্চিম প্রান্তের পাঞ্জাব পর্যন্ত এই রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন:
মেগাস্থিনিস যে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলেন নি বরং চোখে দেখা সত্য ঘটনার বর্ণনাই দিয়েছেন তার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে পরবর্তীকালে।
১৮৯০ এর দশকে প্রত্নতত্ত্ববিদ ওয়াডেল কর্তৃক খননের ফলে একটি সূতপ এর উপরে উভয় পাশে নারী মূর্তি সংযোজিত বাঁকানো পাথরের রেলিং এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। দুই মুখে নারী মূর্তি সংস্থাপিত থাকার ফলে মন্দিরের নামকরণ হয়েছে দুরুখী বা দুরুখ্যিয়া (দুই মুখ) দেবী মন্দির, যা ২-১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুঙ্গ শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মূর্তিগুলির গাছের ডাল হাতে ধরে তা ভাঙনরত ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো যার নাম সালভঞ্জিকা (গাছের ডাল বা শাখা ভাঙা) এবং এর প্রতীকী অর্থ সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুবতী নারী। পরবর্তীকালে প্রত্নস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে নয়াটোলা (কঙ্করবাগ) নামক স্থানে এই মূর্তিগুলোকে নিয়ে আসা হয় এবং মন্দির সদৃশ স্থানে রেখে তার পূজা দেয়া হয়। এসবের অনুরূপ একটি প্রতীকী মূর্তি বর্তমানে পাটনা যাদুঘরে রক্ষিত আছে।
তাছাড়া ১৯১২ থেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাটি খুঁড়ে এখান থেকে ৮০ টি কাঠের স্তম্ভযুক্ত বড় হলঘরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। বোঝা গেছে যে, এখানেই মৌর্য বংশের সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সভা বসত। আর মেগাস্থিনিস যে কাঠের তৈরি প্রাসাদ দেখেছিলেন তার অনেক জায়গাতেই যে পাথরের ব্যবহার হয়েছিল সে প্রমাণও পরবর্তীকালের খোঁড়াখুঁড়িতে পাওয়া গেছে।
পাটনা শহরের কাছাকাছি এলাকাতেই প্রাচীন নগরী পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। কুমারহার ও বুলান্দিবাগ এলাকাতে মাটি খুঁড়ে কাঠের পাটাতন ও স্তম্ভযুক্ত হলঘরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। অবশ্য শুধু কুমারহার ও বুলান্দিবাগই নয় মোট ১৭টি জায়গা থেকে এই প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীনকালে গঙ্গানদী বয়ে যেত পাটলিপুত্রের ধার দিয়েই। কিন্তু এখন এখান থেকে নদীটি প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। বুলান্দিবাগেই পাওয়া গেছে পাটলিপুত্র নগরীকে ঘিরে রাখা সেই কাঠের প্রাচীরের অস্তিত্ব। মেগাস্থিনিস তার বর্ণনায় এই প্রাচীরের কথা বেশ গুরুত্ব দিয়ে লিখেছিলেন। দুই সারিতে কাঠের প্রাচীর দেয়া জায়গাটার মাঝখানের অংশটা ছিল মূল্যবান কাঠ দিয়ে ঢাকা। এখান থেকে প্রায় ১৬ ইঞ্চি চওড়া কাঠের ড্রেনের অস্তিত্বও সনাক্ত করা গেছে। বুলান্দিবাগের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কুমারহার এলাকাতে যে বড় হলঘরটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানে ১০টি সারিতে মোট ৮০টি খুঁটি পোঁতা ছিল। এই ৮০টির মধ্যে ১০টির চিহ্ন খুব স্পষ্টভাবেই পাওয়া গেছে। অতি উন্নত শাল কাঠের তৈরি এই খুঁটিগুলো গভীর করে পোঁতা ছিল মাটিতে। হলঘরের কাছে দিয়ে বয়ে যেত খাল। সেই খালে নৌকোয় করে লোকেরা এসে ৭টি কাঠের চওড়া পাটাতন পেরিয়ে হলঘরে যেত। প্লাটফর্ম বা পাটাতনগুলোর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে হলঘরের প্রায় ৫ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে। এই বিশাল হলঘরটি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে শুঙ্গ রাজাদের আমলে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। যেহেতু পাটনা শহরের খুব সামান্য অংশেই প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ হয়েছে তাই ধারণা করা হয় যে, পাটলিপুত্রের অসংখ্য প্রত্ন নিদর্শন আধুনিক পাটনা শহরের মাটির নীচে এখনো রয়ে গেছে।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক রাজত্ব করলেও মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজধানী হিসেবেই পাটলিপুত্রের খ্যাতি বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। অশোক ছিলেন এক জনদরদী শাসক। তাঁর মহান বাণী ও উপদেশ সমূহ তিনি রাজ্যের নানাস্থানে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। অবশ্য অশোকের পরেও বহুকাল ধরে এই নগরীটি খ্যাতির সাথে টিকেছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায় একজন বিখ্যাত চীন দেশীয় পর্যটকের লেখায়। তাঁর নাম ফা হিয়েন বা ফা-সিয়েন। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীন থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। ভারত ভ্রমণ শেষে ইন্দোনেশিয়া হয়ে তিনি ৪১৪ খ্রিস্টাব্দে চীনে ফিরে গিয়েছিলেন। পাটলিপুত্রে গিয়ে তিনি মৌর্য বংশের সম্রাট অশোকের প্রাসাদ দেখে হতবাক হয়ে বলে ফেলেছিলেন যে, এমন প্রাসাদ তৈরি করার সাধ্য কোন মানুষের নেই। পাটলিপুত্রে তখনও ছিল পশু হাসপাতাল ও মানুষের জন্য হাসপাতাল। আজকের মানুষও যখন প্রাচীন নগরী পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তখন তাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠে হাজার হাজার বছর আগেকার কোলাহল মুখরিত এক হারিয়ে যাওয়া শহরের স্মৃতি।
https://indiaph24.store/# buy medicines online in india
mexican rx online cheapest mexico drugs mexico drug stores pharmacies
https://indiaph24.store/# mail order pharmacy india
canadian pharmacy Large Selection of Medications from Canada canadian pharmacy store
https://canadaph24.pro/# legal to buy prescription drugs from canada
http://indiaph24.store/# buy prescription drugs from india
canadian pharmacy king reviews: legal canadian pharmacy online – canadian pharmacy 365
https://mexicoph24.life/# best mexican online pharmacies
https://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online
https://indiaph24.store/# Online medicine order
https://mexicoph24.life/# mexican rx online
pharmacy website india: indian pharmacy – buy medicines online in india
http://indiaph24.store/# pharmacy website india
https://indiaph24.store/# buy medicines online in india
http://canadaph24.pro/# online canadian pharmacy
http://indiaph24.store/# indian pharmacy paypal
buying prescription drugs in mexico online mexico pharmacy buying prescription drugs in mexico
mail order pharmacy india: Generic Medicine India to USA – Online medicine order
safe canadian pharmacies Large Selection of Medications from Canada canadian pharmacies compare
http://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy no scripts
indian pharmacies safe buy medicines from India best india pharmacy
http://canadaph24.pro/# canada pharmacy online legit
http://indiaph24.store/# buy prescription drugs from india
https://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online
https://canadaph24.pro/# canadian discount pharmacy
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy 1 internet online drugstore
buy glycomet 1000mg for sale – order glucophage generic cheap acarbose
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy 365
http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy meds
https://indiaph24.store/# Online medicine order
http://canadaph24.pro/# legit canadian online pharmacy
canadian drug pharmacy Prescription Drugs from Canada reputable canadian online pharmacies