মুভি: দ্য গডফাদার – সর্বকালের সেরা মাফিয়া ক্লাসিক

1

আমেরিগো বনসেরা তার কন্যার উপর ধর্ষণ চেষ্টার বিচার চাইতে এসেছেন গডফাদার ডন ভিটো কর্লিয়নির কাছে। কোলে বিড়াল নিয়ে ডেস্কে বসে আছেন গডফাদার। বনসেরা তার কন্যার বিচার চাইতে পুলিশের কাছে গিয়ে বিচার না পেয়ে গডফাদারের দ্বারস্থ হন৷ ভিটো কর্লিয়নি সিসিলিয়ান টানে ইংরেজিতে তার মৃদু খসখসে কণ্ঠে বনসেরা কে জিজ্ঞেস করেন- why did you go to the police? why didn’t you come to me first? গডফাদার তার প্রথম প্রশ্নেই বুঝিয়ে দেন, হু ইজ দ্যা রিয়াল গডফাদার। বনসেরা ভিটো কর্লিয়নির হাতে চুমু খেয়ে তাকে গডফাদার স্বীকৃতি দিয়ে মেয়ের উপর নির্যাতনকারীর বিচার চাইলে ভিটো কর্লিয়নির বলেন- accept this justice as a gift on my daughter’s weeding day. সিনেমার শুরু এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের মাধ্যমে। যেখানে প্রথম দৃশ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন সিনেমার পুরো ২ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট কেমন হতে পারে।

সর্বকালের অন্যতম এক সেরা ছবি ধরা হয় ১৯৭২ সালের নির্মিত ফ্রান্সিস ফোর্ড কাপেলোর দ্যা গডফাদার সিনেমাকে। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক মারিও পূজোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’ এর উপর চিত্রনাট্য তৈরি করেন লেখক ও পরিচালক দুজনে। দীর্ঘ সময় জুড়ে ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার থাকা মারিও পূজোর ‘দ্য গডফাদার’ কাল্পনিক আমেরিকান মাফিয়া চরিত্রের ডনদের ন্যায় অন্যায়ের দ্বন্ধ, পারিবারিক সম্পর্ক, শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ, তাদের কৃতকর্মের রূপ এসব উপন্যাসে তুলে ধরেন।

দ্য গডফাদার মুভি
দ্য গডফাদার মুভি
Source: time.com

মারিও পূজোর সেই বিখ্যাত উপন্যাসকে ফ্রান্সিস ফোর্ড কাপেলো বিখ্যাত সিনেমায় রূপান্তর করেন। উপন্যাস ও সিনেমার দ্বন্দ্বে অধিকাংশ সময় সিনেমায় লেখকের গল্পকে পুরোপুরি তুলে আনতে না পারার অভিযোগ উঠে। সে যায়গা থেকে কাপেলো চিত্রনাট্য তৈরি করতে লেখকের সাহায্য নেন। মারিও পূজো ও কাপেলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো এমন বিখ্যাত সিনেমা তৈরি সম্ভব হয়েছে। দ্য গডফাদারের সফলতার পর দুজনে মিলে এর সিকুয়েল তৈরি করেন পার্ট টু ও পার্ট থ্রি। গডফাদার ট্রিলজির প্রতিটি সিনেমাই দর্শক জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

কাহিনী সংক্ষেপ

মাফিয়া সম্রাট ভিটো কর্লিয়নি নিজেকে মার্কিন গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছেন। সাধারণের কাছ থেকে গডফাদার শব্দটা শুনতে পছন্দ করেন ভিটো কর্লিয়নি। কর্লিয়নি মাদক সম্রাট ভার্জিল সলোজ্জের সাথে মাদক ব্যবসায়ের এক চুক্তি নাকচ করে দেয়ার মাধ্যমে সিনেমার সূত্রপাত। এজন্য ডন কার্লিয়নিকে হত্যার চেষ্টা করে সলোজ্জ পরিবার। শরীরে বুলেট প্রবেশ করলেও এ যাত্রায় ডন কর্লিয়নি বেঁচে ফেরেন। তার অসুস্থতায় তার ব্যবসায়িক ও পারিবারিক কাজ দেখাশোনা করেন তার বড় ছেলে সনি কর্লিয়নি। সনি সব সময় পিতার সান্নিধ্যে থাকলেও সনি ছিলেন রগচটা মেজাজের। যেকোনো সমস্যার সমাধান তাৎক্ষণিক ভাবে সমাধানের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। অপরদিকে ডন কর্লিয়নি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, তীক্ষ্ণ স্বভাবের৷

কর্লিয়নির একমাত্র মেয়ের বিয়ের সময় থেকে সিনেমার শুরু। দাম্পত্য জীবনে তার মেয়ে ছিল নির্যাতিত৷ স্বামীর নির্যাতনের খবর কর্লিয়নির বড় ছেলে সনি জানতে পেরে একদিন তার বোনের স্বামীকে মারধোর করে আসেন। আরেকদিন এমন ঘটনা শুনে সনি একাই তার বোনের স্বামীকে মারার জন্য যাওয়ার সময় সলোজ্জ পরিবার পথিমধ্যে সনিকে হত্যা করে। কর্লিয়ন পরিবার প্রথম ধাক্কা খায় সনির মৃত্যুতে।

কর্লিয়নির মেঝো ছেলে ফ্রেডো ভীতু,
কর্লিয়নির মেঝো ছেলে ফ্রেডো ভীতু,
Source: YouTube

কর্লিয়নির মেঝো ছেলে ফ্রেডো ভীতু, দায়িত্বজ্ঞানহীন। তার পরিবারের ব্যবসায় কোন আগ্রহ নেই। সনির মৃত্যুর পর কর্লিয়নির পাশে দাড়ান তার ছোট ছেলে মাইকেল কর্লিয়নি। সময় অতিবাহিত হয়। ডন কর্লিয়নি তার ব্যবসায়িক সকল দায়ভার ছোট ছেলে মাইকেল কর্লিয়নি কে বুঝিয়ে দেন। মাইকেল ব্যবসায়িক ও পারিবারিক কর্মযজ্ঞের সবাইকে পরিবর্তন করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ দেয়। পরিবার সব  দায়িত্ব গ্রহণ করেন ছোট ছেলে মাইকেল। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে ডন কর্লিয়নির মৃত্যু হলে মাইকেল তার পুরো ব্যবসাকে ঘুচিয়ে লাস ভেগাসে সরিয়ে নেন। পিতা ও ভাইয়ের হত্যাকারীদের প্রতিশোধ নিতে অন্য পাঁচ মাফিয়া পরিবারের সবাইকে পরিকল্পনা করে একইদিনে হত্যা করেন পরবর্তী গডফাদার মাইকেল কর্লিয়নি। এদিকে তার বোনের নির্যাতনকারী স্বামীকেও হত্যা করেন। পরবর্তী গডফাদার হয়ে উঠা মাইকেল কর্লিয়নি তার স্ত্রীর কাছে সবসময় হত্যার ব্যাপারে অস্বীকার করেন। ব্যবসায়িক সবকিছু নিয়ে পরবর্তী গডফাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মাইকেল কর্লিয়নি।

মাফিয়া পরিবারের দ্বান্দ্বিক বিষয় ছাড়াও পরিবারের একে অপরের উপর দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, পারষ্পরিক সম্প্রীতি এসব মিলিয়ে পারিবারিক ধাঁচের করেই গড়ে তুলেছেন এই সিনেমা। চোখ জুড়ানো প্রতিটা দৃশ্য। মাফিয়া পরিবারের কাহিনী বর্ণিত হলেও একবারের জন্যেও মাফিয়া শব্দটি সিনেমায় উল্লেখ হয়নি। এমন অসাধারণ গল্পের, চিত্রনাট্যের স্বাদ পেতে হলে এ সিনেমা দেখার বিকল্প নেই।

দ্যা গডফাদার সিনেমা
দ্যা গডফাদার সিনেমা
Source: Slavia

অভিনয় শৈলী

সিনেমায় ডন কার্লিয়নির চরিত্রে অভিনয় করেন লিজেন্ডারি অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো। যিনি অসামান্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলেন সিনেমার ইতিহাসের সবচাইতে শক্তিশালী চরিত্র। মার্লোন ব্রান্ডো গডফাদারের ডন কর্লিয়নির চরিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার অস্কার জয় করে নেন।

সিনেমার প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় মার্লোন ব্রান্ডোর কোলে একটি বিড়াল, তিনি বিড়ালের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কথা বলছেন বনসেরার সাথে। এই বিড়ালকে সিনেমা জগতের গ্রেটেস্ট আনস্ক্রিপ্টেড পফস বলা হয়। উপন্যাস অথবা চিত্রনাট্যের কোত্থাও বিড়ালের কথা উল্লেখ ছিলোনা। শুটিং চলাকালে মার্লোন দেখতে পান বিড়াল ঘুরাঘুরি করছে। তিনি ওই বিড়াল কোলে নিয়ে সিনেমার দৃশ্যের শুট করেন। যা ওই দৃশ্যে আলাদা একটি মাত্রা যোগ করেছে। মার্লোন ব্রান্ডোর মত কোন অসাধারণ অভিনেতাদের কাজ এমনই হয়।

এদিকে দ্বিতীয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মাইকেল কর্লিয়নির চরিত্রে অভিনয় করেন আল পাসিনো। সিনেমা শুরুর আগ পর্যন্ত কাপেলো দ্বিধায় ছিলেন এই চরিত্রে কাকে নেবেন। শেষ সময়ে আল পাসিনোকেই তার যথার্থ মনে হয়। আল পাসিনো যে সত্যিকারার্থেই এ চরিত্রের ছিলেন, তা কাপেলোর পরবর্তী সিনেমা গডফাদারের সিকুয়েলেই বুঝা যায়।

এছাড়া জেমস কান, রিসার্ড এস, কাসটেলানো, জ্যাক ওলজ, জন কাজাল সহ সবার অভিনয় ছিল এক কথায় মনোমুগ্ধকর। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক অসাধারণ ফলাফল ছিল বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা গডফাদার৷

১৯৭২ সালে তৈরি এই পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফির অসাধারণ কাজ আজো এই সিনেমাকে বিশ্বসেরা সিনেমার কাতারে রেখেছে। কাপেলো তার ক্যামেরা ওয়ার্কের অসাধারণত্ব এখানে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। কাপেলোর এই সিনেমা কে সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে গণ্য করা হয়। IMBD রেটিংয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জনমতের বিবেচনায় সবসময়ের সেরা সিনেমার মধ্যে ২ নম্বরে ‘দ্যা গডফাদার’ এবং রটেন টম্যাটোসের সর্বকালের সেরা তালিকায় ৭ম স্থান অধিকার করেছে৷  এছাড়া ৩ নম্বর স্থানটাও কাপেলোর আরেকটি গডফাদার সিকুয়েল ‘গডফাদার পার্ট টু’।

মারিও পূজোর বিখ্যাত উপন্যাসকে হলিউডের অন্যতম সমাদৃত ও বাণিজ্যিক সফলভাবে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে আনেন কাপেলো। তার নিপুণ দক্ষতার জন্য অস্কার সহ আরো বিভিন্ন পুরষ্কার দখল করে নেয় এই সিনেমা।  ১৯৭৩ সালের অস্কারে এই ছবি একাই দশটি বিভাগে নমিনেশন পেয়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য পুরষ্কার লাভ করে। ৩০তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, ১৫তম গ্র্যামি পুরস্কার, ২৫তম ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা পুরস্কার এই সিনেমা দখল করে নেয়।  

Source Feature Image
Leave A Reply
1 Comment
  1. Iaugjh says

    buy glycomet no prescription – purchase metformin generic precose 25mg for sale

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More