ডেভিড লিন পরিচালিত বিশ্ববিখ্যাত মুভি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ইতিহাস ভিত্তিক বানানো সেরা ছবিগুলোর একটি। ১৯৬২ সালে মুভিটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরবের রাজনৈতিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়।
তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এক আরব বিপ্লবের চিত্রই মুভিটিতে ফুটে উঠেছে। আর এই বিল্পবের ইন্ধন যোগাতে পিছনে নেতৃত্ব দেন একজন সাধারণ বৃটিশ যিনি কিনা আরব ব্যুরোর হয়ে মিডেল ইস্টে কাজ করতেন। ফ্রেডরিক এডওয়ার্ড লরেন্স ছিলেন সেই ব্যক্তি যার উদ্দেশ্য ছিল তুর্কিদের হটিয়ে আরবদের স্বাধীনতার পথ উন্মোচন করা।
লরেন্স আরবের কয়েকটি গোত্রের সাহায্যে তৎকালীন বাদশাহ ফয়সালের নামে তাঁর বিজয় অভিযান পরিচালনা করেন। আরবের ইতিহাসে যা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
লরেন্সের চরিত্রে অভিনয় করে দীর্ঘদেহী পিটার ওতেল। ছবির শুরুতেই লরেন্সের মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মাধ্যমে ছবি শুরু হয়। এরপর চলে যায় অতীতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লরেন্স আরব ব্যুরোর অফিস কায়রোতে কাজ করতেন। জেনারেল মুরির অনিচ্ছাসত্ত্বেও লরেন্সকে আরবের বিদ্রোহী বাদশাহ ফয়সালের কাছে প্রেরণ করা হয়। শত শত মাইল উটের পিঠে করে অতিক্রান্ত হয়ে লরেন্স আরবে পৌঁছায়। কিন্তু পথিমধ্যেই তার গাইড বা পথপ্রদর্শক মরুভূমিতে একটি কূপ থেকে পানি খাওয়ার জন্য আলি শরীফ তাকে হত্যা করেন। এই আলী শরীফই পরবর্তীতে মুভির বড় একটি চরিত্রে লরেন্সের যুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
এরপর লরেন্স বাদশাহ ফয়সালের কাছে ব্রিটিশ দূত ব্রিটনের সাথে মিলিত হন। এরমধ্যেই তুর্কিরা বিমান হামলা করে ফয়সালের তাবু উড়িয়ে দেয়। এতে ফয়সালের অনেক লোক নিহত হয়। যাহোক এরপর ব্রিটেনের সাথে ফয়সালের দরকষাকষি হয় যুদ্ধে ব্রিটিশদের সাহায্যের ব্যাপারে। ফয়সাল শঙ্কায় ছিলেন যে, তুর্কিদের উঠিয়ে হয়ত ব্রিটিশরাই ক্ষমতায় বসে পড়বে। এরপরই এক সাহসী ফন্দী এটে বসে লরেন্স। বাদশাহকে না জানিয়ে আলীর সাহায্য নিয়েই মাত্র ৫০ জন সৈন্য নিয়ে বাদশাহ ফয়সালের নামে আকাবা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয় লরেন্স। অবশ্য বাদশাহ ফয়সাল এর কাছে এটা আর অগোচর রইলোনা। এরপর শুরু হয় মদিনা থেকে আকাবার পথে এক দীর্ঘ যাত্রা। দিনের পর দিন নফুদ মরুভূমি পাড়ি দিয়ে তারা আকাবার পথে পৌঁছায় যায় প্রায়। কিন্তু এরমধ্যেই বিপত্তি বাঁধে যখন দেখা গেল একজন সৈন্য নিখোঁজ। লরেন্স জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিছনে ফিরে আসে এবং তাকে উদ্ধার করে ফেরে। লরেন্সের দাস হিসেবে দাউদ এবং ফারাজ নামের দুই শিশু চরিত্র মুভিটিতে এক ভিন্ন স্বাদ দেয়।
লরেন্স এবার আরবদের পোশাকে বেদুঈন বেসে মরুভূমি বিজয়ে নামেন। আকাবা বিজয়ের পূর্বমুহূর্তে হুইতাত গোত্রের আরেক নেতা আউদা আবু তায়েবকে দলে ভিড়িয়ে শক্তিবৃদ্ধি করে আকবায় যে নৌ ঘাঁটি ছিল তা সহজেই দখল করে নেয়। অন্যদিকে জেরুজালেম দখলের নেশায় মত্ত ইংরেজ সৈন্যরা। লরেন্স এবার তাঁর আরবীয় দলবল ছেড়ে কায়রোর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন। কেননা কায়রো গেলে বিপুল অস্ত্র সাহায্য পাওয়া যাবে ইংরেজদের কাছ থেকে। সাথে নিয়ে যান দাউদ আর ফারাজকে। কিন্তু পথিমধ্যে মরুভূমির বালু ঝড়ে দাউদ বালুতে আটকা পড়ে তলিয়ে যায়। কষ্ট ভরা মন নিয়ে ফারাজকে সাথে করে কায়রোতে পৌঁছায় লরেন্স। পরে লরেন্সকে মেজর পদে উন্নীত করা হয়। কিন্তু লরেন্সের সাথে কমান্ডারের ব্যাপক বাদানুবাদ হয় কেননা ব্রিটেনে ফ্রান্স এক অন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে আরব ভাগ করার পরিকল্পনা করেছ। লরেন্স কোনভাবেই ব্রিটিশদের এই চুক্তি মেনে নিতে পারেননি। তিনি যে কোনভাবে আরবের স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন। পরবর্তীতে কমান্ডার অবশ্য মিথ্যা বলে আর্টিলারি দিয়ে লরেন্সকে আরব বিদ্রোহীদের কাছে পাঠায়।
লরেন্স এবার ফিরে গিয়ে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। প্রথমেই তুর্কিদের একটি ট্রেন বিধ্বস্ত করে দেয়। এই সময় লরেন্স মারা পড়লেও পড়তে পারতো কিন্তু বাহুতে গুলি খেয়েও সে বেঁচে যায়। পরবর্তী সময়ে আরেকটি উট ভর্তি তুর্কি ট্রেন ধ্বংস করার আগে ট্রেন লাইনে বোমা ঢুকানোর সময় ফারাজ মর্মান্তিকভাবে আহত হলে লরেন্স শত্রুপক্ষীয় সৈন্যদের পীড়নের হাত থেকে রক্ষার জন্য ফারাজকে নিজের হাতে গুলি করে তার ব্যথা প্রশমন করতে বাধ্য হন। এরপর লরেন্স দারিয়া শহরের পরিস্থিতি বুঝবার জন্য অনুপ্রবেশ করলে তুর্কি বাহিনীর কাছে ধৃত হয়। লরেন্সকে কটাক্ষ করে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে দিলে আলী শরীফ তাকে তুলে নেয়। লরেন্স ঘৃণায় আর আরবদের সাথে না থাকার সংকল্প করে কায়রো চলে যান কিন্তু বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারেননি। দামেস্ক অবরোধের জন্য আবার তিনি বিদ্রোহীদের সাথে যুক্ত হন। তুর্কিদের উৎখাত করতে চারদিক থেকে বৃটিশরা সৈন্য প্রেরণ করে। মরুভূমির ভিতরদিক থেকে আগাতে থাকে লরেন্সের বাহিনী।
পথিমধ্যেই এক বিশাল যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় লরেন্স বাহিনী। অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর জয়লাভ করে লরেন্স বাহিনী। অবশেষে দামেস্ক দখলে আসে তুর্কিদের হাত থেকে। কিন্তু আবার শুরু হয় ক্ষমতা দ্বন্দ্ব। আরবের গোত্রীয় রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ব্রিটিশ সরকারও আরবদের হাতে ক্ষমতা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। বাদশাহ ফয়সালও কিং হবার বাসনা নিয়ে আসেন যা আরবের জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। লরেন্সকে যা খুবই ব্যথিত করে কেননা এই মানুষটা বৃটিশ হলেও আরবদের স্বাধীনতার জন্য মরুভূমিতে দিনের পর দিন লড়াই করেন যান। বৃটিশদের গাদ্দারি তিনি মেনে নিতে পারেননি। পরবর্তীতে লরেন্সকে কর্নেল পদে অধিষ্ঠিত করে ব্রিটেনে ফিরিয়ে নেয়া হয়। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লরেন্স আরব ত্যাগ করেন।
মুভিটি ১৯৬৩ সালে একাডেমী এওয়ার্ড এ ১২টি বিভাগে পুরষ্কার লাভ করার পাশাপাশি আরো ডজন খানেক ভিন্ন ভিন্ন এওয়ার্ড এই মুভিটি লাভ করে। এছাড়াও সর্বকালের সর্বসেরা মুভির কাতারে এই মুভিটি সামনের দিকেই অবস্থান করে থাকে।
আইডিএম রেটিং এ মুভিটি ৮.৩
রেফারেন্সঃ
১. Lawrence of Arabia | Plot, Cast, Awards, & Facts | Britannica.com
২.10 Things You May Not Know About “Lawrence of Arabia” – History.com
৩. Lawrence of Arabia Movie Review (1962) | Roger Ebert
generic wellbutrin online
lamisil 250mg uk – buy fulvicin 250mg buy griseofulvin cheap
what is zofran zydis wafer