জাপান পৃথিবীর বুকে এক আশ্চর্যের নাম এর ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের জন্য। জাপান নিয়ে মজার জানা-অজানা ১৮ টি তথ্য নিয়ে ইতিবৃত্ত ব্লগের এই লেখাটি।
১) খরগোশ ভালবাসেন? একসাথে শত শত ছুটে বেড়ানো খরগোশ দেখতে চান? তাহলে জাপান ভ্রমণের একটি পরিকল্পনা হাতে নিন এবং ঘুরে আসুন ওকুনোশিমা(Okunoshima) নামক দ্বীপটি থেকে। এখানে-ওখানে-হাজারে-বিজারে খরগোশ খেলা করছে পুরো দ্বীপ-জুড়ে। ভাবছেন এত খরগোশ কি করে এলো এখানে? আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিষাক্ত গ্যাস ইফেক্ট পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল হাজার হাজার খরগোশ। সেসব থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের বংশধরেরাই এখন রাজত্ব করে যাচ্ছে জাপানের এই দ্বীপটিতে।
২) জাপানের সুমো কুস্তি যা আমরা দেখে থাকি তা ১৫০০ বছরেরও অধিক পুরনো একটি খেলা। একেকজন সুমো কুস্তিগিরের গড় ওজন প্রায় ৩০০ পাউন্ডেরও বেশি।
৩) নতুন সুমো কুস্তিগিরদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এক ধরণের আস্তাবলে বা “হেয়া” নামক এক ধরণের বিশেষ ঘরে। এই “হেয়া” গুলি পরিচালনা করেন পূর্বতন সুমো চ্যাম্পিয়নরা।
৪) এই তথ্যটি হাল্কা হলেও আপনাকে বিব্রত করবে যখন শুনবেন যে, একজন তরুণ-উদ্যমী সুমো কুস্তিগিরের নিয়মিতভাবে বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ রেসলার বা কুস্তিগিরদের শরীরের বিভিন্ন দুর্গম জায়গা পরিষ্কার করে দিতে হয়। আসলে এই নবীনদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে পূর্বতন সুমো কুস্তিগিরদের শরীরের এমন গোপন স্থানও পরিষ্কার করে দিতে হয় যা আপনাকে আমাকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে।
৫) জাপানে অজস্র পরিমাণে Love Hotel আছে যা ভাড়া দেয়া হয় অল্প সময়ের জন্য। যে কোন জুটি খুব ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে ব্যবহার করতে পারে এই হোটেলগুলি। জাপান এদিক দিয়ে অন্যান্য দেশের থেকে এগিয়ে আছে কারণ এমন ধরণের সুবিধা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ সমূহে নেই বললেই চলে।
৬) “হ্যালো কিটি” নামে যেই বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রটি আছে তার জন্ম জাপানে। ১৯৭৪ সালে যখন চরিত্রটির আবির্ভাব হয় একটা প্লাস্টিক কয়েনের ব্যাগে তখন থেকেই তা এমন জনপ্রিয়তা পায় যে আজ অবধি প্রায় ২০০০০ পণ্যের গায়ে এই “হ্যালো কিটি” কার্টুন চরিত্রটি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।
৭) জাপানে আপনি যদি কোন নুডলস শপে গবগব করে বা তাড়াহুড়োয় নুডলস খেতে থাকেন তবে তা ঐ রেস্টুরেন্টের শেফ বা বাবুর্চির জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার কাছে মনে হবে তার রাঁধা নুডলস খেতে সুস্বাদু হয়নি ও তা যথেষ্ট পরিমাণে ঠাণ্ডা বলে মনে করছেন আপনি, তাই আপনি তাড়াহুড়োয় শেষ করে দিতে চাচ্ছেন এই নুডলসটি। আপনার যেভাবে খুশি সেভাবেই আপনি খাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, জাপানে এসব সূক্ষ্ম আচার খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।
৮) জাপানের শীতলতম এলাকায় বাস করা “স্নো মাংকি” এখন পৃথিবী থেকে প্রায় বিরল এবং তাদের শুধু জাপানেই পাওয়া যায়। এই “স্নো মাংকি” দের নিয়ে বহু ধরণের রহস্যময় ধারণা প্রচলিত আছে জাপানে। যেমনঃ এরা চোখে দেখে না, কানে শোনে না এবং এরা ডেভিল বা শয়তানের মৌন পূজারি। এই বানর প্রজাতি পৃথিবীর উত্তরতম স্থানে বাস করা প্রায় বিলুপ্ত এক প্রজাতি।
৯) অটোমোবাইল বা গাড়ির উৎপাদনে পৃথিবীর সব দেশকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জাপান। জাপানের টয়োটা কোম্পানি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি-উৎপাদন কোম্পানি।
১০) কিশিরো টয়োডা নামের এক ব্যক্তি অটোমোবাইল কোম্পানি টয়োটা প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামের শেষের “ডা” কে তিনি প্রতিস্থাপন করেন “টা” দিয়ে। এর কারণ, তিনি ভাবতেন “টয়োটা” শব্দটা “টয়োডা” শব্দ থেকে বেশি স্পষ্টতর ও শ্রুতিমধুর।
১১) জাপানে “হাডাকা মাটসুরি”(Hadaka Matsuri) নামে একটি অদ্ভুত উৎসব আছে যেখানে পুরুষরা নগ্ন হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন একটি বিশেষ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে। একজন নগ্ন পুরুষের খারাপ আত্মা বশ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়- এই ধারণা থেকেই কিশোর হতে প্রৌঢ় পুরুষরা সারাদিন নগ্ন হয়ে নেচে, গেয়ে, দল বেঁধে রাস্তায় ঘোরাফেরা করে।
১২) জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ফুজির উচ্চতা ১২,৩৮৮ ফুট। ফুজিয়ানা নামে পরিচিত এই শৃঙ্গ জাপানের লোকের কাছে খুবই পবিত্রভাবে দেখা হয়। বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রায় ১ মিলিয়ন জাপানিজ লোক এ পর্বতমালা ভ্রমণ করে থাকেন।
১৩) জাপান বহু বছর ধরে কুকুরের প্রজননে ব্যাপক হারে কাজ করে যাচ্ছে। এমন কি কুকুর প্রজননে তাদের সাফল্যের হার প্রায় শতভাগ।
১৪) হোরেস উইলসন নামক এক আমেরিকান শিক্ষক তার জাপান ভ্রমণের সময় সেখানে বেজবল খেলাটি পরিচিত করেন। খুব দ্রুত সময়ে এটি এমন জনপ্রিয়তা লাভ করে যে এটি জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলার অন্যতম। জাপানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরিভাবে দিনের বেশ খানিক সময় ধরে লাইভ বেজবল খেলা দেখানো হয়।
১৫) “দ্য টেল অফ গেনজি” কে পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১১ শতকের জাপানে মুরাসাকি শিকিবো নামের এক লেখিকার লেখা উপন্যাস এটি।
১৬) জাপানিজদের “৪” সংখ্যাটি নিয়ে এলার্জি আছে। কোন দালানের ৩ তলার পরে ৪ তলা না এসে ৫ তলা আসে। বুঝলেন না? আপনি সিঁড়ি ভেঙ্গে ৩ তলা পেরিয়ে যে তলায় উঠবেন ওটাকে ৪ তলা না বলে ৫ তলা ডাকা হবে।
জাপানে “৪” শব্দটিকে “shi” ডাকা হয়। এই শব্দটা জাপানিজদের মৃত বা মৃত্যু সংক্রান্ত ধারণার উদ্ভব ঘটিয়ে থাকে। কোন ঘরোয়া চায়ের আসরে ৪ জন অতিথি আসা করা হয় না কখনো।
১৭) জাপানে “ফুজু” নামে একটি মাছ আছে যা আসলে এক ধরণের Blowfish. এই মাছের রাঁধুনিকে পেশাদার রাঁধুনি হওয়া ছাড়াও এই মাছ রান্নার জন্য বিশেষ ছাড়পত্রধারী হতে হয়। ভাবছেন কেন এত হম্বিতম্বি এই মাছ রান্নার ব্যাপারে?
এই মাছ একাধারে খুবই বিষাক্ত এবং খুবই সুস্বাদু হয়। তাই এর বিষ ছাড়িয়ে রান্না করতে রাঁধুনিকে চৌকষ, পেশাদার ও লাইসেন্সধারী হতে হয়।
১৮) জাপানের বর্তমান রাজপরিবার প্রায় ২০০০ বছর যাবৎ জাপানকে শাসন করে চলেছে। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই বর্তমান রাজপরিবারের রাজা জিম্মু টেনো জাপান শাসন শুরু করেন।