“শাড়ি” বাঙালির পরিচয়ের সাথে মিশে আছে বাংলার অহংকার হয়ে। সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীনতম পরিধেয় বস্ত্র এই শাড়ি, যার ব্যাবহার এবং জনপ্রিয়তা আজো আকাশ ছোয়া। কখন কীভাবে শাড়ি উদ্ভূত হয়েছিল সে ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়। তবে আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগে যুগে বদলেছে শাড়ির পাড়-আঁচল, পরার ধরন আর বুনন কৌশল। “শাড়ি” শব্দের উৎস সংস্কৃত “শাটী” শব্দ থেকে। ‘শাটী’ অর্থ পরিধেয় বস্ত্র। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। পাহাড়পুরের পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য দেখেই তা অনুমান করা যায়। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রচলিত পোশাক। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ আদিম কালে ছিল না। এই সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র পুরুষের ক্ষেত্রে “ধুতি” এবং মেয়েদের বেলায় “শাড়ি” নামে অভিহিত হয়। বয়ন শিল্পের উৎপত্তির সঙ্গে শাড়ির সংযোগ রয়েছে। তখন যেহেতু সেলাই করার কৌশল জানা ছিল না তাই সেলাই ছাড়া টুকরা কাপড় পরাই ছিল শাস্ত্রীয় বিধান।
গুপ্ত যুগের (আনুমানিক ৩০০থেকে ৫০০ সাল পর্যন্ত) বিখ্যাত কবি কালীদাসের ‘কুমারসম্ভব’-এ শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। গুপ্ত আমলের ইলোরা অজন্তা গুহার প্রাচীন চিত্রাবলি বলে দেয়, খ্রিস্টাব্দ শুরুর সময়ে শাড়ির অস্তিত্ব ছিল। ইলোরা অজন্তার মতো পাহাড়পুর-ময়নামতির পোড়ামাটির ফলক থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, হাজার বছর আগে এই পূর্ববঙ্গে শাড়ির প্রচলন ছিল।
দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের নারীরা শাড়িকেই নিজেদের পরিধানের প্রধান বস্ত্র হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে। মোগলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় শাড়িতেও মোগলাই আভিজাত্যের সংযোজন। মোগলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত জেনানা মহলে। মোগলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হত। আর সম্ভবত মোগল আমলে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ পরিধানের রীতি চালু হয়। তবে সেসময় শাড়ি পড়া হত এক প্যাঁচে।
উনিশ শতকের চল্লিশ দশক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কে বলা হয়ে থাকে ‘ভিক্টোরিয়ান যুগ’। এ যুগে ফ্যাশনের মূল কথাই ছিল কাপড়ে সারা শরীর ঢাকা থাকতে হবে। ব্রিটিশদের সংস্পর্শে থাকা জমিদার ও স্থানীয় ধনীদের পোশাক-পরিচ্ছেদেও ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনের স্টাইল যোগ হয়। এ সময়ে শাড়ির সঙ্গে ফুলহাতা ব্লাউজ এবং পেটিকোট পরার চল শুরু হয়। এই রীতিতে শাড়ি পরাটা বাঙালি নারীর চিরায়ত এক প্যাঁচে শাড়ি পরার ধারণাকে সম্পূর্ণ পালটে দেয়।
ভারত বিভাগের পূর্বে এদেশে নারীরা আধুনিক শাড়ি পরার চলন-বলন শিখেছেন মূলত ঠাকুর বাড়ির কল্যাণে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীর অবদানের কথা এৰেত্রে স্মরণ করতে হয়৷ ভারত বিভাগের পর পাকিসত্মানী আমল শুরম্ন হলেও শাড়ির আবেদন কিন্তু কমেনি কোনো অংশে৷ এ সময় তাঁতের সুতি শাড়ির আধিপত্যটাই বেশি ছিল৷ সাথে ছিল টিসু্যর ব্যবহার৷ শাড়ির স্টাইলিশ রূপটি আমরা দেখতে পাই ৬০’এর দশকে৷ কারণ ফ্যাশন বা লুক যাই বলি না কেন সাজ-পোশাক নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট এ দশকেই দেখা যায়৷
সুতির পাশাপাশি সিল্কের শাড়িও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরম্ন করে এ সময়৷ সত্তরের দশককে আমরা বলতে পারি ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ দশক৷ শাড়ির সাথে কনট্রাস্ট এবং গোল গলা আর লম্বা হাতের বস্নাউজের ফ্যাশনটিও চালু হয় এ সময়৷ তবে প্রাক আশির দশক থেকে শাড়ির ফেব্রিক্স ও বুননে ভিন্নতার ছোঁয়া পরিলৰীত হয়৷ মসলিন, জামদানী, জর্জেট, কাতানের পাশাপাশি সুতির উপর এক্সপেরিমেন্টাল কাজের ট্রেন্ডও চালু হয়৷ নব্বই দশক থেকে পরবর্তী দেড় দশকের শাড়ির ডিজাইনে বস্নক, হ্যান্ডপেইন্ট, স্প্রে, বাটিক, সিকোয়েন্স, ডলারব্যবহৃত হতে থাকে৷ পরবর্তীতে এ ডিজাইনগুলোর সঙ্গে আরো যুক্ত হয় অ্যাপিস্নক, কারচুপি, ফ্লোরাল মোটিভ প্রভৃতি৷
তথ্যসুত্রঃ The Origin Of The Saree, উইকি
oral terbinafine 250mg – fulvicin 250 mg without prescription buy griseofulvin tablets
glycomet 1000mg us – buy januvia online cheap purchase precose without prescription