দূর্গাপুর – চিনামটির দেশ আমায় টানে
ভোরের রক্তিম সুর্যের আভা যখন আকাশে উঁকি দিচ্ছে তখন ট্রেনের জানলার ধারে বসে সূর্যোদয় দেখায় অন্যরকম এক প্রশান্তি কাজ করে। আধো ঘুম ঘুম চোখে বাইরের প্রকৃতি দেখার মাঝে যে আনন্দ তা হয়ত আর কোথাও খুঁজে পাওয়া দায়। হ্যাঁ বলছি চিনামাটির দেশ দূর্গাপুর ভ্রমণের কথা।
শীত বিদায় নিবে নিবে এমন সময় একদিন হুটহাট প্ল্যান করে রওনা হলাম সুসং দূর্গাপুর এর উদ্দেশ্যে। ময়মনসিংহ থেকে দুর্গাপুরে যাবার সড়ক পথটির বেহাল দশা হওয়ায় যাতায়াতের একমাত্র এবং অন্যতম মাধ্যম রেলপথ। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে ভোর ৬টায় ট্রেনে চেপে বসলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৮জন ভ্রমণ পিয়াসী।
ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরের অপরুপ সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম জারিয়া ষ্টেশনে। ষ্টেশনের বাইরে আসতে আসতে ঘড়ির কাঁটায় আটটা চল্লিশ। ৮ বন্ধু মিলে ষ্টেশনের বাইরের একটা হোটেলে নাস্তা করলাম পরোটা,ডাল,সবজি,ডিম। সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলাম কেউ কেউ। আমরা সবাই প্রথমবার দুর্গাপুরে যাচ্ছি এবং রাস্তাঘাট কিংবা স্পট গুলো সম্পর্কে আমাদের কোন আইডিয়া ছিলনা। একজন মাহিন্দ্রা(সিএনজি চালিত যান) এর ড্রাইভারের সাথে কথা বললাম এবং আমাদের সবগুলো স্পট ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তাব দিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় তিনি রাজি হয়ে গেলেন এবং মাত্র ১৬০০ টাকায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গেল। উল্লেখ্য আমরা সন্ধ্যা ৬টার ফিরতি ট্রেনে ময়মনসিংহ ফিরে আসার প্ল্যান করেছিলাম।
দশটার দিকে গাড়ি জারিয়া ষ্টেশন থেকে দুর্গাপুরের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করল, আমরা আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। খাঁচায় বন্দি পাখি মুক্ত আকাশে ডানা মেলে যতটা আনন্দ পায় আমাদের আনন্দ তাঁর চেয়েও বেশি ছিল। ছকে বাধা জীবন আর ক্লাস,এক্সামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমবার বন্ধুরা মিলে ঘুরতে চলেছি।
কংস নদী পেরিয়ে আমরা চলে এসেছি অপার সৌন্দর্য্যে ঘেরা সমেস্বরী নদীর বুকে। শীতের সময়ে নদীতে হাঁটুজল থাকায় বাঁশের সাকো তৈরি করে তার উপর দিয়ে যতায়াত করছে মানুষ। আমরা গাড়ি থেকে নেমে হেটে সাঁকো পার হলাম এবং কিছুক্ষণ ফটোসেশন চলল। শিমুল ফুলের লাল রঙ্গে মন রঙ্গিন হয়ে গেল আমার, তাই কিছুক্ষণ চলল ফুলগুলোকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ক্যামেরাবন্দী করার প্রচেষ্টা।
আবার চলতে শুরু করলাম আমরা, গন্তব্য বিজয়পুরের বিখ্যাত সেই চিনামটির পাহাড় আর খনিজ সমৃদ্ধ নীল, সবুজ জলাশয়। পথিমধ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে পেয়ে গেলাম লাল শাপলার দেখা। পুকুরে ফুটে আছে অসংখ্য লাল শাপলা, লোভ সামলাতে না পেরে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলাম শাপলা তুলতে। পাশের সবজি ক্ষেত,লাউ কুমড়োর ফুলের সাথে সন্ধি করে চরে জন্মানো কূল গাছ থেকে চুরি করে কূল খেলাম আমরা।
এগুলো সবই ছিল ভূমিকা, এবার আসা যাক আমাদের প্রধান আকর্ষণ চিনামাটির পাহাড় প্রসঙ্গে। দূর থেকে পাহাড় দেখেই আমি আত্মহারা হয়ে গেলাম, কারণ পাহাড়ের নেশা আমার সেই ছোটকালের। যদিও বাংলাদেশে খুব বড় পাহাড় দেখতে পাওয়া যায় না এবং যেগুলো আছে তা পার্বত্য অঞ্চলে তাই ছোট পাহাড়গুলো দেখেও আমি আপ্লুত হলাম। দৌড়ে চলে গেলাম পাহাড়ের চূড়োয় , উঠতে গিয়ে মনে হল আমি যেন পৃথিবীকে ছাড়িয়ে মহাশূন্যের দিকে ছুটে চলেছি(সম্পূর্ণ আমার মনোজগতের কল্পনা)।
সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে তরতর করে উপরে উঠতে লাগলাম সবাই , পাহড়ের উপর দাঁড়িয়ে নিজেদের মনে হচ্ছিল আমরাই যেন এই পৃথিবীর রাজা। একে একে প্রায় ২৫টি ছোট-ছোট পাহাড়ে চড়লাম আমরা কয়েকজন, যদিও বেশিরভাগ ই ১০-১২ টায় উঠার পর হাপিয়ে উঠেছিল। ঘুরে দেখা হল চিনামাটির পাহাড়, খনিজ সমৃদ্ধ কয়েকটি জলাশয় । যেখানে খনিজের প্রভাবে পানি তার রঙ পরিবর্তন করেছে আপন সুখে আর ভ্রমণ পিপাসুদের যোগাচ্ছে আনন্দের খোরাক।
পাহাড় ভ্রমণ শেষ করে আমরা চললাম রানীখং মিশন অভিমুখে,ধর্মযাজক জোসেফের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিশনারি শতবর্ষ পেরিয়েছে। ক্যাথলিক ধর্মের উপাসনালয়,হাই স্কুল, ঔষধালয় সহ কিছু ভাস্কর্য/মুর্তির অপরূপ সংমিশ্রণে গড়ে উঠা এই মিশনে রয়েছে ধর্মপিপাসুদের আবাসিকভাবে বসবাসের সুযোগ। গারোদের মাঝে ক্যাথলিক ধর্মের প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই মিশনটিতে ভ্রাতৃত্ব আর ভালবাসার এক অপরুপ বন্ধন দেখতে পেয়েছিলাম এবং ভাতৃত্বের শপথ নিয়ে আমরা সেই মিশন থেকে ফিরেছিলাম।
এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং আনন্দের পরিমাণ আমি লিখে বুঝাতে পারছি না , পারব ও না। আরও কিছু স্থান দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পাহড়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ায় কিছু স্থান বাকি রয়ে যায়, যা পরবর্তিকালে আবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
সারদিনের আনন্দময় ভ্রমণ শেষে আবার ফিরে এলাম সেই চিরচেনা কর্মব্যস্ত জীবনে কিন্তু স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে সেই দিনটি। আবার গিয়েছিলাম প্রকৃতির টানে , অন্য কোন সময় সেই কাহিনী ও আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তবে ভ্রমণ পিয়াসীরা অল্প খরচে স্বল্প সময়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চিত হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চিনামাটির দেশ দূর্গাপুর।
যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে আসতে চাইলে—যেকোন পরিবহনের বাসে চড়ে ময়মনসিংহ চলে আসতে পারেন কিংবা আসতে পারেন ট্রেনেও। ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনে জারিয়া, জারিয়া থেকে মাহিন্দ্রা, সিএনজি, কিংবা বাইকে যেতে পারেন বিরিশিরি,বিজয়পুর সহ সকল স্পটে। তবে গ্রুপ হিসেবে আসলে আমাদের মত গাড়ি ভাড়া করতে পারেন সারাদিনের জন্য। থাকার জন্য দূর্গাপুর বাজারে পাবেন কিছু মাঝারি/ভাল মানের হোটেল।
semaglutide 14 mg over the counter – purchase DDAVP without prescription purchase DDAVP spray
terbinafine for sale – terbinafine order grifulvin v without prescription