সাতসকালে সদর দরজার সামনে একটি আরাম কেদারায় রাগ এবং দুঃখ ভরা মুখ করে বসে আছেন শ্যাম বাবু। ডান পাশে সাজানো গুড়গুড়িটার আগুন নিভে ধোয়া উঠাও বন্ধ হয়েছে সেই কখন। পেছনে দাঁড়ানো পাখা ওয়ালা হরির ভয়ে তটস্থ চেহারা বলে দিচ্ছে নারায়নের জপে আজ বিন্দুমাত্র আলস্য হচ্ছে না, কারন পরিস্থিতি এমন যে পান থেকে চুন খসলেই প্রানটা প্রথমে তারেই যাবে। ক্ষমতা ধর লোকের কাছে কাছে থাকায় গরিমার সাথে কিছু উটকো যন্ত্রনাও যুক্ত হয়। শ্যাম বাবু তার ছেলের আবদার রাখতে গিয়ে মাস খানেক আগে সেই আসাম থেকে আনায় এক হাতি। বাতাসে আগুনের ফুলকির মতন চারিদিকে নাম ছড়িয়ে যায়, আজ সকালে সেই আগুনের ফুলকি বাতাসেই নিভেও গেল। কত কদিন ধরেই হাতিটা নড়াচড়া প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলো, শেষ রাতে মাহুত এসে খবরটা দেয়। মাহুত না ছাই, গ্রামের এক গোয়ালাকে জোর করে হাতির দায়িত্ব দেয়া হয়, গরু আর হাতির পার্থক্য যে বোঝে না সে কিনা মাহুত। তারেই বা দোষ কই! তাকে কেউ শিখিয়েও তো দেয় নি। যাই হোক, শ্যাম বাবুর মেজাজ তখন থেকেই খারাপ, আফসোসের ও কমতি নেই। কেননা গোয়ালা কে মাহুত বানিয়ে নিজেই অযত্নে মারলো হাতিটাকে, ঠিক ঠাক যত্ন পেলে হয়তো হাতিটা বহু দিন বাঁচতো।
শ্যাম বাবু তার হাতি হারালেন যত্নের অভাবে, আপনার বাড়িতে একটি হাতি না থাকলেও আছে অনেক মূল্যবান যন্ত্রাদি। যত্নে অবহেলা হলে এগুলোর অবস্থা হবে শ্যাম বাবুর হাতির মতই। ছোট ছোট কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই বাড়াতে পারেন আপনার মূল্যবান যন্ত্রাদির আয়ু এবং পাশাপাশি আসবে ব্যবহারে সারল্য। গৃহে ব্যবহৃত অন্যতম দামী যন্ত্র হলো রেফ্রিজারেটর, অর্ধ লক্ষ থেকে লক্ষাধিক দামের হয়ে থাকে একটি ফ্রিজ। নিত্য জীবনের অনেক জটিলতা সমাধানকারী এই ফ্রিজ কিছু সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
১. দরজায় রাখুন হাল্কা জিনিস। আমরা সাধারণত ফ্রিজের দরজায় পানির বোতল রাখি। বের করার সুবিধা এবং দরজার পকেটের আকারও বোতল রাখার জন্য পার্ফেক্ট। কিন্তু ২লি. কিংবা ১লি. এর ৩-৪ টি বোতলে কতটা ওজন হয় ভেবেছেন? এতোটা ওজন নেয়ার জন্য ফ্রিজের দরজা তৈরী হয় না। ফ্রিজের দরজার সঠিক ব্যাবহার করতে রাখতে পারেন বিভিন্ন সসে্র বোতল, ক্যান জাত দ্রব্য, ডিম, চকোলেট, পাউরুটি বা ৫০০মি.লি. ২-৩টি বোতল।
২. স্টোর করতে ব্যবহার করুন হাল্কা বাসন। এই যুগের ফ্রিজ গুলোর রেক হয় মোটা প্লাস্টিকের। দেখতে সুন্দর এই রেক গুলো যথেষ্ট মজবুত। তার শর্তেও রাখা উচিত বাড়তি যত্ন। সিরামিক বা কাচের বাসনে তরকারি বা সবজী স্টোর না করে বেছে নিন ভালো মানের ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিকের বাটি। এতে ফ্রিজের উপর চাপ কমার পাশাপাশি খাবারের গুন গত মান ও ঠিক থাকবে।
৩. নিয়মিত পরিষ্কার করুন। মাসে অন্তত দুবার ফ্রিজের সব বের করে দেখুন কি কি আছে। এতে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কমিয়ে নতুন জিনিসের জন্য জায়গা করতে পারবেন, এবং সময় পেলে ফ্রিজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ রেখে ভেজা কাপড় দিয়ে ভেতরের অংশ মুছে ফেলা ভালো (বাহিরের অংশ অবশ্যই শুকনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবেন)।
৪. গন্ধ এড়াতে ব্যবহার করুন লেবু। নিয়মিত পরিষ্কারের শর্তেও অনেক সময় ফ্রিজে উটকো গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই গন্ধ এড়াতে ফ্রিজে ৩-৪টুকড়ো লেবু ছড়িয়ে রাখুন। এতে সবসময় ফ্রিজে অন্যরকম সতেজতা লক্ষ্য করবেন।
৫. গন্ধ আটকাতে নিন কন্টেইনার। পেয়াজ যতটা সম্ভব ফ্রেশ কেটে ব্যবহার করা উচিত। বর্তমান ব্যস্ত সময়ে তা সম্ভব হয় না অনেক সময়। ফ্রিজে পেয়াজ কেটে স্টোর করতে হলে এয়ার টাইড কন্টেইনার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও যেসব জিনিসের ঘ্রান খুব তীব্র সেগুলাও এয়ার টাইড কন্টেইনারেই স্টোর করা ভালো।
৬. খেয়াল রাখুন কন্টেইনারের আকারে। ফ্রিজের জায়গা সবসময়েই সীমিত, এই সীমিত জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে চার কোণা এবং চ্যাপ্টা আকৃতির কন্টেইনার হবে সুবিধাজনক। কারণ গোলাকৃতির বাসন অনেক খানি জায়গা নষ্ট করে যা চার কোণা বাসন করবে না।
৭. ডিপ ফ্রিজে ব্যবহার করুন শক্ত প্যাকেট। মাছ-মাংস ডিপ ফ্রিজে স্টোর করতে আমরা সাধারণত পলি ব্যাগ ব্যবহার করি, যা প্রায়শই বের করার সময় ছিড়ে যায়। এই সমস্যা এড়াতে বাজারের পাতলা পলি ব্যাগের পরিবর্তে মোটা ও শক্ত পল ব্যাগ (আটা, চা পাতার কিংবা চপস্ এর প্যাকেট) ব্যাবহার করুন।
৮. কিছু সময় অন্তর অন্তর নাড়িয়ে দিন। ডিপ ফ্রিজে একসাথে অনেক জিনিস রাখলে পরে তা বের করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা এড়াতে ফ্রেশ কিছু ডিপ ফ্রিজে রাখার পর ৩০-৪৫মিনিট পর পর তাদের জায়গা নিড়িয়ে দিন। মাছ-মাংস সলিড ফর্মে আসার পর আর নাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
এছাড়াও মাছ-মাংসের প্যাকেটের আকৃতি যতটা সম্ভব চার কোণাকৃতির করে রাখতে পারেন এতে অনেক জায়গা বাড়বে। প্রয়োজন বুঝে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অনেক নাজুক খাবারকে নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। নিত্য জীবনে সমস্যা অনেক, আবার সমাধান গুলো অনেক সাধারণ। নিত্য জীবনের আরো কথা থাকবে আমাদের পরবর্তী আয়োজনে।