শুধুমাত্র বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে এসে একে একে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে অর্থনীতি সব কিছুতে প্রভাব বিস্তারকারী এবং শেষে ভারতকে শাসনকারী কোম্পানির নাম ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। ভারতীয় উপমহাদেশে বাস করে বা এর সম্পর্কে জানে এমন কোন ব্যক্তি ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ সম্পর্কে জানেনা বলে আমার মনে হয়না।
এই কোম্পানির ইতিহাস শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। কিন্তু প্রথমে এই কোম্পানি ভারত শাসনকারী কোন কোম্পানি ছিল না, বরং তাদের শুরুটা হয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসেবে যারা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মূলত মসলা, কাপড়, তুলা, সুতা ইত্যাদি পণ্যের আমদানি করতো। কিন্তু তাদের এই বাণিজ্য শুধু বাণিজ্য নয় বরং ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতি কে নিয়ন্ত্রণ করার কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় যখন ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য করার জন্য একক আধিপত্যের পক্ষে একটি সনদ প্রদান করেন।
সংগঠন:
ভারতীয় উপমহাদেশ এ এসে মসলার ব্যবসা একদম প্রথমে শুরু করে স্পেন এবং পর্তুগালের বণিকরা। ডাচ বণিকরা উপমহাদেশে আসার আগে পর্যন্ত তাদেরই একক আধিপত্য ছিল ব্যবসায়। কিন্তু ১৬০০ সালের শুরুর দিকে ডাচ বণিকরা উপমহাদেশে আগমন করে এবং পর্তুগিজ বণিকদের আধিপত্যে ভাগ বসায়। অন্য কোন দেশের বণিকরা যেন এখানে না আসতে পারে সে ব্যাপারেও ডাচরা অনেক তৎপর ছিল। স্পেন, পর্তুগাল এবং ডাচদের তুলনায় ব্রিটিশরা একটু দেরী করেই এসেছে উপমহাদেশে। সর্বপ্রথম কোন ব্রিটিশ নাবিক ভারতে আসেন ১৫৮২ সালে।
ব্রিটিশরা ভারতে বাণিজ্য করতে আগ্রহী হওয়ার পিছনে অনেক গুলো কারণ ছিল। যার মধ্যে অনেক বড় একটি কারণ হল, অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যখন ভারত থেকে নিজ দেশে ফেরত যেত তখন সেগুলো অনেক বেশি মূল্যবান ও অসাধারণ সব পণ্যে ভরপুর থাকতো। ১৫৯৩ সালে ব্রিটেনের বন্দরে একটি পর্তুগিজ জাহাজ ধরা পড়ে, যেটাতে প্রায় ১৫,০০ টন মালামাল, ৭০০ জন লোক ও ৩৬ টি পিতলের কামান ছিল। ঐ জাহাজের কাঠাম পরিপূর্ণ ছিল ভারতীয় মালামাল যেমন: স্বর্ণ, মসলা, সুতি কাপড়, সিল্ক, চিনামাটির বাসনপত্র, মুক্তা ও হাতির দাঁত ইত্যাদি দিয়ে। এই জাহাজ দেখে ব্রিটিশরা ভারতে বাণিজ্য করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়।
ভারত মহাসাগর বিধৌত অঞ্চল অর্থাৎ আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সকল জায়গায় ইংরেজরা এককভাবে বাণিজ্য করতে পারবে এই মর্মে ১৬০০ সালে একটি রাজ সনদ পাশ করেন তৎকালীন রানী এলিজাবেথ। এবং এর মাধ্যমেই জন্ম হয় ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। এই কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল একজন গভর্নর ও কোম্পানির অংশীদারদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত ২৪ জন পরিচালক।
কার্যক্রম এবং ভারতের সাথে বাণিজ্যের শুরু:
ভারতে আগমনকারী প্রথম ব্রিটিশ সমুদ্রযানটি যাত্রা শুরু করে ১৬০১ সালে। কিন্তু যথারীতি এই যাত্রা ভারতের উদ্দেশ্যে ছিলনা বরং তাদের মঞ্জিল ছিল ইন্দোনেশিয়া যেখানে তাঁরা যাচ্ছিল মূলত গোলমরিচ ও গরম মসলার জন্য। ঐ অভিযানের ৪ টি জাহাজই এক ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হয়। নিরক্ষরেখার কাছে এসে জাহাজ গুলো পর্যাপ্ত বাতাসের অভাবে থেমে যায় এবং ঐ সময় ৫০০ জন লোক নিয়ে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত আসতে আসতে ১০০ জনের মৃত্যু হয়। তখন একটা বন্দোবস্ত করার জন্য তাঁরা বেশ কিছু তটরেখা যেমন: মাদাগাস্কার এবং সুমাত্রায় থামে। অবশেষে ১৬০২ সালে তাঁরা ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের বান্তাম শহরে কিছু বণিক ও সহযোগীর দলকে রেখে নতুন করে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম জাহাজ ভারতে এসে পৌছায় ১৬০৮ সালে সুরাত বন্দরে। ১৬১৫ সালে রাজা জেমসের গুপ্তচর থমাস রো সুরাতের মুঘল সম্রাটের দরবারে পৌছায় এবং সুরাতে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে অনুমতি আদায় করে। ধীরে ধীরে ইংরেজ বণিকরা পর্তুগিজ বণিকদেরকে প্রচ্ছন্ন করে ফেলে এবং সারা ভারত জুড়ে ইংরেজদের ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে। ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলে অসংখ্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তুলে ইংরেজরা এবং ভারতের তিনটি প্রধান শহর কলকাতা, বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই), মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) এ অনেক ইংরেজ পরিবার বসতি গড়ে তুলে। এমনকি অনেক ইংরেজ পুরুষরা ভারতীয় মহিলাদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য:
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মূলত ৩ প্রকার পণ্য আমদানি করতো ভারত থেকে এবং সেগুলো হল গোলমরিচ, কাপড় এবং চা।
গোলমরিচ:
১৬০০ সালের প্রায় পুরো সময় জুড়ে কোম্পানি শুধু গোলমরিচের ব্যবসাই করেছে। কারণ গোলমরিচ তাদের কাছে অনেক বেশি জরুরি পণ্য। এর কারণ হল ব্রিটেনে অন্যান্য মসলার চেয়ে গোলমরিচের ব্যবহার অনেক বেশি ছিল আর অন্য মসলার তুলনায় এর দাম অনেক কম ছিল। তাই চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কোন পণ্য নিলে তাদের যাতায়াত খরচ বাদেও লাভ থাকবে সেটা বিবেচনা করে তাঁরা গোলমরিচ আমদানি করতো। কারণ তখন সম ওজনের লবঙ্গের দাম গোলমরিচের চেয়ে প্রায় আটগুণ বেশি ছিল। আর তাছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচুর পরিমাণ কালো গোলমরিচ উৎপন্ন হতো। তাই ইংরেজরা শুধু ১৬৭৭ সালে ৩১৭৫ টন গোলমরিচ আমদানি করে। আমদানিকৃত গোলমরিচের বেশিরভাগই লন্ডনে বিক্রি হলেও বেশ বড় একটা অংশ অন্যান্য দূরবর্তী দেশ যেমন: পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের বাজারেও রপ্তানি করতো। যদিও লাভের পরিমাণ অনেক কম ছিল কিন্তু এত বেশি কেনাবেচা হতো যে অল্প লাভেও পুষিয়ে যেতো।
কাপড়:
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠন কালে তাদের পরিকল্পনা ছিল তাঁরা উপমহাদেশ থেকে প্রধানত মসলা এবং বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানি করবে এবং ব্রিটেনে ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশে সেগুলো বিক্রি করবে। আর তার বিনিময়ে তাঁরা ভারতে তাদের দেশের তৈরি একধরণের মোটা কাপড় রপ্তানি করবে। কিন্তু ভারতে আসার পর তাঁরা দেখলো যে ভারতের গরম আবহাওয়ায় তাদের মোটা কাপড় মানানসই না, আর তাছাড়া ভারতে তৈরি কাপড় অনেক পাতলা ও আরামদায়ক। তখন কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিল যে তাঁরা ভারতের কাপড় আমদানি করবে এবং ব্রিটেনে বিক্রি করবে।
প্রথমবার ভারতীয় কাপড় ব্রিটেনের বাজারে আসার পর সেখানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং ব্রিটেনে ভারতীয় কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ১৬২০ সালে ৫০,০০০ পিস কাপড় ব্রিটেনে পাঠানো হয় ভারত থেকে। ১৭৫০ সালে ব্রিটেনে কাপড় রপ্তানি করে কোম্পানির ৬০ ভাগ আয় হয়।
চা:
১৬৬৪ সালে প্রথম বান্তাম থেকে ৫০ কেজি চা আমদানি করে কোম্পানি এবং ১৬৭০ সাল পর্যন্ত এইরকম অল্প পরিমাণেই আমদানি করতে থাকে। এরপর বিভিন্ন প্রদেশে বাণিজ্য করার সুযোগ লাভের পর বেশি বেশি করে চা আমদানি শুরু করে। ১৭১৩ সালে কোম্পানি মোট ৯৭,০৭০ কেজি চা আমদানি করে। এবং পরবর্তীতে এই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।
চিনামাটির বাসনাদি:
চা এর পাশাপাশি কোম্পানি অনেক পরিমাণে চিনামাটির বাসন আমদানি শুরু করে। অনেক বেশি দামি না হলেও চিনামাটির বাসন বেশ প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল। চিনামাটির পণ্য বেশ সুলভ ছিল তাই এগুলো বেশ লাভে বিক্রি করতে পারতো ব্রিটেনের বাজারে। ১৭৩০ সালে কোম্পানি একাই ৫১৭,০০০ পিস চিনামাটির বাসন আমদানি করে। এবং পরবর্তী সময়েও এই পরিমাণ পণ্যই আমদানি করে কোম্পানি।
প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য প্রসারিত হতে থাকলে পশ্চিমা এই কোম্পানি ধীরে ধীরে লন্ডনের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান কারী কোম্পানি হিসেবে পরিণত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিজস্ব পোতাঙ্গন, গোদামঘর, ঢালাইখানা, করাতকল গড়ে উঠে, এমনকি তাদের নিজস্ব কসাইখানা পর্যন্ত ছিল যেখানে প্রচুর পশু জবাই করা হতো কোম্পানির বিশাল সংখ্যক কর্মচারীদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য।
ভারতে আধিপত্য বিস্তার:
ভারতে অনেক কম সময়ের ব্যবধানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রভাব বিস্তারের অনেক বড় একটা কারণ ছিল ১৮ শতকে মুঘল সম্রাটদের আকস্মিক পতন।
১৭৩৯ সালে যখন ক্লাইভের বয়স সবেমাত্র ১৪ বছর তখনও মুঘল সম্রাটরা কাবুল থেকে মাদ্রাজ পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্যের শাসন করছিলেন। কিন্তু ঐ বছরের শেষের দিকে পারস্যের অভিযাত্রী নাদির শাহ তাঁর ১৫০,০০০ অশ্বারোহীর দল নিয়ে খাইবারের গিরিখাতে আক্রমণ চালায় এবং এক মুঘল শাসকের ১.৫ মিলিয়ন সৈন্যের দলকে পরাজিত করেন। এর তিন মাস পর নাদির শাহ পারস্যে ফিরে আসেন মুঘল সম্রাটদের সকল ধন সম্পদ নিয়ে যা তাঁরা ২০০ বছরের শাসনামলে জড় করেছিলেন। মুঘলদের কাছ থেকে লুট করে আনা সম্পদের মধ্যে সম্রাট শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা ‘কোহিনূর’, এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা ‘দারিয়া নূর’, ৭০০ হাতি, ৪,০০০ উট এবং ১২,০০০ ঘোড়া টানা শকট যেগুলো ভর্তি ছিল সোনা, রূপা ও অন্যান্য দামি পাথর দিয়ে অন্যতম। নাদির শাহের লুট করা সম্পদের তৎকালীন বাজার মূল্য ছিল ৮৭ মিলিয়ন ইউরোর সমমান। অর্থাৎ পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর লর্ড ক্লাইভ মিলে বাংলা প্রদেশ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ লুট করেছে তার থেকে কয়েক গুণ পরিমাণ বেশি লুট করেছেন নাদির শাহ একাই তাও আবার মাত্র কয়েক দফা আক্রমণে।
নাদির শাহের আক্রমণ এবং সকল সম্পত্তি নিয়ে যাওয়ার ফলে মুঘল সাম্রাজ্যে বিভেদ তৈরি হয়। এই সুযোগে ফরাসি কোম্পানি নিজেদের মুদ্রা ছাপাতে শুরু করে ভারতে, এবং সেই সাথে ইংরেজরাও তাদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে থাকে বেশি বেশি ভারতীয় নাগরিকদের সিপাহী হিসেবে নিয়োগ করে। এভাবেই ধীরে ধীরে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসনের দিকে এগিয়ে যায় কোম্পানি। অবশেষে ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের পরাজয়ের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটে ইংরেজ শাসনের।
বিতর্ক:
ব্রিটিশ সরকার নাকি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, প্রায় ২০০ বছর ভারতকে কে শাসন করেছে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে। সোজা কথায় আমরা ভারতে ব্রিটিশ শাসন বলতে বুঝি ইংরেজরা ভারতকে শাসন করেছে, কিন্তু অনেকের মতে এই কথার পিছনে লুকিয়ে আছে অন্য অশুভ ইতিহাস। অনেকের মতে ব্রিটিশ সরকার নয় বরং একটি বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ১৮ শতকের শেষ দিকে ভারতকে শাসন করা শুরু করে। এই কোম্পানির সদর দপ্তর ছিল লন্ডনে এবং ভারতে এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গভর্নর লর্ড ক্লাইভ। ১০০ বছরের শাসনকালের ইতিহাসে সদর দপ্তরে মাত্র ৩৫ জন স্থায়ী কর্মচারী নিয়ে এত বড় একটি কোম্পানি পরিচালনা করার দরুন এই কোম্পানি কর্পোরেট দক্ষতার রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। মাত্র ৩৫ জন কর্মচারী যেভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে নিজস্ব মিলিটারি বাহিনী তৈরি করা থেকে শুরু করে সেখানকার বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুটতরাজ ও আয়ত্ত করে সেটা কর্পোরেট দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি কর্পোরেট জুলুমের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয় এখনও। এখনকার সময়ের অনেক বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির জুলুমের চিত্রও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জুলুমের কাছে হার মানবে অনায়াসে বলেও অনেকের বিশ্বাস।
পলাশী যুদ্ধের পর বাংলার সকল ধন সম্পদ খুব দ্রুত ব্রিটেনে পাচার
হয়ে যাচ্ছিল এবং এখানকার দক্ষ ও গুণী তাঁতি ও শিল্পীরা তাদের নতুন ইংরেজ প্রভুদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছিল কেননা তখন বাংলার বাজার ব্রিটিশ পণ্যে সয়লাব ছিল। বাংলা থেকে লুট হওয়া সম্পদের অনেক বড় একটা অংশ গিয়েছিল লর্ড ক্লাইভের পকেটে। ক্লাইভ যখন ব্রিটেন ফেরত যান তখন তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল তৎকালীন বাজার মূল্যে প্রায় ২৩৪,০০০ ইউরো সমমানের যা তাকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে ঐ সময়। ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হয়েছিল মিলিটারি পরাক্রম দিয়ে নয় বরং বিশ্বাসঘাতকতা, জাল চুক্তি এবং ঘোষ খোর ব্যাংকারদের সাহায্যে। এই যুদ্ধে জয় লাভের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজ কোষাগার থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ইউরো ব্রিটেনে পাচার করা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোষাগারে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ইউরো যায় কোম্পানির কোষাগারে এবং ২৩ মিলিয়ন ক্লাইভের ব্যক্তিগত একাউন্টে। বলা বাহুল্য, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের কোষাগার থেকে প্রায় সকল ধন সম্পদ, ১০০ টি নৌকায় ভরে কোম্পানির কলকাতার প্রধান কার্যালয় ফোর্ট উইলিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং এই সম্পদের একটা অংশ নিয়ে পরবর্তীতে ক্লাইভ ওয়েলসে তাঁর প্রাসাদ নতুন করে তুলতে ব্যয় করেন।
ব্রিটিশ সরকার কিংবা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে মূলত ভারত শাসন করেছে সে ব্যাপারে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, ভারতীয় উপমহাদেশ কোম্পানির আমলে অনেক কিছুই হারিয়েছে সে ব্যাপারে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। কেননা কোম্পানি এসে যদি উপমহাদেশে ‘Divide and rule’ এর মত নীতি তে কাজ না করতো তাহলে হয়তো এক কালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান ইতিহাস অনেক বেশি ঐশ্বর্যময় হতো।
buy lamisil without prescription – order terbinafine without prescription grifulvin v oral