পাওলো কোয়েলহো বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একজন লেখক। ব্রাজিলিয়ান এ লেখকের সর্বাধিক জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম হচ্ছে “দ্য আলকেমিস্ট”। বইটি মূলত পর্তুগিজ ভাষায় লেখা যা ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
“দ্য আলকেমিস্ট” বইটি একজন সাধারণ রাখালের জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা। ছেলেটির নাম সান্টিয়াগো যে লেখাপড়া শিখে একজন মেষপালকের জীবন বেছে নিয়েছে, কারণ সে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। সে ভেড়ার পশম বিক্রির জন্য একটি গ্রামে যায় এবং একজন ব্যবসায়ীর মেয়েকে পছন্দ করে। পরের বছর সে ঐ একই ব্যবসায়ীর কাছে পশম বিক্রির উদ্দেশ্যে যাবার পথে একাধিকবার এ স্বপ্ন দেখে যে মিশরের পিরামিডের কাছে গুপ্তধন লুকানো আছে। এই স্বপ্নের অর্থ জানার জন্য সে প্রথমে এক মহিলার সাহায্য নেয় যিনি তাকে মিশরে যাবার পরামর্শ দেন। এরপরে একজন বৃদ্ধ লোকের সাথে তার কথা হয় যিনি নিজেকে সালেমের রাজা বলে পরিচয় দেন। তিনি সান্টিয়াগোকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেন এবং তাকে ঐ মহিলার মতো মিশর যেতে বলেন। মেলচিজেডেক নামক ওই বৃদ্ধ তাকে মানুষের জীবন, জীবনের লক্ষ্য নিয়ে অধিবিদ্যক জ্ঞান দেন, আর দেন ইউরিম আর থেম্মিম নামক দুইটা পাথর। তিনি বলেন যে যখন কেউ তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে, পুরো বিশ্ব তাকে সাহায্য করে। অবশেষে সান্টিয়াগো তার ভেড়ার পাল বিক্রি করে দিয়ে পিরামিডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
সান্টিয়াগো প্রথমে আফ্রিকা যায় এবং সেখানে গিয়ে এক চোরের পাল্লায় পড়ে তার সমস্ত টাকা হারায়। সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেও সে আবার ঘুরে দাঁড়ায় এবং পাহাড়চূড়ার একটি কাচের দোকানে কাজ নেয়। ব্যবসায় লাভবান হয়ে সে টাকা জমায়। এরপরে সে আবার পাড়ি জমায় পিরামিডের উদ্দেশ্যে। মরুভূমি পাড়ি দেবার সময় তার পরিচয় ঘটে একজন ইংরেজের সাথে। সেই ইংরেজ কোন এক এলকেমিস্টের সন্ধান করছেন যিনি তাঁকে এলকেমি সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান দিতে পারবেন। মরুভূমি পাড়ি দেয়ার পথে তারা গোত্র-যুদ্ধের কারণে একটি মরূদ্যানে আশ্রয় নেয়। সেখানে ইংরেজের সাথে এলকেমিস্টকে খুঁজতে গিয়ে সান্টিয়াগোর পরিচয় হয় ফাতেমার সাথে। তারা দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যায়। এরমধ্যে সান্টিয়াগো লক্ষণ দেখে মরূদ্যানের নেতাদের জানায় যে সেখানে হামলা হবে। নিয়মানুযায়ী সেখানে হামলা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও যখন দেখা গেলো যে সত্যি হামলা হয়েছে, তখন সবাই সান্টিয়াগো-কে সাদরে গ্রহণ করে নেয় এবং তাঁকে উপদেষ্টা হবার আহ্বান জানায়। কিন্তু ইতোমধ্যে সান্টিয়াগো দেখা পায় সেই এলকেমিস্টের। এরপরে এলকেমিস্টের সহযোগিতায় সে পা বাড়ায় মরুভূমির পথে, তার গুপ্তধন, তার লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। এবং সর্বশেষে দেখা যায় যে সান্টিয়াগো তার গুপ্তধন উদ্ধার করে সেখান থেকে, যেখানে তার মন পরে আছে। সান্টিয়াগো তার গুপ্তধন পায় সে-ই ভাঙা গির্জার মধ্যে, সেখানে শুয়ে সে স্বপ্ন দেখেছিলো গুপ্তধনের।
পুরো বইতে জীবনদর্শনের নানা দিক দেখা যায়। পাওলো কোয়েলহো রচিত এ বইটির মূল কথা এক কথায় বললে বলতে হবে,
“যখন তুমি মন থেকে কিছু চাও, পুরো বিশ্ব তা পেতে তোমাকে সাহায্য করবে”।
বইটির বিভিন্ন পর্যায়ে অনুপ্রেরণামূলক বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়। যে কোন মানুষের জীবন পরিবর্তনে এ বইটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বইটির আরেকটি উক্তি হচ্ছে
“প্রত্যেক ব্যক্তি-ই পৃথিবীর ইতিহাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের ভূমিকা পালন করে যা অনেকসময় সে নিজেও জানে না”।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে লেখক প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তাকে-ই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। অনেকাংশে উপন্যাসটিকে আধ্যাত্মিক বলে মনে হলেও মানুষের বাস্তব জীবনকে আরো সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলায় এ বই-র বিভিন্ন বাণী বা উক্তি প্রয়োগযোগ্য।
বইটি কেবল অনুপ্রেরণামূলকই নয়, একে একটি অনবদ্য দার্শনিক উপন্যাসও বলা যায়। বইটির বিভিন্ন উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে দার্শনিক তত্ত্ব। এ উপন্যাসে জীবন-জগত ও প্রেম সম্পর্কিত আলোচনা দেখা যায়। জ্ঞান-তাত্ত্বিক, অধিবিদ্যক ও নন্দনতাত্ত্বিক বিভিন্ন বক্তব্য স্থান পেয়েছে উপন্যাসে। উপন্যাসে সর্বেশ্বরবাদী মতবাদের প্রভাব লক্ষণীয়। উপন্যাসে বিশ্ব-আত্মা বা পরম আত্মার উপস্থিতি স্বীকার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে জীবাত্মা এ বিশ্ব-আত্মার অংশ এবং হৃদয়ের মাধ্যমে এ দুই আত্মা সম্পর্কিত। উপন্যাসে লেখক একটি সার্বিক ভাষার কথা বলেন যে ভাষায় বিশ্ব-আত্মা, প্রকৃতির আত্মা- প্রভৃতি ভাবের আদানপ্রদান করে। মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে এ ভাষা বুঝতে পারে না। প্রেম বা ভালবাসা-র ভাষা এ ভাষা। তাই প্রেম এমন একটি বিষয় যা বিশ্ব-আত্মা থেকে নিঃসৃত। ভালবাসার জন্য কোন যুক্তির দরকার হয় না। মানুষ ভালবাসে কারণ মানুষ ভালবাসে। জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে উপন্যাসে বলা হয়েছে যে বিশ্বের সবকিছুর লক্ষ্য আছে। সবকিছু নিজেকে উন্নততর পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং নতুন লক্ষ্য অর্জন করে। এ ধারা বিশ্ব আত্মার সাথে একীভূত হওয়া পর্যন্ত ক্রম-বিকাশমান। প্রেম হচ্ছে সেই শক্তি যা বিশ্ব আত্মাকে পরিবর্তিত ও বিকশিত করে। “দ্য আলকেমিস্ট” উপন্যাসে প্রেমকে দেখা হয়েছে একটি অনবদ্য শক্তি হিসেবে যে শক্তির বলে আত্মার উন্নয়ন ঘটে।
ভাষাগত দিক থেকে “দ্য আলকেমিস্ট” বইটি অনেক সহজ, সাবলীল ও সহজবোধ্য। বইটির ভাষাশৈলী, লেখনী কৌশল ও বক্তব্য যেকোনো শ্রেণীর পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম। বইটির ইংরেজি অনুবাদ এতটাই বোধ্য যে, যে কেউই লেখা বুঝতে সক্ষম হবে। বইটি কোয়েলহো লিখেছিলেন মাত্র দু’সপ্তাহে কারণ তার মতে বক্তব্যগুলো ইতোমধ্যে তার “আত্মায় লিখিত” ছিলো।
তথ্যসূত্রঃ The Alchemist, উইকিপেডিয়া।
rybelsus for sale online – cheap glucovance where to buy DDAVP without a prescription
zetia alternatives
common side effects of zyprexa
terbinafine ca – griseofulvin 250 mg over the counter grifulvin v ca
side effects from zofran