বিপ্লবের জগতে এক অগ্নিসম অগ্রদূতের নাম ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৫৯ সালে পশ্চিম গোলার্ধে কমিউনিজমের সূত্রপাত হয়েছিল যার হাত ধরে, ১১ জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আমেরিকাকে কিউবা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন যে নেতা তিনিই ফিদেল কাস্ত্রো।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর তিনিই একমাত্র রাষ্ট্র নেতা যিনি এত লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। ১১ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রধানের যতটুকু বিখ্যাত হওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি খ্যাতি ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন তিনি।
১৯২৬ (মতান্তরে ১৯২৭) সালের ১৩ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ তৎকালীন পূর্ব কিউবার একটি প্রদেশ ওরিয়েন্ট এ। বাগান মালিক অ্যাঙ্গেল কাস্ত্রো ও তাঁর এক গৃহপরিচারিকার সন্তান ফিদেল যদিও তাঁর বাবা ঐ পরিচারিকা কে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন এবং সেখানে ৭ জন সন্তান জন্ম দেন। ফিদেলের বাবা জন্মসূত্রে একজন স্প্যানিশ নাগরিক হলেও ঠিক কি কারণে তিনি কিউবায় এসে স্থায়ী হন সেটা এখনও অজানা। যদিও কাস্ত্রো এই ব্যাপারে একবার বলেছিলেন যে তাঁর বাবা একজন স্প্যানিশ উচ্চ বংশীয় লোকের বদলে কিউবায় এসেছিলেন যাকে ১৯ শতকের শেষের দিকে জোর করে স্প্যানিশ আর্মিতে যোগদান করানো হয়েছিল কিউবার স্বাধীনতা আন্দোলন ও আমেরিকার হেজেমনি বানচাল করার জন্য।
অবশ্য অন্যান্য সূত্রের দাবি অ্যাঙ্গেল কাস্ত্রো একদম শূন্য হাতে কিউবায় এসেছিলেন। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই বাগানের মালিক বনে যান এবং তথাকথিত অপছন্দের আমেরিকার মালিকানাধীন ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির সাথে ব্যবসাও করেন। ফিদেল অনেক ছোট থাকতেই তাঁর বাবা অনেক জমিজিরাতের মালিক হন।
ছাত্র হিসেবে ফিদেল ছোট বেলা থেকেই অনেক বেশি হৈচৈ পূর্ণ ছিলেন বলে জানা যায়। এমন কি কিউবায় লোক মুখে এটাও প্রচলিত যে তিনি নাকি অনেক কম বয়স থেকেই অনেক বেশি উদ্ধত আর ধর্মান্ধ ছিলেন।
ফিদেল কাস্ত্রো সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি গল্পে শুনা যায় একবার নাকি তাঁকে তাঁর সহপাঠীদের সাথে নিয়ে একজন ধর্মযাজক পাহাড় ভ্রমণে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনা বশত ধর্মযাজক দ্রুতগতির নদী প্রবাহে পড়ে যান এবং তাঁর ডুবে যাওয়ারও অনেক সম্ভাবনা ছিল যদি না ফিদেল তাঁকে টেনে তীরে না তুলতেন। তারপর তারা একসাথে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করেন ও তাদের সৌভাগ্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৯৪৫ সালে হাভানার আইন স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করা শুরু করেন এবং তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে র্যাডিকাল রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলেন। একনায়ক রাফায়েল ট্রুজিলোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ডোমিনিকান রিপাবলিকের একটি অসফল আক্রমণেও অংশ নেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি কিউবার রাজনীতির প্রতি অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার আগেই ছাত্রদের নিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে তাঁর পরিচিতি হয়েছিল মূলত বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে এবং কমিউনিজমের প্রতি তাঁর প্রবণতা ছিল আগে থেকেই বলে সবার ধারণা ছিল। কিন্তু ১৯৮৬ সালে তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি বলেন যে কমিউনিজমের প্রতি তাঁর সামান্য ভাল লাগা থাকলেও তিনি কখনও কমিউনিস্ট দলে যোগ দেননি।
র্যাডিকাল দর্শন তাঁর চরিত্রের উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল বলে তিনি স্বীকার করেন, তিনি বলেন “ তখন আমার বৈপ্লবিক বিবেক ছিল, আমি কর্মঠ ছিলাম, আমি লড়াইও করেছি কিন্তু আমি একজন স্বাধীন যোদ্ধা ছিলাম”।
আইনে ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি বেশ কিছুদিন গরিবদের জন্য কাজ করেছেন এবং একবার গোঁড়া বিরোধী দলের বিপক্ষে নির্বাচনেও দাঁড়ান কিন্তু বাতিস্তার সাজানো সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সেই নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়।
বাতিস্তা সরকারের প্রতি তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি বাতিস্তার সরকারকে একটি আইনি আপিল দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন যেখানে তাঁর দাবি ছিল যে বাতিস্তা যে কাজ করেছেন সেটা সংবিধান এর অবমাননা। কিন্তু তাঁর এই প্রতিবাদ বৃথা যায়।
অনেক নতুন নতুন অনুসারী পাওয়ার পর কাস্ত্রো ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই তাঁর র্যাডিকাল ছাত্রদের দল নিয়ে সান্টিয়াগো দে কিউবার মনাকাডা ব্যারাকে আক্রমণ চালান। এতে অনেক বিদ্রোহীর মৃত্যু হয়, অনেককে বন্দি করা হয় যার মধ্যে কাস্ত্রো নিজে ও তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রোও ছিলেন।
এই আক্রমণের বিচারে কাস্ত্রোর ১৫ বছরের জেল হয়। কিন্তু এই রায়ের পর বাতিস্তা যে পদক্ষেপটি নেন সেটি হয়তো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ভুল পদক্ষেপ ছিল। বিদ্রোহীদের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে এটা ভেবে, সুশীল সমাজের চাপের মুখে পড়ে এবং তিনি অত্যাচারী শাসক না এটা প্রমাণ করার জন্য বাতিস্তা ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর এক রাজক্ষমায় ফিদেল কাস্ত্রো ও তাঁর অনুসারীদের মুক্তি দিয়ে দেন। মুক্ত হয়ে কাস্ত্রো মেক্সিকোতে নির্বাসনে যান এবং সেখান থেকে কিউবায় নিজের প্রত্যাবর্তনের ছক কষতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টার পর মেক্সিকোতে বাসকারী এক আমেরিকানের কাঠের তৈরি গ্রানমা ৬১ ফুট লম্বা একটি ইয়ট নিয়ে কিউবায় ফেরত আসেন।
১৯৫৬ সালে চে গুয়ে ভারা সহ আরও ৮০ জন অনুসারী নিয়ে তিনি কিউবার উপকূলে পৌঁছান এবং নিজে স্বাধীনতার যোদ্ধা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন।
দেশে ফেরত এসেই তিনি গেরিলা হামলা করা শুরু করেন এবং তাঁর মজুদ রসদের কাছে বাতিস্তা দুর্বল হয়ে পড়েন। কিন্তু তবুও বাতিস্তা থেমে যাননি বরং তাঁর সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে কাস্ত্রোকে মারার আগে পর্যন্ত যেন তারা না থামে। এমন কি ১৯৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দুনিয়া জুড়ে খবর হয় কাস্ত্রো মারা গিয়েছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাস্ত্রো তিন মাস পর কয়েকটি আর্টিকেলের জন্য সাক্ষাৎকার দেন যা তাঁর আন্দোলন ও ইতিহাস টাই বদলে দিয়েছিল।
বাতিস্তার একনায়কতন্ত্রে অতিষ্ঠ হয়ে দিন দিন প্রচুর পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবক বিপ্লবী কাস্ত্রোর সাথে যুক্ত হতে থাকে এবং ফিদেল কাস্ত্রোর দল বাতিস্তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করে।
১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারি বিজয়ী হয়ে হাভানায় পদার্পণ করার পর থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী হাতে তিনি তার দেশ শাসন করেছেন। তখনকার নির্বাসিত সামরিক একনায়ক বাতিস্তা যাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে তিনি ক্ষমতায় গিয়েছিলেন তারই সদর দপ্তরে দাড়িয়ে তিনি হাজার হাজার লোকের সামনে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার প্রথম বক্তৃতা টি দিয়েছিলেন। সদম্ভ ও আবেগ নিয়ে দেয়া তার এই বক্তৃতা স্থায়ী হয়েছিল ভোর পর্যন্ত এবং অবশেষে শান্তির পায়রা উড়েছিল কিউবায়। রণক্লান্ত কিউবান যে সকল নাগরিক ঐ ভীরের মাঝে সেদিন দাড়িয়ে তার বক্তৃতা শুনেছিলেন তারা আর যারা টিভি সেটের সামনে বসে দেখেছিলেন তারা সবাই বুঝে গিয়েছিলেন এই যুবক গেরিলা নেতাই হতে যাচ্ছে তাদের ত্রাণকর্তা। ফিদেল কাস্ত্রোর সেই বক্তৃতা শুনতে জমায়েত হওয়া ভীর থেকে শুধু একটি শব্দই শুনা যাচ্ছিল আর তা হল ‘ফিদেল’ ‘ফিদেল’।
তাঁর সামনে জড়ো হওয়া ঐ মানুষ গুলো জানতোনা ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার জন্য কি পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু কাস্ত্রো নিজেকে তাঁর পিতৃভূমির একজন মসিহ মনে করতেন যার কাছে অপরিহার্য ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল কিউবা ও এর জনগণ কে নিয়ন্ত্রণ করার। এবং করেছিলেনও তাই। কিউবার সৈনিকরা অ্যাঙ্গোলায় কি রঙের ইউনিফর্ম পরবে সেটা থেকে শুরু করে চিনির উৎপাদন কত টুকু হবে সবই ঠিক করতে তিনি নিজে। এমন কি নিজ হাতে অসংখ্য লোক কে জেলেও পাঠিয়েছেন তিনিই।
কিন্তু শুধুমাত্র দমন করার ভয় দেখিয়েই তাঁর সর্বগ্রাসী সরকার একটানা এতদিন ক্ষমতায় ছিলনা। কিউবা ও পুরো দুনিয়া জুড়ে তাঁর নিন্দুক যেমন ছিল তেমন প্রশংসাকারীও ছিল অনেক। কেউ কেউ তাকে মনে করতো এক নিষ্ঠুর রাষ্ট্রনায়ক যে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছিল, আবার কেউ কেউ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল কারণ তারা তাঁকে ঐ সময়ের বিপ্লবের নায়ক মনে করতো।
এমন কি ২০০৬ সালে যখন কাস্ত্রো গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তখনও তিনি নিজের চিকিৎসা ব্যবস্থা কোথায় কিভাবে হবে সে ব্যাপারে সব কিছুর নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং তাঁর কমিউনিস্ট বিপ্লব চালিয়ে নেয়ার জন্য কি কি করতে হবে সুন্দর মত গুছিয়ে দিয়েছিলেন।
নিজের ভাইয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ফিদেল কাস্ত্রো আরও একবার আমেরিকার ক্রোধের মুখে পরেন। আমেরিকা তাঁর এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায় এবং মন্তব্য করে যে কিউবার একনায়কতন্ত্র আরও দীর্ঘায়ু লাভ করলো আর তার সাথে সাথে কিউবার জনগণ নিজেদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করার আরও একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলো।
কিন্তু ২০১৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে হাভানা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কয়েক দশক যাবত চলা বিরোধ মিটানোর জন্য বন্দি বিনিময় এবং দুই দেশের মধ্যে একটি স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ নেন। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা গোপন বৈঠক এবং পোপ ফ্রান্সিসের সাহায্যে অবশেষে পদক্ষেপ টি সফল হয়।
২০১৬ সালে বারাক ওবামার ব্যাপক ভাবে প্রচারিত কিউবা সফর যেটা ছিল দীর্ঘ ৮৮ বছর পর কোন ক্ষমতাসীন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কিউবা সফর এর কিছুদিন পরই ফিদেল কাস্ত্রো ওবামার শান্তি প্রস্তাবকে হেয় করে একটি খামখেয়ালী পূর্ণ লিখা লিখেন যেখানে তিনি দাবি করেন যে আমেরিকা তাদের যা যা দিতে চেয়েছে তার কোনকিছুর দরকার নেই কিউবার।
অনেকের মতে ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন একজন স্ব উদাসী, গোঁড়া লোক যার নিজের ভাগ্যের উপর বিশ্বাস ছিল অনড়। আবার অনেকের মতে তিনি ছিলেন বহুরূপী, যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মতবাদের চেয়ে প্রয়োগবাদে বেশি বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু একজন বিপ্লবী নেতা হতে হলে যেমন মন আর সাহস দরকার ছিল তা ফিদেল কাস্ত্রোর পুরোটাই ছিল সে ব্যাপারে সন্দেহ খুব কম মানুষেরই আছে বা ছিল।
১৯ শতকের শুরুর দিকে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। তাঁর গুরু হোসে মারতির পর তিনিই একমাত্র নেতা যিনি কিউবার ইতিহাস বদলে দিয়েছেন। ২০ শতকে ল্যাটিন আমেরিকায় সংঘটিত হওয়া অন্য যেকোনো বিদ্রোহের চেয়ে কাস্ত্রোর বিপ্লব সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল কিউবার সমাজকে এবং সেই প্রভাব অনেক লম্বা একটা সময় ধরে বহাল ছিল।
কিউবায় তাঁর শাসনকালের ইতিহাসে একই সাথে জমা হয়েছে কিছুটা সামাজিক উন্নতি আবার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের কষাঘাত, একদিকে বর্ণবাদের দিক থেকে সমতা আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিপীড়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিছুটা উন্নতি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি।
তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁকে বিপ্লবের প্রতীকে পরিণত করে এবং তাঁর অনেক অনুসারীর কাছে সে রোল মডেল। ভেনিজুয়েলার হুগো শাভেজের ভাবগত মতাদর্শের গডফাদার ফিদেল কাস্ত্রো। কিন্তু এইসব কিছুর ঊর্ধ্বে কাস্ত্রোর আমেরিকাকে ঘিরে আগ্রহ আর আমেরিকার কাস্ত্রোকে ঘিরে যে আগ্রহ ছিল সেটাই সবচেয়ে বড় প্রভাবক কাস্ত্রোর শাসনামলের যে রূপ সেটা দেয়ার ক্ষেত্রে। কাস্ত্রো কমিউনিজমকে বরণ করে নেয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটন তাঁকে একজন শয়তান ও অত্যাচারী শাসক হিসেবে তুলে ধরে দুনিয়ার সামনে। তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ১৯৬১ সালে বে অফ পিগস এ আক্রমণ, কয়েক দশক যাবত স্থায়ী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আততায়ী দিয়ে হত্যার চেষ্টা থেকে শুরু করে তাঁর দাঁড়ি ফেলানোর ব্যবস্থা করে তাঁর মর্যাদা কমানোর চেষ্টার মত অদ্ভুত সব কিছুই করেছে আমেরিকা।
আমেরিকার শক্তির প্রতি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বিরুদ্ধাচরণ ল্যাটিন আমেরিকা সহ অন্যান্য জায়গায়ও তাঁকে পরিণত করেছিল প্রতিরোধের এক বাতিঘর হিসেবে। তাঁর এলোমেলো দাঁড়ি, গায়ে সবুজ রঙের পোশাক আর হাতে কিউবান সিগারেট দুনিয়া জুড়ে হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহের প্রতীক।
কাস্ত্রোর শাসনামলের আগে কিউবা ছিল ধনী আমেরিকান পর্যটকদের খেলার মাঠের মত। যেখানে ধনী গরিবের মাঝে আকাশ পাতাল সম অসমতা সহজেই চোখে পড়তো, যদিও বা ঐ সময় অন্যান্য ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র গুলোর তুলনায় কিউবা বেশ ধনীই ছিল।
আইনে ডিগ্রি থাকা সত্বেও অর্থনীতি কিংবা সরকার সম্পর্কে কাস্ত্রোর তেমন কোন বাস্তব ধারণা ছিল না। তারপরও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করে এবং শুধু চিনি ও আমেরিকার উপর কিউবার নির্ভরতা কমিয়ে কাস্ত্রো একটি অন্যরকম সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ঠিক কেমন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সে বিষয়ে হয়তো তাঁর নিজেরও স্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিন্তু তিনি একটা ব্যাপারে পরিষ্কার ছিলেন যে তিনি বাতিস্তার সময়ের মত সমাজ এর চেয়ে ভিন্ন সমাজ গড়বেন।
কিউবার সমাজে আমূল পরিবর্তন কারী এই নেতা মৃত্যু বরণ করেন ২৫ নভেম্বর ২০১৬ সালে। তিনি তাঁর মতাদর্শে কতটা সঠিক ছিলেন বা তাঁর কি কি কাজ ভুল ছিল বা সঠিক ছিল সে বিতর্কে যাবো না। এই বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন শুধু এই টুকুই আমাদের কামনা।
তথ্যসূত্র:
১. https://www.britannica.com/biography/Fidel-Castro
২. https://www.biography.com/people/fidel-castro-9241487
rybelsus ca – semaglutide 14mg usa brand desmopressin
repaglinide price – repaglinide 2mg without prescription order jardiance 25mg for sale