লাল সবুজের পতাকার অধিকার ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাওয়া সেই মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জন্মেছিলেন ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে। প্রচন্ড দুরন্তপনা এ বালকের বেশিদূর অবধি পড়ালেখার সুযোগ হয়নি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দু-এক বছর পর্যন্তই শিক্ষা সমাপ্ত। পিতা ‘হাবিবুর রহমান’ ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার যার কারণে তাঁর শৈশব কেটেছে পিতার কর্মস্থল কুমিল্লা সেনানিবাসে।
লক্ষ্যের প্রতি তিনি ছিলেন একদম দৃঢ়মূল যার কারণে শৈশব হতে লালন করা সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হওয়ার স্বপ্নটা তাঁকে ঘর হতে নিরুদ্দেশ হতে বাধ্য করে। সময়টা ছিলো ১৯৬৭ এর ১৬-ই ডিসেম্বর যখন তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের ৪র্থ ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করার পরেই তাঁর খোঁজ পায় বাবা-মা।
যুদ্ধের বিভৎসতা তখন প্রায় সারাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছিলো। শহীদ মোস্তফা কামালের চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ১৯৭১ এর প্রথম দিকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠানো হয়। সেনানিবাসগুলোতে তখন উত্তাল, উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছিলো।
ইতিমধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাঁর রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে এন্ডারসন খালের পাঁড়ে গড়ে তোলে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি (তিতাস নদীর ব্রীজে, আখাউড়ার দক্ষিণে গঙ্গাসাগর এবং গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে)। রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়েত জামিল শহীদ মোস্তফা কামালের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে ২ নম্বর প্লাটুনের ল্যান্স নায়েকের দায়িত্বটা তাঁর উপর দিয়ে দিলেন।
৬ এপ্রিল পাকিস্থান সেনাবাহিনী আস্তে ধীরে কুমিল্লা – আখাউড়ার রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগোতে থাকে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে। সুকৌশলে মুক্তিবাহিনী সরে আসে পরবর্তী কৌশল অবলম্বনের জন্যে।
১৭ এপ্রিল সকালবেলা। আকাশ জোড়ে কালো মেঘের আস্তর পড়ে গেছে। এরই মধ্যে ভোরবেলা পাকসেনারা দরুইন গ্রামের অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর উপর মর্টার ও গোলাবর্ষণ করে। মেজর শাফায়াত জামিলের নির্দেশে ১১ নাম্বার প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
হাবিলদার মুনির ১১ নাম্বার প্লাটুন নিয়ে দরুইন গ্রামে পজিশনে চলে আসেন। শীতল হাওয়া বইছে। এক পশলা বৃষ্টি এসে ধুয়ে নিয়ে যাক সব অসংহতি, সবারই মনে একটু-আধটু আশ্বাস জমলো হয়তো এসময়ে পাকসেনারা হামলা করবে না। আন্দাজ কিছুটা হলেও সত্য হলো। উজানীস্বর পুলের দিকে শুধুমাত্র কয়েকটা হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন গুলিবর্ষণ হলো না পাকসেনাদের পক্ষ হতে। একধরণের নির্বিঘ্নেই পেরিয়ে গেলো কিছু মুহূর্ত। এরইমধ্যে সদস্যদের জন্য নির্ধারিত খাবার চলে এলেও নিজ স্ট্রেঞ্জে এলএমজি হাতে ঠাই পজিশনে যিনি দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি হলেন শহীদ মোস্তফা কামাল। নিজের খানা নিতে উঠে এলেন না তিনি।
যার পেটের ক্ষুধার চেয়ে মনের ক্ষুধা প্রচন্ড, যার ক্ষুধা দেশের শত্রুদের ভরপেটে খাওয়ার, যার লক্ষ্য অটুট, যিনি প্লাটুনের ল্যান্স নায়েক, যিনি একজন বীরশ্রেষ্ঠ তিনি ক্ষুধানুভব করতেই পারে না।
বেশিক্ষণ নির্বিঘ্নে থাকা গেলো না। বেলা এগারোটার দিকে শুরু হলো প্রচন্ড গোলা বর্ষণ আর সাথে যোগ দিলো মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি পাকসেনাদের গতি কিছুটা স্তিমিত করবে আশা করা হলেও বরং তারা দ্রুতগতিতে আক্রমণ শুরু করলো যার ফলশ্রুতিতে মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যেই তারা অবস্থান নিয়ে নিলো মোগরা বাজার এবং গঙ্গাসাগর পজিশনে। মুহুর্তের মধ্যেই তারা সবস্থানে বসে অনবরত আক্রমণ করতে শুরু করলো, মোগরা বাজারে একটি উঁচু দালানে মেশিনগান সেটাপ করে প্রবল গতিতে শাই শাই করে ছুটে আসতে লাগলো গুলি দরুইনের ঘাঁটিতে।
বেলা যখন বারোটা প্রায় তখন আক্রমণ আরো তীব্র হতে তীব্রতর হতে লাগলো। এবার পাকসেনারা হঠাৎ আক্রমণ করে বসলো পশ্চিম দিক হতে। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ এর সামনে নগণ্যই মনে হচ্ছিলো। মুক্তিবাহিনী প্রাণপণে গুলি ছুঁড়তে লাগলেন কিন্তু বিধিবাম হয়ে ঠেকলো মেশিনম্যানের গুলিবিদ্ধ হওয়াটা। মেশিনগান বন্ধ হওয়া মানে আক্রমণে স্থবিরাবস্থা নেমে আসা।
কিন্তু একজন সিপাহী ল্যান্স নায়েক থাকতে অপারেশন স্থবির হবে তা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। জ্বী, শহীদ মোস্তফা কামাল মেশিনগানটি হাতে তুলে নিলেন সঙ্গে সঙ্গেই এবং উপর্যুপরী গুলি চালাতে লাগলেন। মাথায় তখন তাঁর প্রবল উদ্দামতা কারণ যে মুহুর্তে প্রতিপক্ষের আক্রমণ দাপট কমে যাওয়ার কথা সেসময়ে আক্রমণ তীব্র হওয়াতে সহযোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাসে সহজেই ছিঁড় ধরতে পারে সেকশন কমান্ডারের একটু নিস্তেজ হয়ে যাওয়াটা আর ইতিমধ্যে কয়েকজন শহীদও হয়ে গিয়েছেন। ১৯-২০ চিন্তা না করে তিনি গুলি ছুঁড়তে থাকেন।
ইতিমধ্যে পাকসেনারা দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তর দিক হতে দরুইনকে ঘিরে ফেলে। বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর হাতে দুটো পথ খোলা ছিলো। হয়তো সামনাসামনি আক্রমণ করে শহীদ হওয়া নয়তো পূর্বদিক হতে পিছু হতে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করা। তবে সমস্যা হলো পিছু হটতে গিয়ে যদি পিছ হতে আক্রমণ করে বসে তবে কেউই বাঁচতে পারবে না।
শুধুমাত্র মেশিনগান বাদে তেমন ভারী অস্ত্রশস্ত্রও ছিলো না আক্রমণ করার জন্যে। কে পিছ হতে কাভার দিবে মুক্তিসেনাদের?
সে সময়ে উচ্চকন্ঠে সেকশন কমান্ডার সিপাহী শহীদ মোস্তফা কামাল দৃঢ়কন্ঠে অন্যান্য সদস্যদের নির্দেশ দিলেন সরে পড়তে পূর্ব দিক হতে আর তিনি পিছ হতে প্রতিরক্ষার দেয়াল হয়ে দাঁড়াবেন কাভার হিসেবে। কি সাহস, কি তেজ, কি বলীয়ান মহাপুরুষ যিনি নিজের জীবন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চান নিজের সহকর্মীদের বাঁচাতে …… !!
একজন স্বাধীনকামীর মনে কতোটা জোর থাকলে এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি হয়ে যায় মুহুর্তে মধ্যে? তবে সহযোদ্ধারা বারবার অনুনয়বিনয় করতে থাকেন, অনুরোধ করতে থাকেন যেনো শহীদ মোস্তফা কামাল সরে আসেন পজিশন হতে এবং নিরাপদ স্থানে ফিরে যেতে।
তবে তিনি অনড় এবং বারবার বলতে থাকেন যেনো তারা অতি শীগগীর সরে পড়ে কারণ কেউ একজন কভারে না থাকলে সবারই মৃত্যু অনিবার্যিত।
একসাথে থেকে অগাধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জমে যাওয়া মানুষকে কেউই ছেড়ে আসতে চায় না, সেই যতোই মৃত্যু আঁচড়ে পড়ুক কিন্তু ল্যান্স নায়েক মোস্তফা কামালের কড়া নির্দেশ,
“ কেউ একজন কাভারিং ফায়ারের দায়িত্ব না নিলে সবারই মৃত্যু নিশ্চিত সুতরাং তাড়াতাড়িই যেনো সবাই সরে যায় নিরাপদে। একজন সেকশন কমান্ডার হিসেবে সবাইকে নিরাপদ করা আমার দায়িত্ব। “
মোস্তফা কামালকে তাঁর পরিখায় রেখে সরে যেতে শুরু করলেন তাঁর সহযোদ্ধারা। বারবার তাকিয়ে দ্রুত সরে যেতে লাগলেন। এসময়ে পাকবাহিনীর সামনে প্রতিরক্ষার কামাল দুর্গ গড়ে তোলেন মোস্তফা কামাল। অনবরত গুলি ছুঁড়তে লাগলেন উত্তর, দক্ষিণ আর পশ্চিমের দিকে পাকিবাহিনীদের লক্ষ্য করে যার কারণে অগ্রসর হওয়া পাকবাহিনী বাধ্য হয়ে থেমে যায়। মোস্তফা কামাল তখন নিজেই একজন অভেদ্য স্তম্ভ, একজন নির্বিকার মুক্তিকামী দেশমাতৃকার সন্তান।
পাকসেনার গুলি বা আক্রমণ তাঁকে পরাস্ত করতে অক্ষম, এখন কিছু তাঁকে ভেদ করতে পারলে তা হলো মৃত্যু। দেশমাতৃকার জন্য হাসতে হাসতে জীবন বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে একটা সুখ আছে যা সবাই অনুভব করতে পারে না। মৃত্যুসুধা পানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না বাংলার ইতিহাস গড়ার সেই সাত স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ বীরশ্রেষ্ট শহীদ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের।
পাকিবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণ ঠেকাতে একসময় গুলি ফুরিয়ে আসলে নির্মমভাবে তাদের আক্রমণের শিকার হলেন তিনি। চারিদিকে ঘিরে ফেলা হলো তাঁর পরিখার এবং উপর্যুপরি গুলির পর গুলিতে ঝাঁজরা করে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো তাঁর পবিত্র শরীর। জানি না সেদিন বাংলার মাটি কেঁপে উঠেছিলো কিনা? জানি না মাতৃকার মাটি তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলো কিনা!! শহীদ মোস্তফা কামাল ঢলে পড়েন তাঁর পরিখার ভিতরে। নিথর দেহটা হয়তো মৃত্যু যন্ত্রণা ছুঁতে পারে নিই, ছুঁতে পারলেও হয়তো সৃষ্টিকর্তা এমন আত্মত্যাগী মানুষটাকে নিজের জন্যে কবুল করে নিয়েছিলেন।

পিতা হাবিবুর রহমান রহমান মারা গেছেন সেই অনেক আগেই। তবে মোস্তফা কামালের মা মালেকা বেগমের বয়স প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই। তিনি আজও মনে করেন দুই নাম্বার প্লাটুনের রক্ষাকারী সেকশন কমান্ডার, তাঁর গর্ভে লালিত সেই সূর্য সন্তান ফিরে আসবে তবে যে ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠকে তিনি গর্ভে লালন করেছেন সেই গর্ভকে সম্মানের উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন, এতটুকু ম্লান হতে দেয় নিই।
সেই গর্বিত মা’র চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে, নানা বার্ধক্যে শরীর ঝেঁকে ধরেছে তবে চোখের মধ্যে আজও হতে পারে স্পষ্ট অমলিন হয়ে রয়েছে তাঁর খোকা শহীদ মোস্তফা কামাল, সেই দুরন্তপনা কিশোর। এতটুকুই সান্ত্বনা যে তিনি একজন বীরশ্রেষ্ঠর গর্বিত মা।
আমরা খুব আয়োজন করে বিজয় দিবসে উনাদের মনে করি, ১৭ ডিসেম্বরে ভুলে যাই। এটুকুতেই আমাদের শ্রদ্ধা সীমিত।
তাঁর গ্রামের নাম মোটুপীর থেকে পরিবর্তিত করে রাখা হয় কামালনগর। কতোটা নির্মম এ কাহিনী অথচ এমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বাংলাদেশ ব্যতীত আর কারো থাকলে হয়তো মর্যাদার পারদ আরো বাড়তো, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তৈরী হতো বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র, লেখা হতো গ্রন্থ, বিশেষ মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত হতো তবে বীর সন্তানেরা ভিক্ষে করতে জানে না। নিঃর্স্বার্থের প্রতীক হয়ে জীবন দেয়ার ছিলো আর তা অকাতরেই দান করে গেছেন। কোন বাড়তি চাওয়াপাওয়া তাঁদের ছিলো না। যুদ্ধের মাঠে যাওয়ার আগে কোন চুক্তি করে যায় নিই । শুধুমাত্র প্রয়োজনবোধ করেছে আর অকাতরে নিজেদের বিলিয়ে এনে দিয়েছেন এক স্বাধীন সুর্য।
১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পাকসেনারা যখন দুরইন গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তখন এলাকার লোকজন এসে উদ্ধার করে সুর্যসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বেয়নেটের খোঁচায় ছিন্নভিন্ন, বুলেটের আঘাতে জর্জরিত শীর্ণ দেহাবশেষ। দেশ মাতৃকার মাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগরে নির্মিত সমাধিসৌধে পরম আদরে তাঁকে বুকে জড়িয়ে আছে।
ভালো থাকুক হে বীরশ্রেষ্ঠ, গর্বিত ল্যান্স নায়েক মোস্তফা কামাল। আপনাকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা আর মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি উনি যেনো আপনার আত্মত্যাগ কবুল করে নেন।
( বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, উইকিপিডিয়া, ব্লগ হতে বিভিন্ন ধরণের সুত্র সংগ্রহিত)
high class escorts Madrid
high-class escorts Paris
Paris premium escort
escorts in Paris
high class Paris escorts
регистрация кэт казино
cat casino
Le code promo 1xBet est une offre exclusive pour les nouveaux joueurs. Inscrivez-vous des maintenant avec notre code promo 1xBet et beneficiez d’un bonus de 100% sur votre premier depot. Utilisez le code promo 1xBet lors de l’ouverture de votre nouveau compte 1xbet pour recevoir votre bonus de bienvenue.
les code de 1xbet
sabinus promo code on 1xbet
what is promo code in 1xbet 2024
welcome bonus
]deloteca.ru
кэт казино
кэт казино
https://corrupzia.ru/
catalog2you.ru
catalog2you.ru
promo code for registration
new player bonus
decibel meter iphone
decibel meter free app
гостиница с почасовой оплатой в Москве
гостиница с почасовой оплатой
ремонт квартир под ключ
ремонт квартиры бровары
https://barsu.by/
кэт казино
скупка холодильников
скупка бытовой техники в москве
Superb images, the colour and depth of the pictures are breath-taking, they attract you in as though you belong of the make-up.
Gama Casino
Thanks for featuring the attractive pictures– so open to a sense of reflection.
https://exodontia.info/art/how_to_get_csgo_skins_free__a_comprehensive_guide.html
What kind of digicam is that? That is certainly a great premium quality.
онлайн казино
Your pictures look terrific !!!
https://crazysale.marketing/flagman.html
promo code for 1xbet 2024
промокод 1xbet казахстан
1xbet промокод на фрибет
Любители хентай манга японской культуры и комиксов, обратите внимание: манга онлайн – отличный способ провести свободное время в одиночку. Большинство ресурсов предоставляют возможность читать хентай мангу бесплатно, что делает этот формат доступным для всех. Кроме того, многие из них имеют удобные приложения для мобильных устройств, что позволяет читать хентай мангу даже в дороге. Наслаждайтесь мангой хентай и погружайтесь в удивительный мир японских порно комиксов прямо сейчас!
Love the website– very individual friendly and lots to see!
https://www.google.com.my/url?q=https://hottelecom.net/ua/
Your take on this is refreshing. I was pleased by your unique approach.
https://blog.suhaiseguradora.com/articles/codigo_bonus_1xbet_casino.html