পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান এর জ্যাক স্প্যারো কিংবা চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি এর উইলি ওয়াঙ্কাকে নিশ্চয়ই সবার চেনা। পাগলাটে, চালাক এই চরিত্রগুলোর নেপথ্যে যে ব্যক্তি, যে অভিনেতা, তাঁকে কি আমরা চিনি? অদ্ভুত সব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য হয়েছেন আলোচিত এবং বিভিন্ন আইনি সমস্যায় জড়ানোয় হয়েছেন সমালোচিত। ব্যক্তি, অভিনেতা জনি ডেপ সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য আমরা জানবো আমাদের আজকের আয়োজনে।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
জনপ্রিয় আমেরিকান অভিনেতা, প্রযোজক এবং মিউজিসিয়ান জনি ডেপ এর জন্ম ওয়েন্সবোরো, কেনটাকিতে ১৯৬৩ সালের ৯ জুন। তার পুরো নাম জন ক্রিস্টোফার ডেপ দ্বিতীয়। তার বাবা জন ডেপ ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা ছিলেন একজন ওয়েটরেস। ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে ডেপ ছিলেন সবার ছোট।
ছোটবেলায় নিজের অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন,”ছোটবেলায় আমি অনেক অদ্ভুত আওয়াজ করতাম। দুইবার লাইট অফ করার মত অদ্ভুত সব কাজ করতাম। আমার মনে হয় এসব কারণে আমার বাবা মা মনে করতেন আমার টরেট সিনড্রোম আছে।“
বাবার চাকরির সুবাদে জনি ও তার পরিবার সবসময় জায়গা পরিবর্তন করতো। জনি ও তার পরিবার প্রায় ২০টির বেশি জায়গা বদল করেছিল। অবশেষে জনির যখন সাত বছর, পুরো পরিবার তখন মিরামার, ফ্লোরিডাতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। জনির বাবা চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় একবছরের মত তার পরিবার মোটেলে বাস করে। নতুন বাসাটা ছিল জনির একদম অপছন্দের।
জনির ১২ বছর বয়সে তার মা তাকে গিটার উপহার দেন। পারিবারিক সমস্যার দরুন সেই বয়স থেকে জনি ডেপ ধূমপান শুরু করেন, ড্রাগস নেয়া শুরু করেন এবং আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। নিজের কৈশোর সম্পর্কে জনি বলেন, “আমার কৈশোর ছিল অনেকটা অস্পষ্ট। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে গিটার বাজানোয় আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম।“
১৯৭৮ সালে জনির বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তার বাবা মায়ের ডিভোর্স ঘটে। ডিভোর্সের পর জনির মা রবার্ট পামার কে বিয়ে করেন যাকে জনি “অনুপ্রেরণা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সঙ্গীত ভুবনে প্রবেশ
সঙ্গীতের সাথে জনির পরিচয় গিটার পাওয়ার পর থেকেই। ১২ বছর বয়স থেকে জনি বিভিন্ন গ্যারেজ ব্যান্ড গুলোতে গিটার বাজাতেন। ১৬ বছর বয়সে রক মিউজিসিয়ান হওয়ার স্বপ্নে স্কুল ত্যাগ করে দ্য কিডস নামক ব্যান্ডে যোগ দেন তিনি। দুই সপ্তাহ পর আবার পড়াশুনা চালু করতে চাইলে প্রিন্সিপালের উৎসাহে গানের ভুবনে পুরোপুরি প্রবেশ করেন জনি। স্থানীয় ভাবে দ্য কিডস বেশ পরিচিতি অর্জন করে। তাদের গানের রেকর্ডিং এর অফার আসে ঠিকই, কিন্তু রেকর্ডিং হওয়ার আগেই দলটি ভেঙ্গে যায়।
অভিনয় জীবনের সূচনা
১৯৮৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ২০ বছর বয়সে ২৫ বছর বয়সী মেকআপ আর্টিস্ট লরি অ্যালিসনকে বিয়ে করেন জনি। একই বছরে লস অ্যাঞ্জেলসে চলে আসে এই জুটি। লরি তার প্রাক্তন প্রেমিক নিকোলাস কেইজ এর সাথে জনির পরিচয় করিয়ে দেয় যিনি জনিকে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন। একজন হলিউড এজেন্ট এর সাথে কেইজ জনির পরিচয় করিয়ে দেন। বেশ কিছু সিনেমায় এক্সট্রার অভিনয় করার পর হরর ফিল্ম নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রীট (১৯৮৪) দিয়ে বড় পর্দায় প্রধান চরিত্রে অভিষেক ঘটে জনি ডেপের। সেই থেকে বিখ্যাত এই অভিনেতার অভিনয় জীবনের যাত্রার সূচনা।
অভিনয় জীবনে সাফল্য
১৯৮৭ সালে কানাডিয়ান টেলিভিশন সিরিজ ২১ জাম্প স্ট্রীট এ অভিনয়ের পর রাতারাতি টিন আইডল বনে যান জনি ডেপ। ১৯৮৯ সালে সিরিজের কন্ট্রাক্টের মেয়াদ শেষ হলে আরও বড় কিছু করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি।
১৯৯০ সালে জন ওয়াটারের মিউজিকাল ক্রাই-বেবি (১৯৯০) তে অভিনয় করেন ডেপ যেখানে ডেপের চরিত্র আগের চরিত্র থেকে ছিল পুরোপুরি বিপরীত এবং বেশ সাফল্য পায় এই মিউজিকাল। একই বছরে টিম বার্টনের এডওয়ার্ড সিজারহ্যান্ডস সিনেমায় নাম চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে ডেপ প্রথম সারির অভিনেতা হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং এই সিনেমা বক্স অফিসে ৫৪ মিলিয়নের বেশি আয় করে। এই সিনেমার সাফল্যের পর ডেপ গভীর, রহস্যময়, খেয়ালী চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্র দেখা যায় বেনি এন্ড জুন (১৯৯৩) এবং হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ (১৯৯৩) এই দুই সিনেমায়। এদের মধ্যে প্রথমটার জন্যে জনি ডেপ গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পান।
পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান এবং পরবর্তী
২০০৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচারস এর অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: দ্য কার্স অব দ্য ব্ল্যাক পার্ল সিনেমায় অভিনয় করেন জনি ডেপ, যা বক্স অফিসে সফল হয় এবং কৌতুকপ্রদ চরিত্র হিসেবে নতুন করে দর্শকদের সামনে হাজির হন। এই সিনেমার সকল পর্বে জ্যাক স্প্যারো চরিত্রে নিজেকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করে রীতিমত আইকনে পরিণত হন তিনি।
পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান এরপর চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি সিনেমায় উইলি ওয়াঙ্কা এবং ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড সিনেমায় স্কটিশ লেখক জে. এম. ব্যারি এর চরিত্রে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার অনন্যতার প্রকাশ ঘটান জনি ডেপ। জে. এম. ব্যারি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একাডেমী অ্যাওয়ার্ড সহ ১০ টির বেশি অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পান।
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তি জনি ডেপের ভালবাসার মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার প্রথম স্ত্রী লরি অ্যালিসনের পর অভিনেত্রী জেনিফার গ্রে এবং শারলিন ফেন এর সাথে আংটি বদল হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। ১৯৯০ সালে সহ-অভিনেত্রী উইনোনা রাইডার কে বিয়ের প্রস্তাব দেন জনি আর তার ডান বাহুতে “উইনোনা ফরেভার” ট্যাটু আঁকা আছে।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জনি ডেপের সাথে ইংরেজ সুপারমডেল কেট মসের সম্পর্ক ছিল। মসের সাথে ব্রেকাপের পর ১৯৯৮ সালে দ্য নাইন্থ গেইট এর সহ-শিল্পী ফ্রেঞ্চ অভিনেত্রী ভেনেসা পেরাডিস এর সাথে সম্পর্কে জড়ান। তাদের দুইটি সন্তান আছে- লিলি-রোজ মেলোডি ডেপ (১৯৯৯) এবং জন “জ্যাক” ক্রিস্টোফার ডেপ ৩য় (জন্ম ২০০২)। ডেপ এবং পেরাডিসের বিচ্ছেদ ঘটে ২০১২ সালের জুন মাসে।
২০১১ সালে মডেল ও অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সাথে সম্পর্কের পর ২০১৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলস এ নিজ বাড়িতে প্রাইভেট সিভিল সিরোমনির মধ্য দিয়ে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচারের কারণ দেখিয়ে হার্ড বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এই ঘটনায় অনেক কাদা ছোড়াছুড়ির পর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্টে কোর্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে, হার্ড ৭ মিলিয়ন ডলার পাবেন আর জনির উপর থেকে নিরোধক আদেশ তুলে নেয়া হবে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তাদের বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।
জনি ডেপ এর অভিনীত চলচ্চিত্র
জনি ডেপের অভিনীত বেশ কিছু বিখ্যাত সিনেমার নামের তালিকা দেয়া হল-
- এ নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট ( ১৯৮৪)
- এডওয়ার্ড সিজার হ্যান্ড ( ১৯৯০)
- হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ (১৯৯৩)
- দ্য নাইন্থ গেইট ( ১৯৯৯)
- স্লিপি হলো (১৯৯৯)
- ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মেক্সিকো (২০০৩)
- ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড (২০০৪)
- চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি (২০০৫)
- সুইনি টডঃ দ্য ডিমন বারবার অব ফ্লিট স্ট্রিট (২০০৭)
- পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজ – কার্স অব দ্য ব্ল্যাক পার্ল (২০০৩), ডেড ম্যানস চেস্ট (২০০৬), অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড (২০০৭), অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস( ২০১১) এবং ডেড মেন টেল নো টেইলস (২০১৭)
- দ্য লোন রেঞ্জার (২০১৩)
- অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (২০১০)
- অ্যালিস থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস (২০১৬)
- শার্লক হোমস- কণ্ঠ (২০১৮)
purchase lamisil online cheap – buy terbinafine online buy grifulvin v
rybelsus 14mg pill – order rybelsus without prescription DDAVP over the counter