১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধ নামে প্রকৃতপক্ষে কোনো যুদ্ধ ছিল না,ছিল ষড়যন্ত্রমূলক একটি যুদ্ধের অভিনয় মাত্র। একটি পাতানো যুদ্ধের ছলনা,একটি প্রহসন। বিশ্বাসঘাতকদের খেলার পুতুলে পরিণত হন সিরাজউদ্দৌলা।বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় এবং ইংরেজরা কর্তৃত্ব গ্রহণ করে।
৪ জুনের নীল নকশার মূল নাটক ঘটে ২৩ জুন ,ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যেতে হয় সিরাজউদ্দৌলাকে। এ নিয়ে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক R.c majumder বলেন, The Battle of plassey was hardly more than a mere skirmish,but its result was more important than that of many of the greatest battles of the world.(An advanced history of india)
১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদের মসনদে বসেন।তখন তার বয়স ২৩ বছর। তিনি আলীবর্দী খানের কনিষ্ঠা মেয়ে আমেনা বেগমের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। মসনদে বসেই তিনি ঘরের শত্রু- ঘসেটি বেগম,শওকত জং এর মোকাবেলা করেন। পরবর্তীতে বিশ্বাসঘাতকদের কোপানলে পতিত হয়ে ইংরেজদের কাছে হার মানতে হয় এই স্বপ্নালু মানুষটির।
ইংরেজদের সাথে বিবাদ
আলীবর্দী খানের আগে কোনো নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন নি। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলা বসে থাকেননি। তিনি এর শেষ দেখার জন্য বদ্ধ পরিকর ছিলেন।তিনি ঘোষনা দেন যে,তিনি তিন কারণে কোম্পানীকে তাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“ইংরেজ বণিকদের এদেশ থেকে তাড়াবার প্রথম কারণ: এরা দেশের প্রচলিত আইন কানুন অমান্য করে কলকাতায় দূর্ভেদ্য দূর্গ ও পরিখা স্থাপন করেছে।”
দ্বিতীয়ত, “এরা বিশ্বাস হারিয়ে দস্তকের অপব্যবহার করেছে।বেআইনিভাবে কোম্পানীর নামে প্রাইভেট ব্যক্তিদের মধ্যে দস্তক( বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার পাশ) বিতরণ করে সরকারকে এর বৈধ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে”
তৃতীয়ত, জমিদারী ইজারার নিয়ম ভঙ্গ করে ইংরেজরা তাদের কলকাতা জমিদারীকে নিজেদের সার্বভৌম এলাকা হিসেকে গণ্য করেছে এবং নবাবী আইন আদালত থেকে পালিয়ে এসে অনেক অপরাধী কলকাতায় এসে আশ্রয় নিচ্ছে এবং কোম্পানী এসব অপরাধীর স্বাগত জানাচ্ছে।
নবাবের বিরুদ্ধে গোপন চুক্তি
সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন ইংরেজ বিরোধী।তাই কলকাতা কাউন্সিল তাকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।ক্লাইভ ছিলেন সে ষড়যন্ত্রের স্হপতি।
ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য উমিচাঁদকে দালাল হিসেবে নিয়োগ করেন।বাংলার মসনদ পাওয়ার লোভে মীরজাফর নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে
যোগ দেন।ইয়ার লতিফ খান ও খাদিম হোসেন নামক দুইজন সৈন্যাধ্যক্ষও ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মীরজাফরের অনুসরণ করেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আরো ছিলেন-রায় দূর্লভ, রাজবল্লভ,জগৎশেঠ,মির্জা বেগ,খাদিম হোসেন খান প্রমুখ।
ইংরেজ এজেন্টরা চুক্তিনামার খসড়া প্রস্তুত করেন।তারা ১৯ মে চুক্তিনামায় দস্তখত করেন এবং তা মীরজাফরের নিকট পাঠান।মীর জাফর ৪ জুন চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন।কলকাতা কাউন্সিল চুক্তিবদ্ধ হয় যে,সিরাজকে উৎখাত করে মীর জাফরকে মসনদে বসানো হবে এবং তাকে নবাব রাখার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে।এর শর্ত নিম্নরূপ :
১. উভয়পক্ষ ৯ ফেব্রুয়ারি আলিনগর চুক্তি পালন করবে।
২. সমুদয় সম্পত্তিসহ সকল ফরাসীদের ইংরেজদের নিকট সমর্পন করা হবে।
৩. এশিয়া হোক বা ইউরোপ হোক কোম্পানীর সকল শত্রুকে নবাবের শত্রু বলে গণ্য করা হবে এবং ভবিষ্যতে নবাবের প্রয়োজনে কোম্পানির সামরিক সাহায্য চাইলে এর খরচ বহন করবেন নবাব।
৪. সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক কলকাতা আক্রমণের ফলে কোম্পানীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন এক কোটি,ইউরোপীয়দের প্রাইভেট ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ,নগরীর হিন্দু মুসলিম,আর্মেনিয় অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হবে।
৫. কলকাতার আশেপাশের জমিদারিসমূহ এবং কলকাতার দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চলের উপর কোম্পানিকে জমিদারিস্বত্ব প্রদান করা হবে।
৬. হুগলীর ভাটিতে ভবিষ্যতে কোনো নবাবী দূর্গ স্থাপন করা হবে না।
পলাশীর যুদ্ধ : বেদনার যুদ্ধ
ষড়যন্ত্র যখন পরিপক্ব, বিশ্বাসঘাতকরা যখন প্রস্তুত তখন ক্লাইভ ২৩০০ ইউরোপীয় ও দেশীয় সৈন্য ও ৮ টি কামান নিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হলেন।
সিরাজউদ্দৌলা মতলব বুঝতে পেরে মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর প্রান্তরে সৈন্য মোতায়েন করলেন।নবাবের যুদ্ধশক্তি ছিল ১৫,০০০ অশ্বারোহী, ৩৪,০০০ পদাতিক সৈন্য, আর ৪০ টি কামান।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত যুদ্ধে নবাবের পক্ষে মোহনলাল,মীর মদন ও সিনফ্রের আক্রমণে ক্লাইভ সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পিছনে হটতে বাধ্য হয়।এমনি অবস্থা শোচনীয় দেখে আম্রকুঞ্জের আড়ালে আশ্রয় নেয় ইংরেজ বেনিয়া বাহিনী ।কিন্তু বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর,খাদিম হোসেন ও রায় দূর্লভ তাদের সৈন্যদের নিয়ে দূরে সরে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।এমনি সময় ইংরেজ সৈন্যদের একটি বিক্ষিপ্ত গুলিতে দেশপ্রেমিক মীর মদনের প্রাণনাশ হয়।
নবাব তখন মীর জাফরকে ডেকে পাঠান।কিন্ত বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর সেদিনের মতো যুদ্ধ বিরতি করার প্রস্তাব দেয়। এমনকি আশ্বাস দেয় যে,পরের দিন সে সর্বশক্তি দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।সিংহাসনে বসার জন্য মিথ্যা শপথ করতেও একটুও দ্বিধাবোধ করেনি বেঈমান জাফর।নবাব তাকে বিশ্বাস করে বসেন এবং যুদ্ধ বিরতির ঘোষনা দিলে নিশ্চিত বিজয়ের মুখ থেকে ফিরে আসতে রাজি ছিলেন না মোহনলাল ও সিনফ্রে।কিন্তু নবাবের আদেশ যে মানতেই হবে।যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরতে হওয়ায় সৈন্যরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।ঠিক তখনই মীর জাফরের ইঙ্গিতে ক্লাইভ পিছন দিক দিয়ে নবাবের বাহিনীর উপর আক্রমন করে।মীর জাফর ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকরা দূরে সরে গিয়ে ক্লাইভের সাথে যোগ দেয়।শেষ পর্যন্ত নবাবের সৈন্যরা পলায়ন করতে থাকে।অবশেষে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকায় বিমূঢ় হয়ে নবাবকে পরাজয় বরন করতে হয়।
স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে রাজমহলে যাত্রা শুরু করলে পথিমধ্যে মীর জাফরের জামাতা মীর কাসিমের নিকট ধরা পড়েন।মীর জাফর পুত্র মীরনের আদেশে মুহাম্মদী বেগ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেন।
পলাশীর যুদ্ধের মূল খসড়া ৪ জুন তৈরি হয়েছিল।ষড়যন্ত্রের কোপানলে পতিত হয়ে সিরাজউদ্দৌলা কে বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নত করতে হয়।সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ১৯০ বছরের জন্য শাসন প্রতিষ্ঠা করে।প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলাপরিণত হয় নরকের বাংলায়।
পলাশী যুদ্ধ খাঁটি যুদ্ধ নয়,ছিল পাতানো খেলা মাত্র নির্দ্বিধায় এটা বলাই যায়।
purchase lamisil online cheap – cost fluconazole 100mg purchase griseofulvin generic
purchase rybelsus – desmopressin generic generic DDAVP