ইব্রাহিমোভিচ একবার তার স্কুলে ‘পাঁচ বছর পর আমি কী করব’ বিষয়ক রচনায় লিখেছিলেন ” ইতালিতে পেশাদার ফুটবল খেলব,আমার প্রচুর অর্থ থাকবে,সাগরপাড়ে বাড়ি করব, অনেক বড় বিত্তশালী হব।” ইব্রাহিমোভিচ পাঁচ বছর পর ঠিক ই পেশাদার ফুটবল খেলা শুরু করেন, তবে সেটা ইতালির কোন ক্লাব না হয়ে সেটা ছিল নেদারল্যান্ডের আয়াক্স আমস্টারডাম ক্লাব। তার স্বপ্নের দেশ ইতালিতে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় তার তিন বছর পরেই। ইতালিতে প্রথমে নাম লেখান জুভেন্টাসে এরপর পাড়ি দেন স্বপ্নের ক্লাব ইন্টার মিলানে। ইন্টার মিলান থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি দেওয়ার অনেক আগেই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ অঢেল অর্থ – সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে সুইডিশ ফুটবলের এই রাজা প্রথমে সুইডেনের হয়ে না খেলে বাবার দেশ বসনিয়ার হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু বসনিয়ার কোচ তাকে জাতীয় দলে না নিয়ে অলিম্পিক দলের জন্য নির্বাচিত করলে তিনি বসনিয়ার হয়ে না খেলে সুইডেনের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। সুইডিশ ফুটবলের এই মহাতারকার অর্থ -বিত্তের বিলাসবহুল জীবনের আড়ালে রয়েছে জীবন সংগ্রামের এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প।
শৈশব
সুইডিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকার জীবন টা সোনার চামচ মুখে দিয়ে শুরু হয়নি। সুইডেনের অভিবাসী ক্যাম্পে বসনিয়ান বাবা সোভিক ও ক্রোয়েশিয়ান মা জুরকার ঘরে ১৯৮১ সালের ৩ অক্টোবর সুইডেনের মালমো শহরে জন্ম হয় ইব্রাহিমোভিচের। বসনিয়ান মুসলিম বাবা শেফিক ইব্রাহিমোভিচ ও ক্রোয়েশিয়ান ক্যাথলিক মা জুরকা গ্রাভিক যখন দুই দেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে সুইডেনে পাড়ি জমান, তখন তাদের দেখা হয় কিন্তু যখন তাদের ঘরে ইব্রাহিমোভিচের জন্ম হয় তার কিছুদিন পরেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথমে ছোট্ট ইব্রাহিমোভিচ মা আর সৎ বাবার সাথে ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরে ই তার বাবা সোফিক তাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। তার বাবা একটি গুদামঘরে চাকরি করতেন, সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তার বাবা তার কোন যত্ন নিতে পারতেন না। তাই নিজের প্রতি যত্নটুকু নিজেকেই নিতে হতো ইব্রাকে। তবে বাবা শেভিকের নজর এড়ায়নি সন্তানের ফুটবল প্রীতির বিষয়টি। মাত্র চার বছর বয়স থেকে ফুটবলের প্রতি ইব্রাহিমোভিচের ভালেবাসা তৈরি হয় । যখন তার বয়স আট বছর তখন তার বাবা তাকে এক জোড়া বুট উপহার দেন। ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা তখন আরো বেড়ে যায়। ছেলেকে নামকরা ফুটবলার বানাতে চেয়েছিলেন সে কারণে তার বাবা চেষ্টা করতেন ছেলেকে শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে বড় করতে কিন্তু ছোটবেলা থেকে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের শৃঙ্খলাবদ্ধতা একদম ছিল না। স্কুলের মধ্যে গুন্ডা টাইপের ছেলে ছিলেন ইব্রাহিমোভিচ এবং ছোট বেলায় একটি সাইকেলও চুরি করেছিলেন। তার সম্পর্কে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক একবার বলেন,” আমার স্কুলের পাঁচ জন গর্দভ ছাত্রের মধ্যে ইব্রাহিমোভিচ ছিলেন একজন।” কিন্তু ছাত্র হিসেবে গর্দভ হলেও তার ফুটবল প্রতিভা ছিল অসামান্য যে কারণে তিনি তার ফুটবলের প্রতিভা দিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন।
পেশাদার ক্লাব ক্যারিয়ার
মালমো
ইব্রাহিমোভিচ তার ক্লাব ফুটবল শুরু করেন তার নিজের শহর মালমো শহরের মালমো ক্লাবে। ১৯৯৬ সালে তিনি মালমো ক্লাবের জুনিয়র দলের হয়ে খেলা শুরু করেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি মালমো ক্লাবের সিনিয়র দলের হয়ে সুইডেনের পেশাদার ফুটবল লীগে খেলেন। সেই মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচের দল লীগে ১৩ তম হয়ে রেলিগেশনের শিকার হয় এবং দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়। কিন্তু পরের বছর ইব্রাহিমোভিচের অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যের কারনে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠে আসে। তখনই তার উপর নজর পড়ে ইংলিশ ক্লাবের কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের। তিনি তাকে কেনার চেষ্টা চালান। ইব্রাহিমোভিচও আর্সেনালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু যখন ওয়েঙ্গার তাকে ট্রায়াল দিতে বলেন তখন তিনি আর্সেনালে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন,” আমার বয়স যখন ১৭, আর্সেন ওয়েঙ্গার তখন আমাকে আর্সেনালের সাথে ট্রায়াল দিতে বলেন। আমি না করে দেই কারণ ইব্রাহিমোভিচ কখনো অডিশন দেন না।”
আর্সেন ওয়েঙ্গার যখন তাকে কেনার ব্যর্থ চেষ্টা চালান তখন তার উপর নজর ছিল ডাচ ক্লাব আজাক্সের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর লিও বেনহ্যাক্কারের। ২০০১ সালের ২২ মার্চ মালমো ও আজাক্সের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৮.৭ মিলিয়ন ইউরো বা ৮৭ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা ট্রান্সফার ফি তে আমস্টারডামে পাড়ি জমান। তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। সবগুলো ক্লাবে কেমন খেলেছেন সেটা দেখা যাক।
আজাক্স
ইব্রাহিমোভিচ ২০০১ সালের জুলাই থেকে ডাচ ক্লাব আজাক্স আমস্টারডামের হয়ে খেলা শুরু করেন। কিন্তু সেই সময়ের কোচ কো আড্রিয়ান্স তাকে খুব কম ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছেন। নভেম্বরে যখন কো আড্রিয়ান্স কে বরখাস্ত করে নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান কে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তিনি ইব্রাহিমোভিচ কে শুরুর একাদশে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই মৌসুমে আজাক্স লীগ শিরোপা জয় করে। পরের মৌসুমে ২০০২ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর আজাক্সের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগের অভিষেক ম্যাচে ফরাসি ক্লাব লিঁও এর বিপক্ষে তিনি দুই গোল করেন। তার দুই গোলে সেই ম্যাচে তার দল ২-১ গোলের জয় পায়। সেই মৌসুমে তার দল কোয়ার্টার ফাইনালে মিলানের কাছে হেরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইব্রাহিমোভিচ মোট পাঁচ গোল করেন। আজাক্সের হয়ে ২০০৪ সালে তার শেষ মৌসুমে এনএসি এর বিপক্ষে তার দেওয়া একটি গোল কে “ইউরোস্পোর্টস” তাদের পাঠকদের ভোটে ” গোল অব দ্য ইয়ার” এ ভূষিত করে।
২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সুইডেনের আন্তর্জাতিক এক ম্যাচে আজাক্সের সতীর্থ খেলোয়ার রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট ইব্রাহিমোভিচের সাথে ধাক্কা লেগে ইনজুরিতে পড়েন। রাফায়েল অভিযোগ করেন ইব্রাহিমোভিচ তাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করেছে। এই ঘটনায় ডাচ ক্লাব হঠাৎ করে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট ইব্রাহিমোভিচ কে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে বিক্রি করে দেয়।
জুভেন্টাস
ইব্রাহিমোভিচ ১৬ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি তে আজাক্স থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেন। শুরু তে তাকে প্রথম একাদশে খেলানো হয় জুভেন্টাসের টপ স্কোরার ডেভিড ট্রেজেগুয়েত এর ইনজুরির জন্য কিন্তু মৌসুম শেষে তিনি জুভেন্টাসের হয়ে ১৬ গোল করেন। কিন্তু প্রথম মৌসুমের থেকে দ্বিতীয় মৌসুম তুলনামূলক ভাবে তার খারাপ কাটে। এ সময় তাকে আক্রমণ ভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং মাঠে তার গোল করার থেকে গোল করানোর দায়িত্ব পড়ে। এ মৌসুমে বেশীর ভাগ ম্যাচে তাকে সাইড বেঞ্চে কাটাতে হয় এবং অল্প ম্যাচে তাকে নামানো হয়। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আর্সেনালের বিপক্ষে হারার পর জুভেন্টাসের ভক্তরা ইব্রাহিমোভিচের উপর হতাশ হন। এরপরের দুই মৌসুমে জুভেন্টাস কালসিওপলি স্ক্যান্ডালের কারণে নিষিদ্ধ হয় এবং জুভেন্টাস কে দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইব্রাহিমোভিচ জুভেন্টাস ছেড়ে ইন্টার মিলানে যোগ দেন।
ইন্টার মিলান
২০০৬ সালের ১০ আগস্ট ইব্রাহিমোভিচ ইন্টার মিলানের সাথে ২৪.৮ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি তে চার বছরের জন্য চুক্তি করেন। তখন ইব্রাহিমোভিচ জানান তার ছোটবেলা থেকে স্বপ্নের ক্লাব ইন্টারমিলান। ২০০৬ সালে ২৬ আগস্ট রোমার বিপক্ষে ইতালিয়ান সুপার কাপে ইন্টার মিলানের হয়ে অভিষেক হয় ইব্রার। সেই ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট খেলেন তিনি এবং তার দলও জয় পায়। ইন্টারের হয়ে ফ্লোরেন্টিনার বিপক্ষে ইব্রাহিমোভিচ ইতালিয়ান লীগ সিরি’আ তে প্রথম গোল করেন ৯ সেপ্টেম্বর। এর তিন দিন পর ইন্টারের হয়ে তিনি ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং সিপি’র বিপক্ষে মাঠে নামেন। কিন্তু তার দল ১-০ গোলে হেরে বাজে ভাবে প্রতিযোগিতা শুরু করে। ২৮ অক্টোবরে তিনি সিরি’আ লীগের মিলান ডার্বিতে নগর প্রতিপক্ষ এসি মিলানের বিপক্ষে মাঠে নামেন। সে ম্যাচে তিনি একটি গোল করেন এবং তার দল ৪-৩ গোলের এক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ জিতে নেয়। এই মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচ তার দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেন এবং তার দল ইন্টার মিলানও শিরোপা জিতে নেয়।
পরের সিজনে ইব্রাহিমোভিচ ইন্টারের হয়ে ১০০ তম ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যে ইন্টার টানা দ্বিতীয় বারের মত সিরি’আ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তিনি দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ গোল করেন।২০০৭ সালে ইন্টারের সাথে ২০১৩ সাল পর্যন্ত থাকার চুক্তি করেন এবং চুক্তি অনুযায়ী তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়ার হন। ২০০৭ সালে তিনি ” সিরি’আ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার ” এবং সিরি’আর সেরা বিদেশী খেলোয়ার হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচ তার অসাধারণ ক্রীড়া দক্ষতা দেখিয়ে লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন এবং ইন্টার মিলান হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করে।
বার্সেলোনা
ইন্টারমিলান থেকে ইব্রাহিমোভিচ কে বার্সোলোনা কিনে আনে ৪৬ মিলিয়ন ইউরো এবং স্যামুয়েল ইতো’র বিনিময়ে। ইব্রাহিমোভিচ কে ক্যাম্প ন্যূ তে রাজকীয়ভাবে স্বাগতম জানায় প্রায় ৬০ হাজার দর্শক। বার্সার সাথে ইব্রাহিমোভিচের চুক্তি ছিল পাঁচ বছরের কিন্তু বার্সার সাথে পাঁচ বছরের স্থায়ীত্ব হয় নি ইব্রার সম্পর্ক। বার্সা কে ইব্রাহিমোভিচ মাত্র ১ মৌসুম কাটান। বার্সার হয়ে মোট ৪৬ ম্যাচে ২২ টি গোল করেছেন এবং করিয়েছেন আরও ১৩ টি। কিন্তু বার্সোলোনা কোচ পেপ গার্দিওলার সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারনে তিনি বার্সা ছেড়ে চলে যান। তিনি পেপ গার্দিওলার সাথে খারাপ সম্পর্কের বিষয়ে বলেন,” আপনি কিনেছেন ফেরারি কিন্তু আপনি এটি ফিয়াটের মত করে চালাচ্ছেন।”
এসি মিলান
বার্সা থেকে এসি মিলান তাকে এক বছরের ধারে নেয়। ২০১০-১১ মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচ এসি মিলানে তার খেলা শুরু করেন। এসি মিলানের হয়ে ইব্রাহিমোভিচ মোট ৮৫ টি ম্যাচ খেলে ৫৬ টি গোল করেন। ৮৫ টি ম্যাচের মধ্যে ৬২ টি সিরি’আ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ৪২ টি। তিনি এসি মিলানের হয়ে একবার সিরি’আ ও ইতালিয়ান সুপার কাপের শিরোপা জিতেছেন।
পিএসজি
২০১২ সালের ১৭ জুলাই ইব্রাহিমোভিচ কে ২০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি তে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন কিনে নেয়। ইব্রাহিমোভিচের সাথে বোনাস সহ বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ইউরো বেতন দেওয়ার ভিত্তি তে তিন বছরের চুক্তি করে প্যারিসের ক্লাব টি। এই চুক্তির ফলে ইব্রাহিমোভিচ বিশ্বের দ্বিতীয় দামী খেলোয়ার হন। ইব্রাহিমোভিচ প্যারিসের এই ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছেন। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন এর হয়ে চার মৌসুমে মোট ১৮০ টি ম্যাচ খেলে ১৫৬ টি গোল করেছেন। পিএসজির হয়ে তিনি চারবার লীগ ওয়ান, তিন বার কাপ দে লা লীগ এবং দুইবার ফ্রেঞ্চ কাপ জিতেছেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ইব্রাহিমোভিচ ২০১৬-১৭ মৌসুমে পিএসজি থেকে ফ্রি খেলোয়ার হিসেবে নিজস্ব স্বাধীনতায় ইউনাইটেডের সাথে সাপ্তাহিক ২ লাখ ইউরো বেতনে এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। তিনি যদি ভালো পারফর্ম করেন তাহলে চুক্তি বাড়ানো হবে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু ম্যানইউ এর খুব বেশী ম্যাচ খেলা হয় নি ইনজুরির কারনে। অধিকাংশ সময় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে মাত্র ২৮ ম্যাচ খেলে তিনি ১৭ গোল করেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ইউনাইটেডের সাথে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করলেও সময় ভালো কাটেনি তার। মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলে কোন গোল করতে পারেন নি। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে ইউনাইটেড ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
লস এ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সি
২০১৮ সালের ২৩ মার্চ ইব্রাহিমোভিচ ম্যানইউ ছেড়ে মার্কিন মুলুকের মেজর লীগ সকারের ক্লাব লস এ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
ইব্রাহিমোভিচের সামনে সুযোগ ছিল ফুটবল খেলার জন্য তিনটি দেশ কে বেছে নেওয়ার। কিন্তু তিনি বসনিয়া,সুইডেন ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে তিনি সুইডেন কে বেছে নেন। ২০০০-১ সালের নরডিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে ফারো আইল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সুইডেনের হয়ে তার অভিষেক হয়। তিনি ২০০২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আজারবাইজানের বিপক্ষে প্রথম কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলায় সুইডেনের হয়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত ২০০২ সালের বিশ্বকাপে সুইডেনের হয়ে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে সেনেগালের কাছে হেরে তাদের বিদায় হয়।
ইউরো ২০০৪ এবং বিশ্বকাপ ২০০৬
সুইডেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইউরো ২০০৪ এ কোয়ালিফাই করে। বাছাইপর্বে তিনি তিনটি গোল করেন। মূলপর্বে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে সুইডেন ৫-০ গোলের জয় পায়, সে ম্যাচে তিনি পেনাল্টি থেকে এক গোল করেন এবং একটি গোল সতীর্থ কে দিয়ে করিয়েছিলেন। ইতালির বিপক্ষে ৮৫ মিনিটে তার এক অসাধারণ ব্যাক হিল গোলে সুইডেন ১-১ গোলে ড্র করে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি পেনাল্টি মিস করেন,ফলে পেনাল্টি শ্যূট আউট থেকে হেরে বিদায় নেয় সুইডেন।
২০০৬ বিশ্বকাপে সুইডেন কোয়ালিফাই করে। কিন্তু এবারও তারা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে হেরে বাদ পড়েন। এবার তাদের বিদায় করে জার্মানি।
ইউরো ২০০৮ এবং ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই
২০০৮ সালে ইউরো কাপের কোয়ালিফাইং ম্যাচের মাত্র দুইদিন আগে তাকে দলে ডাকা হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট না জানিয়ে টিম হোটেল এর বাইরে যাওয়ার কারনে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল সেটা তার নিকট ন্যায় সঙ্গত মনে হয় নি সে কারনে তিনি খেলতে অস্বীকৃতি জানান কিন্তু তার দল নর্দার্ন আইল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গেলে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কোয়ালিফাইয়ারে তিনি কোন গোল করতে পারেন নি,তবে মূল পর্বে তিনি গ্রিস ও স্পেনের বিপক্ষে ১ টি করে গোল করেন কিন্তু তার দল রাশিয়ার বিপক্ষে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়।
২০১২ ইউরো এবং ২০১৪ বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই
২০১২ ইউরো কোয়ালিফায়ারে ইব্রাহিমোভিচ কে দলের অধিনায়ক করা হয়। তিনি তার দলকে ইউরো ২০১২ এর মূলপর্বে তুলেন। মূলপর্বে আয়োজক দেশে ইউক্রেনের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়।সে ম্যাচে তিনি একটি গোল করেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে করা তার একটি গোল টুর্নামেন্টের সেরা গোল হয় এবং ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে যাওয়ার পরও তারা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেন।
২০১৪ সালেও তার দল সুইডেন বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
২০১৬ ইউরো
২০১৬ ইউরো তে সুইডেন মূলপর্বে উঠলেও গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ হেরে তারা গ্রুপের সর্বশেষ দল হিসেবে বিদায় নেয়।
অবসর
২০১৪ সালে বিশ্বকাপে উঠতে ব্যর্থতা এবং ২০১৬ সালের ইউরো তে গ্রুপের শেষ দল হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করেন। তিনি পুরো টুর্নামেন্টে গোল মুখে মাত্র একটি শট নেন। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর তিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটান।
ব্যক্তিগত জীবন
ইব্রাহিমোভিচের দুই জন আপন ভাই-বোন এবং তিনজন সৎ ভাইবোন রয়েছে। ইব্রাহিমোভিচ ও তার স্ত্রী হেলেনা সেগারের দুইটি ছেলে সন্তান হয়েছে। একজনের নাম ম্যাক্সিমিলান এবং অপর জনের নাম ভিনসেন্ট। তার একাধিক বাড়ির মধ্যে তার জন্মস্থান সুইডেনেও একটি বাড়ি রয়েছে যেখানে তিনি গ্রীষ্মের ছুটি কাটান। তিনি তায়াকোয়ান্দো তে ব্লাক বেল্ট প্রাপ্ত। তিনি ২০০৩ সালে তার নিজের নাম কে ট্রেড মার্ক হিসেবে রেজিস্ট্রি করেন যার ফলে তার নাম অন্য খেলার সামগ্রী,পোষাক ও জুতায় তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করতে পারবেন না। প্যারিসে তার নামে একটি বিখ্যাত বার্গার রয়েছে। ইব্রাহিমোভিচ নাইকির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রিয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন বক্সার মোহাম্মদ আলী।
তিনি ২০১৫ সালে লীগ ম্যাচে গোল করার পর জার্সি খোলেন তখন তার শরীরে বিশ্বব্যাপী ৫০ জন মানুষের নাম দেখা যায় যারা ক্ষুধার্ত হয়ে দিন যাপন করছে। তিনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য ফেমিন সংগঠনের হয়ে এই কাজ টি করেন।
২০১৬ সালে তার জীবনী নিয়ে “Becoming Zlatan” নামের একটি মুভি তৈরি করা হয়েছে। মুভিটি বিশ্বের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছে।
বর্তমানে তিনি ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। তার বার্ষিক আয় ২৫ মিলিয়ন ইউরো যা ৩৫ মিলিয়ন ডলারের সমান।
ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান
ইব্রাহিমোভিচ সুইডেন,ইতালি,নেদারল্যান্ড,ইংল্যান্ড,স্পেন,ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৯ টি ক্লাবের হয়ে ৫১৭ টি ম্যাচ খেলে ৩১৯ টি গোল করেছেন এবং দেশের হয়ে ১১৬ ম্যাচে ৬২ গোল করেছেন।
পুরষ্কার
সুইডিশ ফুটবল পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার – ২০০২
ইউরোস্পোর্ট গোল অব দ্য ইয়ার -২০০৪
সিরি’আ মোস্ট লাভড প্লেয়ার – ২০০৫
ব্যালন ডি’অর – ২০০৫(৮ম),২০০৭(৭ম),২০০৮(৯ম),২০০৯(৭ম),২০১২ (১০ম) এবং ২০১৪ (৪র্থ)
সিরি’আ ফরেন প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার – ২০০৪-০৫,২০০৭-০৮,২০০৮-০৯
গাল্ডবোলেন – ২০০৫,২০০৭-২০১৬ (একটানা ১০ বার)
সুইডিশ ফরওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার – ২০০৫,২০০৭-২০১৬ (একটানা ১০ বার)
সিরি’আ ফুটবলার অব দ্য ইয়ার – ২০০৭-০৮,২০০৮-০৯,২০১০-১১
সিরি’আ গোল অব দ্য ইয়ার – ২০০৮
সিরি’আ টপ স্কোরার – ২০০৮-০৯,২০১১-১২
লীগ ওয়ান প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার – ২০১২-১৩,২০১৩-১৪,২০১৫-১৬
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ মোস্ট এ্যাসিস্ট – ২০১২-১৩
ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড – ২০১৩
তথ্যসূত্র:
১.https://www.srune.com/lists/50-facts-about-zlatan-ibrahimovic/53
২. https://www.biography.com/people/zlatan-ibrahimovic-21342025
৩. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Zlatan_Ibrahimovi%C4%87
৪. http://www.espn.in/football/club/manchester-united/360/blog/post/3109890/ibrahimovics-best-stats-man-united-juventus-milan-barcelona-psg-sweden
how to buy prandin – buy empagliflozin for sale order empagliflozin 25mg for sale