আহমদ ছফা : বাংলা সাহিত্যের এক অকতুভয় সৈনিক

27

সলিমুল্লাহ খান তাঁর আহমদ ছফা র ব্রত লেখনীটিতে আহমদ ছফা কে “গরীবের রবীন্দ্রনাথ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর সেই লিখা থেকেই ছফার রবীন্দ্রনাথ নিয়ে একটি বাক্য উদ্ধৃত করা যায়,

“গ্যেটের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমার জীবনের মহত্তম মানুষ, জীবনের সমস্ত রকম সমস্যা-সংকটে আমি রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করতে চেষ্টা করেছি”

— (ছফা ১৯৯৪:৬৫)

খান সাহেবের সেই লিখাটিতে তিনি আহমদ ছফা কে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে ছফাকেই রবীন্দ্রনাথের নিকটতম তুলনা হিসেবে স্থাপন করেছেন এবং নানান যুক্তি প্রদান করেছেন।

আহমদ ছফা
আহমদ ছফা
Source: somewhere in… blog

আহমদ ছফা কে অনেকে কেবল প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করলেও সাহিত্য আলোচক-সমালোচকদের মতে তিনি সাহিত্যের সকল শাখাতেই কমবেশি পদার্পণ করেছেন এবং সফলভাবেই সেসব জায়গায় তিনি অবদান রেখে গেছেন।কি প্রবন্ধ, কি উপন্যাস,কি কবিতা- সকল ক্ষেত্রেই  তাঁর বিচরণ ঈর্ষণীয়ও বটে। ছফা যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস “সূর্য তুমি সাথী” লিখেন তখন তাঁর বয়স সবেমাত্র একুশ। এই একুশ বছর বয়সেই শব্দের গাঁথুনি ,উপন্যাসের পটভূমি ,গল্প বর্ণনা সবকিছু দিয়েই বাংলাসাহিত্যে তাঁর আসন পরিপক্ক করে নেন। সেই উপন্যাসটি তখনই ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। এই উপন্যাস পড়ে এরকম কিছু পাঠ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছিল,

“ এতো অল্প বয়সে এতোটা শৈল্পিক পরিপক্কতা আমার কল্পনারও অতীত”

–অধ্যাপক আবুল ফজল

“ সূর্য তুমি সাথী এই উপন্যাসটিতে সমাজের বাস্তব ছবি আশ্চর্য গতিশীলতায় বাঁধা পড়েছে”

—নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (আকাশবাণী)

অনেক পাঠক তাঁকে সে সময়ে তারাশঙ্কর বাবুর সাথেও তুলনা করেছিলেন। ছফা অবশ্য এরপর আর থেমে থাকেন নি। তিনি যে পাকাপোক্তভাবে বাংলা সাহিত্যের আসন দখল করতে এসেছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এরপরের বিভিন্ন লিখাতেই। সেটা উপন্যাস হোক কিম্বা প্রবন্ধ কিম্বা কবিতা। যেখানে তিনি একদিকে লিখেছেন “ একজন আলী কেনানের উত্থান পতন” তো অন্যদিকে লিখেছেন “বাঙালি মুসলমানের মন”। একজন সাধারণ মানুষ আলী কেনানের জীবনের উত্থান পতন নিয়ে রচিত হয় “একজন আলী কেনানের উত্থান পতন” উপন্যাসটি।ছফা যেখানে আলী কেনানকে অসাধারণ করে তুলেছেন তাঁর চরিত্রকে বিকশিত করার মাধ্যমে।আঘাত করেছেন ধর্মব্যবসার মূলকে,যারা মাজারকে নিয়ে ব্যবসা করেন তাদেরকে। এই ছফাই লিখেছেন “বাঙালি মুসলমানের মন” নামক প্রবন্ধের বই। বাঙালি মুসলমান জাতিটি যে আলাদা একটি জাতি,গোত্র সেইটা তিনি এই রচনাতে ফুটিয়ে তুলেন। সলিমুল্লাহ খান তাই তাঁকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি মুসলমান লেখক বলতেও কুণ্ঠিত বোধ করেন না। আবুল ফজল,কাজী আবদুল ওদুদদের হাত ধরে বাঙালি মুসলমান লেখক গোষ্ঠীটি বিকশিত হওয়া শুরু করে,আর তার পরিপক্কতা পায় অবশ্যই আহমদ ছফার আগমনের মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রেই ছফা তাঁর এই অগ্রজদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। মীর মশাররফ হোসেনের “বিষাদসিন্ধু” গ্রন্থটির পর বোধ হয় বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ “বাঙালি মুসলমানের মন”। বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস যে নির্যাতিত গোষ্ঠীর ইতিহাস তা ছফা প্রবন্ধটিতে তুলে ধরেছেন। ছফা বাঙালি মুসলমানদের সংগ্রামের প্রসঙ্গটিও এনেছেন এই লিখাটিতে। তাঁর ভাষ্যে যেটি এরকম,

“ বাঙালি মুসলমান বলতে যাঁদের বোঝায় , তাঁরা  কেবলমাত্র দুটি আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিলেন এবং অংশগ্রহণ করেছিলেন।তার একটি তিতুমীরের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত ওহাবি আন্দোলন ।অন্যটি হাজি দুদুমিয়ার ফারায়েজি আন্দোলন।এই দুটি আন্দোলনই বাঙালি মুসলমানেরা মনে-প্রাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন।“

—– বাঙালি মুসলমানের মন , পৃ-৩৭

আহমদ ছফা
আহমদ ছফা

এই গ্রন্থের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ “বাংলার চিত্র ঐতিহ্যঃসুলতানের সাধনা”। এস এম সুলতান শিল্পী হিসেবে এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে আহমদ ছফা যে সময়ে সুলতানকে নিয়ে প্রবন্ধটি লিখেন সে সময়ে সুলতানের চিত্রকর্মগুলো ততটা জনপ্রিয় হয় নি, মোদ্দাকথায় সুলতানকে তখনো ততটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পরই সুলতানের বেশ নামডাক হয় এবং সুলতান কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সকলে বুঝতে পারেন। পাশ্চাত্যের ভাবধারা থেকে বেরিয়ে সুলতান যে বিউপনিবেশায়িত চিত্রকর্মগুলো করেছিলেন সেগুলো ক্রমশই গুরুত্ব পেতে শুরু করে। সুলতান প্রচণ্ড মেধাবী একজন শিল্পী এবং এই জিনিসটা হয়ত সর্বপ্রথম ছফাই ধরতে পেরেছিলেন।ছফাই তাঁর কদর বুঝেছিলেন যার জন্য আমাদের একজন এস এম সুলতানকে হারাতে হয় নি।

আহমদ ছফার বিস্তৃতি অনেক।একটি নিবন্ধে হয়তো সম্পূর্ণটা লিখে শেষ করাও যাবে না।তবুও ছফার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর দিকে আলোকপাত করা উচিত । আহমদ ছফার উপন্যাসগুলোর মধ্যে আরেকটি বেশ জনপ্রিয় উপন্যাস হলো, “গাভী বিত্তান্ত”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্যানেল রাজনীতি নিয়ে রচিত এই উপন্যাস। এই উপন্যাসকে স্যাটায়ারও বলা যেতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্র বিবেচনায়। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষকদের রাজনীতি প্রকাশ পেয়েছে এই উপন্যাসে। এই উপন্যাস অনেক জায়গায় হাসিয়েছে,আবার অনেক জায়গায় চিন্তাও করিয়েছে। আরো একটি উপন্যাসের কথা না বললেই নয়। সেটা হলো “ পুষ্প ,বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ” ।উপন্যাসের ফ্ল্যাপ কভারে একটা ভূমিকা আছে যার কয়েকটা লাইন উদ্ধৃত করা যাক,

“রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রে জীবনবোধের উন্মেষ এবং বিভূতিভূষণের প্রকৃতিনির্ভর রচনাসমূহে জীবনের যে উপলব্ধির বিকাশ ; আহমদ ছফার এ লেখাটি একই গোত্রভুক্ত হয়েও স্বাতন্ত্রের দাবী করতে পারে। মানবজীবনের সাথে বিহঙ্গজীবন ও উদ্ভিদজীবনের যে একটি অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক ,আহমদ ছফা এ রচনাটিতে সে সম্পর্কসমূহের মাত্রা নির্দেশ করতে চেষ্টা করেছেন”

আহমদ ছফার এই গ্রন্থটি জীবন সম্পর্কে তাঁর বোধ ,প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর ভাবনা সকলকিছুকে একসূত্রে গেঁথে দেয়।আর এভাবেই অনবদ্য হয়ে উঠে উপন্যাসটি।উপন্যাসটি পড়ার সময় পাঠক মিশে যায় প্রকৃতির মধ্যে , তাঁর বোধগুলো জীবন্ত হয়ে উঠে, বৃক্ষ আর মনুষ্যে সে তখন তেমন একটা তফাত খুঁজে পায় না।আহমদ ছফার রচনার যে বিষয়টি পাঠককে আকৃষ্ট করে সেটা হলো রচনার সাবলীলতা। একটা সাবলীল রচনা সহজেই পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।ছফার লেখনীর মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক বোধের পরিচয় সবসময়ই পাওয়া যায়। যেমন এই উপন্যাসে তিনি বিপ্লবকে কৃষ্ণের গরু চরানোর সাথে তুলনা করে বলেন বিপ্লবের সময় বিপ্লবীর কখনো বিপ্লবের ফল নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়।এরকম আরো অনেক রাজনৈতিক দর্শন আমরা পাই এই লিখাতে।

আহমদ ছফার লেখা
আহমদ ছফার লেখা

আহমদ ছফা তাঁর লেখনীতে মুক্তিযুদ্ধকে অনেকবারই টেনে এনেছেন।তিনি নিজে ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর রচিত “অলাতচক্র” সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের উপর বাংলাদেশের প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। এই উপন্যাসটিতে ছফা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন ঘটনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন,শুধু তাই নয় ভারতের শরনার্থী শিবিরে তিনি প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলেন। এই উপন্যাসে শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন বিষয় ও উঠে এসেছে। কলকাতায় তখন মানুষজন কিভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছিলো তাও ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসটিতে। আহমদ ছফার বাকিসব উপন্যাসের কথা বলতে গেলে “মরণবিলাস” আর “অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী”র কথাও বলতে হয়।ছফার উপন্যাসের আঙ্গিক,বাক্যগঠন বরাবরই খুব ভালো এবং পাঠককে তা সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। “সূর্য তুমি সাথী”তে তিনি আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন,অথচ উপন্যাসটি বুঝতে কারো তেমন একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। ছফা এভাবেই বাংলা সাহিত্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি রেখে গেছেন।

প্রাবন্ধিক ছফার কথা বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। ছফার প্রবন্ধগুলো মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।একটা হলো রাজনৈতিক আরেকটি অরাজনৈতিক।অরাজনৈতিক প্রবন্ধে তিনি মূলত বিভিন্ন দর্শন, বিভিন্ন শিল্পী কিম্বা সামাজিক কোনো বিষয় নিয়ে লিখেছেন। “শিক্ষার দর্শন”, “রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি সাধনা”, “দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক” ইত্যাদি এসব অরাজনৈতিক প্রবন্ধের মধ্যে অন্যতম। “দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক” প্রবন্ধটিতে তিনি লিখেছেন,

“বাংলার দু’অংশের মানুষের ভাষা ,সাহিত্য এবং সংস্কৃতি এক। আপাতত বাংলাদেশ এবং পশ্চিম-বাংলার বাঙালির মধ্যে কেবলমাত্র এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যেই মিল খুঁজতে হবে ।অন্য কোথাও নয়”

—-বাঙালি মুসলমানের মন,পৃ-১০৭

আবার “রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি সাধনা” প্রবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথকে এভাবে উপস্থাপন করেছেন,

“ আজীবন সুন্দরের সঙ্গে সত্যের সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দুর্মর প্রচেষ্টারই তো নাম রবীন্দ্রনাথ”

“রবীন্দ্রনাথের রচনায় জীবনের আশ্বাসের মত বিভিন্নভাবে সহস্র ধারায় ঘটেছে এই মানবিক প্রেমের নিঃসরণ। সত্যের স্থির অকম্পিত শিখাকে বুকে ধারণ করেছিলেন যিনি, সৌন্দর্যের স্পর্শমাত্রই যিনি আন্দোলিত হয়েছেন মানুষের পাপ,লোভ,রিরংসাকে হত্যা করার জন্য অন্তরস্থিত সত্যের পাষাণে সৌন্দর্যের তলোয়ার শানিয়েছিলেন যিনি,সেই রবীন্দ্রনাথের সাধনা সম্যক উপলব্ধি করতে মূল উৎসের চেয়ে দূরে গিয়ে বিচার করার সুযোগ নেই”

ছফা গভীরভাবে রবীন্দ্রনাথকে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেছিলেন।রবীন্দ্রনাথ থেকে নিয়েছেন সাহিত্যের নির্যাস। আরো একজন ব্যক্তির প্রতি বরাবরই অনুগত ছিলেন ছফা।তিনি আর কেউ নন,জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। অধ্যাপক রাজ্জাক ছফার জীবনে বড় ভূমিকা রাখে।ছফা সবসময় গুরুভক্তির পরিচয় দিয়ে এসেছেন। “যদ্যপি আমার গুরু” নামক গ্রন্থটি অধ্যাপক রাজ্জাককে নিয়েই লিখা। অধ্যাপক রাজ্জাককে নিয়ে বহু গুণীজন লিখেছেন।তবে এতটা বিস্তৃত আর পূর্ণাঙ্গভাবে বোধ হয় ছফাই কেবলমাত্র লিখেছেন। অধ্যাপক রাজ্জাকের সাথে ছফার স্মৃতি, ছফার জীবনে অধ্যাপক রাজ্জাকের প্রভাব সবকিছুই ফুটে উঠেছে এই গ্রন্থটিতে। অধ্যাপক রাজ্জাক নিজে কোনো বই লিখেন নি।এই গুণীজন হয়তো কালের অতল গহ্বরে হারিয়েই যেতেন যদি না তাঁর শিষ্যরা তাঁদের কর্মের মধ্যে তাঁকে ফুটিয়ে না তুলতো।

আহমদ ছফা
আহমদ ছফা

আহমদ ছফা মূলত তাঁর রাজনৈতিক প্রবন্ধগুলোর জন্যই বেশি আলোচিত। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যকে অন্যমাত্রা প্রদান করেন। তাঁর সাহসী লিখাগুলো তুলে এনেছেন রাজনীতির বিভিন্ন নির্মম সত্যকে। তিনি নিজে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) এর তৎকালীন মুখপত্র “দৈনিক গণকণ্ঠ” এর লেখক ছিলেন আহমদ ছফা। গণকণ্ঠেই সর্বপ্রথম তাঁর রাজনৈতিক বিশাল প্রবন্ধ “বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস” প্রকাশিত হয়। “বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস” এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যের অনবদ্য এক সৃষ্টি হিসেবে রয়ে গেছে। দ্বান্দ্বিকভাবে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন। ১৯৭২ সালে “বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস”  সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। ছফা তখন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা সম্পর্কে বেশকিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেন।মজার বিষয় হলো ১৯৯৬ সালে যখন এই গ্রন্থ “সাম্প্রতিক বিবেচনা” এই নতুন সংযোজন সহ পুনর্মুদ্রিত হয় তখন তিনি দেখিয়ে দেন কিভাবে তাঁর করা রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সত্য হয়ে যায়। “বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা” নামক প্রবন্ধে ছফা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্যাগুলোকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।আশ্চর্যজনক হলেও সত্তুরের দশকে ছফার সেই খুঁজে পাওয়া সমস্যাগুলোর সাথে আজকের সমস্যার ও প্রাসঙ্গিকতা যে কেউ খুব সহজেই মিলিয়ে নিতে পারেন। আহমদ ছফা এ ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় আরো বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রবন্ধ,নিবন্ধ,কলাম লিখেছেন।এ সকল লিখাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে থাকবে। ছফা বাংলা ভাষা নিয়েও একটি গ্রন্থ লিখেছেন,যেটি হলো “বাংলা ভাষাঃ রাজনীতির আলোকে”। এই গ্রন্থটিতে ছফা বাংলাভাষার উপনিবেশায়ন নিয়ে বিস্তর আলাপ করেছেন। এবং এই গ্রন্থটিতে তিনি একরকমভাবে বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আছে এই রচনাটিতে।এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়েও ছফা বিভিন্ন লিখা লিখেছিলেন। এক কথায় বলা

যায় বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণই আহমদ ছফার মাধ্যমে এসেছে।

কবি হিসেবেও আহমদ ছফা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর “প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা” , “লেনিন ঘুমোবে এবার”, “জল্লাদ সময়”  গ্রন্থগুলো যথেষ্ট আলোচিত-সমালোচিত। “কবিতার প্রতি” কবিতায় তিনি লিখেছেন,

“ আমাকে নিল না কেউ তাই তোর

ঘরে এলাম বড় ক্লান্ত এই অবেলায়

তুই যদি ফেরাস আজ নিষ্ঠুর মেলায়

যাব,হেন স্থান নেই, রুদ্ধ সব দোর।”

আহমদ ছফা
আহমদ ছফা
Source: somewhere in… blog

“একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা” গ্রন্থের সমালোচনায় ফরহাদ মজহার আহমদ ছফাকে গণমানুষের কবি হিসেবে খ্যাতি দিয়েছিলেন। আর সলিমুল্লাহ খান বলেছেন , “ আহমদ ছফার কবিতাটি ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধের রক্তপান করে জন্ম নিয়েছে”। সমসাময়িক বিভিন্ন কবি-লেখক আহমদ ছফার কবিতার প্রশংসা করেছেন। সমালোচিত ও হয়েছেন কবিতার জন্য। তবে একেবারে খারিজ হয়ে যান নি কখনোই।

আহমদ ছফা বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। আহমদ ছফা কে শুধু পাঠ করলেই হবে না।বরং তাঁকে বুঝতে হবে, ছফাকে বুঝতে পারলে বাঙালি মুসলমান গোষ্ঠীটিকে বোঝাটাও সহজ হবে। প্রবন্ধ,উপন্যাস কিংবা কবিতা কোনোক্ষেত্রেই ছফাকে সরাসরি করার কোনো সুযোগ নেই।এর চেয়ে বরং ছফাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হোক। তাঁর যুক্তিগুলোকেও খন্ডন করা হোক। সমালোচনা সাহিত্যে সেটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে। ছফাকে নিয়ে নুরুল আনোয়ার,সলিমুল্লাহ খানসহ আরো অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। তাদেরকে সাধুবাদ জানাই,ছফাকে নতুন আঙ্গিকে আমাদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য। শেষ করা যাক ছফারই একটি উক্তি দিয়ে,

“ সম্যক পরিচয়ের অভাবই হচ্ছে মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষের মূল”

Source Featured Image
Leave A Reply
27 Comments
  1. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# world pharmacy india

  2. StevenJeary says

    india pharmacy: Generic Medicine India to USA – reputable indian online pharmacy

  3. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico

  4. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# buying from online mexican pharmacy

  5. StevenJeary says

    india online pharmacy: buy medicines from India – п»їlegitimate online pharmacies india

  6. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa

  7. MichaelLIc says

    http://canadaph24.pro/# canadian pharmacy cheap

  8. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# top 10 online pharmacy in india

  9. Vezvfr says

    semaglutide 14 mg price – buy generic desmopressin over the counter buy generic DDAVP over the counter

  10. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  11. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# indian pharmacy paypal

  12. StevenJeary says

    mexican mail order pharmacies: mexico pharmacy – mexican mail order pharmacies

  13. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# india online pharmacy

  14. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# india pharmacy

  15. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexican border pharmacies shipping to usa

  16. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# best online pharmacy india

  17. StevenJeary says

    indianpharmacy com: indian pharmacy fast delivery – online pharmacy india

  18. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# top 10 pharmacies in india

  19. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# reputable indian online pharmacy

  20. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# medication from mexico pharmacy

  21. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# india pharmacy

  22. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# indian pharmacy online

  23. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexican rx online

  24. MarcelZor says

    http://canadaph24.pro/# canada drugs online reviews

  25. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexican drugstore online

  26. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online

  27. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# medicine in mexico pharmacies

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More