২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ ইতিমধ্যেই ফুটবল ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছে। আন্ডারডগ দলগুলোর অনবদ্য পারফরম্যান্স আর বড় দলগুলোর ভড়াডুবি, শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তা সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের এই আসরটি ভক্তদের মনে গেথেঁ থাকবে অনেক দিন। নাটকীয়তার জের ধরে বাদ পড়তে বসেছিলো বড় বড় দলগুলো। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট দল আর্জেন্টিনা বাদ পড়তে পড়তে বেচেঁ গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি মহাপরাক্রমশালী জার্মানীর। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আসর থেকে বিদায় নেয় তারা।। তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে যাওয়া এই আসরে যেকোন ম্যাচই জমজমাট। তবে সেই উত্তেজনা বেড়ে যায় যখন ফুটবলীয় জায়ান্ট রা মুখোমুখি হয় একে অপরের। তেমনই একটি ম্যাচের জন্য ফুটবল বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে অনেক আগে থেকেই। বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই ম্যাচে মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ড।
ইউরোপের এই দুই পরাশক্তির লড়াই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে আরো বিভিন্ন কারণে। দুই দলই সমৃদ্ধ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় দিয়ে। দলের মূল তারকারা প্রায় সবাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নামিদামি ক্লাব গুলোর মূল তারকা। তাই ম্যাচটি প্রিমিয়ার লিগ প্রেমিদের কাছে অন্যরকম মাত্রা যোগ করেছে।
তবে কিছুটা দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, ফুটবল প্রেমিরা যেরকম তারকা সমৃদ্ধ জমজমাট ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন তা হয়তো হবে না। দুইদলই তাদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছে। এই ম্যাচের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, নেক্সট রাউন্ড গুলোতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কে তুলনামূলক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে গ্রুপ রানার্স আপের চেয়ে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কে খুব সম্ভবত মুখোমুখি হতে হবে কলোম্বিয়া এবং ব্রাজিলের, সেই তুলনায় গ্রুপ রানার্স আপকে মুখোমুখি হতে হবে সেনেগাল/জাপান কে। তাই আপাত দৃষ্টি তে দুই দলেরই গ্রুপ রানার্স আপ হলেই সুবিধা। যদিও কোন দলই এই কথা স্বীকার করতে নারাজ। মনে মনে হয়তো গ্রুপ রানার্স আপই হতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু জয়ের ধারা অব্যহত না রাখলে তার ইফেক্ট নক আউট পর্বের ম্যাচে পড়বে, এটাও ভালো করেই জানেন দুই দলের কোচ। তাই সবকিছু মাথায় রেখেই ট্যাক্টিক্স সাজাবেন দুই কোচ।
এছাড়াও এই ম্যাচে দুই দলই তাদের মূল কিছু তারকাকে বিশ্রাম দিবেন। বেলজিয়ামের রোমেল লুকাকু এবং ইডেন হ্যাজার্ড হালকা ইঞ্জুরী তে থাকায় তাদের বিশ্রাম দেয়া হবে। কেভিন ডি ব্রুইন, ভার্টংগেন এবং থমাস মুনিয়েরের একটি করে হলুদ কার্ড থাকায় তাদের নিয়েও রিস্ক নিতে চাইবেন না কোচ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের হয়ে ইতিমধ্যেই ৫ গোল দেয়া হ্যারি কেনকেও সেদিন দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কেও বিশ্রাম দেয়া হবে সেদিন যাতে নক আউট পর্বে ১০০% ফিট স্কোয়াড পাওয়া যায়।
এইসব তারকা খেলোয়াড় দের ছাড়া ম্যাচের উত্তেজনা কিছুটা হলেও ম্লান হবে। এছাড়াও দুই দলই কিছুটা সেফ থেকে খেলার চেষ্টা করবে। যার ফলস্বরূপ উত্তেজনাপূর্ণ আক্রমণাত্বক খেলার পরিবর্তে কিছুটা বোরিং খেলা উপভোগ করতে হতে পারে ফুটবল প্রেমী দের।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সঃ
সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় দুই দলই দারুণ ফর্মে আছে। যেখানে বড় দলগুলো হোচটের পর হোচট খেয়েই যাচ্ছে, সেখানে এই দুই দল প্রতিপক্ষকে ভাসিয়েছে গোল বন্যায়। দুই দলই এখন পর্যন্ত গোল দিয়েছে ৮ টি এবং হজম করেছে ২ টি।
সর্বশেষ ১১ ম্যাচে বেলজিয়ামের জয় ১০ টি তে, বাকি ১ টি ম্যাচ ড্র। অন্যদিকে সর্বশেষ ১১ ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয় ৯ টিতে বাকি দুই ম্যাচ ড্র। দুই দলই তাদের সর্বশেষ পরাজয় দেখেছে ১৬ ম্যাচ আগে।
মূল তারকাঃ
বেলজিয়ামের এই জেনারেশনকে তাদের গোল্ডেন জেনারেশন বলা হয়। তারকা সমৃদ্ধ এই দলে তারকার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে তাদের মধ্যেও দলের মূল তারকারা হচ্ছেন রোমেলু লুকাকু, ইডেন হ্যাজার্ড এবং কেভিন ডি ব্রুইন। টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যেই ৪ গোল দেয়া লুকাকু যেকোন দলের জন্যই ত্রাশ, আর সাথে ইডেন হ্যাহার্ড আর কেভিন ডি ব্রুইন তো আছেই। শক্তিশালী এবং ব্যালেন্সড এই দল শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
ইংল্যান্ড বর্তমান দলও তাদের অন্যতম সেরা জেনারেশন। এই দলকে নিয়েই ইংলিশ রা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।
দলে আছেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেইন, তরুণ তারকা জেসে লিংগার্ড, দারুণ ফর্মে থাকা ডিফেন্ডার জন স্টোন্স। যদিও এখনও কোন বড় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের, তাই তাদের আসল পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বেলজিয়ামের সাথে ম্যাচে।
সম্ভাব্য একাদশঃ
দুই দলই তাদের মূল একাদশের একাধিক খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিবে, তাই মূল একাদশে অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে। বেঞ্চের অনেক খেলোয়াড়কে সুযোগ দেয়া হবে এই ম্যাচে। তাই একাদশ কেমন হতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ড দুই দলই তাদের অন্যতম সেরা সময় পাড় করছে। দুই দলের বেশীরভাগ খেলোয়াড়ই আছে দারুণ ফর্মে। দুইদলই বিশ্বকাপে এসেছে তাদের অন্যতম সেরা জেনারেশন নিয়ে, দুই দলকে নিয়েই অজস্র স্বপ্ন বুনেছে তার দেশবাসীরা। বিশ্বকাপের সূচনাটাও ভালো হয়েছে তাদের। দুইদলই প্রস্তুত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। তবে দুইদলেরই রেকর্ড আছে নক আউটে হোচট খাওয়ার। ভালো দল নিয়েও ইংল্যান্ড কিংবা বেলজিয়াম কেউই আশানুরুপ পার্ফমেন্স করতে পারে নি বিগত আসরগুলোতে। সেই অভিযোগ ঘুচিয়ে তারা এবার বিশ্বকে দেখাতে চায় নিজদের সেরা টা। আসরের প্রথম বড় পরীক্ষায় নিজেদের মুখোমুখি হচ্ছে তারা। মূল দলের অনেক তারকা বিশ্রামে থাকলেও ম্যাচটি সহজ হবে না কারো জন্যই। তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা কতোদূর হবে তার ধারণা পাওয়া যাবে এই ম্যাচেই।
Reference:
Fifa.com
Dailymail.com
zyprexa 20 mg tablet
discount wellbutrin sr